পুরাকালে জার্মানীতে পরিপূর্ণ ফুয়েরার হইবার পরে অস্ট্রিয়াজাত শাসক হিটলার জার্মানিদেশে রাজ্য শাসন করিতেন। তিনি দানশীল ছিলেন এবং যথোপযুক্ত শীলরক্ষা করিয়া চলিতেন।
একদা তিনি যৎপরোনাস্তি প্রীত হইয়া, সান্ধ্যকালীন উপদেশের কালে হিটলার-দর্শন এবং অতীত ও ভবিষ্যতের হিটলার জাতকদের রহস্য জ্ঞাপন করিলেন।
তিনি কহিলেন, ‘আমার মেইন ক্যাম্ফ(১৯২৫) বইতে যা লিখেছি, হে ভক্তবৃন্দ আপনাদের পুনর্বার স্মরণ করাই।
“জনতার বৃহৎ অংশ একটা ছোট্ট মিথ্যার চাইতে বড় মিথ্যার শিকার হবে বেশি সহজে”। বৃহৎ মিথ্যার অন্তর্গত শক্তি এবং যতবড় মিথ্যা ততই বিশ্বাসযোগ্য শোনাবে এই কথাটি আমার একান্ত আবিষ্কার।
প্রকান্ড আকারের মিথ্যা আমাদের সাধারন বিচার বিবেচনাবোধকে উড়িয়ে দেয়। অতএব সকলের বিশ্বাস জন্মায় যে, হিটলার ঠিক। বিরাট আকারে মিথ্যা তাই সর্বদাই ছোট মিথ্যার চাইতে বিশ্বাসযোগ্য হয়।’
হিটলার স্বয়ং নিজেকে ধীমান ঘোষণা করিলেন এবং কহিলেন,
“‘স্বৈরশাসকের উন্নত ধীশক্তিই সম্রাটের অদৃশ্য ছদ্মবেশ। প্রত্যেকেই এটা দেখে এবং স্তুতি প্রকাশ করে। যারা এই পরিমন্ডলে পড়ে না তারাও পরবর্তিতে অন্যান্য সকলের দেখাদেখি বিশ্বাস করে ফেলে। এভাবেই মিথ্যাটা চিরস্থায়ী হয় এবং কোন প্রকার সমালোচনা সহ্য করা হয় না।
বহু “চালাক-চতুর” মানুষ একইভাবে হিটলারিয় “মাহাত্ম্য” চিনতে পারে। এই বিদ্দজ্জন মানুষগুলোর প্রত্যেকে কিভাবে ভুল হয়?
যেখানে সমালোচনা স্তব্ধ করে দেয়া হয়, সেখানে পরগাছা, পা-চাটারা প্রশংসা করে, মোসাহেবি করে, যা নয় তাই ফলাও করে প্রচার করে নেতার কৃপাধন্য হতে চাইবেই।’
হতবাক অনুচরবৃন্দ এই অমৃতভাষণ শ্রবণে নিজেদের ধন্য জ্ঞান করিল। প্রচারের দায়ভার শ্রীমৎ গোয়েবেলসকে প্রদত্ত হইলেও মূল ফিলজফিক্যাল দর্শনের ধারাটি এইভাবে হিটলারজীবি সকলের মধ্যে সঞ্চালিত হইল।
শিষ্যদের কাতর আবেদনে তিনি এইবার জাতকের রহস্যটি সম্পূর্ণ প্রকাশ করিলেন।
‘সকলেই জানে আমি আর্ট ইশকুলে প্রবেশাধিকার পাইনি। আমার ভক্তকুলমণি যে গোয়েবলস, এমনকি তারও হাইডেলবার্গ ইউনিভারসিটি থেকে প্রাপ্ত একটি ডক্টরেট ডিগ্রি আছে, যা আমার নেই। সর্বব্যাপী ক্ষমতায় আমি অনায়াসেই উক্ত দুইটি সখ পূরণ করতে পারি। বিশেষত ইহুদিশূন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এক্ষণে সকলেই পদানত।
কিন্তু না। এই জন্মে এমনকি স্বয়ং হিটলারেরও চোখের পর্দা আছে।
যেহেতু নাজিবাদ একটি চিরন্তন সত্য, আমার এই জন্মের পরেও সারা বিশ্বে নাজিবাদের চর্চা হবে। এমনকি ফেডারেল স্ট্রাকচারের মধ্যে ফ্যাসিজম সম্ভব কিনা এমন এক্সপেরিমেন্টও বিভিন্ন দেশে চলবে।
ভবিষ্যতের কালগর্ভে বহু হিটলার জাতক জাতিকা নিহিত আছে। তারা কালক্রমে আমার না আঁকা চিত্রসমূহ আঁকবে।
চোখের পর্দার মাথা খেয়ে সেই চিত্র বহুমূল্যে বিক্রয় করবে।
তারা গণতান্ত্রিক অছিলায় পদানত ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রিও আদায় করে আমার সুপ্ত মনোবাসনা পূরণ করবে।
অনুপ্রেরণা প্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় আকাদেমি দুয়ারে পুরস্কার প্রকল্প চালু করবে।
হে ভক্তগণ, আপনাদের অবগতি ও ভবিষ্যৎ পথনির্দেশের জন্য এই গোপন রহস্য প্রকাশ করলাম’।
এতক্ষণে হিটলারের জাতক কাহিনী সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত হইয়া হর্ষোৎফুল্ল ক্যাবিনেট সগর্জনে কহিল, ‘হের হিটলার’।