মালতী দেবীর বয়স এখন ষাট বছর। মালতী দেবী গত একবছর বাড়িতে একাই থাকেন। তাঁর স্বামী গত হয়েছেন এক বছর আগে। একমাত্র ছেলে দিল্লিতে এক বড় প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করেন। ছেলে অনেকবার মাকে তাঁর কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। কিন্ত ভিটের টানে মালতী দেবী তাঁদের বর্ধমানের আদি বাড়িতেই থেকে গেছেন। স্বামীর মৃত্যুশোকও ক্রমশ কাটিয়ে উঠেছেন। কিন্তু গত কয়েকমাস যাবৎ তিনি এক অন্য সমস্যায় পড়েছেন। তাঁর সারা শরীর জুড়ে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে- যেন গায়ের চামড়ায় পোকা চলে বেড়াচ্ছে। প্রথম দিকে খালি রাত্রে ব্যাপারটা হচ্ছিল। এখন তো সবসময়ই একই অবস্থা।
সময়ের সাথে সাথে সমস্যার তীব্রতাও ক্রমশ বাড়তে লাগল। এক সপ্তাহে ছেলে এসে সব শুনলেন ও মাকে চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তারবাবু পরীক্ষা করে জানালেন যে চামড়ায় কোন পোকা নেই। এটা মনের ভুল।
ডাক্তারবাবুর কথা তাঁর মনে ধরল না। ডাক্তারবাবু রোগ ধরতে পারলেন না – এই ক্ষোভ নিয়ে মালতী দেবী বাড়ি ফিরে এলেন। ছেলে ও আত্মীয়-স্বজনেরা কেউই যদিও পোকা দেখতে পান না, তবুও মালতী দেবীর দৃঢ় বিশ্বাস যে তাঁর গায়ের চামড়ায় লক্ষ-লক্ষ পোকা আস্তানা গেড়েছে। তিনি নিজে কিন্তু পোকাগুলোকে দেখতে পান।ডাক্তারবাবুর ওপর বিশ্বাস হারিয়ে তিনি নিজেই কিছু টোটকা প্রয়োগ করেছেন। তিনি সারা শরীরে ভেসলিন, সর্ষের তেল, ডেটল, কেরোসিন, ভিনিগার অনেক কিছু মেখে দেখেছেন। দু-একদিন হয়তো একটু ভালো থেকেছেন। তারপর আবার যে কে সেই।
মাঝখান থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক লাগানোর ফলে তাঁর চামড়াতে ঘা হয়ে গেছে। এবারে যখন তাঁর ছেলে বাড়ি এলেন তখন ছেলে দেখলেন মায়ের শরীরে অজস্র কাটা দাগ। আসলে মালতী দেবী মারিয়া হয়ে নখ ও ব্লেড দিয়ে কেটে চামড়া থেকে পোকা বের করার চেষ্টা করছেন। তড়িঘড়ি মালতী দেবীকে আর এক চর্ম বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। এই ডাক্তারবাবু জানালেন যে রোগটি আদপে চামড়ার রোগই নয়।এটি আসলে একটি মানসিক রোগ এবং রোগটির নাম “ডিলিউশানাল প্যারাসাইটোসিস”।
“ডিলিউশানাল প্যারাসাইটোসিস” বা “একবোম সিনড্রোম” হল একধরনের মানসিক রোগ যেখানে রোগী মনে করেন তাঁর শরীরের চামড়ায় বা অন্য কোন স্থানে পোকা বা ওই জাতীয় কোন প্রাণী বাস করছে। অন্য কেউ ওই জাতীয় পোকা দেখতে না পেলেও এই রোগীরা পোকা বা ওই জাতীয় কিছু দেখতে পান এবং চামড়া থেকে ওই পোকাগুলিকে বের করার নানান পন্থা অবলম্বন করেন। যদিও তাতে সমস্যা কমে না।
পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। সাধারণ ভাবে ৫৫ থেকে ৭০ বছর বয়স্কদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়। কোকেন বা ওই জাতীয় কিছু মাদক দ্রব্য ব্যবহার করলে এই রোগ অল্পবয়স্কদের মধ্যেও দেখা যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে মস্তিষ্কের মধ্যে ডোপামিন নামক একটি রাসায়নিকের পরিমাণে বৃদ্ধি এই সমস্যার কারণ।
এই রকম সমস্যায় মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের অর্থাৎ সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
ভালো লেখা। বেশি করে লিখুন। মানুষ যত পড়বে তত সামাজিক ভাবে অন্য মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে। আমিও খুব উপকৃত হলাম।