গ্রীক শব্দাংশ ‘ডিস’ (dys-) কথাটির অর্থ ‘যন্ত্রণা বা কষ্ট’ এবং ‘ মেনোরিয়া’ কথাটির অর্থ ‘মাসিকের রক্তপ্রবাহ’। অর্থাৎ ‘ডিসমেনোরিয়া’ শব্দটির অর্থ যন্ত্রণা যুক্ত মাসিকের রক্তপ্রবাহ। মাসিক রক্তপ্রবাহের সময়কালে তলপেটে যন্ত্রণা অনুভূত হয়। এই ব্যথা কখনো কখনো কোমরের দিকেও হয়ে থাকে। সঙ্গে বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা, স্তনে ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যাও থাকতে পারে।
বিশেষত কম বয়সী মেয়েদের মাসিক শুরু হওয়ার সময়কালে এই সমস্যা বেশি হয়। তবে ডিসমেনোরিয়া আবার দু’রকমের হয়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া। প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকে না, কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া (Secondary Dysmenorrhoea) একটু বেশি বয়সের মহিলাদের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করা যায়। ওভারিয়ান সিস্ট (ovarian cyst), এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis), ফাইব্রয়েড (Fibroid), প্রসব পথের সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া হয়।
রোগনির্ণয়:
সাধারণত প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়া নির্ণয়ের জন্য কোনো পরীক্ষা করার দরকার পড়ে না। রোগ লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। অন্যদিকে সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া নির্ণয় করার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়।
1. Pelvic examination
2. Complete Blood Count
3. Ultrasonography
4. Pelvic Laparoscopy
5. Vaginal Cytology etc.
এছাড়াও প্রয়োজনমাফিক অন্যান্য পরীক্ষার দরকার পড়তে পারে।
করণীয়:
১. ব্যথা কমাতে NSAIDs জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। মেফেনামিক অ্যাসিড, আইবুপ্রোফেন, অ্যাসিক্লোফেনাক ইত্যাদি এই জাতীয় ওষুধ। এইসব ওষুধের সাথে প্যারাসিটামল, কম্বিনেশনে ব্যবহার করা যায়। খাবার পরে এই জাতীয় ওষুধ খেলে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড কমানোর ওষুধ খাওয়ার দরকার পড়ে না। তবে পেপটিক আলসার থাকলে, এই জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করার আগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
২. এই সময়ে শরীরে জলের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
৩. মাসিকের ব্যথা কমাতে আদা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আদা ব্যথা উদ্রেককারী প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন কমাতে সাহায্য করে এবং মানসিক অবসাদ কমায়। এক কাপ গরম জলে আদা ছেঁচে মিশিয়ে পান করুন।
৪. ব্যথা কমাতে দারুচিনি-রও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এক টেবিল চামচ দারুচিনির গুঁড়ো চা-এর সঙ্গে মিশিয়ে ৫ মিনিট ফুটিয়ে খেতে হবে। পিরিয়ড শুরু হওয়ার ২-৩ দিন আগে থেকে খেলে মাসিকের ব্যথা অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে।
৫. কফি বা অতিরিক্ত চা পান থেকে বিরত থাকুন। কফির উপাদান ক্যাফেইন, রক্তনালীকা সংকুচিত করে দেয়। ফলে জরায়ুর মাংসপেশীতে রক্তসঞ্চালন হ্রাস পায় এবং ব্যথা তীব্রতর হয়।
৬. কম ক্যাফেইন যুক্ত আদা-চা, গ্রীণ টি, কার্ডামম্ টি, পিপারমিন্ট টি, লেমোনগ্রাস্ টি এই জাতীয় হার্বাল চা পান করতে পারেন।
৭. অতিরিক্ত ব্যথা হলে, তলপেটে হট্-ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে সেঁক নিতে পারেন।
৮. সুষম নিরামিষ জাতীয় খাবার-দাবার খান। তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৯. পেঁপে, পেয়ারা, নাসপাতি, কলা, আপেল ইত্যাদি ফল বেশি পরিমাণে খান।
১০. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ কিছু ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করলে পিরিয়ডের ব্যথা লাঘব করা যাবে।
১১. মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও যোগব্যায়াম অভ্যাস করুন।