করোনা ভাইরাস নামক বস্তুটি আসলে কি ?
উঃ সামগ্রিক ভাবে বলতে গেলে করোনা ভাইরাস হলো একধরনের ভাইরাস-পরিবার, যা কিনা বহুদিন ধরেই মানুষ এবং বিভিন্ন পশুর দেহে বসবাস করে আসছে। এদের দেখতে মুকুটের মতন বলে এ হেন নামকরণ (Corona = Crown) ।
এই পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাকুল্যে চারটি, যথা alpha, beta, gamma এবং delta CoV (CoV =Coronavirus)।
আলফা ও বিটা প্রজাতিটাই মানুষকে সংক্রমিত করে। সংক্রমণটা সাধারণত শুরু হয় মানুষ থেকে, তারপর এই ধরনের অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির মতোই হাঁচি-কাশি এবং ছোঁয়া/সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়।
অতি বিরল ঘটনা হিসাবে ইতিপূর্বে দুই বার মাত্র পশু থেকে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটেছিল, তারপর সেটা ছড়িয়েছে মানুষর মধ্যে।
প্রথমবারের ঘটনা ২০০২ সালে। সেবার Civet cat (ভাম/খটাশ) থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে SARS (Severe Acute Respiratory Syndrome) নামক একটি শ্বাসনালির রোগ ঘটিয়েছিল। ঘটনার সূত্রপাত চিনে।
দ্বিতীয় ঘটনা ২০১২ সালের। এবার আর SARS নয়, MERS অর্থাৎ Middle East Respiratory Syndrome. ঘটনার সূত্রপাত মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে সৌদি আরব। দায়ী ছিল উট।
উপরোক্ত দুটি ঘটনার কোনটাই মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছায়নি, আর সবচেয়ে বড় কথা এবারের মতো Pandemic অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী মহামারীর আকার ধারণ করেনি।
বর্তমানে যে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত অসুখটি ছড়াচ্ছে সেটাও আগের দু’বারের মতো Zoonotic disease বা পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত রোগ।
সূত্রপাতটা এরকম :-
সাল ২০১৯, তারিখ ছিল ১২ই ডিসেম্বর। সেদিনই প্রথম চিনের উহান প্রদেশ থেকে এমন একধরনের নিউমোনিয়া রিপোর্ট করা হলো যার কারণ অজানা। আক্রান্তের সংখ্যা হু-হু করে বাড়তে থাকলো। সন্দেহ হলো এটা উহানের সামুদ্রিক প্রাণীবাজার থেকেই ছড়িয়েছে (যদিও এই তথ্যটা এখনও পর্যন্ত officially confirmed নয়), তাই ১লা জানুয়ারি ২০২০ থেকে সেই বাজার বন্ধ করে দিল চিন।
এর দুদিন পরেই, অর্থাৎ ৩রা জানুয়ারি ২০২০ তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের দেশকে এই নতুন ধরনের নিউমোনিয়া সম্বন্ধে সতর্ক করে দিল। তখনো কেউ জানে না নিউমোনিয়ার কারণটা কি !
জানলো আরো চারদিন পর, জানুয়ারির ৭ তারিখে। ওই দিনই আমরা জানলাম এক নতুন ধরনের করোনাভাইরাস এসেছে। ভাইরাসের নামকরণ করা হলো nCoV, অর্থাৎ Novel Coronavirus (Novel = New)।
রোগটার নাম দেওয়া হলো COVID-19, অর্থাৎ Coronavirus Disease 19 (19=2019, অর্থাৎ যে বছর থেকে রোগটি ছড়াচ্ছে)।
এই রোগটা কিভাবে ছড়ায়?
উঃ হাঁশি, কাশি ইত্যাদির ফোঁটা থেকে (droplet infection) সংক্রমণ হয় এবং সংক্রমিত হাত অথবা কোনও বস্তুর সংস্পর্শে এসে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়।
ধরুন কোনও COVID-19 আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচলেন বা কাশলেন অথবা থুতু ছিটিয়ে কথা বললেন। ঘটনার সময়ে তিনি রুমাল/টিস্যু ব্যবহার করেন নি। এবার ধরুন তাঁর সামনে এক মিটারের কম দূরত্বে আরেকজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ব্যক্তিটি আক্রান্ত হতে পারেন।
মনে রাখবেন, যদি দুজনের মধ্যে দূরত্বটা এক মিটারের বেশি হয় তাহলে কিন্তু সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে না ! কেন থাকবে না ? কারণ এই ভাইরাসটা একটু ভারি, ফলে বাতাসে খুব একটা দূর অবধি যেতে পারে না। হাঁচি বা কাশির গতিবেগ যত বেশিই হোক না কেন, এরা এক মিটার যাওয়ার আগেই মুখ থুবড়ে নিচে পড়ে যাবে। পড়বে মানে যে মরবে তা নয় কিন্তু ! জীবিত অবস্থাতেই থাকবে। মাঝখানের ওই এক মিটারের মধ্যে মেঝে, টেবিল অথবা যে surface থাকুক না কেন তার উপর সেই ভাইরাসগুলো জ্যান্ত অবস্থায় পড়ে থাকবে। এই অবস্থায় তারা কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায় নি, তবে এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সেটা ৮ ঘন্টা থেকে ২ দিন পর্যন্ত হতে পারে। এর মধ্যে যদি সেই জায়গাটি disinfect অর্থাৎ সংক্রমণমুক্ত না করা হয়, তাহলে সংক্রমিত surface-এর সংস্পর্শে এসে আরো কিছু মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন এবং সংক্রমণ ছড়াতে পারেন।
আরেকটা দৃশ্য কল্পনা করুন। ধরুন কোনও COVID-19 আক্রান্ত ব্যক্তি মুখের সামনে হাত রেখে কাশলেন অথবা হাঁচলেন। স্বাভবিক ভাবেই তাঁর হাত সংক্রমিত হয়ে গেল। এবার তিনি ওই হাতেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এটা ওটা ধরছেন, লোকজনের সাথে করমর্দন করছেন, ইত্যাদি। আরেকজন সেই সংক্রমিত বস্তুটি ধরলেন, তারপর যথারীতি সেই হাতেই কাজকর্ম করতে লাগলেন। এইভাবে অগুনতি মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে।
কিভাবে করোনা ভাইরাস ছড়ানো আটকানো যাবে ?
উঃ ভাইরাস ছড়ানোর চক্রটা যদি কোনও একটি জায়গায় কেটে দেওয়া যায় তাহলেই হবে। ভাইরাস আর ছড়াবে না। চক্রটি মোটামুটি বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি :-
করোনাভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তি (তাঁর দেহে COVID-19 এর লক্ষণ থাকুক বা না থাকুক) মানেই একটি reservoir বা আধার, যাঁর মাধ্যমে অন্যারা সংক্রমিত হতে পারেন।–>তাঁর শরীর থেকে ভাইরাসের নির্গমন হবে মুখ অথবা নাক দিয়ে।–>সংক্রমণ সরাসরি আরেকজনের মানুষের দেহে ছড়াতে পারে, যদি দুজনের মধ্যে এক মিটারের কম ব্যবধান থাকে এবং সেই অবস্থায় সংক্রমিত ব্যক্তিটি রুমাল/টিস্যু ছাড়াই অথবা mask না পরে হাঁচি/কাশি দেন বা কথার মাঝখানে মুখ দিয়ে থুতু ছেটান।
এছাড়া তিনি মুখের সামনে হাত দিয়ে হাঁচলে/কাশলে এবং তারপর সেই হাতটা ভালো করে সাবানজলে না ধুয়ে যদি কোনও জিনিস ধরেন বা কারো সাথে করমর্দন করেন তাহলে সেই জিনিস অথবা আরেকজনের হাত সংক্রমিত হয়ে যাবে, যদি সেই অপর ব্যক্তিটি প্রয়োজনীয় সুরক্ষা না নেন।–>
অপর ব্যক্তির নাক/মুখ দিয়ে তাঁর শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করবে ও বংশবৃদ্ধি করবে। তখন তাঁর দেহে COVID-19 এর লক্ষণ না থাকলেও তিনি একজন potential reservoir হয়ে গেলেন, যিনি আবার একই ভাবে ভাইরাস ছড়াবেন।
এই হলো চক্র ! এই চক্রের কোনও একটা জায়গা যদি আমরা ছিন্ন করতে পারি তাহলে আর ভয় নেই। ছিন্ন কিভাবে করবো ? কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে। আসুন এবার সেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটায় যাই।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ?
উঃ আমরা পয়েন্ট বাই পয়েন্ট আলোচনা করবো। মন দিয়ে শুনুন –
১) HAND HYGIENE : এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। হাতটা ভালো করে ধুতে হবে। একবার নয়, বারবার …. যতবার প্রয়োজন পড়ে।
● হাত না ধুয়ে কিছু খাবেন না, এমনকি চোখও চুলকাবেন না।
● অফিস-কাছারি বা বাড়ির বাইরে লোকজনের সাথে যতটা সম্ভব hand contact এড়িয়ে চলুন।
● ট্রেনে-বাসে রড/হাতল ধরার পর সচেতন থাকুন যেন যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব হাতটা ধোওয়া যায়।
● হাত ধোওয়ার জন্য সাবানজলই যথেষ্ট ! মনে রাখবেন soap + running water এর মতন কার্যকরী handwash এখনও তৈরি হয়নি। এমনকি বিশেষ কোনও সাবানেরও দরকার নেই ! আপনি নিত্যদিন বাড়িতে যে সাবানে হাত পরিষ্কার করেন সেটা হলেই চলবে।
● এছাড়া অবশ্যই alcohol-based hand sanitizer ব্যবহার করতে পারেন, তবে এমনটা নয় যে ওটা না দিলে আর হাত পরিষ্কার হবে না। যদি hand sanitizer না থাকে তাহলে জাস্ট একটা সাবান কাছে রাখবেন আর প্রয়োজন পড়লেই সেটা দিয়ে হাত ধুয়ে নেবেন।
● হাত মোছার জন্য পরিষ্কার রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন। যদি নাক ঝাড়েন তাহলে সেই হাতটা টিস্যুতে মুছুন এবং সঠিক জায়গায় টিস্যুটা ফেলুন। যত্রতত্র ফেলবেন না।
● নাক ঝেড়ে হাত মোছার জন্য রুমালের চেয়ে টিস্যু ব্যবহার করা অনেক ভালো, কারণ ওই নোংরা রুমালটা বারবার ব্যবহার করা আর পকেটে/ব্যাগে রাখা মানেই আরো বিপদ বাড়ানো।
● হাত ধোয়ার নিয়ম আছে। নিয়মগুলো লিখে বলার চেয়ে ছবির মাধ্যমে বোঝানো সুবিধে, তাই পোস্টের সাথে সেই ছবিটা দিলাম। দয়া করে ভালো করে দেখে নেবেন।
২) COUGH ETIQUETTE & RESPIRATORY HYGIENE :-
● হাঁচি অথবা কাশির সময়ে মাথা ঘুরিয়ে কাশবেন।
● হাঁচি/কাশির সময়ে নাক এবং মুখের উপর টিস্যু ধরবেন।
● হাঁচি/কাশির পর সঠিক জায়গায় টিস্যু ফেলবেন। যেখানে সেখানে ফেলবেন না। এরপর অবশ্যই ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোবেন।
● যদি মাস্ক পরে থাকেন তাহলে ওই অবস্থাতেই হাঁচবেন/কাশবেন।
○ দয়া করে মাস্ক সরিয়ে কম্মটি করবেন না।
○ এরপর অবশ্যই সেই মাস্কটা খুলবেন, সঠিক জায়গায় বর্জ্য হিসাবে ফেলবেন এবং ভালো করে হাত ধোবেন।
● যদি হঠাৎ এমন জোর হাঁচি পায় যে টিস্যু বার করার সময় পেলেন না তাহলে কনুই ভাঁজ করে জামার হাতা দিয়ে মুখ গার্ড করুন। এটা হাত দিয়ে মুখ ঢাকার তুলনায় বেটার অপশন।
● মাস্কের প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহার : –
এই এক গোলমেলে জিনিস ! বহু স্কুল অফ থটস্ বাজারে ঘুরছে, আমি সেসব উহ্য রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন বলছি।
● প্রথমত, মাস্ক ব্যবহার করা মানেই করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষাকবচ পরে ফেলা নয়। আসল হলো hand hygiene maintain করা। শুধু মাস্কের ব্যবহারে সংক্রমণ আটকানো যায় না, যাবে না।
● নাম্বার টু, মাস্ক সবাইকে পরতে হবে এমন কোনও মানে নেই। অকারণে মাস্কের ব্যবহার শুধু যে খরচ বাড়ায় তাই নয়, তার সাথে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে …. যেমন এখন করছে।
● তিন নম্বর কথা হলো অনেকে মাস্ক পরে ভাবছেন সাঙ্ঘাতিক লেভেলের সতর্কতা নিয়ে ফেলেছেন, অতএব আর চিন্তা নেই ! এর ফলে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি অবহেলিত হয়, যেমন হাত ধোওয়া।
■ মাস্ক কারা পরবেন না?
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
● কোনও সুস্থ মানুষ, যিনি বিগত দু-সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোনও দেশ অথবা রাজ্য থেকে আসেন নি, তাঁর মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই।
● কোনও সুস্থ মানুষ, যিনি কোনও COVID-19 suspected case-এর সংস্পর্শে নেই অথবা তাঁর পরিচর্যা করছেন না, তাঁর মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই।
■ মাস্ক কারা পরবেন অথবা পরতে পারেন?
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
● যাঁরা সরাসরি রোগীদের সংস্পর্শে আসছেন, অর্থাৎ ডাক্তার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী।
● হাঁচি-কাশি জ্বর শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি শ্বাসনালিতে সংক্রমণের লক্ষণযুক্ত কোনও ব্যক্তি।
● কোনও সুস্থ ব্যক্তি, যিনি হাঁচি-কাশি জ্বর শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি শ্বাসনালিতে সংক্রমণের লক্ষণযুক্ত কোনও ব্যক্তির পরিচর্যা করেন বা সংস্পর্শে আসেন অথবা এক মিটারের কম দূরত্ব থেকে তাঁর সাথে interact করেন।
অতএব বুঝতেই পারছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী আমাদের অধিকাংশ লোকেরই মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। যাঁরা ট্রেন/বাস ইত্যাদি public conveyance এ যাতায়াত করছেন তাঁরা অবশ্য মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন, তবে তার সাথে handwashing বাধ্যতামূলক। স্রেফ মাস্কের ব্যবহারে কোনও লাভ নেই যদি না handwashing ঠিকঠাক করেন।
● কি ধরনের মাস্ক ব্যবহার করবেন ?
এর একটাই উত্তর – Medical Mask, অর্থাৎ 3-pleated 6-lamellar disposable mask. সোজা কথায়, ওষুধের দোকানে যে মাস্কগুলো পাওয়া যায়।
● সাধারণ জনগণের জন্য N95 মাস্কের কোনও প্রয়োজন নেই।
● একটা মাস্ক একবারই ব্যবহার করা যাবে, তারপর ফেলে দিতে হবে।
● একটা মাস্ক একটানা ততক্ষণ ব্যবহার করা যাবে যতক্ষণ না নিশ্বাসের ভাপে অথবা ঘামে moist হচ্ছে না। বর্তমান আবহাওয়ায় এই সময়কালটা ৬ থেকে ৮ ঘন্টা।
● হাঁচি/কাশি পেলে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় সেটা করতে হবে, এবং সঙ্গে সঙ্গেই সেই মাস্ক খুলে, নিরাপদ জায়গায় রেখে, handwashing করে তবেই আরেকটা মাস্ক পরতে হবে।
● Pollution আটকানোর জন্য বাজারচলতি যেসব মাস্ক আছে সেগুলো করোনাভাইরাস আটকানোর কাজে লাগবে না।
● মাস্ক পরার পর মাস্কের উপর আর হাত দেবেন না।
৩) SOCIAL DISTANCING :-
**********
● জনবহুল জায়গায় যাবেন না অথবা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলবেন।
● সভাসমিতি, মিটিং, মিছিল, ইত্যাদি জনসমাগম সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ করা হলেও টুকটাক চলছে না তা নয় ! দয়া করে সেখানে যাবেন না বা অংশগ্রহণ করবেন না।
● যতটা সম্ভব নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলুন। খুব দরকার ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না।
● একসাথে বেশি বাজার করে রাখুন যাতে রোজ-রোজ বাজারে ছুটতে না হয়।
● রেস্টুরেন্টে খাওয়া আপাতত বন্ধ রাখুন।
● অফিসে যাঁরা আপনার সাথে কথা বলতে আসবেন অথবা অন্যান্য কাজের জন্য আসবেন তাঁদের পরিস্কার বলে দিন টেবিলের ওপাশ থেকে কথা বলতে। টেবিল ডিঙিয়ে ঘাড়ের কাছে এসে কথা বলা অ্যালাউ করবেন না। প্রয়োজনে টেবিলের উপর নোটিশ সাঁটিয়ে দিন।
● আত্মীয়-কুটুম্বিতা আপাতত বন্ধ রাখুন। অসামাজিক হয়ে যান কিছুদিনের জন্য।
৪) অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা :-
*************
● Hand-to-hand contact এর দ্বারা রাস্তায় যেসব খাবার খান, যেমন ফুচকা/আলুকাবলি/কাটা ফল সেগুলো খাবেন না।
● সিগারেট/বিড়ির নেশা থাকলে লুজ সিগারেট-বিড়ি কিনবেন না। প্যাকেট সহ কিনবেন, প্যাকেটটা hand sanitizer দিয়ে একটু বুলিয়ে নেবেন, খাওয়ার আগে হাত পরিষ্কার করে তবে প্যাকেট থেকে বার করবেন। দোকান থেকে দোকানদারের হাতে করে দেওয়া লুজ সিগারেট কিনে ধরাবেন না।
● রাস্তায় যত্রতত্র থুতু/কফ ফেলবেন না।
● বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে জামাকাপড় ছেড়ে ফেলবেন। কাচার পর তবে আবার সেই জামাকাপড় ব্যবহার করবেন। ঘরে ঝুলিয়ে রাখবেন না।
● বাইরে থেকে কোনো অতিথি/আত্মীয় বাড়ি এলে তাঁকে আগে hand wash করতে বলবেন। বিছানায় বসাবেন না। সোফা/চেয়ার/মেঝেতে (যেমন আপনার খুশি) বসান। নিজে তাঁর থেকে অন্তত এক মিটার দূরে বসুন। তিনি চলে যাওয়ার পর সেই জায়গাটা এবং তার চারপাশের এক মিটার এরিয়া সাবানজল/ফিনাইল/কলিন ধরনের জিনিস দিয়ে মুছে নেবেন। যদি সেটা টেবিল হয় তাহলে টেবিলের উপর কলিন ধরনের জিনিস দিয়ে মুছবেন। টেবিল কভার হলে কেচে নেবেন। যদি একান্তই বিছানায় বসাতে বাধ্য হন তাহলে বিছানার চাদর কেচে নেবেন।
● বাইরে থেকে এসে মোবাইল/পেন/পার্স/ব্যাগ ইত্যাদি জিনিসগুলো hand sanitizer দিয়ে একপোঁচ বুলিয়ে নেবেন।
■ কোনো প্রকার গুজবে কান দেবেন না, প্রশ্রয় দেবেন না এবং ছড়াবেন না। সরকার থেকে প্রকাশিত খবর/তথ্য/বার্তা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার থেকে প্রাপ্ত কোন তথ্য ছাড়া এই সংক্রান্ত অন্য কিছু পোস্ট শেয়ার করবেন না।
এটা পরিকল্পিত মহামারী, অমুক দিন থেকে কমে যাবে, চোদ্দ ঘন্টার কার্ফু হলেই করোনা শেষ …. এই ধরনের আজগুবি জিনিস প্রশ্রয় দেবেন না এবং অবশ্যই ছড়াবেন না। এর ফলে একটা false sense of security তৈরি হয় মানুষের মনে, যা কিনা অতি, অতি ভয়ংকর !
■ সচেতন হোন। সচেতন করুন। মনে রাখবেন, একমাত্র সচেতনতাই পারে আমাদের এই ভয়াল বিপদ থেকে রক্ষা করতে। যে দেশের জনসংখ্যা এত বেশি সে দেশে এই মহামারী ঠেকাতে হলে সচেতনতাই একমাত্র অস্ত্র। এখনও যদি আমরা সচেতন না হই তো করোনাভাইরাসের সামনে স্রেফ উড়ে যাবো।
■ সচেতন হোন, সরকারের সাথে সহযোগিতা করুন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে যুক্ত মানুষজনের উপর আপাতত ভরসা রাখুন। আমরা আছি ! দিনরাত এক করে আমরা, অর্থাৎ সরকারি ডাক্তার এবং বিভিন্ন পদের স্বাস্থ্যকর্মীরা খাটছি। কয়েকটা দিন আমাদের উপর ভরসা রেখে চলুন। এই মুহূর্তে আমাদের মারধোর করবেন না প্লিজ ! যদি বেঁচে থাকেন তাহলে ডাক্তার পেটানোর অনেক সুযোগ পাবেন। আপাতত বাঁচুন এবং বাঁচান !
* তথ্যসূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের দ্বারা প্রাপ্ত তথ্য ও বিধি।
** ইচ্ছে হলে যে কেউ এই পোস্টটা শেয়ার করতে পারেন। আমার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ভীষণ ভালো ও প্রয়োজনীয় পোস্ট। তোমরা, ডাক্তাররা এতো ব্যাস্ততার মধ্যেও যেভাবে সচেতনতার পোস্ট দিয়ে যে যার নিজের, নিজের সাবধান থাকার ব্যাপারে লিখেছো তা খুব উপকারী। তোমরা ডাক্তার রা যেভাবে নিজেদের উজাড় করে সেবা করছো তা বর্তমানে ভগবানের সমতুল্য। ধন্যবাদ দেবো না, প্রচুর ভালোবাসা আর কুর্নিশ তোমাদের। তোমরা, ডাক্তার রাও সাবধানে থেকো অনন্ত আমাদের সকলের জন্য।
এই রকম সুন্দর করে, প্রাঞ্জল ভাষা তে এতো ডিটেইলে সব কিছু বোঝাতে কিন্তু সবাই পারে না ডাক্তার বাবু। খুব সময়োপযোগী গুরুত্ব পূর্ণ পোস্ট। আপনাকে এবং মেডিক্যাল ফ্র্যাটার্নিটির সবাই কে কুর্নিশ জানাই।????
খুব ভালো গাইড লাইন। সবার খুব উপকার হবে। আসলে সবারই উচিত সতর্কতা মেনে চলা। আর এত সুন্দর করে বুঝিয়ে বলা যাতে সবাই বুঝতে পারে। ?? সবার ভালো হোক। সুস্থ থাকুক সবাই।