চারিদিকে শুধু গুজব। মহামারীর সুযোগে গুজব হুহু করে ছড়িয়ে পড়ছে। কোনটা যে আসল খবর, কোনটা গুজব বোঝা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।
একজন কাউন্সিলার জ্বর নিয়ে আই ডিতে ভর্তি হওয়ার পর, মধ্যমগ্রামে গুজব রটছে কাউন্সিলারদের নিয়ে। গতকালই দুজন কাউন্সিলারের করোনায় মৃত্যু সংবাদ পেলাম। রোগীরাই দেখাতে এসে গম্ভীর মুখে জানালেন। আমি প্রতিবাদ করায় অত্যন্ত মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। বললেন, তাঁরা একদম নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পেয়ে তবেই বলেছেন। তাঁরা অত্যন্ত দায়িত্বশীল নাগরিক। গুজব রটানোর লোক নন।
পরে জানলাম দুজনেই বহাল তবিয়তে বেঁচে আছেন। এবং তার মধ্যে একজনের আদৌ করোনা হয়নি।
গুজব যে কোন লেভেলে যেতে পারে নোট-বন্দীর সময় চিকিৎসকরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন। সে সময়ে, যে সমস্ত ডাক্তারদের প্র্যাকটিস ও জনপ্রিয়তা একটু বেশি প্রায় সকলেরই মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলাম। মাঝে মাঝেই খবর পাচ্ছিলাম, সিবিআই বা ইনকাম ট্যাক্সের রেড হওয়ার পরে অমুক ডাক্তারবাবু আত্মহত্যা করেছেন অথবা মানসিক চাপে হার্ট এটাকে মারা গেছেন।
ব্যাপারটা এতদূর গড়িয়েছিলো, যে অনেকেই ডাক্তারবাবুর বাড়ি পৌঁছে গেছিলেন শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। ওষুধ কোম্পানি আর ল্যাবরেটরি থেকে ডাক্তারবাবুর বাড়ি ফুল পাঠানো হয়েছিল। এবং প্রায় সব জায়গাতেই দেখা গেছিল, ডাক্তারবাবু স্বয়ং খবরের কাগজ পড়তে পড়তে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন অথবা রোগী দেখছেন। এখনও অনেক সিনিয়র চিকিৎসক সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে নিরাপত্তা হীনতা আর অবসাদে ভোগেন।
তবে গুজবের একটা ভালো দিকও আছে। লক ডাউনের শেষ কটা দিন সন্ধ্যেয় যখন রোগী দেখতে বেরতাম, রাস্তায় প্রচুর লোকজন দেখতাম। এখানে ওখানে জটলা দেখতাম। কালকে দেখলাম রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা। লোকজন আতংকে বাড়ি থেকে বেরচ্ছে না।
যদিও শেষ কয়েকদিনে পশ্চিমবঙ্গে করোনা তেমন থাবা বসাতে পারেনি। কেস বেড়েছে সামান্যই। কোন এক অলৌকিক উপায়ে মৃত্যুর সংখ্যা সাত থেকে কমে তিন হয়ে গেছে। সারা দেশে নিজামউদ্দিন ফেরত মানুষদের প্রায় ৩০% এর শরীরে কোভিড -১৯ এর জীবাণু পাওয়া গেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এক অজানা কারণে তাঁরাও কোভিড-১৯ কেসের সংখ্যা বাড়াতে পারেননি। অনেকেই গুজব রটাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গে কেস কম করে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমি এই গুজবের তীব্র পোতিবাদ করলাম!!?
আর একটা খবর দিই, ঢাল তলোয়ার ছাড়া যাদের যুদ্ধে পাঠানো হয়েছিল, তাঁরা এবার অধিকাংশই আহত হয়ে লড়াইয়ের মাঠ ছাড়তে শুরু করেছেন। দিকে দিকে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীরা কোয়ারাণ্টাইনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এখনও যদি উপযুক্ত পিপিই এর ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে আর কদিনের মধ্যে চিকিৎসক, নার্সের সঙ্কট দেখা দেবে। নিজেদের স্বার্থে সকল স্বাস্থ্যকর্মীর উপযুক্ত পিপিই এর দাবীতে সরব হন। নাহলে আপনার প্রিয়জনের যদি এসময় করোনা বা অন্য কোনো এমারজেন্সি হয়, তাঁর চিকিৎসার জন্য কোনও চিকিৎসক পাওয়া যাবে না।