৭/৩/১৯৮৩
প্রিয় চঞ্চলা, জরুরী একটা কাজ পাঠাচ্ছি। হসপিটাল inauguration হচ্ছে ৩রা জুন। মাদার টেরেসাকে দিয়ে inauguration করাতে চাই। ওনাকে লেখা চিঠিটা তোর কাছে পাঠালাম। তুই চিঠিটা মাদার টেরেসার কাছে নিয়ে যাস। চিঠিটা হাতে হাতে দিতে হবে – দরকার মনে হলে বন্ধু বান্ধব কাউকে নিয়ে যাস – on behalf of CMSS তোকে একটু request করতে হবে, যাতে আসেন। এখানকার ব্যাপারে কিছু বলিস- political ব্যাপার বেশী নয়—হাসপাতাল গ্যারেজ, স্কুল, শরাববন্দী এইসব, তারপর কি হল তাড়াতাড়ি জানাস। সবাই anxiously wait করে আছি।
(শেষ পর্যন্ত মাদার টেরেসা আসেননি। অভিনন্দন জানিয়ে একটা চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যেটা হাসপাতাল inauguration এর সময় পাঠ করা হয়েছিল)।
১১/৩/১৯৮৩
কয়েকটা রুগী দেখে লিখতে বসলাম। মাথায় আবার উকুন হয়েছে। আজ ওষুধ লাগালাম, Lorexan head lotion.
১২/৩/১৯৮৩
দুদিন ভিলাই এ ছিলাম –তারপর কয়েকদিন বেশ ব্যস্ত ছিলাম। আজ সকাল থেকে breakfast চালু করেছি –দুটো করে ডিম এবং অন্য কিছু। শৈবাল তোর চিঠি পেয়েছে। অরবিন্দ কয়েকদিনের জন্য বাইরে গেছে। বইটা শেষ হল, শেষ হবার পর কিরকম একটা vacant feeling হচ্ছে। গতকাল আবার একটা ছোট gathering-এ বক্তব্য রেখেছি—লড়ে যাচ্ছি।
১৬/৩/১৯৮৩
পরশু রাতে আমি শৈবাল, নিয়োগী, আশা আরো কয়েকজন গিয়েছিলাম একটা গ্রামে –হাসপাতালের চৌকিদার নরশুর বিয়েতে। গোন্ড আদিবাসী ওরা। আমরা ‘টিকান” দিলাম। টাকা দিয়ে আশীর্বাদ। খাওয়া দাওয়া করলাম। এদের বিয়েতে বর বউ-এর কোনরকম আড়ষ্টতা নেই। অন্য সবাইকার মত সহজ। এছাড়া আনন্দ আর খুশী লুকিয়ে রাখার কোন চেষ্টাই নেই। রাত তিনটেয় ফিরলাম।
গতকাল দুপুরে আমি আর শৈবাল ইউনিয়ন অফিসে থেকে কেটে কোথায় যাবো ভাবতে ভাবতে—কোন যাওয়ার জায়গা নেই –বিনায়কের বাড়ি চলে গেলাম। আমি দই মাছ রান্না করলাম। শৈবাল vegetable soup, গৌরী মাছের ডিমের বড়া। ইলিনা chocolate custard. রাতে ওখানেই ছিলাম –সকালে চলে এলাম। আমার রান্নাটা বিচ্ছিরী হয়েছিল- সবাই বললো ভালো হয়েছে।
শৈবাল ভালো আছে। মাঝে মাঝেই ঝগড়া হচ্ছে। গৌরী কেমন ঠিক বোঝানো মুস্কিল –তবে গান গাইছে। Cultural team-এর সাথে যাচ্ছে। হোলীর প্রস্তুতি চারিদিকে। আন্দোলনও ধীরে ধীরে peak-এ উঠছে হোলীকে লক্ষ্য করে।
এখানে এখন জমিয়ে নাগাড়া বাজছে। হোলীর খুশিয়ালি তাতে আছে –তবে ধীরে ধীরে আন্দোলনের তাল ফুটে উঠছে। গতকাল থেকে নাগাড়ার আওয়াজ B. S. P. management-এর বুক কাঁপাতে শুরু করেছে।
আমার মাঝে মাঝে depression হয় তবে বেশীক্ষণ/ বেশিদিন থাকে না। এটা বোধ হয় আমার nature এর part! Depression-এর কারণটা অবশ্য অনেকদিন থাকে মনে—তা নিয়ে চিন্তা ও সিদ্ধান্ত ইত্যাদি হতেই থাকে। কিন্তু depression-এর phase-টা থাকে না।
আমার মনে হয় আমাদের প্রত্যেকেরই অনেক type-এর difference আছে। আর প্রত্যেকেরই একটা social role থাকা সম্ভব। তোর যা role হবে– সেই role আমারও হবে এমন কোন কথা নেই। যেমন ধরা যাক শৈবালের আর আমার role এবং type-এর difference, দুজন সম্পূর্ণ আলাদা type, একই movement-এ আমাদের role-ও different, কিন্তু দুজনের role-ই meaningful—আর আমার পক্ষে শৈবালের role নেওয়া সম্ভব না / vice versa. এখন সমস্যাটা হচ্ছে নিজের নিজের limitation-এর মধ্যে নিজের role খুঁজে নেওয়া। আজকের দিনে আমাদের মত যে কারোর ক্ষেত্রেই socially meaningful role নিয়ে এগোতে মাত্র কয়েকটা জিনিস দরকার। একটু সাহস আর নিজেকে বদলানোর মত আত্মপ্রত্যয়। তবে অনেক কষ্ট আছে। কিন্তু খুঁজে নিতে পারলে অনেক আনন্দও আছে।
যে কোন activity-তে মনের প্রভাব অসীম। মন— এমন একটা জিনিষ যা vicious cycle-এ আমার নিজের জীবনকে নষ্ট করে দিতে পারে। আবার একই মন আমার চালিকা শক্তি হতে পারে। আমার পক্ষে সম্ভব নয়— এটা যদি মনে হয়েছে তাহলে যা আমার পক্ষে সম্ভব তাও আমি পারবো না ।
আমি বোধহয় দুর্বোধ্য কিছু কথার খেলায় চলে যাচ্ছি। আগে এটাই decide করাটা দরকার আমি কোন দিকে, system-এর পক্ষে না system-এর against-এ। Compromise কথাটা পরে আসে (সেটা existence-এর জন্য)।
২২/৩/১৯৮৩
এখানকার situation— movement-গুলো peak-এ উঠেছে। খালি মনে হচ্ছে কয়েকটা— অন্তত ভিলাই হোটেলেরটা যদি ফৈসালা হয়ে যায় – তাহলে দোলে খুব হৈ চৈ হবে। (ভিলাই হোটেল ভিলাই স্টীল প্ল্যান্টের। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট ওটা চালাত private contractor দিয়ে। আমাদের সময় contract পায় কোয়ালিটি আইস্ক্রীমের মালিক সম্প্রদায়, ওরা contract পেয়েই সমস্ত কর্মচারীকে ছাঁটাই করে আর নতুন কর্মী নিয়োগ করা শুরু করে। কর্মীর সংখ্যা ছিল প্রায় আশি। এই কর্মচারীরা আমাদের ইউনিয়নের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু করে।
কর্মচারীরা ভিলাই হোটেলের পাশেই একটা বস্তীতে থাকতেন। সেখানে আমরা একটা ক্লিনিক চালু করি। আমি আর শৈবাল ওখানে নিয়মিত রুগী দেখতে যেতাম।
একটু দুরেই ছিল ভিলাই স্টীল প্ল্যান্টের slag dump, সেখান থেকেও রুগীরা আসত আমাদের দেখাতে)।
গৌরী এখানে ঝলমল করছে।
(গৌরী আমাদের কলকাতার বন্ধু যদিও বয়সে অনেক ছোট। খুব একটা পড়াশোনা করেনি। কাজও খুব একটা করত না। তবে খুব সুন্দর গান গাইত। রাজহরায় এসে বেশ কিছুদিন ছিল)।
ও এত সহজভাবে সবাইকার সাথে হাঁসি-ঠাট্টা করে—ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে, ইউনিয়ন লীডার থেকে সাধারণ মজদুর পর্যন্ত, তাই মনে হয় সবাইকার মন কেড়ে নিয়েছে। আসলে এখানকার সবাই আমাদের মত background-এর মেয়েদের সাথে মিশতে চায়, আকর্ষিত বোধ করে— ছেলেরা একটু আড়ষ্ট বোধ করে। কিন্তু গৌরীর যেহেতু আড়ষ্টতা নেই তাই ওকে দেখলেই সবাই খুশী হয়ে ওঠে। ও রোজই কিছু না কিছু করছে। কারোর কাছে গান শিখছে, কাউকে গান শেখাচ্ছে। কারোর বাড়ীতে গিয়ে রান্না করছে, লীডার শুরু করে সবাইকে ধমক লাগাচ্ছে, ইউনিয়ন অফিসে বসে চিৎকার করে গান গাইছে। মোটের উপর রাজহরায় ও ঝলমল করছে। কিন্তু ওর থাকাটা দিন দিনই সমস্যা হয়ে উঠছে। ও বিনায়কদের বাড়ীতে ওইভাবে থাকাটা মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু ওকে এ ব্যাপারে আমার পক্ষে মনে হয় কোন সাহায্য করা সম্ভব নয়। আমি কিই বা করতে পারি? ও এসেছে। ওকে আনা হয়েছে বিশেষ কিছু কারণে। কিন্তু এইভাবে বেশীদিন চলবে না। দেখা যাক কি হয়।
২৭/৩/১৯৮৩
আজ হোলী। অফিসে একলা বসে আছি, কয়েকজন আবীর মাখিয়ে গেছে। শৈবাল নিয়োগীর বাড়ীতে, আশার খুব জ্বর।
২৮/৩/১৯৮৩
গতকাল রাত্রে সারারাতই তক্ষলালের বাড়ীতে ছিলাম—তক্ষলালের যমজ কন্যা হল। (দুই বাচ্চাই সাত দিনের মধ্যে মারা যায়)। পরশুদিন রাতে আমাদের মেস ঘরে পাঁচটা মুরগী কেটে রান্না করলাম। গৌরী আমাকে assist করল। পনেরোজন মিলে খেলাম। ভালোই হয়েছিল। গতকালও খুব খাওয়া দাওয়া হয়েছে। এখানে একটা demand authority হোলীর আগে মেনে নিয়েছে। তবে ভিলাই হোটেলের সমস্যা এখনও মেটেনি।
৪/৪/১৯৮৩
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কয়েকটা programme নেওয়ার চেষ্টা করছি। এই কাজে ইলিনা আমাকে Our bodies ourselves বইটা এনে দিল। তুই দীপুর কাছ থেকে BP instrument, surgical instrument আর radio-টা নিয়ে আসিস। আর মধুর কাছ থেকে acupuncture set আর acupuncture notes নিয়ে আসিস।
৫/৪/১৯৮৩
2nd /3rd June inauguration হচ্ছেই hospital এর। ভাবছিলাম যে যদি একটা ক্যাম্প করা যায়, যাদের বাচ্চা নেই (primary/ secondary infertility –তাদের investigation, diagnosis, treatment –একমাস ধরে চালাতে হবে –pathologist চাই। তোর boss-এর সাথে কথা বলে জানাস feasible কিনা। আর কোন pathologist-এর সাথে কথা বলিস। দেখা যাক যদি দিদি (ডাঃ শীলা কুন্ডু) একমাস ছুটি নিয়ে থাকতে পারে। এ ব্যাপারে স্মরজিৎ, দীপু আর ডাঃ P. K. Sarkar (pharmacologist)-এর সাথে কথা বলিস।
৬/৪/১৯৮৩
রাজহরার ব্যাপারে তুই যা লিখেছিলিস ঠিকই। আবারও কিছুটা confusion তৈরী হয়েছে। দেখা হলে আলোচনা করবো।
ডিস্পেন্সারী বেশ ভালো চলছে। গতকাল পঞ্চাশজন রুগী এসেছিল, মহিলাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কিছু কিছু জিনিষ করার চেষ্টা করছি। একটা health education ক্লাস epidiascope এর মাধ্যমে। Pitocin injection নিয়ে একটা leaflet বার করেছি। dispensary-র pad ছাপিয়েছি। বিনায়ক কিছু survey করেছে। শৈবাল dispensary কে অনেক ভালো করে organize করেছে।
বাচ্চাদের নিয়ে আবার একটা লাইব্রেরী শুরু করেছি। এবারে response অনেক ভালো। আজই চালু করলাম। আপাতত শ-খানেক বই আর কিছু ম্যাগাজিন আছে।
চলবে……