হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়ার মতো পোস্ট করছি। জানি না, এই পোস্ট সর্বসমক্ষে আসবে কিনা। কারও নাম নেবো না কিন্তু একটা জিনিস পরিষ্কার করে বলতে চাই, ডাক্তারদের সবচেয়ে বড় শত্রু ডাক্তাররাই। আগে আগে ডাক্তারদের সম্পর্কে কোথাও খারাপ কিছু মন্তব্য দেখলেই আগাপাশতলা না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। আজকাল আর উৎসাহ পাই না। এতদিন নোংরামিগুলো চোখের সামনে দেখিনি। সদ্য পাশ করা ডাক্তারের চোখের সামনে যে আদর্শ আর আবেগগুলো থাকে তার ভিত্তিতেই চিকিৎসা ব্যবস্থার আট থেকে আশি সবাইকে ধোওয়া তুলসীপাতা ভাবতাম৷ নিজে জ্ঞানত কোনোদিন পাশ করা ডাক্তারকে রোগীর সামনে গালাগালি করিনি। রুচি আর এথিক্সে বাধে। আর একজন ডাক্তারের চিকিৎসা আমার পছন্দ হোক বা না হোক (হাস্যকর চিকিৎসা দেখেও) কখনও কোনও খারাপ মন্তব্য করিনি। বদলে দেওয়ার হ’লে চুপচাপ বদলে দিয়েছি। মনে মনে নিজেকে বুঝিয়েছি, আমিই বা কোন হরিদাস পাল? ডাক্তারির কতটুকুই বা বুঝি? হয়তো আমিও এরকম অনেক ভুল করি…
অথচ, কিছু বিশেষ প্রজাতির সিনিয়র ডাক্তার আমার প্রেস্ক্রিপশন নিয়ে (আমার ধারণা অকারণেই) খিল্লি করেন এমনকি পেশেন্ট পার্টি খ্যাপান। এবং সেটা নিয়মিত। আমার অনুপস্থিতিতে পেশেন্টকে অন্য কোনও ডাক্তারকে দেখিয়ে নিতে বলি। মন্তব্য আসে, “কী… উনি পারলেন না বুঝি? সেই যদি পারবে না আগে থেকে ছেড়ে দিলেই তো হয়…” আরও উদাহরণ দিতে গেলে রাত ভোর হয়ে যাবে। অথচ আমি চাইলে সেসব সিনিয়র ডাক্তারদের প্রত্যেকটা প্রেস্ক্রিপশনে চল্লিশখানা করে ‘ভুল’ বের করতে পারি। সেসব সিনিয়র ডাক্তারের কোনও প্রেস্ক্রিপশন জোড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিহীন হয় না। প্রেস্ক্রিপশন দেখলে লক্ষ্মী পূজার ফর্দ মনে হয়। ডোজ-ফোজ সেসব নয় বাদই দিলাম। প্রায় প্রত্যেকটা নিউবর্ন জন্মের পর অক্সিজেন পায়। চার-পাঁচদিন বয়সের সুস্থ বাচ্চা আট-নয় বিলিরুবিনে ফটোথেরাপি পায়। বাচ্চার হাঁচলেও অ্যান্টিবায়োটিক, কাঁদলেও অ্যান্টিবায়োটিক। অথচ আজ অব্দি কোনোদিন তাঁদের চিকিৎসা নিয়ে রোগীর সামনে কিচ্ছুটি বলিনি।
প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের অন্যান্য নোংরামির গল্প বললে রাত ভোর হয়ে যাবে। যদিও সবাই সব জানেন বলেই আমার বিশ্বাস। শুধু কমন পাবলিক সেগুলো বললে আমাদের গায়ে লাগে।
নোংরা সাম্রাজ্যের জঞ্জাল নয় একদিনে সারবে না কিন্তু সহকর্মীদের (মেডিক্যাল এথিক্স অনুযায়ী আর একজন ডাক্তারকে ভাই বা বোন হিসেবে দেখার কথা) প্রতি আজেবাজে মন্তব্যগুলো তো বন্ধ করাই যায় নাকি? এমনিতেই ডাক্তারদের বর্তমান ভাবমূর্তি যেমন তাতে নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দিতে আড়ষ্ট লাগে। অবসর পেলে মেডিক্যাল এথিক্সের লাইনগুলো একবার উল্টে দেখুন, অনেক ভুলে যাওয়া কথা মনে পড়বে।