রোগীর চাপে বাকি সব কিছু মাথায় উঠেছে। সকাল থেকে রাত অবধি রোগী দেখছি। তাও সামলাতে পারছি না।
সামলানোর জন্য নাম লেখার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। তাতে রোগীরা দুই তিন দিন পরে তারিখ পাচ্ছেন। কিছু কিছু রোগীর অবস্থা খারাপ। দু-তিন দিন দেরি করলে এ জীবনে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ আর নাও পেতে পারেন। তাঁরা অনেকেই নাম ছাড়াই চলে আসছেন।
এই এমার্জেন্সি রোগীদের নিয়ে ঝামেলা বাঁধছে। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট সঞ্জয়দার গলা মাঝে মাঝেই চড়ছে। ‘আপনি তো মশাই দিব্যি গটগট করে হাঁটছেন। আপনার কিসের এমার্জেন্সি?’
‘আমার কাল থেকে ঘন ঘন হাই উঠছে।’
সঞ্জয়দা বলল, ‘হাই তোলাও যদি এমার্জেন্সি হয়, তাহলে তো সবই এমার্জেন্সি। কোমরে ব্যথা, সর্দি জ্বর, পায়ে ঝিঁ ঝিঁ, ঘুম না হওয়া- কেউই আর নাম লিখবেন না।’
ভদ্রলোকের গলা পেলাম, ‘হাই কেন ওঠে জানেন? কোন আইডিয়া আছে আপনার? মাথায় অক্সিজেন কম গেলে হাই ওঠে। মাথায় অক্সিজেন কম যাওয়া এমার্জেন্সি নয়? অক্সিজেনের অভাবে আমার মস্তিষ্কের কোষের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে জানেন?’
সঞ্জয়দা বলল, ‘দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে নয়- আমার ধারণা ইতিমধ্যেই ক্ষতি হয়ে গেছে।’
ভদ্রলোক কর্ণপাত করলেন না। বলেই চলেছেন, ‘তাছাড়া গতবছর হাই তুলতে গিয়ে আমার চোয়াল লক হয়ে গেছিল। সে এক বিচ্ছিরি অবস্থা।’
সঞ্জয়দা বলল, ‘আপনি আগে মাস্ক পরুন, তারপর বাকি কথা বলবেন।’
‘সে কি! আপনি জানেন না মাস্ক পরলে মাথায় অক্সিজেন কম যায়। এমনিতেই আমার অক্সিজেনের অভাব।’
‘মাস্ক ছাড়া আপনাকে ঢুকতে দেবো না।’
বাইরে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হতে চলেছে। আমি দীর্ঘশ্বাস চেপে রোগী দেখায় মন দিলাম।
প্রায় সকলেই জ্বরের রোগী। এক পরিবারের আটজন দীঘা গেছিলেন। আটজনেরই জ্বর এসেছে। তাঁদের মধ্যে একটি যুবকের অবস্থা সুবিধার নয়। বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হচ্ছে। কিছু খেলেই বমি করছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন নব্বই শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে।
অথচ আশ্চর্য জনক ভাবে বাড়ির সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য, বাহাত্তর বছরের মানুষটি সুস্থ আছেন। তাঁর সামান্য জ্বর আর গলা খুসখুস ছাড়া কিছু নেই। করোনা যে কার ক্ষেত্রে কি রূপ নেবে আগে থেকে বলা মুশকিল।
এই মহামারীর মধ্যে দীঘা যাওয়ার জন্য ঝাড় দিলাম। যুবকটিকে কোথাও ভর্তি করতে বললাম।
আর ভালো লাগছে না। সেই মার্চ মাস থেকে একটানা রোগী দেখে যাচ্ছি। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা তবু ছুটি পান। আমাদের মতো খুপরিজীবী চিকিৎসকদের কোনো ছুটি নেই।
লকডাউনের প্রথমদিকে রোগীর চাপ কম ছিলো। একটা যুদ্ধ যুদ্ধ আবহাওয়া ছিলো। খারাপ লাগছিলো না। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তত অবসাদে ডুবে যাচ্ছি।
করোনার বাড়বাড়ন্ত অবসাদকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ এক মহা জ্বালা। যুদ্ধে গো হারান হেরে গেছি। তবু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। রোজই একাধিক পরিচিত চিকিৎসকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি। একাধিক চিকিৎসক মারাও যাচ্ছেন।
যে কোনো কারণেই হোক মৃত্যুহার আমাদের মত খুপরিজীবী চিকিৎসকদের মধ্যে অত্যন্ত বেশি। চিকিৎসক মৃত্যু হাফসেঞ্চুরি পেরিয়েছে। তার মধ্যে অন্তত চল্লিশ জন প্রাইভেট প্রাকটিশনার। সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনায় মৃত্যু হার ২% এর কম, আর খুপরিজীবী চিকিৎসকদের মধ্যে ২০% এর বেশি।
অবসাদ আরো বাড়ছে যখন দেখছি সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক নেতারা কেউই চিকিৎসকদের কথায় পাত্তা দিচ্ছেন না। দিব্যি দল বেঁধে দীঘা- মন্দারমনি ঘুরতে যাচ্ছেন। মারামারি করে পুজোর বাজার করছেন। হইহই করে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি চলছে।
এতদিন পুজো যতো কাছে আসতো, মনটা ততো ফুরফুরে হয়ে উঠতো। এবারে আতঙ্ক লাগছে। পুজোর পরে কি হবে জানিনা। দীর্ঘ সময় ধরে সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ করতে করতে অধিকাংশ চিকিৎসকই ক্লান্ত। পুজোর পরে যে করোনার ঢেউ আসতে চলেছে, সেটা আটকানোর ক্ষমতা এই ক্লান্ত চিকিৎসক গোষ্ঠীর নেই। নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে কয়েকটা দিন বিশ্রাম দরকার। কিন্তু তা এই মুহূর্তে পাওয়া অসম্ভব।
আবার নতুন রোগী ঢুকেছেন। ইনিও জ্বরে ভুগছেন। বললাম, ‘আপনিও কি দীঘায় গেছিলেন?’
‘দীঘা…’ রোগী হাসলেন। ‘ডাক্তারবাবু, একটা বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করতাম। লকডাউনের পর পরই কাজ চলে গেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এখন ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করি। একটা কাজ জোগাড় করে দিতে পারেন। যে কোনো কাজ…’
Amio engineer..90% marks BTech e peyechi…bekar ..je kono kaj korte raji..office e cha jol diteo raji achi..kintu kono kaj pachchi na..Psychiatrist o psychologist ke pala kore dekhie jachchi.. Janina er sesh kothay.. Karor sondhane kaj thakle janaben.. Badhito hobo
ব্যবসা করুন, চাষবাস বা পশুপালন ট্রাই করুন না! শিক্ষিত যখন তখন সাফল্য আসবেই। পিয়নের কাজ কেন করবেন? তাতে উন্নতি হবে কি?