নয় নয় করে চীনের উহান থেকে বিশ্ব ঘুরে কোভিড 19 এখন আমাদের ঘরে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই প্রথম এক মহামারী বিশ্ব কাঁপাচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ বিষয়ে আপডেট: আক্রান্ত এত, মৃত এত। তার ওপর আছে ভুয়ো তথ্য ও তত্ত্বের সুনামী। চলছে মীমের হাসি কান্না, রাজনীতির চাপান উতোর। মোদ্দা কথা, রোগের ভয়াবহতার কথা ভেবে
মানুষ উদ্ভ্রান্ত, মানুষ ভীত। যার স্পষ্ট ছবি চোখে পড়ে যখন বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। কালোবাজারি শুরু হয় এই অতিরিক্ত উদবেগ আর ভয়কে কেন্দ্র করে। এমন সংকটের সময় মানুষ যুক্তির ধার ধারে না। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চূড়ান্ত প্রভাব পড়ে মহামারীর।
কেমন ধারা সেই প্রভাব?
প্রথমত: সংক্রমণের ভয় মাত্রা ছাড়াতে পারে। প্রয়োজনীয় সাবধানতা নেওয়ার পরিবর্তে মাত্রারিক্ত সাবধানতা নিতে গিয়ে মানসিক চাপ বাড়ে।
দ্বিতীয়ত: ভাইরাসের সম্ভাব্য সংক্রমণের ভয় থেকে অতিরিক্ত সুরক্ষার বস্তু জমিয়ে ফেলার প্রবণতা বাড়ে। ফলত: উদবেগের মাত্রা বাড়ে, ঘুমের সমস্যা দেখা যায়, অস্থিরতা বাড়ে। বিশেষত: যাঁরা এই ধরণের সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের অবস্থার অবনতি হতে পারে। আজকের গণ হিস্টিরিয়া মাথায় রেখে মনোবিদ হিসাবে আমার মনে হয়েছে কোভিড 19 শুধু জন স্বাস্থ্য নয় জন মানসেও ভয়ানক প্রভাব ফেলেছে এবং এর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব অনস্বীকার্য। মহামারী নিয়ন্ত্রণে বাজারের অর্থনীতিতে যে রিসেশন তৈরি হবে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তার প্রভাবও কিছু কম হবে না। বিশেষত: যেখানে আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষ দিন আনে দিন খায়। মহামারীর ধাক্কা সামলে উঠলেও তারা এই ধাক্কা কতটা সামলে উঠতে পারবেন তা বড় প্রশ্ন। বলাই বাহুল্য বিষাদ রোগ ও আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়বে।
কি করণীয়?
প্রথমত: সঠিক তথ্য প্রচারে মন দিতে হবে, ভয় তৈরি করে এমন মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে ডাক্তারবাবুদের জন মত তৈরি করতে হবে।
দ্বিতীয়ত: যাঁরা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের প্রয়োজনমতো চিকিৎসা দিতে হবে। যেমন উদবেগের সমস্যা, বা ডিপ্রেশনে ভুগছেন এমন মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা যাতে পান সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।
তৃতীয়ত: মহামারীর কারণে কেউ যদি বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ও তাঁর ঘুম খিদে ইত্যাদিতে সমস্যা দেখা দেয় তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
চতুর্থত: যাঁরা সরাসরি এই রোগের চিকিৎসায় যুক্ত তাদের মনোবল বাড়ানোর কথা ভাবা দরকার। তারা যাতে স্টেস কমাতে পারেন তার ব্যবস্থা থাকা দরকার। প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও মানসিক দৃঢ়তা একান্ত প্রয়োজন।
পরিশেষে, এই সংকটের মূহূর্তে আমরা একা হবার পণ করেছি, মানুষে মানুষে দূরত্ব বাড়বে ঠিকই কিন্তু এই মহামারী যেন আমাদের সব বিভেদ ভুলে এক সঙ্গে লড়াই করার শিক্ষা দিচ্ছে। আসলে সহযোগিতার এক লম্বা শৃঙ্খল দিয়ে আমরা ভাঙতে পারি ভাইরাসের এই মৃত্যু শৃঙ্খল। মনে মনে নিজেকে একা না ভেবে আসুন মনের বাঁধন শক্ত করি। লুকিয়ে রেখে রোগ বাড়তে দেবেন না। মানসিক বাধা কাটিয়ে উঠে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিলেতফেরত জনৈক চিকিৎসকও পারলেন না এমন বাধা কাটিয়ে উঠতে। তার প্রধান কারণ হল নিজের মনে বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করা। যাকে বলা হয় ডিনায়াল। এমন ভয়কে জয় করে আমরা নিশ্চয়ই পারব এই মহামারীর সংকট কাটিয়ে উঠতে।