উপস্থিত সকলকে আমার শুভেচ্ছা জানাই। কোভিডের মতো অতিমারী ব্যাপারটাই আমাদের স্মরণকালের মধ্যে এমন অভূতপূর্ব, যে, এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা যে এক নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, সে তো আলাদা করে বলার কিছু নেই। কিন্তু, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
আজকের আলোচনা প্রয়াত ডাঃ চন্দ্রকান্ত পাটিলের নামে। একটু তাঁর কথা বলি। বারো বছর আগে চন্দ্রকান্ত পাটিল, নেহাতই অল্পবয়স তখন, মুম্বাই কেইএম হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডাক্তার, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসার জন্যে বিহার দৌড়ান। হাসপাতাল থেকে ছুটি পেতে বিস্তর ঝামেলা হয় – তবু, চন্দ্রকান্তকে দমানো যায়নি- শুধু নিজে নয়, বাকিদের উদ্দীপিত করে সাথে নিয়ে যান বন্যা-দুর্গতদের চিকিৎসার কাজে – প্রায় জনাপঞ্চাশেক ডাক্তার ছিলেন পুরো দলটাতে।
বন্যা-দুর্গতদের চিকিৎসা হচ্ছিল অস্থায়ী একটি ক্যাম্পে। ক্যাম্প, মানে একটা তাঁবু। ঝড়বৃষ্টি-বন্যার মাঝে চিকিৎসা করার সময়েই বজ্রপাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন চন্দ্রকান্ত। বেঁচে গেলেও যেতে পারতেন হয়ত, কিন্তু ওই জায়গায় জুতো পরে কাজ করতে অসুবিধে ছিল বলে তিনি খালিপায়ে ছিলেন। খালিপা, ভেজামাটি – বিদ্যুৎস্পৃষ্ট চন্দ্রকান্তকে বাঁচানো যায়নি।
মুম্বাইয়ের এক প্রথম সারির হাসপাতালে কাজ করতে করতে ঠিক কীসের ডাকে চন্দ্রকান্ত দৌড়ে গেলেন এমন পরিস্থিতিতে, যেখানে খোলা আকাশের নীচে মাঠের মধ্যে তাঁবু খাটিয়ে খালিপায়ে দৌড়ে মানুষের চিকিৎসা করতে হয়?
একইসঙ্গে এই প্রশ্নও জরুরী, ঠিক কেন, স্বাধীনতার পরে সত্তর বছরেরও বেশী অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও, বন্যায় সব হারানোর পরে, আতঙ্কিত বিহবল মানুষদের সামনে অন্যতম প্রাথমিক দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় চিকিৎসার অভাব? যে অভাবের সুরাহা চন্দ্রকান্তের মতো মানুষেরা দৌড়ে না গেলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না??
দুটো প্রশ্ন আপাত-বিচ্ছিন্ন হলেও অতখানি আলাদা নয়। স্বাধীনতার পরে এতগুলো বছর অতিক্রান্ত হলেও, সরকারবাহাদুর দেশের সব মানুষের নাগালের মধ্যে, সামর্থ্য ও ভৌগোলিক উভয় অর্থেই, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা আনতে পারলেন না – অতএব, চন্দ্রকান্তরা না দৌড়োলে, ডাঃ চন্দ্রকান্ত পাটিলের মতো কতিপয় মানুষের বিবেক জাগ্রত না হলে, জলে পড়া মানুষজনের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয় না – আর হয়ত সেখানেই, আজকের এই আলোচনাসভার তাৎপর্য।
চন্দ্রকান্ত যে কাজ করেছিলেন, সে, সম্ভবত, চিকিৎসক পেশার সাথে আবহমান কাল ধরে জুড়ে থাকা দায়বদ্ধতার অনুভব – বা বৃহত্তর অর্থেই, পেশানিরপেক্ষ সহমর্মিতার অনুভব – পৃথিবীর সবদেশে সবকালেই কিছু মানুষের মধ্যে এই বোধ থাকে। সে বোধ আরো বেশী মানুষের মধ্যে থাকলে ভালো হয় – কিন্তু, অনেক ভালো হয়-এর মতো, এক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সুলভ নয়।
কিন্তু, পাশাপাশি একটা অপ্রিয় প্রশ্ন। দুর্ঘটনায় পড়ে মারা না গেলে, আমরা কি আদৌ চন্দ্রকান্ত পাটিলের নাম জানতাম? জানতে পারতাম?? ধরুন, ওই টিমে বাকি ডাক্তারদের নাম কেউই কি জানি? আরো সাধারণ প্রশ্ন, সেদিন, ওই একই বজ্রপাতে যদি মারা যেতেন আট কি দশজন চিকিৎসক, কেউ কি মনে রাখতেন তাঁদের দশজনের নাম?? তাহলে কি আমরা চন্দ্রকান্ত পাটিলকে মনে রেখেছি যতখানি না তাঁর অসামান্য সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সহমর্মিতার বোধের কারণে, প্রায় ততখানিই ব্যক্তিক্রমী পরিবেশে একক মৃত্যুর কারণে। কথাটা সত্যি হলে, খুবই দুর্ভাগ্যজনক সত্য।
বিশ্বাস করুন, প্রশ্নটা খুব অবান্তর নয়। চন্দ্রকান্ত পাটিল, বা চন্দ্রকান্ত পাটিলরা স্বীকৃতির লোভে অপরের দুঃখে ঝাঁপিয়ে পড়েন, এমন কখনোই নয়। যাঁরা এমন করে অপরের জন্যে করেন, তাঁদের দেখে বহু মানুষ উৎসাহিত হন, উদ্দীপিত হন – আজকাল শব্দটা একটু ওজন হারালেও বলি, অনুপ্রেরণা পান। চন্দ্রকান্ত আর নেই – কিন্তু, চন্দ্রকান্তরা আছেন। তাঁদের কথা জানা ও জানানো জরুরী। যেমন ধরুন, এই আমফান-কোভিড দ্বিমুখী দুর্দশার মধ্যে বহু চিকিৎসক রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্যশিবিরের আয়োজন করেছেন। শুধু চিকিৎসকরাই বা কেন, অন্যান্য পেশার সাথে যুক্ত মানুষ বহু জায়গায় কমিউনিটি কিচেন করে ক্ষুধার্তদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন – বিভিন্নধরনের জনকল্যাণমূলক কাজ চলছে – অনেকটাই অসরকারি উদ্যোগে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে। প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্পই হয়ত উদ্যোগ। তবু, তাঁদের কথা জানা ও জানানো জরুরী। নাহলে আরো বেশী মানুষ এগিয়ে আসবেন না।
কেরিয়ার গুছিয়ে নেওয়ার সময়ে অপরের জন্যে দৌড়াদৌড়িকে অনেকেই ভাবেন, সময়ের অপচয় – ভাবেন, বোকামো। এটা তো সত্যিই, দুর্গতদের জন্যে ছুটে বেড়ানোর পরিবর্তে সেই সময়টা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলে তথাকথিত সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে। অপরের দুঃখে কাতর হওয়া বা সেই দুঃখনিরসনে ব্রতী হওয়া এক মহৎ গুণ – সেই গুণের সামান্যতম সামাজিক সম্মান যদি না থাকে, তাহলে সেই স্বীকৃতির অভাব বিপরীতে তথাকথিত বোকামি বলে দাগিয়ে দেওয়াকেই মান্যতা দেয়। আরো চন্দ্রকান্তদের হয়ে ওঠাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আসা যাক।
এই কোভিড-পরিস্থিতিতে দেশে মারা গিয়েছেন কয়েকশো ডাক্তার – নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী ধরে পুরোটা হিসেব করলে হাজারের অনেক বেশী তো বটেই। কজন ভেবেছেন, সংখ্যাটা নিয়ে? সংখ্যার পিছনে থাকা একেকখানা পরিবার নিয়ে?? আর যাঁরা মারা যান নি, লড়াইটা লড়ে যাচ্ছেন দাঁতে দাঁত চেপে?
আমার এক বন্ধুর কথা বলি। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ডাক্তার। বছর পাঁচেকের একটি সন্তান। কোভিড মহামারীর শুরুর দিকে একজন আক্রান্তের সংস্পর্শে এলেই ডাক্তারকে বিভিন্ন সাবধানতা অবলম্বন করতে হত। তারপর অবশ্য আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় সেসব সাবধানতার বাণী ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। এমনই একজন রোগীর রিপোর্ট পজিটিভ এলে বন্ধুকে আলাদা থাকতে হয় – বাড়িতেই। ছেলে খুব অবাক হয়ে দ্যাখে, বাবা দূরে থাকে – আগের মতো আর আদর করে না – একসাথে খেতে বসে না – আলাদা ঘরে ঘুমোয়। এরকম চলতে চলতেই মায়েরও এক রোগীর রিপোর্ট পজিটিভ। এরপর ছেলে রাত্তিরে ঘুমোবে কার পাশে?
খুব খুউব সাধারণ ঘটনা। কিন্তু, বিশ্বাস করুন, আমাদের আশেপাশে এই ছোট ছোট মানুষদের সাধারণ ঘটনাগুলো নিয়েই আমাদের জীবন। মহত্ত্ব খুব বড় ব্যাপার, কিন্তু বিরলও বটে। মহত্ত্ব অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে – কিন্তু, সমাজটাকে চিনতে হলে, বুঝতে হলে ওই ছোট ছোট ছবিগুলোকে বোঝা জরুরী।
এই ছোট ছোট মানুষগুলোই – যাঁদের মধ্যে কেউ ডাক্তার, কেউ নার্স, কেউ হাসপাতালের সাফাইকর্মী, কেউ পুলিশ, কেউ ব্যাঙ্কে চাকরি করেন কিম্বা সরকারি অফিসে – তাঁরা সবাই মিলেই এই লড়াইটা এমন করে খুব সাধারণভাবে লড়ে যাচ্ছেন – লড়াইটা এই ছমাসে পড়ল, আরো কতদিন, কেউই জানি না – লড়াইয়ের শেষটা এই ছোট ছোট মানুষগুলোর সবাই দেখে যেতেও পারবেন না – দেখে যেতে পারবেন না, এটা জেনেও তাঁরা লড়াইটা লড়ছেন। আজকে এখন স্বাস্থ্যকর্মী বা হয়ত আরো বিশেষ করে ডাক্তারদের নিয়ে বলছি – কিন্তু, এই কথাগুলো বাকিদের জন্যেও প্রযোজ্য।
না, বিশ্বাস করুন, আপনি ব্যালকনিতে গিয়ে থালা বাজিয়েছিলেন বলে উদ্দীপিত হয়ে তাঁরা লড়ছেন, এমন নয়।
না, লড়তে গিয়ে মরে গেলে তাঁদের নামে মর্মরমূর্তি স্থাপিত হবে, এই আশাতে তাঁরা লড়ছেন, এমনও নয়। কেননা, বন্ধু-সহকর্মী-সিনিয়র দাদা-দিদি-দের মধ্যে কাউকে না কাউকে প্রতিটি ডাক্তারই হারিয়েছেন, এবং তাঁরা দেখতে পেয়ে গেছেন, আলাদা করে সম্মান মেলা তো দূর, বেশ কিছু ক্ষেত্রে পড়শিদের হেনস্থার শিকার হয়েছেন পরিজন। অতিমারীর শুরুর দিকে এক চিকিৎসক কোভিডে মারা গেলে, তাঁর স্ত্রী খুব কাতরভাবে অনুরোধ করেছিলেন, তাঁর কোনো সম্মান বা স্বীকৃতি চাই না, শুধু স্বামীর কোভিডে মৃত্যুর খবরটা যথাসম্ভব গোপন রাখলেই ভালো হয় – গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো শোকের মধ্যে সামাজিক হেনস্থা তিনি চাইছেন না।
চিকিৎসক নিজেও দেখতে পেয়েছেন, এতদিনের পরিচিত প্রতিবেশী, যাঁরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সাহায্য চাইতেন, তাঁরাও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সাথে যুক্ত লোকজনকে প্রায় অস্পৃশ্যদের মতো করে এড়িয়ে চলছেন। অনেককে পাড়াছাড়াও হতে হয়েছে। কাজেই, লড়াইয়ের দিনগুলোতে সহযোগিতা নেই, লড়াইয়ে হেরে গেলে স্বীকৃতির প্রশ্ন নেই – লড়াইয়ের শেষ অব্দি টিকে থাকতে পারলে এমনও শুনতে হতে পারে, বাব্বা, পয়সার কী লোভ, রিস্ক জেনেও ইনকামের লোভে রোজ হসপিটাল যাওয়াটা ছাড়তে পারেনি।
তবু, তাঁরা লড়ে যাচ্ছেন। অন্তত, অধিকাংশ ডাক্তারবাবুই হাসপাতালে এসেছেন নিয়মিত। প্রাইভেট চেম্বারের কথা বলতে পারব না, সেখানে সুরক্ষা বা দূরত্বের সাবধানতা বজায় রাখা কঠিন – কিন্তু, লকডাউনে রোগীরা হাসপাতালে আসতে পারেন নি অনেকসময়, তবু, আবারও বলি, বেশীর ভাগ ডাক্তারই এসেছেন।
ঠিক কেন, বলা মুশকিল। স্বীকৃতির লোভ থেকে নয় – বললামই তো, ওটুকু বোধিলাভ ইতিমধ্যে সবারই হয়েছে। কোনো মহত্ত্বের বোধ থেকেও নয়, কেননা মহত্ত্ব ব্যাপারটা অতো সুলভ নয় – সকলের মনে পাইকারি হারে জন্মাবে, এমন আশা কম।
তাহলে??
আসলে, এই ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী, এনারা অন্য কোনোভাবে ভাবতে শেখেনি। এনাদের লেখাপড়া-ট্রেনিং সবকিছুর মধ্যেই ব্যাপারটা এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে, সেটাকে অস্বীকার করে বাঁচা মুশকিল। ডাক্তারদের নিয়ে সমাজের চালু ভাবনার প্রেক্ষিতে কথাটা অবিশ্বাস্য শোনালেও, কথাটা সত্যি। হাসপাতালের দরজা পেরিয়ে ঢোকার পরের মুহূর্তে এনারা দেবতুল্য হয়ে যান, এমন হাস্যকর কথা একেবারেই বলছি না – মানবজাতির সেবার উদ্দেশেই এই চিকিৎসকজন্ম, এই তাড়নায় সব্বাই ভুগতে থাকেন, বা রোগীর ভালো করতে গিয়ে সব্বাই জগতসংসার বিস্মৃত হন, এমন কথাও বলছি না – কিন্তু, ব্যক্তিগত ঝুঁকি থেকে নিজেকে প্রথমেই বাঁচানোর কথাটা বা আপনি বাঁচলে বাপের নামের আপ্তবাক্যখানা চিকিৎসা করার সময় মাথা থেকে বেরিয়ে যায়, এইটুকু বিশ্বাস করতে পারেন।
আর, বিশ্বাস করুন, এই বোধটুকুকেই ঠিকভাবে সারজল দেওয়া গেলে অনেক চন্দ্রকান্ত পাটিল জন্মাতে পারে। চিকিৎসা, তাকে পেশা, সেবা বা পরিষেবা যা-ই বলুন, তার মধ্যেই ওই শুধুই নিজের স্বার্থ চেনার আগে বাকিদের কথা ভাবার অনুভবের বিষয়টা আছে। কিন্তু সেটা পরবর্তী উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে, ওই যে বললাম, সারজল দেওয়া গেলে, তবে।
আজকাল আমরা খুব পরিবেশ দূষণ নিয়ে কথাবার্তা বলি – বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, মাটিতে-খাবারে-জলে মিশে থাকা রাসায়নিক দূষণ। কিন্তু, মর্যাল এনভায়রনমেন্ট বা নৈতিক মূল্যবোধের পরিবেশটা নিয়ে, তার দূষণ নিয়ে কেউ কথা বলি না – কথা বলা তো দূর, ভাবিই না। অথচ, আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি পদক্ষেপের ক্ষেত্রে এই নৈতিক মূল্যবোধের পরিবেশ নির্ণায়ক ভূমিকা নেয়।
এই বিশেষ পরিবেশ-দূষণ নিয়ে যতক্ষণ না সচেতন হচ্ছি, যতক্ষণ না অব্দি সার্বিকভাবেই নৈতিক মূল্যবোধের পরিবেশটার উন্নতির কাজে হাত লাগাতে পারছি, ততদিন অব্দি চন্দ্রকান্তরা ব্যতিক্রম হয়ে থাকবেন।
হ্যাঁ, ডাক্তাররা চিকিৎসা করবেন, করে চলবেন – যেমন করছেন। আজ কোভিডের মুহূর্তে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি নিয়ে এত কথা হচ্ছে, কিন্তু অন্যসময়েও ছোঁয়াচে অসুখের চিকিৎসা করার সময় ডাক্তাররা বাড়তি ঝুঁকি নিয়েই থাকেন – এইডস রোগীর অস্ত্রোপচারের সময় সার্জেনের ঝুঁকি কিছু কম নয় – অথবা ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট টিবির চিকিৎসা করেন যিনি, সেই ফিজিশিয়ানের। এই ঝুঁকিগুলোর জন্যে ডাক্তার বিশেষ সুবিধে বা স্বীকৃতি দাবী করেন, তা নয় – কিন্তু, টাকা ইনকাম করতে হলে ওসব রিস্ক তো নিতেই হবে গুরু বা পাব্লিকের টাকায় পড়ছে, তাহলে দরকারের সময় করবে না কেন, শুনলে সেবার মনোবৃত্তি বা ওরকম কিছু দৈবাৎ প্রাণে জাগলেও তড়িঘড়ি বিলুপ্ত হয়।
যাক সেসব কথা। চন্দ্রকান্ত পাটিলের কথা এবং সমকালীন সামাজিক ধ্যানধারণার কথা, দুটোকেই পাশাপাশি রেখে শুভ দাশগুপ্ত-র একখানা কবিতার কিছুটা অংশ শুনিয়ে শেষ করি।
“ক্ষুদিরাম হবে পাশের বাড়ির ছেলে।
দেশের জন্য লড়াই করবে ও পাড়ার ওরা–
আমার ছেলে ঘাড় গুঁজে ক্যারিয়ার বানাবে,
বিজ্ঞান শিখবে। অঙ্ক শিখবে, কবিতা শিখবে।
বড় বড় মণীষীদের জীবনী পড়বে।
দেশের জন্য মুখের রক্ত তুলবে ও পাড়ার ওরা
আমার ছেলে আমার রক্ত জল করা পয়সা
সুদে আসলে উসুল করবে।
নেতাজী সুভাষ হয়ে দুরন্ত দুঃসাহসে ঘর ছাড়বে
অন্য কেউ। আমার ছেলে নেতাজীর জীবনী লিখে
এ্যাওয়ার্ড পাবে।”
অতএব, আমরা এরকম করেই ভাবব। আর চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে বলব, ডাক্তারগুলো বড্ডো কমার্শিয়াল হয়ে গ্যাছে। চন্দ্রকান্ত পাটিলের নাম মনে এলে বলব, এনাদের দেখেও এইসব চামার ডাক্তারগুলো যদি একটু শেখে!!! অর্থাৎ, অপরে শিখুক, অপরে করুক – একটি বিশেষ পেশার মানুষ কেন পরার্থপরতা শিখছে না, সে নিয়ে ঘরের নিশ্চিন্তিতে বসে চাট্টি পাড়া গরম করা বক্তব্য দেব – কিন্তু, নিজের বাড়ির ছেলেটি বা মেয়েটি ডাক্তার হওয়ার পরে গাড়িবাড়ি হাঁকানোকে প্রাথমিক মোক্ষ না করতে চাইলে তাকে জোর ধমকাবো – আমার বা আমাদের নিজের নিজের পরিসরে পালনীয় কর্তব্য বলে তো কিছু নেই। তাই না??
কোভিডের আগে যেমন, কোভিডের পরেও এমনটাই চলবো??
লিভার ফাউন্ডেশন আয়োজিত কোভিডকাল ও ডাক্তারি বিষয়ে ডাঃ চন্দ্রকান্ত পাটিল স্মারক আলোচনাসভায় লেখকের বক্তৃতা ।
চন্দ্রকান্ত পাতিল কে নিয়ে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক লেখা।গরুর রচনার মতন “সব সমস্যার সমাধান সরকার বাহাদুর করবেন”,কারন ৭০ বছর আগে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।অটোর পিছনে লেখা থাকে “ট্রাফিক আইন মেনে চলুন”!এটা লেখা থাকলে আইন মেনে চলার দায়বদ্ধতা থাকে না।ক্ষুদিরামের মৃত্যুবরণ কে যদি শ্রদ্ধা জানাই, তবে কি অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অসন্মান করা হয়?
শুভ দাশগুপ্তের কবিতা নেই কেন?সেটাই তো চিকিৎসকদের জন্য এইমুহুত্বে সবচেয়ে বড় শ্লোগান !
কমেন্টখানা পড়ে বেশ লাগল। শুভ দাশগুপ্তর কবিতা তো আছে। গোমূত্রময় চোখে দেখতে পায়নি হয়ত।
গোরুর রচনাকে ব্যঙ্গ করবেন না, প্লীজ। ওই গোরুর ন্যাজ ধরেই আপনি মুক্তি খুঁজছেন। পেয়ে যাবেন, এই শুভেচ্ছা রইল।
গরুর দুধে সোনা ভুললে হবে।
সেদিনের আলোচনার বিষয় ছিল “করোনাকাল ও ডাক্তারি”!এই অনুষ্টানে আর্ও তিনজন বক্তা ছিলেন।আপনার বক্তব্য “প্রস্রাব না বিষ্ঠা” বোঝা দুষ্কর।
রাজনৈতিক নোওড়ামীর কারনে গরু,গোমাংস, গোমুত্র,গোদুগ্ধ,গরু দুধে সোনা এর বাইরে বেরিয়ে আসতে পারছেন না।চালিয়ে যান।
খুব প্রাসঙ্গিক লেখা। একটু চশমা খুলে পড়তে হবে। লেখার মাত্রা না বুঝলে শব্দ প্রয়োগে ভুল হবে।
@নির্মলকুমার সাহা, বাংলাটাও লিখতে জানেন না – ইংরেজি তো দূর। স্থানীয় লোকজনের কাছে খোঁজ নিলে আপনার “ডাক্তারি ব্যবসা”-র খবর ভালোই পাওয়া যায়। কাজেই, প্রস্রাব-বিষ্ঠার বাইরে বেরোতে পারবেন না, জানি – কেননা, ওসবই আপনার পোটেনশিয়াল উপার্জনের রাস্তা।
ইন ফ্যাক্ট, আপনাদের মতো ডাক্তারদের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়েই সংরক্ষণের বিরোধীরা যুক্তির জোর পায়।
ভালো থাকুন। একটা সদুপদেশ দিই – স্বমূত্র পান করুন। গোমূত্রের মতোই উপকার পাবেন। ইন ফ্যাক্ট, রাসায়নিক পরীক্ষাতেও ফারাক করা যাবে না।
বেজায় চটেছেন।ডা রেজা,কৌশিক চাকির মতন কবে তৃনমুলের ফ্ল্যাগ নিয়ে ছবি দেখতে পাব।
আমন্ত্রণ রইল,বহরমপুর শহরে আমার ব্যাবসা দেখে যান।মুত্র দোষ, আপনাকে ছাড়বে না।
ব্যবসা-র পরিস্থিতি বাড়তি আ-কার দেখেই স্পষ্ট।
রেজাদা বা চাকীদাকে নিয়ে আপনার কথা বলা মানায় না, দাদা। আপনার মতো মুসলমান-বিদ্বেষী বা ধর্মীয় ঘৃণার লালনপালন খুব কম লোককেই করতে দেখেছি। এবং, আপনার অধিকাংশ রোগীই ধর্মপরিচয়ে মুসলমান। ঠিক কী চিকিৎসা তাঁরা পেতে পারেন আপনার ঘৃণাপূর্ণ মানসিকতার কাছ থেকে!!! (আমার দাবীর সপক্ষে আপনারই মেসেজের ডকুমেন্ট হাতে আছে কিন্তু – এবং সেই ঘেন্না শালীনতা-বর্জিত – আপনার সম্মান, মানে যেটুকু আছে আর কী, সেটুকু নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে।)
রেজাদা বা চাকীদা তৃণমূল জয়েন করলেও (ও হ্যাঁ, তৃণ বানান মূর্ধণ্য) আপনার মতো নীচ মানসিকতার প্রাণী নন। খামোখা তাঁদের নাম এক্ষেত্রে না তোলাই ভালো।
আপনি বরং দিলীপ ঘোষের অণ্ডকোষের সমস্যার সমাধানের বিশ্বস্ত সঙ্গী হওয়ার লড়াই জারি রাখুন। তবে, একটাই মুশকিল, ওনারা, শুনেছি, বড্ডো জাতের উঁচুনিচু বাছেন। আপনার চান্স পাওয়া মুশকিল।
তবে, লেগে থাকুন। হয়েও তো যেতে পারে!!!
আমি হার স্বীকার করছি।কোথায় চন্দ্রকান্ত পাতিল আর কোথায় দিলীপ ঘোষের অন্ডকোষ!!এরমধ্যে ডাক্তারি ব্যাবসা,সংরক্ষণ হিন্দু মুসলমান ব্রাহ্মণ schedule caste।
আমি কোনদিনও আপনার সঙ্গে লাগতে যাব না।কারন এতটা নিচে নামতে পারব না।
এটাই শেষ লেখা।
‘সারজল’ দিতে হবে আমাদেরই চেতনার শিকড়ে। নয়তো এই সোনায় বাঁধানো বক্তৃতাখানার মর্মোদ্ধার হবে না।অপব্যাখ্যাও করা সম্ভব!
সে?দিন ওই লাইভ অনুষ্ঠান আগাগোড়া শুনেছি। ইমোশনালি ক্যারেড অ্যাওয়ে হয়েছি যথারীতি।কারণ আমরা এত স্বার্থপর ও ধান্দাবাজ যে মানুষ মানুষের মতো কাজ করলে অবাক হয়ে যাই…
অনেক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা বিষাণ বসুকে।