এই ভয়টাই পেয়ে ছিলো সে।
প্রতি রাত্তিরে দরজাটা খুলে ওরা কাউকে না কাউকে নিয়ে যায়।
তারা আর ফিরে আসে না।
ওর থেকে যারা বড়, তাদের জিজ্ঞেস করে কোনো উত্তর পায়নি,
আসলে যাদের ধরে নিয়ে গেছে,
তারা কেউ এসে জানাতে পারেনি সত্যিটা কি।
তাই নানা গুজবের কোঁকর কোঁ হয়।
কেউ বলে, আজকাল বিয়ে বা মিলনে আগ্রহী মেয়ে কমে যাচ্ছে,
তাই বেছে বেছে সুন্দরপানাদের নিয়ে গিয়ে
ওরা জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়।
সে এটা খেয়াল করেছে বটে, ক্ষয়াটে উস্কোখুস্কো পালক-ছাড়ানো চেহারার মেয়েগুলোকে ওরা ধরে না।
কেউ আবার বলে, মেয়েগুলোকে নিয়ে ওরা নানান জায়গায় বেচে দেয়।
তারপর যা বীভৎস অত্যাচার হয়, সে নাকি বলা যায় না!
সে রোজ শিঁটিয়ে থাকে সেই ভয়ে , কবে ওরা দরজা খুলে নিয়ে যাবে ওকে।
অথচ পালানোর উপায় নেই,
নিয়মিত খাবার দেওয়া আর ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া দরজাটা খোলে না ওরা,
আর সেই সময়গুলো পালানো অসম্ভব।
আজ সেই ভয়টাই সত্যি হয়েছে।
ওরা এসেছে, অনেকের সাথে তাকেও ধরেছে।
ওর দুটো পা কষে বেঁধে দিয়েছে , রাতের অন্ধকারে একটা ট্রাকের ভেতরে গাদাগাদি করে অনেকগুলো মেয়ে।
সকলেরই পা বাঁধা, সামনে পাহারাদার,
টুঁ শব্দটি করার জো নেই । সে চেষ্টা করছে, খুব ধীরে ধীরে বাঁধন আলগা করার।
সে বুঝছে আর যাই হোক, কোনো শুভকাজে এতগুলো মেয়েকে নিয়ে ওরা যাচ্ছে না,
ওদের চোখে লোভ, মাঝে মাঝে জিভ চেটে নিচ্ছে ওদের দিকে তাকিয়ে।
যেভাবেই হোক ওকে পালাতেই হবে।
রাত যখন ভোর ছুঁইছুঁই, সে সময় ট্রাকটা থামলো।
ওরা চা খাবে। ততক্ষণে সে খুলে ফেলেছে পায়ের বাঁধন,
খুব, খুউব আস্তে আস্তে নজর এড়িয়ে সে সরে এসেছে ট্রাকের ডালাটার সামনে।
বাকি মেয়েগুলোর দিকে একবার তাকালো সে।
কেউ ঝিমাচ্ছে, কারো খোলা চোখে হতাশার শূন্যতা,
ওদের ডাকতে গেলে সে ধরা পড়ে যাবে।
নিঃসাড়ে সে নেমে যায় রাস্তা, রাস্তা পেরিয়েই একটা মাঠ,
মাঠ পেরিয়ে সে দৌড় দৌড়…
পালিয়ে এসেছিস? একটা লোক, দয়ালু চোখ, মায়া ভরা গলা।
সে দাঁড়ালো। লোকটা এসে ভারী স্নেহে হাত বাড়ায়।
সে একটু ইতস্তত করে কাছে আসে,
তার তো কিচ্ছু চেনা নেই, কাউকে খবর দেওয়ার নেই,
কোনো ঠিকানা জানা নেই!
লোকটার সাথে সাথে নিঃশব্দে চলে সে,
দেখা যাক কোথায় আশ্রয় পাওয়া যায়।
ঘরে ঢুকে লোকটা ওকে ভাত খেতে দেয়।
ওর খুব খিদে পেয়েছিলো, কি করে যে লোকটা বুঝলো!
খাওয়া হয়ে গেলে লোকটা হেসে বললো,
যা জিরিয়ে নে এবার। সে একটা কোণে শুয়ে চোখ বুজলো।
বড্ড ধকল গেছে। নতুন বন্ধুর বাড়িতে এবার একটু নিশ্চিন্তে ঘুম দেওয়া যাবে।
ওকে ঘুমোতে দেখে, লোকটা ভেতরের ঘরে চলে গেলো।
তারপর গিন্নিকে ডেকে বললো,
‘অনেকদিন পর আজ চিকেন খাবো। কাটবো একটু বাদে,
বেশ ভালো করে কষিয়ে রান্না কোরো।’
সকালবেলার আলো পড়ে কোণে রাখা ছুরিটা চকচক করে উঠলো।