১৬ই জুন বিকেল বেলা হেলথ সেক্রেটারির হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এলো, তারপর হেলথ সেক্রেটারির পি এ-র ফোন। ১৭ই জুন, বুধবার বেলা তিনটায় নবান্ন সভা ঘরে মুখ্যমন্ত্রী আলোচনায় ডেকেছেন ডাক্তার সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের।
এর আগে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আরেকটি মিটিং হয়েছিল। সেই মিটিং-এর আগে আমরা জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস-এর প্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দাবিদাওয়াগুলো ঠিক করে নিতে পেরেছিলাম।
মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছিলেন। করোনা আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ, টেস্ট বৃদ্ধি, পিপিই সরবরাহ, ইত্যাদি কিছু দাবি পূরণ হয়েছিল।
এইবার নিজেদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনার সময় বা সুযোগ ছিল না। মঙ্গলবার রাতে ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের নেতৃত্বের সঙ্গে কল কনফারেন্স এবং বুধবার সকালে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিদের কল কনফারেন্স করা ছাড়া উপায় ছিল না।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ বেঙ্গল আই এম এ-র ডা শান্তনু সেন চেয়েছিলেন আমরা আই এম এ অফিসে মিলিত হয়ে একসঙ্গে যাই। আমরা গেছিলাম আলাদা আলাদা। নবান্ন সভাঘরে পৌঁছেছিলাম মিটিং শুরুর ২০-৩০ মিনিট আগে।
১। প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী লোকবলের অভাবের কথা বলেন।এই অভাব মেটানোর জন্য তার পরামর্শ ছিল চতুর্থ এবং পঞ্চম বর্ষের মেডিকেল ছাত্রদের চিকিৎসার কাজে নিয়োগ করা।
আমরা বলি যেখানে মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নিরা তিন মাস কাজ না করে বসে আছে, সেখানে ছাত্রদের দিয়ে ডাক্তারের কাজ করানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। মুখ্যমন্ত্রী মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নিদের 3 মাস কাজে না লাগানোর খবরের বিষ্ময় প্রকাশ করেন। মুখ্য সচিব মুখ্যমন্ত্রীকে জানান আমাদের বক্তব্য সঠিক। ডা নির্মল মাজি জানান সভার আগের দিনই ইন্টার্নি ও হাউস স্টাফদের কাজে লাগানোর ব্যাপারে মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ও সুপারের সঙ্গে তার মিটিং হয়েছে।
ডা সুকুমার মুখার্জিও ছাত্রদের দিয়ে ডাক্তারের কাজ করানোর বিরোধিতা করেন। নির্মল মাজি এবং মুখ্যসচিবও জানান যে, মেডিকেল কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী এমনটা করা যায় না।
বিস্তারিত আলোচনার পর ঠিক করা হয় লোক বলের অভাব পূরণ করার জন্যঃ
ক) বর্তমান ইন্টার্নি, হাউসস্টাফ, পি জি টি-দের যথাযথভাবে কাজে লাগানো হবে।
খ) ইন্টার্নিদের এক বছরের প্রশিক্ষণের মধ্যে মেডিসিনের 15 দিন এবং কমিউনিটি মেডিসিনের 15 দিন করোনা ডিউটির কথা হয়।
গ) প্রস্তাব আসে তৃতীয় বর্ষের পিজিটি যারা এই মাসের শেষে পরীক্ষা দিচ্ছেন তাদের পয়লা জুলাই, চিকিৎসক দিবস থেকে নিয়োগ করার। বলা হয় এই নিয়োগ কাল তাদের বন্ড পোস্টিং-এর অংশ হিসেবে দেখা হবে।
ঘ) যে সরকারী চিকিৎসকরা করোনা ডিউটি করছেন, তাদের বিশেষ সম্মান ও সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব আসে। এম ডি/এম এস-এর প্রবেশিকা পরীক্ষায় করোনা ডিউটি কালকে ডিফিকাল্ট এরিয়া হিসেবে গণ্য করে ১০%, ২০% এবং ৩০% বেশি নম্বরের সুবিধা দেওয়ার কথা হয়।
২। এরপর শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পক্ষ থেকে আমি মেডিকেল কলেজে আন্ডার গ্রাজুয়েট ও পোস্ট গ্রাজুয়েট পঠন-পাঠনের অসুবিধার কথা বলি। মেডিকেল কলেজ ডাক্তার তৈরীর জন্য, কেবল করোনার চিকিৎসা শিখলে ডাক্তার হওয়া যায় না এ কথা জোরের সঙ্গে বলা হয়। অন্য চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও একই কথা বলেন। ডা মানস গুমটা সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজের পঠন-পাঠনের সমস্যার কথা বলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয় মেডিকেল কলেজে করোনা চিকিৎসার পাশাপাশি সব ধরনের রোগ চিকিৎসার কাজ অবিলম্বে জোরদার করা হবে। (মেডিকেল কলেজ কেবলমাত্র করোনা রোগীদের জন্য–এমন কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। বা চিকিৎসা সংগঠনের প্রতিনিধিরা সরকারের এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়ে আসেননি।)
৩। শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর ফোরাম এর সাইক্লোন পরবর্তী 81 টি মেডিকেল ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলা হয় যে রাজ্যে সরকারি ক্ষেত্রে হোক বা বেসরকারি, করোনা ছাড়া অন্য সব রোগের চিকিৎসা ভেঙে পড়েছে। সরকারকে এই বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। সরকার তাতে সম্মতি জানান।
৪। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের প্রতিনিধি ডা অর্জুন দাশগুপ্ত ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বার খোলার অসুবিধার কথা জানান। ঠিক করা হয় মেডিকেল কলেজগুলির ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান গুলি থেকে প্রাইভেট ডাক্তাররা নিজেদের পরিচয় পত্র দেখিয়ে সুলভে পিপিই, n95 মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার ইত্যাদি সুলভে কিনতে পারবেন।
৫। চিকিৎসক এবং অন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য করোনা চিকিৎসার আলাদা ব্যবস্থা করার দাবি তোলা হলে জানানো হয় সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজের 100 টি শয্যা এই কাজের জন্য রাখা হবে।
৬। কর্পোরেট হাসপাতালগুলো করোনা চিকিৎসার নামে প্রচুর মুনাফা করছে, শয্যা থাকা সত্ত্বেও শয্যা নেই বলে রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে–এই অভিযোগ প্রশাসনকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। প্রশাসন জানান পরেরদিন বেসরকারি হাসপাতালের মালিক ও ম্যানেজারদের নিয়ে বৈঠক করে তাদের এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হবে।
৭। কেপিসি মেডিকেল কলেজ এবং রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানের মত কিছু বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এই পরিস্থিতিতে জুনিয়র ডাক্তারদের কম ভাতা দিচ্ছে। সে বিষয়েও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করা হয়।
মিটিং শেষে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লেখা মেডিকাল কলেজের ছাত্রছাত্রী, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেনিদের একটি মেমোরান্ডাম ও ডেন্টাল সার্জেনদের একটি মেমোরান্ডাম মুখ্য সচিবের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
আপনাদের সক্রিয়তার জন্যই অন্যান্য রোগীরাও চিকিৎসা পাচ্ছেন এই দুঃসময়ে।
চমৎকার কাজ হয়েছে
Khub valo prochesta
বৈঠকের কথা মতো কাজ হলে ভালো হয়
খুব ভালো খবর। আপনারা প্রমাণ করলেন প্রশ্নহীন আনুগত্য দেখিয়ে সরকারের কথায় সায় দেওয়া বিবেকবান ডাক্তারদের কাজ নয়।
সুমন বাবুর বক্তব্যের সাথে একমত। শাসকের চোখে চোখ রেখে চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষের ন্যায় দাবি পেশ করতে হবে।
ভালো হয়েছে। এরপর সরকারের সাথে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে প্রস্তাবগুলো কাজে পরিণত করাতে হবে।
ভালো হয়েছে। এরপর সরকারের সাথে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে প্রস্তাবগুলো কাজে পরিণত করাতে হবে।