স্মৃতিকণা দেবীর বয়স এখন ৭৫ বছর। গত কয়েক বছর ধরেই তিনি অনেক কিছু ভুলে যাচ্ছেন। ইদানিং ভুলে যাওয়াটা খুব বেড়েছে। সমস্যাটা আরো বেড়েছে কারণ তিনি নিজে বুঝতে পারছেন না যে তিনি ভুলে যাচ্ছেন। এই সেদিন তিনি গ্যাসের নবটা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন-কাজের মাসি না দেখলে ব্যাপারটা বিপজ্জনক হত। মাঝে মাঝেই তিনি নিজের মনে বিড়বিড় করে কথা বলেন ও অনেকসময় কারণ ছাড়াই বাড়ির লোকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু কালকের ঘটনাটা ছিল সবচেয়ে উদ্বেগজনক। তিনি রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে রাস্তা হারিয়ে বহু দূরে চলে গিয়েছিলেন। বাড়ির লোকজনকে থানায় যোগাযোগ করতে হয়েছিল এবং পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তারবাবু বলেছেন স্মৃতিকণা দেবীর রোগটিকে “ডিমেনশিয়া” বলে।
“স্মৃতিভ্রংশ রোগ” (ডিমেনশিয়া) রোগ সাধারণ ভাবে ৬৫ বছর বয়সের পরে দেখা যায়। বয়সের সাথে সাথে স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের মনে রাখার ক্ষমতা কমতে থাকে। কিন্তু এই রোগে মনে রাখার ক্ষমতা আরো অনেক বেশী হ্রাস পায়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতিভ্রংশর সাথে সাথে আরো কিছু সমস্যা দেখা যায়, যেমন -নতুন কিছু শেখার অক্ষমতা, হিসেব করার অক্ষমতা, ভাষা ব্যবহারে অসুবিধা, সিদ্ধান্ত নেবার অক্ষমতা, ইত্যাদি। আবার এই সমস্যাগুলির সাথে সাথে অনেক সময় মন খারাপ, সন্দেহপ্রবণতা, বাড়ি থেকে অকারণে বার বার বেরিয়ে যাওয়া এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা দেখা যায়। স্মৃতিভ্রংশ রোগ অনেক কারণে হতে পারে। আলঝাইমার্স ডিসিস নামক রোগটির নাম অনেকেই শুনেছেন, এছাড়া অন্যান্য রোগের সাথে সাথে (যেমন -পার্কিনসন্স ডিসিস, থাইরয়েডের সমস্যা, এসএলই, ইত্যাদি), মাথার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে, কিছু সংক্রামণের কারণে (যেমন -এইডস,সিফিলিস ইত্যাদি), ভিটামিনের অভাবে, বিষক্রিয়া থেকেও স্মৃতিভ্রংশ রোগ দেখা যেতে পারে।
চিকিৎসা শুরু করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম রোগী ও রোগীর বাড়ির লোকজনকে রোগটি সম্বন্ধে বোঝানো দরকার। তাঁদেরকে বুঝতে হবে যে এই রোগের তীব্রতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। ওষুধ দিয়ে রোগের বিস্তারকে আটকে রাখা গেলেও সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয়।
রোগীকে অবশ্যই সর্বক্ষণ চোখে -চোখে রাখতে হবে এবং এই কাজের জন্য সবসময় একজন থাকলে ভাল হয়।
- রোগীর নিরাপত্তার দিকে অবশ্যই যত্ন নেওয়া দরকার। রোগী যাতে ভাল ভাবে দেখতে পান তার জন্য ঘরে ও বাথরুমে উপযুক্ত আলো প্রয়োজন।
- সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে যাতে রোগী হাঁটতে গিয়ে পড়ে না যান। এই রোগে আক্রান্তদের গাড়ী চালাতে না দেওয়াই ভাল।
- এই রোগের চিকিৎসায় বেশ কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যেমন কোলিনএস্টারেস ইনহিবিটারস, এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট, এন্টিসাইকোটিক ড্রাগস, ইত্যাদি।
- রোগের প্রথমাবস্থায় ওষুধগুলি ভালো কাজ করে। কিন্তু রোগের তীব্রতা বেড়ে গেলে ওষুধের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই এই রোগের প্রথমাবস্থায় চিকিৎসা শুরু করা গেলে রোগকে প্রতিহত করা সহজ হয়।