ডায়াবেটিস টাইপ ১ এর মূল কারণ প্যানক্রিয়াসের বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন তৈরি না হওয়া। এক্ষেত্রে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্যানক্রিয়াসের বিটা কোষকে ধ্বংস করে ফেলে (অটো ইমিউনো ডেস্ট্রাকশান)। এর জন্য দায়ী রোগীর জিনগত ও নানা পরিবেশগত বিষয় বা ফ্যাক্টর। যেমন যমজ বাচ্চাদের (আইডেন্টিটিকাল টুইন) একজনের ডায়াবেটিস টাইপ ১ থাকলে অন্য জনের হওয়ার সম্ভাবনা ৪০- ৬০%। এর থেকেই ডায়াবেটিস টাইপ ১ এ জিনের ভূমিকা বোঝা যায়।
যেহেতু ডায়াবেটিস টাইপ ১ এর কারণ ইনসুলিনের অভাব, তাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই ইনসুলিন লাগে।
ডায়াবেটিস টাইপ ২ এর কারণ টা এতটা সহজ নয়। এক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় ইনসুলিন কমার বদলে বরঞ্চ প্যানক্রিয়াস থেকে বেশি পরিমাণে নিসৃত হয়।
এক্ষেত্রে শরীরের বিভিন্ন কলা কোষে ইনসুলিন রেজিট্যান্স তৈরি হয়। যার ফলে শরীরে উপযুক্ত পরিমাণে ইনসুলিন থাকলেও লিভারে, পেশী কোষে, এডিপোজ কোষে ইনসুলিন রেজিট্যান্সের জন্য গ্লুকোজ ব্যবহৃত হতে পারে না। লিভারে বেশি পরিমানে গ্লুকোজ তৈরি হয় এবং রক্তে মেশে।
প্রথম অবস্থায় প্যানক্রিয়াসের বিটা কোষ আরও বেশি মাত্রায় ইনসুলিন তৈরি করে এই অবস্থার সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।
প্রথম দিকে এই বাড়তে থাকা ইনসুলিন উপবাসের সময় রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিক রাখে। কিন্তু খাওয়ার পর হঠাৎ করে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে গেলে তখন আরও বেশি মাত্রায় ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। কারণ ইতিমধ্যেই সে তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়েই কাজ করছে। যার ফলে ডায়াবেটিস টাইপ ২ তে প্রথম অবস্থায় খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজ স্বাভাবিক থাকলেও গ্লুকোজ টলারেন্স পরীক্ষায় ডায়াবেটিস ধরা পরে।
কিন্তু একটা সময়ের পর যখন ইনসুলিন রেজিট্যান্স আরও বেড়ে যায়, তখন সে হাল ছেড়ে দেয়। রক্তে খালি পেটেও গ্লুকোজ বাড়তে থাকে।
ডায়াবেটিস টাইপ ২ এর সাথে স্থূলতার জোরদার সম্পর্ক আছে। প্রায় ৮০% টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীই স্থূল। ফ্যাট বা এডিপোজ কোষ থেকে নানা রকম ক্ষতিকারক উপাদান নিসৃত হয়। যেমন – ফ্রি ফ্যাটি এসিড, রেটিনল বাইন্ডিং প্রোটিন ৪, লেপ্টিন, টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর- আলফা, রেজিস্টিন ইত্যাদি। এগুলি ইনসুলিন রেজিট্যান্স আরও বাড়িয়ে দেয়, পেশী কোষে গ্লুকোজ ব্যবহৃত হতে বাধা দেয়, লিভার থেকে বেশি পরিমাণে গ্লুকোজ তৈরি করে। এছাড়াও এগুলি প্যানক্রিয়াসের বিটা কোষকে আস্তে আস্তে নষ্ট করে ফেলে এবং ইনসুলিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
এ কারণে ডায়াবেটিস টাইপ ২ তে রোগীদের পরিশ্রম ও খাদ্যাভ্যাস পালটানোর মাধ্যমে ওজন কমানোর উপর চিকিৎসকরা এতো জোর দেন।
ঠিক মত চিকিৎসা হলে টাইপ টু এর রোগীরা কি আর কখনো সাধারণ খাদ্য গ্রহণে সমর্থ হন?