১. শিশুদের পাতলা পায়খানা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসঘটিত। পাতলা পায়খানার সাথে হাল্কা জ্বর, পেটে ব্যথা, বমি ইত্যাদি থাকতে পারে।
২. চিকিৎসার মূল লক্ষ্য জলশূন্যতা রোধ করা। পায়খানা বন্ধ করে দেওয়া চিকিৎসার উদ্দেশ্য নয়। কতবার পায়খানা হ’ল সেটা না গুনে বরং জলশূন্যতার লক্ষণগুলি খেয়াল করুন। সাধারণ ভাইরাসঘটিত পাতলা পায়খানা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দু-তিন দিনের পর ধীরে ধীরে কমে যায়।
৩. চোখ বসে যাওয়া, জিভ-মুখ শুকিয়ে যাওয়া, পেচ্ছাব কমে যাওয়া, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখে জলশূন্যতা বোঝা যায়। বাচ্চার তেষ্টা বেড়ে গেলে কিংবা পেটের চামড়া টেনে ছেড়ে দেওয়ার পর খুব ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে এলে জলশূন্যতা হচ্ছে বলে বুঝতে হবে।
৪. জলশূন্যতা রোধের আসল চিকিৎসা ওআরএস (কিংবা খুব বেশি জলশূন্যতায় শিরায় দেওয়ার স্যালাইন)। বাচ্চাকে বারবার ওআরএস দিয়ে যেতে হবে। কতটা ওআরএস দেবেন সেটা চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন।
৫. ওআরএসের প্যাকেট হাতের কাছে না থাকলে বাড়িতে ওআরএস বানিয়ে নিন। এক লিটার জলে ছ’ চা-চামচ চিনি, অর্ধেক চা-চামচ সাধারণ নুন দিন। অর্ধেক পাতিলেবু দিতে পারলে ভালো। তাছাড়া ডাবের জল, ডালের পাতলা জল, ভাতের ফ্যানে নুন মিশিয়ে ওআরএসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. পাতলা পায়খানার সময় বাচ্চার খাওয়াদাওয়া বন্ধ করবেন না। বাচ্চা বাড়ির স্বাভাবিক খাবার খাবে। সহজপাচ্য খাবার দিন। ভাত, ডাল, খিচুড়ি, কাঁচকলা, মাছ ইত্যাদি অল্প অল্প করে বারে বারে দিন। বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ যেমন খাচ্ছিল তেমনই খাবে।
৭. জিঙ্ক বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। রোগ অনুযায়ী আপনার ডাক্তার আরও দু-একটি ওষুধ দিতে পারেন।
৮. সাধারণ ভাইরাসঘটিত পাতলা পায়খানায় অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও ভূমিকা নেই। **পেপ্টিন, ***জাইম ইত্যাদি বাজারচলতি হজমি ওষুধের সাথে আপনার বাড়ির কলের জলের কোনও তফাত নেই। এ জাতীয় হজমি ওষুধ সম্পূর্ণভাবে অবৈজ্ঞানিক। পায়খানা বন্ধ করার ওষুধ (খাদ্যনালীর চলন বন্ধ করার ওষুধ) অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর।
৯. অল্প কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্টিরিয়া বা পরজীবিঘটিত পাতলা পায়খানা হয়। সেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ব্যক্টিরিয়া বা পরজীবিনাশক ওষুধ খেতে হবে।
১০. বাজারচলতি *টু, *এফএম, **ফ্লক্স*জেড ইত্যাদি একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের মিশ্রণ সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক। অথচ বাজারে মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হয়। ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া সারা পৃথিবীর কোথাও এ জাতীয় খিচুড়ি অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয় না।
১১. সাধারণ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। প্রথম ছ’মাস বাচ্চাকে শুধুই বুকের দুধ দিন। ছ’মাস পেরোলেই বাড়িতে বানানো খাবার দিন। দোকানের প্যাকেটবন্দী গুঁড়ো খাবার ধরাবেন না। নিয়ম মেনে টিকা দিন।
১২. পেচ্ছাব কমে এলে বা হলুদ হয়ে গেলে, বাচ্চা নেতিয়ে পড়লে, খিঁচুনি হ’লে, পায়খানার সাথে রক্ত এলে, শ্বাসকষ্ট হ’লে, চোখ-মুখ ফুলে গেলে সতর্ক হোন। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।