আমার এক স্কুলের বন্ধুর আজ হেব্বি আনন্দ হয়েছিল। তবে বর্তমানে কি অবস্থায় আছে জানিনা।
বেচারা লক ডাউনের পর থেকেই মুচড়ে পড়েছিল আর মাঝে মাঝেই মুখ্যমন্ত্রীকে গালাগালি করছিল। সেদিনও গলা ব্যথা নিয়ে দেখাতে এসে মুখ্যমন্ত্রীর নামে একগাদা অভিযোগ জানিয়ে গেল।
আমি বললাম, ‘এই ব্যাটা, তোকে তো তৃণমূলের লোক বলে জানতাম। মুখ্যমন্ত্রীর উপর রেগে গেলি কেন?’
ও বলল, ‘পিসির সরকার ক্রমশ পি সি সরকার হয়ে উঠছে। মরা মানুষকে বাঁচিয়ে তুলছে। এটা সরকার চলছে, না ম্যাজিক শো।’
বললাম, ‘বাবারে…, তুই তো দেখছি জমির দালালি ছেড়ে দেশ ও দশের জন্য হেব্বি চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছিস। কি দিনকাল পড়ল!!’
বন্ধু বলল, ‘আচ্ছা ঐন্দ্রিল, তোর কাছে স্টকে কিছু আছে নাকি?’
আমি বললাম, ‘কি?’
তার স্ত্রী সঙ্গে এসেছিল। সে বন্ধুকে জোর ধমক লাগাল। ‘লজ্জা করেনা তোমার, ছি ছি, ডাক্তার দেখাতে এসে মালের খোঁজ করছ। দাদা, আপনি কিছু মনে করবেন না।’
আমি বললাম, ‘মনে করার প্রশ্নই নেই। কারণ আমি এখনও বিষয়টা বুঝতে পারিনি।’
বন্ধু বলল, ‘ন্যাকা। সব বুঝেও না বোঝার ভান করছিস। তোর কাছে মদের বোতল আছে? বিয়ার, হুইস্কি, রাম, জিন যা হোক? লক ডাউনের ঠেলায় গত সাতদিন ধরে এক ফোঁটাও মদ জোগাড় করতে পারিনি। এই দ্যাখ, হাত পা কাঁপছে। চোখে চার রাত্রি ঘুম নেই। তোদেরকে তো শুনি অনেক দিয়ে যায়।’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কে দিয়ে যায়?’
‘আরে ওই যে, ব্যাগ নিয়ে চুপি চুপি তোদের সাথে দ্যাখা করে না… ওই যে রে ওষুধ কোম্পানির লোকগুলো…’
‘মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ?’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওরাই। ওরা তো শুনেছি তোদের চাল, ডাল, আলু, গাড়ি, ফ্রিজ, মদের বোতল সব কিছু দিয়ে যায়।’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কোথা থেকে শুনলি?’
‘কেন প্রধানমন্ত্রীই তো বলেছেন। ওই যে লন্ডনে গিয়ে ভরা সভায় বক্তব্য রাখলেন, ওষুধের কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের বিদেশে বেড়াতে নিয়ে যায়। এমনকি মেয়ে ছেলে পর্যন্ত দেয়।’
বন্ধুর বউ ধমকে উঠল, ‘তুমি থামবে। মদ না খেয়েই মাতলামি করছ। নিজে তো অষ্টপ্রহর ঘরে শুয়ে বসে কাটাচ্ছ। চা দাও, চা দাও করে অস্থির করে দিচ্ছ। আর যাঁরা এই মহামারীর সময়ে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের আগলে রেখেছেন, তাদের নিন্দা করছ! নরকেও তোমার স্থান হবে না।’
বন্ধুটি বলল, ‘আহা আমি নিজের কথা বলেছি নাকি। এতো প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। নরকে গেলে প্রধানমন্ত্রী যাবেন, আমি কেন যাব। ঐন্দ্রিল যদি আমাকে একটা নীপ খাওয়ায় তাহলে খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমি ডাক্তারদের প্রশংসা করব আর প্রধানমন্ত্রীকে গালি দেব।’
আমি বললাম, ‘তোকে কিছু করতে হবে না ভাই। কারণ আমি তোকে মদ খাওয়াতে পারব না।’
বন্ধুর বউ বলল, ‘আপনি কিছু মনে করবেন না। বিয়ের পর থেকেই কি জ্বালায় যে জ্বলছি। এই প্রথম আশার আলো দেখছি। ও সাতদিন মদ না খেয়ে আছে। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি, লক ডাউনটা যদি আর কটা দিন বাড়ায় তাহলে হয়তো মদের অভাবে ও মদ ছেড়ে দেবে।’
বন্ধু বলল, ‘হ্যাঁ ছেড়ে দেব, এবার শিওর ছেড়ে দেব। ঐন্দ্রিল, তোর স্যানিটাইজারের বোতল থেকে দু ফোঁটা আমার হাতে দে।’
আমি ওর হাতে ঢেলে দিলাম। ও ভালো করে শুঁকে বলল, ‘আহা, গন্ধেই অর্ধেক ভোজন। চলি।’
আজ রাত্রে রোগী দেখে বাড়ি ফিরে স্নান টান সেরে ফেসবুক খুললাম। এবং ফেসবুক খুলে চমকে গেলাম। সেই বন্ধু যে কিনা স্কুলে রচনা কোনোদিন একশ শব্দের বেশি লেখেনি, সে প্রায় পাঁচশো শব্দের এক সাংঘাতিক স্ট্যাটাস নামিয়েছে। তার পোষ্টে সে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মদের সরবরাহ আবার শুরু করার জন্য। তাতে চার ঘণ্টায় চারশোরও বেশি লাইক। দেড়শ মন্তব্য। আমি দেখে শুনে ঘেঁটে গিয়ে একটা মন্তব্য করেছিলাম, ‘ ইয়ে… এটা কি ঠিক হল। মদকে কি অতি আবশ্যকীয় পণ্য বলা যায়?’
বন্ধু মন্তব্যের উত্তর দিয়েছে, ‘তুমিও তো বাবা মিষ্টির দোকান খোলার পর অনেক হেজিয়ে দেড়পাতা জোড়া পোষ্ট নামিয়েছিলে। যার যাতে নেশা হয়। নিজের বেলায় আঁটি শুঁটি, পরের বেলায় চিমটি কাটি।’
আহা, আহা, এটা লেখার পর জানতে পারলাম, খবরটা ফেক। সম্ভবত এরকম একটা অর্ডার হয়েছিল। আবার প্রত্যাহার হয়েছে। এখন যদি একবার বন্ধুর মুখটা দেখতে পারতাম।?