লকডাউন লকডাউন লকডাউন। কথাটা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা।
মিডিয়া সারাক্ষণ একই বাণী শুনিয়ে চলেছে – আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যুর হিসেব – আর লকডাউন মানা হচ্ছে কি হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে কমিক রিলিফও থাকছে – জনপ্রিয় সুরে কথা বসিয়ে চালু ট্র্যাকে পুলিশ গান গাইছেন – ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বা উঁচু বাড়ির জানালা ফাঁক করে দেখছেন বাড়ির মহিলারা – কেউ কেউ হাততালি দিয়ে উৎসাহও জোগাচ্ছেন। কিন্তু, মিডিয়ার মূল ফোকাস সেই মৃত্যু আক্রান্ত আর লকডাউন – রাস্তাঘাটে বাজারে ধরা হচ্ছে তাঁদের, যাঁরা রাস্তায় বেরিয়েছেন প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনীয় কোনো কাজে – গলায় উত্তেজনার সুর এনে সাংবাদিক জানাচ্ছেন, লকডাউন মানছেন না অনেকে, যা কিনা ঘোর বিপজ্জনক ইত্যাদি ইত্যাদি – মাস্ক নামিয়ে ডাক্তারবাবুরা বলছেন, লকডাউন বাড়িয়ে যাওয়া ছাড়া পথ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এত কোলাহলের মাঝে একবারও কেউ জিজ্ঞেস করছেন না, লকডাউনটা কী, তার পেছনে যুক্তিটা কী!!
স্রেফ লকডাউন করেই আমরা করোনাকে শেষ করে দিতে পারব? এই তিন সপ্তাহের শেষে আরো তিন সপ্তাহ, বা এক মাস বা দুমাস – ব্যাস, তাহলেই মুক্তি?
অনেকবার একই কথা বলেছি – আবারও বলছি, ক্ষুধার্ত মানুষের সামনে অসুখে ভুগে মারা যাওয়ার যে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, তার চাইতে বহুগুণ বেশী বাস্তব আজকের খিদেটুকু – সেই অনাহারের বাস্তব প্রয়োজন না মেটালে লকডাউন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মহামারী এড়িয়ে যাওয়া গেল, কিন্তু অনাহারে মারা গেলেন কয়েক লক্ষ – তাকে সাফল্য বলে মেনে নেওয়া মুশকিল। যেসব দিগগজরা বলছেন, অর্থনীতির কথা পরে ভাবা যাবে, আগে তো প্রাণে বাঁচা যাক – তাঁদের কথাটা সত্যি – কিন্তু, তাঁদের কাছে অর্থনীতি বলতে বড় বড় সংস্থা এবং সেখানে কর্মরত মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী শ্রেণীর স্বার্থ। আগে তো বাঁচি কথাটা ঠিক – সেই বেঁচে থাকার মধ্যে খাদ্যের যোগানটা জরুরী, এটা ভুলে গেলে চলবে না। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান মানুষের জীবনে একেবারে মূলগত প্রয়োজন – এবং তার মধ্যেও অন্ন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মিলে একটা হিসেব কষেছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে করোনা মোকাবিলায় সবচেয়ে কড়া পদক্ষেপ যেসব দেশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য আমাদের দেশ (বেশ কিছু ভক্তজন হিসেবের শুধুমাত্র সেই অংশটুকু বেছে নিয়ে দিব্যি গৌরববোধও করছেন) – কিন্তু, লকডাউনের পরিস্থিতির মোকাবিলায় যেসব দেশ অন্তর্কালীন অর্থ বরাদ্দ করেছেন, সেই অর্থবরাদ্দের অঙ্কে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর মধ্যে আমরা। জার্মানীর বরাদ্দ যেখানে জিডিপির তিরিশ শতাংশ – আমাদের সেখানে শূন্য দশমিক আট শতাংশ – আরে বড়লোক দেশের সাথে তুলনা করে লাভ নেই, এই বলে যুক্তি দিতে চাইলে, বলে রাখা যাক, ঘরের পাশে মালয়েশিয়াতে বরাদ্দ জিডিপির ষোল শতাংশ। অতএব, যে দেশে অধিকাংশ মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের বেসিক চাহিদা পূরণ হয় না নিয়মিতভাবে, সেদেশে কড়া লকডাউন এবং সাথে সরকারি তরফে কার্পণ্য – এ যুগলবন্দীর পরিণাম সহজেই অনুমেয়।
কিন্তু, এসব কথা বলতে বলতে তিতিবিরক্ত হয়ে গেছি। আজকের লেখার বিষয় সেই চর্বিতচর্বণও নয়।
ধরে নেওয়া যাক, আমরা ওসব গরীবগুর্বোদের কথা ভাবব না (সাধারণত, ভাবিও না – খামোখা এই ডামাডোলের বাজারে অভ্যেস বদলানোর মানে হয় না)। ধরে নেওয়া যাক, আমরা যেকোনো মূল্যে করোনাকে থামাব – বাকি সব নিয়ে আপাতত ভাবার দরকার নেই, যেমন বলছেন তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা। ধরুন, অনাহারে কয়েক লাখ মরবে কি মরবে না, সে নিয়ে ব্যস্ত হব না, ও নিয়ে পরে ভাবা যাবে।
কিন্তু, লকডাউনের তাৎপর্য কী, সেটা তো একটু ভেবে দেখা যাক।
লকডাউন নিজে নিজেই কোনো সমাধান নয় – মনে রাখুন, লকডাউন কেবল সময় চেয়ে নেওয়ার পদ্ধতি। কার্ভ ফ্ল্যাট করার যে বহুলচর্চিত তত্ত্ব – লকডাউন হলে আপনাআপনিই কার্ভ ফ্ল্যাট হয়ে যাবে, এমন কিন্তু নয়। আর কিছুই না করে, শুধুমাত্র লকডাউন করে বসে থাকলে – লকডাউন তুলে নেওয়ার অব্যবহিত পরেই আক্রান্তের সংখ্যা আচমকা বেড়ে যেতে পারে – কার্ভ ফ্ল্যাট নয়, কার্ভ-এর প্রকৃতি একই থাকবে – শুধুমাত্র আক্রান্ত-সংখ্যার সর্বোচ্চ শিখর দাঁড়াবে আজকের পরিবর্তে আগামীকাল – তেমন একটা লাভ হবে না।
তাহলে কি লকডাউন যাঁরা করছেন, যাঁরা লকডাউনের পক্ষে সওয়াল করছেন – তাঁরা কিছুই জানেন না? সারা পৃথিবীর এতগুলো দেশ লকডাউন করছেন – তারা সবাই বোকা?
না, নিশ্চিতভাবেই নয়।
কথাটা লকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে নয়। কথাটা লকডাউনের সাথে আনুষঙ্গিক পদক্ষেপগুলো নেওয়া নিয়ে।
লকডাউন সময় চেয়ে নেওয়ার পথ – কিন্তু, কীসের জন্যে সময় চাওয়া? সময় প্রস্তুতির – পরিকাঠামো গুছিয়ে নেওয়ার। পরিস্থিতির আঁচ পেয়ে নিজেদের তৈরী রাখার।
আর তার জন্যে জরুরী পরীক্ষা – আরো, আরো বেশী করে পরীক্ষা – অনেক অনেক বেশী মানুষের মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া।
জানিয়ে রাখা যাক, লকডাউন কতোখানি কড়া সে ব্যাপারে আমাদের দেশ একদম প্রথম সারিতে থাকলেও, জনসংখ্যার নিরিখে পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে আমরা সবথেকে পিছিয়ে পড়ার দলে। প্রতি দশ লক্ষ জনসংখ্যাপিছু আমরা পরীক্ষা করছি একশ জনেরও কম মানুষের মধ্যে – জার্মানিতে সংখ্যাটা প্রতি দশ লক্ষে এগারো হাজার (সুইজারল্যান্ড বা নরওয়েতে আরো বেশী) – স্পেনে সাড়ে সাত হাজার – এমনকি, ইরানেও বাইশশো।
অথচ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বলছেন, লকডাউন করা হোক বা হোক, বেশী বেশী পরীক্ষা এবং সংক্রামিত-আক্রান্ত মানুষজনকে বাকিদের থেকে আলাদা করা – এটাই এক এবং একমাত্র পথ। লকডাউন ভালো ব্যাপার, কিন্তু লকডাউনের সাথে সাথে বাকি ব্যাপারগুলো না করা গেলে – বা লকডাউনের চোটে বাকি ব্যবস্থাগুলো কার্যকরী করতে ঝামেলা হলে – লকডাউন উল্টে বিপজ্জনক।
আপনি এই যে সারাদিন টিভির সামনে স্থানুবৎ বসে আছেন, এই যে দেখছেন অলিতে-গলিতে হাটে-বাজারে ঘুরে ঘুরে সাংবাদিক বন্ধুরা নজর রাখছেন কে কেন কোথায় কবে লকডাউন ভাঙছেন, অপ্রয়োজনে ঘুরঘুর করছেন কারা কারা, কোথায় কেন কীভাবে কয়েকজন পরিস্থিতির গুরুত্ব না বুঝে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত উৎসবের মেজাজে আছেন – একবার, একবারও দেখছেন তাঁদের প্রশ্ন তুলতে, আজ কজনের টেস্ট হয়েছে – কেন আরো বেশী লোকজনের মধ্যে টেস্ট হচ্ছে না – কেন যেভাবে আচমকা পথচারী বা বাইকওয়ালাদের থামিয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে তাঁদের রাস্তায় বেরোনোর কারণ, সেভাবেই কেন তথাকথিত হটস্পট এলাকায় র্যান্ডম পরীক্ষা হচ্ছে না?
অথচ, আমাদের আরো অনেক বেশী টেস্ট করার ক্ষমতা নেই, এমন তো নয়। আইসিএমআর দুঃখ করেছে, আমাদের যতোখানি টেস্ট করানোর ক্ষমতা, আমরা ব্যবহার করছি, তার ক্ষুদ্র এক ভগ্নাংশ। দেশের প্রথম সারির রাষ্ট্রায়ত্ত বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা জানাচ্ছেন, সারা বিশ্বে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা – আমাদের দক্ষতা, আমাদের তৈরী কিট সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত – কিন্তু, এমন অবস্থাতেও দেশের সরকার আমাদের সাথে কথা বলছেন না।
তাহলে?
শুনেছি, তাড়া খেলে খরগোশ মাটিতে একটু গর্ত খুঁড়ে মুখ লুকিয়ে থাকে – ভাবে তাকে আর কেউ দেখতে পাচ্ছে না। আমরাও তো তেমনই কম পরীক্ষা করে, বাঃ এই তো আমাদের এখানে তো অসুখ ছড়ায় নি, এই ছদ্মনিরাপত্তাবোধে আটকে আছি – আর লকডাউন কী ভালো, দারুণ কাজ হচ্ছে, আট্টু হোক প্লীজ, এই দাবী তুলছি – বা, সেই দাবীতে সায় দিয়ে আসল সমস্যা থেকে নজর সরিয়ে রাখছি। পরিণাম তো সহজেই অনুমেয়, তাই না?
দ্বিতীয়ত, প্রস্তুতি। পরিকাঠামো গুছিয়ে নেওয়া।
ইতালির চিকিৎসকরা বারবার বলছেন, আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল, সর্বত্র করোনা-আক্রান্ত রোগী ভর্তি হতে দেওয়া – এর ফলে একই হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীরাও আক্রান্ত হয়েছেন – চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে অবাধে। এদেশে সর্বত্র করোনা-আক্রান্তদের জন্যে বিশেষ হাসপাতাল ও তদনুসারী পরিকাঠামোর ব্যবস্থা হল কি? প্রথম দফা লকডাউন তো শেষ হতে চলল – কাজ এগোলো কদ্দূর?
আমাদের দেশে যে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর আকাল – সেকথা বারবার মনে না করালেও চলবে। তাঁদের একটি অংশও যদি আক্রান্ত হন, বা কোয়ার্যান্টাইনে যেতে বাধ্য হন – এই বিপর্যয়ের মুহূর্তে পরিস্থিতি ঠিক কেমন দাঁড়াবে?
সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় দেখা গেল, একজন রোগীর চিকিৎসার সাথে যুক্ত থাকার জন্যে পঞ্চাশের অধিক চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীকে কোয়ার্যান্টাইনে যেতে হল। সেই হাসপাতালে সীমিত-সংখ্যক যে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন, তাঁদের একটা অংশ আচমকা কমে গেলে পরিষেবায় ঘাটতি তো অনিবার্য। মুম্বাইয়ে তো আস্ত একটি হাসপাতালই বন্ধ করে দিতে হল। প্রশাসন সাবধান না হলে এইধরণের ঘটনা আবারও ঘটবে – ঘটতে বাধ্য। যাঁদেরই করোনা-আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, প্রথম থেকেই তাঁদের আলাদা করে চিকিৎসা করা গেলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
পাশাপাশি, অন্তত এই সঙ্কটের মুহূর্তে, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। করোনা-আক্রান্ত রোগী তো বটেই, এমনকি যাঁদের মধ্যে সংক্রমণ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে – তাঁদের চিকিৎসার সাথে যুক্ত থাকা মানুষগুলোর জন্যে থাকা উচিত সর্বোচ্চ মানের সুরক্ষাসামগ্রী – পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্টস)।
দুর্ভাগ্যজনক, পিপিই-র আকাল সর্বত্র। এধরণের সামগ্রী যাঁরা প্রস্তুত করেন, তাঁদের অ্যাসোসিয়েশনের কনভেনর জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারী মাসের শুরু থেকেই, অর্থাৎ বিশ্ব জুড়ে করোনা-মোকাবিলার প্রস্তুতির শুরুর সময় থেকেই, তাঁরা সরকারের কাছে বারবার জানতে চেয়েছেন – ঠিক কী ধরণের সামগ্রী তাঁরা তৈরী করবেন, ঠিক কী কী স্পেসিফিকেশন – সরকারের কাছ থেকে উত্তর আসেনি। কাজেই, তাঁদের তরফে উপযুক্ত প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। পুরোদস্তুর পিপিই তৈরীর পরিকাঠামো তাঁদের সবার কাছে নেই, মিলিয়েজুলিয়ে একে অপরের সহযোগিতায় তৈরী করারই চল – পিপিই পুরো ঠিকঠাক কার্যকরী কিনা, পরীক্ষা করে দেখার পরিকাঠামোও তাঁদের নিজেদের নেই – কারোরই স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকাঠামো না থাকার কারণে সবটুকু উপযুক্ত মান অনুসারে তৈরী করা তাঁদের পক্ষে সময়সাপেক্ষ – এখন আচমকা চাহিদা অনুসারে জোগান দেওয়া তাঁদের পক্ষে দুঃসাধ্য। এমতাবস্থায় কাপড়ের গাউন এবং তার উপরে প্লাস্টিক অ্যাপ্রন, হয়ত এই দিয়েই কাজ চালাতে হতে পারে। মুখ ঢাকার ফেস-শিল্ড যাঁরা তৈরী করছেন, তাঁদের অনেকেরই সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেই – কাজেই, সেই প্রোটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট কতখানি প্রোটেকশন জোগাবে, বলা মুশকিল।
জলনিরোধক উপাদান (যেমন পলিথিন) দিয়ে তৈরী পিপিই-র জায়গায় কাপড়ের গাউন এবং তার উপরে প্লাস্টিকের অ্যাপ্রন – তড়িঘড়ি বানানো মাস্ক – প্রশ্নযোগ্য মানের ফেস শিল্ড – আপাতত সুরক্ষা এই। সার্জিকাল গাউনের উপর প্লাস্টিক অ্যাপ্রনের তুলনায় রেইনকোট আলাদাভাবে খারাপ হয়ত নয় – কিন্তু, এই অল্পসময়ের মধ্যে সর্বত্র সেটুকুরও ব্যবস্থা করা যাবে কি?
অন্যদিকে, মনে করিয়ে দেওয়া যাক, সারা বিশ্বেই চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা খুব বেশী করে সংক্রামিত হয়েছেন করোনা-আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে গিয়ে – মহামারীর পরবর্তী পর্যায়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর টান পড়ে সমস্যা গভীরতর হয়ে দাঁড়িয়েছে, কেননা চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই তখন অসুস্থ বা কোয়ার্যান্টাইনে। এবং, এসবই ঘটেছে তাঁদের জন্যে জন্যে সর্বোচ্চমানের সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যবস্থা করার পরেও।
শুনেছি, বড়লোকের চেয়ে গরীবদের আরো হিসেব করে, বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে খরচা করতে হয় – না হলে মাসের শেষে টানাটানির চূড়ান্ত দাঁড়ায়। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব যেখানে – সেখানে তো আরো সাবধানী হওয়া উচিত – তাই না? এব্যাপারে এত অযত্ন বা অমনোযোগ কেন সরকারের তরফে??
আবার দেখুন, করোনা-আক্রান্তের চিকিৎসার সাথে সরাসরি যুক্ত থাকছেন যে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা, আইসিএমআর তাঁদের জন্যে সুপারিশ করেছেন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেটের – যদিও সে ট্যাবলেটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যত সময় যাবে, আরো বেশীসংখ্যক চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে করোনা-আক্রান্তের চিকিৎসার সাথে যুক্ত থাকবেন – যদি সে ওষুধ কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়, সময়ের সাথে সাথে আরো বেশী করে ওষুধ দরকার পড়বে। রপ্তানির উপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে আমেরিকাকে ঢালাও সাপ্লাই দিতে গিয়ে আমাদেরই টান পড়বে না তো!!
রোজকার জীবনে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের যতোই গালাগালি করুন, আপাতত, বিশ্বাস করুন, প্লীজ, এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে তাঁরাই ভরসা – কোনো নেতা বা নেত্রী নন। তাঁদের সুরক্ষার বন্দোবস্ত অপ্রতুল – এমনকি, রোগীর সংস্পর্শে আসার পরেও রোগ-ঠেকানোর ওষুধের জোগান অনিশ্চিত।
সকাল থেকে সন্ধে টিভি আলো করে বসে আছেন যাঁরা – দুবেলা হাট-মাঠ-ঘাট চষে হাতে বুমার আর গলায় যথাসাধ্য উত্তেজনা নিয়ে যাঁরা লকডাউন লকডাউন বলে চলেছেন, বলেই চলেছেন – এই প্রনগুলো কি তাঁরা করে উঠতে পারবেন না কখনোই?
সরকারি তরফে ঘনঘন মিটিং আর আলোচনার বার্তা আসছে, লকডাউন বাড়ানো হবে কি হবে না – প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে – মুখ্যমন্ত্রীরা কথা বলছেন আমলাদের সাথে – আর এরই মাঝে প্যারালাল লাইনে বিশেষজ্ঞ কমিটি – সরকারি বিশেষজ্ঞ, বেসরকারি বিশেষজ্ঞ – আর আমার মতো স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞরা তো আছেনই, যাদের সাথে কেউ কথা বলে না, যাদের কথা শোনেও না কেউ, কিন্তু যারা বলতে থাকে, বলতেই থাকে – এসবের মধ্যে, সিরিয়াসলি, কবিতার সেই ছোট্ট বাচ্চাটাকে মিস করছি, যে হয়ত এই লকডাউনের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা গড্ডালিকা প্রবাহ পার হয়ে, লকডাউন আর ক্যাকোফোনি অতিক্রম করে প্রশ্নটা করতে পারত –
রাজা, আমাদের টেস্ট কোথায়? আমার ডাক্তার-নার্সদের পিপিই কোথায়??
আরেকটু বিশদে পড়তে চাইলে –
1. https://www.nytimes.com/2020/03/22/world/coronavirus-news.html
2. https://www.businesstoday.in/current/economy-politics/coronavirus-is-india-testing-enough-people-for-coronavirus/story/400235.html
3. https://www.economist.com/finance-and-economics/2020/04/03/emerging-market-lockdowns-match-rich-world-ones-the-handouts-do-not
4. https://www.theweek.in/theweek/cover/2020/04/04/india-needs-more-testing-not-lockdown.html
5. https://www.huffingtonpost.in/entry/coronavirus-ppe-shortage-lockdown-masks-covid19-doctors_in_5e88ef8ac5b6cc1e4776941a
খাসা হয়েছে ভায়া!
আপনার সব লেখাই পড়ি ,আর উন্মুখ হয়ে থাকি পরের লেখাটি ঠিক কি বিষয়ে লেখা হবে ভেবে, কারণ এখন তো আপনারাই কেউ কেউ ঐ শিশুর ভূমিকা পালন করছেন।
পড়ি আর অদ্ভুত মনখারাপ আর আতঙ্ক গ্রাস করে পরবর্তী সময়ের কথা মনে করে। যারা শুনলে কাজ হবে ,তারা কি কেউ শোনে? শুনলে এতগুলো দিন সময় পেয়েও কেন এত অবহেলা ?
ভাল লাগল পড়ে । এমন লেখার জন্য , আমার আমতরিক ধন্যবাদ জানবেন
লেখা পড়ে আমরা তো বুঝছি, কিন্তু যারা বুঝলে আমি ও আমরা নিঃশঙ্ক হতাম তারা কবে বুঝবে বা আদৌ বুঝবে কি?
পড়লাম এবং শেয়ার করলাম স্যার ।
লেখাটির সঙ্গে সহমত পোষণ না করার কোন প্রশ্নই আসেনা। গতকালই অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায় এবং এস্তার দুফলো ঠিক এই কথাটিই বলেছেন। এই মুহূর্তে সবচাইতে বেশি প্রয়োজন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের কাছে সরকারি অর্থ সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। প্রয়োজনে, অর্থনীতির কথা না ভেবে, নোট ছাপিয়ে সেটা করতে হবে। এটা হলো অত্যন্ত জরুরী একটি তাৎক্ষণিক সুরাহা।
ভারতের প্রায় শতকরা নব্বই ভাগ শিল্প, কোন না কোন ভাবে চীনের উপর নির্ভরশীল। সেই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোটি কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ। তার কি হবে, সেটা অবশ্য এর পরের কথা।
গরমাগরম কচুরি খেয়ে বলা যায় ‘খাসা হয়েছে ভায়া’। কিন্তু আপনার লেখা টি যে দুখখ, হতাশা,রাগ থেকে লেখা হয়েছে তার কিভাবে সুরাহা হবে? খুব ভালো লেখা বিষাণ দা। লেখা টা রাগ বাড়িয়ে দিলো।
কি আর বলব। শুধু বলি দাদা তুমি লিখে যাও। যদি কোনোদিনও আমাদের কথা গুলো সাধারণ মানুষের কানে পৌছায়। জানি দুরাশা, তবু ওই স্বপ্ন টুকু নিয়েই তো আমরা বেচে আছি।
আপনারা এই পরিস্থিতিতে যে বুকে পাথর চেপে স্টেথোস্কোপ পাশে রেখে যেভাবে কলম ধরেছেন তাকে কুর্নিশ জানাই।
আর আপনারা লিখেছেন বলেই দেরিতে হলেও আমরা আসল ব্যাপার জানতে পারছি।
ভরসা রাখুন একদিন ঝড় থেমে যাবেই।