ক্রমেই বাড়তে থাকা একটা অসহায় বিপন্নতা ইদানীং আমাকে নিয়ত বিদ্ধ করে! কুরে কুরে খায়।
অজস্র অসুস্থ মানুষ দূর দুরান্ত থেকে এসে আমার জন্য অপেক্ষা করে করে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত , বিষণ্ণ এবং হয়তো বা বিরক্ত হয়ে যান।
সর্বশেষ সরকারি হিসেবে জানা যাচ্ছে ১৩৫ কোটির এই দেশে প্রতি ১৪৪৫ জন নাগরিক প্রতি মাত্র একজন চিকিৎসক! যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাপকাঠিতে আদৌ কাম্য নয়! বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই আরো অপ্রতুল!
সারা দেশে এই মুহুর্তে প্রায় ১১ হাজার নথিভুক্ত ত্বক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন, আর তাঁদের সকলেই যে সুস্থ, সবল, কর্মক্ষম তাও নয়! অর্থাৎ প্রায় পনেরো হাজার দেশবাসী পিছু একজন ত্বক-চিকিৎসক!
ফলে যা হবার তাই হয়েছে!
দিন ঢলে পড়ে, অথচ অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না!
ক্ষুধার্থ, বিরক্ত,এবং স্বাভাবিক ভাবেই ক্রুদ্ধ রোগিনী বা তার পরিজন কিন্তু জানতেও পারেন না বন্ধ দরজার ওপারে চিকিৎসকটিরও খাওয়া হয়নি!
যে বৃদ্ধা, বা যে শিশুটি সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা অবধি অপেক্ষা করে সাড়ে তিন মিনিটের জন্য আমার ক্লান্ত শ্রীমুখ দর্শন করতে পারেন, কিংবা যে অশক্ত গ্রাম্য দম্পতি ফেরার ট্রেন মিস করে কি করে রাত্রে ক্যানিং, লক্ষীকান্তপুর, বারুইপুর, গাইঘাটা, হাসনাবাদ, রামপুরহাট বা কাঁথি ফিরবেন সেই ভাবনায় আকুল হয়ে যান, ভিন রাজ্যের যে মানুষটি রাতের চেম্বার থেকে বেরিয়ে কি ভাবে এই অচেনা শহরটির অন্য প্রান্তে তাঁর আধা-আত্মীয়ের বাড়ি পৌঁছাবেন কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেন না, তাঁদের কাছে অপরাধী হয়ে যাই যে!
কিন্তু কিছু করতেও পারি না, মনে মনে ক্ষমা প্রার্থনা করা ছাড়া!
চিকিৎসকের অসহায় ব্যস্ততার বহুমাত্রিকতা কোনো রোগীর আরোগ্যের পথে যেন অন্তরায় না হয়, এই কামনা!
ডক্টরস ডায়ালগ সেই না বলতে পারা, বুকের মধ্যে জমে পাথর হতে থাকা, ঘুন পোকার মত কুরে খেতে থাকা অজস্র কথা দিয়ে তৈরী!
সব ঋণ শোধ করা যায় না, স্বীকার করা যায় শুধু!
ডক্টরস ডায়ালগ অজস্র মানুষের কাছে প্রতিনিয়ত জমতে থাকা সেই সব অপরিশোধ্য ঋণের স্বীকারগাথা!
খুবই সুন্দর উপস্থাপনা!
সফল হোন এই আন্তরিক কামনা।
সামাজিক দায়বদ্ধতা আরও প্রসারিত হোক!