আগে ডায়াবেটিসকে দু ভাগে ভাগ করা হত। ইনসুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস মেলিটাস এবং নন-ইনসুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস মেলিটাস। কিন্তু পরবর্তী কালে দেখা গেল নন-ইনসুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস মেলিটাসের চিকিৎসায় অনেক ক্ষেত্রেই ইনসুলিন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তাই বর্তমানে এই দুটি ভাগ আর ব্যবহার করা হয় না।
কারণ সহ ডায়াবেটিসের শ্রেণী বিভাগঃ
১. টাইপ-১ ডায়াবেটিসঃ এখানে আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহান্সের বিটা কোষ ধ্বংস হয়ে যায় শরীরের নিজস্ব ইমিনো সিস্টেমের ভুলের জন্য(Immune Mediated or Idiopathic)। টাইপ-১ সাধারণত ৩০ বছরের নীচে হয়। তবে ৩০ বছরের উপরের ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও ৫% ক্ষেত্রে টাইপ-১ ডায়াবেটিস দেখা যায়। এই ডায়াবেটিসের মূল কারণ বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ইনসুলিন তৈরি না হওয়া। তাই এদের চিকিৎসায় প্রথম থেকেই ইনসুলিন লাগে।
২. টাইপ-২ ডায়াবেটিসঃ এর জন্য মূলত দায়ী ইনসুলিন রেজিট্যান্স। অর্থাৎ বিটা কোষ থেকে উপযুক্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি হলেও তা রেজিট্যান্সের কারণে ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। পরবর্তী কালে ইনসুলিন রেজিট্যান্স নিয়ে বিস্তারিত ভাবে লেখা যাবে। বেশির ভাগ ডায়াবেটিস রোগীই এই শ্রেণীতে পড়েন। ইনসুলিন রেজিট্যান্স কাটানোর ওষুধ দিয়েই বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিক করা যায়।
৩. প্যাঙ্ক্রিয়াসের বিভিন্ন অসুখঃ যেমন প্যাঙ্ক্রিয়াটাইটিস, প্যাঙ্ক্রিয়াসের ক্যানসার, সিস্টিক ফাইব্রোসিস ইত্যাদি।
৪. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বিভিন্ন অসুখঃ যেমন অ্যাক্রোমেগালি, কুশিং সিন্ড্রোম, হাইপার থাইরয়েড ইত্যাদি।
৫. বিভিন্ন ওষুধঃ সবার আগে আসবে স্টেরয়েডের নাম। কারণে অকারণে পাশ করা চিকিৎসক ছাড়াও কিছু হাতুড়ে ডাক্তার, কিছু হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক চটজলদি ফলের আশায় প্রায় সব অসুখেই স্টেরয়েড দিচ্ছেন। যার ফল অত্যন্ত ভয়াবহ দিকে যাচ্ছে। শুধু ডায়াবেটিস নয়, স্টেরয়েড আরও হাজার রকম ক্ষতিকারক অসুখ করতে পারে।
৬. বিভিন্ন ভাইরাল ইনফেকশনও ডায়াবেটিস করতে পারে। যেমন- রুবেলা, সাইটোমেগালো ভাইরাস ইত্যাদি।
৭. বিভিন্ন জিনগত কারণঃ জিনগত কারণে বিটা কোষ থেকে ইনসুলিনের সিক্রিয়েশানের বা ইনসুলিন সিক্রিয়েশানের পরে তার কাজের নানা রকম বাধা সৃষ্টি হতে পারে। ম্যাচুরিটি অনসেট ডায়বেটিস অফ ইয়ং এর প্রধান উদাহরণ। এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে আপনাদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাতে চাই না।
৮. গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসঃ গর্ভাবস্থায় নানা রকম শারীর বৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে। তার ফলে প্রায় সাত শতাংশ হবু মায়ের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। গর্ভস্থ শিশুর উপর এর প্রভাব খুব খারাপ। এমনকি গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই প্রথম থেকেই ডায়াবেটিস কঠিন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গর্ভাবস্থায় অন্য ওষুধ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রথম থেকেই ইনসুলিন ব্যবহার করা হয়। গর্ভাবস্থায় যাদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, সাধারণত সন্তান প্রসবের পরে তাঁরা অধিকাংশই আর ডায়াবেটিক থাকেন না। কিন্তু পরবর্তী কালে তাঁদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মা পরবর্তী ১০- ২০ বছরের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন।
এই মাদের কি আর সুস্থ হবার আশা থাকে। না সারাজীবন খাদ্যতালিকা থেকে মিষ্টি জিনিস বাদ দিতে হয়?