১। মশা নিয়ন্ত্রণে লার্ভাভোজী মাছ কিভাবে ব্যবহার করা হয় ?
উঃ এটি মশা নিয়ন্ত্রণের একটি জৈবিক পদ্ধতি। ১৯০৩ সাল থেকে লার্ভাভোজী মাছের দ্বারা মশার দমন শুরু হয়। এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্থানে মশার লার্ভা কমানোয় সাফল্য পাওয়া গেছে। সাধারণতঃ গাম্বুসিয়া ও গাপ্পি মাছই এই কাজে ব্যবহৃত হয়। এই মাছগুলি প্রায় দু’বছর বেঁচে থাকে, যদিও পুরুষ মাছের আয়ু সাধারণতঃ সাত সপ্তাহ।
মাছগুলি বেশ কষ্ট সহিষ্ণু, কারণ বদ্ধ জলাশয় যেখানে অক্সিজেনের মাত্রা কম, লবণাক্ত জল, সেখানেও এরা বেঁচে থাকতে পারে এবং স্বাভাবিকভাবে প্রজনন চালিয়ে যায়। এরা মোটামুটি উচ্চ তাপমাত্রা (২৬-৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং নিম্ন তাপমাত্রা (১০ ডিগ্রি) সহ্য করতে পারে। রাসায়নিক লার্ভা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির চেয়ে মাছ নির্ভর পদ্ধতির খরচ অনেকটাই কম হয় যেহেতু মাছগুলি বহুদিন বেঁচে থাকে এবং সারা বছরে প্রায় ৩-৪ বার প্রজননের মাধ্যমে মাছের সংখ্যা নিজে থেকেই বাড়তে থাকে।
২। এই প্রক্রিয়ায় লার্ভা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কেমন?
উঃ একটি পূর্ণাঙ্গ গাপ্পি মাছ দিনপ্রতি ৮০-১০০ টি লার্ভা এবং গাম্বুসিয়া মাছ ১০০-৩০০ টি লার্ভা খেতে পারে। মাছগুলি আকারে বেশ ছোট বলে এরা খাদক প্রাণীদের প্রিয় খাদ্য নয় এবং সহজেই জলের গাছপালার মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। এই মাছগুলি সেই সমস্ত বদ্ধ অগভীর জলাশয়ে বেঁচে থাকতে পারে যেগুলি মশার আদর্শ জন্মস্থল এবং উল্লেখযোগ্য ভাবে মশার লার্ভা এদের প্রিয় খাদ্য। খুব সহজেই মাছগুলিকে বহন করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় এবং নতুন জলাশয়ে খুব তাড়াতাড়ি এরা মানিয়ে নিতে পারে।
৩। মাছগুলিকে কি ভাবে ব্যবহার করা উচিত?
উঃ সর্বোচ্চ ৪০ লিটার পরিমাণের প্লাস্টিক ব্যাগ/ জেরিক্যান/ প্লাস্টিক পাত্রের অর্ধেক জল ভর্তি করে (যাতে পাত্রের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন থাকে) মাছগুলিকে বহন করতে হবে এবং অবশ্যই সূর্যালোক থেকে আড়ালে নিতে হবে। ৩-৫ লিটারের পলিথিন ব্যাগে ১.৫ লিটার জল ভরে মাছগুলিকে রাখতে হবে; তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপযুক্ত স্থানে ছেড়ে দিতে হবে। ১ রৈখিক মিটার দৈর্ঘ্যে ৫-১০টি মাছ, খুব বেশি লার্ভা ঘনত্ব হলে ১০-২০টি মাছের হিসেবে ছাড়া যেতে পারে।
মাছ ছাড়ার আগে মাছের পাত্রের এবং জলাশয়ের তাপমাত্রা একই রকম থাকা প্রয়োজন। মাছ ছাড়ার আগে অন্যান্য খাদক মাছ এবং ঘন আগাছা বা আবর্জনা পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং সেই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। থার্মকল বা প্লাস্টিকের/ মাটির পাত্র, ডাবের খোলা ইত্যাদি জলাশয়ে ভেসে থাকলে সেগুলি অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে, কারণ এইসব পাত্রে জল জমলে সেখানে মশা ডিম পাড়তে পারে। কিন্তু পাত্রগুলি জলের ওপর ভেসে থাকায় মাছ সেখানে পৌছতে পারবে না। মাছেরা যেহেতু দলবদ্ধ ভাবে ঘুরে বেড়ায় তাই ওইসব জলাশয়ের আগাছা ও পরিষ্কার রাখা জরুরি।
৪। এই প্রক্রিয়া চালাতে কেমন নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ দরকার?
উঃ সুপারভাইজার বা তত্ত্বাবধায়করা ডেঙ্গু প্রবণ মরশুমে মাসে অন্ততঃ এক থেকে দুইবার নজরদারি করবেন:
(১) জলাশয়ের পরিচ্ছন্নতা বজায় আছে কিনা।
(২) মাছ ছাড়ার পরে সেগুলি বেঁচে আছে কিনা। যদি না বেঁচে থাকে, তবে কেন মাছগুলি বাঁচতে পারেনি (জলে অনবরত আবর্জনা বা দূষিত পদার্থ ফেলার জন্য বা লার্ভিসাইড রাসায়নিক দেয়ার জন্য কিনা ইত্যাদি)
(৩) নতুন কোনো জায়গায় মাছ ছাড়ার প্রয়োজন আছে কিনা।
(৪) মাছ ছাড়ার ফলে লার্ভার ঘনত্ব কমেছে কিনা এবং এলাকায় মশা বাহিত রোগের প্রকোপ কমেছে কিনা।
৫। কোন জায়গায় লার্ভাভোজী মাছ ছাড়া যেতে পারে?
উঃ যে সব জায়গায় লার্ভাভোজী মাছ ছাড়া উচিত হবে না – সংকীর্ণ বা একান্ত অগভীর জায়গায় মাছ বাঁচতে পারে না; বরং এইসব জায়গাগুলি বুঝিয়ে/ ধ্বংস (সোর্স রিডাকশন) করে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।