প্রেয়িং মান্টিস (Praying Mantis), শিকারি পতঙ্গ। ‘প্রার্থনারত’ বা ‘প্রেয়িং’, কারণ তাদের সামনের পা-দুটো এমন করে ভাঁজ করা থাকে যেন প্রার্থনায় বসেছে (প্রথম ছবি দেখুন)। সাধারণত মাছি, পোকা এইসব খেয়ে বাঁচে এরা। এদের যৌন মিলনের সময়ে পুরুষ মান্টিস সাবধানে স্ত্রীর ওপর চড়ে (দ্বিতীয় ছবি দেখুন)। সাবধানে, কেননা নাগালে পেলে স্ত্রী মান্টিস পুরুষকে খেতে শুরু করে। যখন পুরুষটি মিলনের জন্য এগোচ্ছে বা যখন যৌনক্রিয়া চলছে, বা তার ঠিক পরে স্ত্রী পুরুষের মাথা চিবিয়ে খাওয়া শুরু হয়। মাথা খেয়ে ফেললেও অবশ্য সঙ্গম চলে, স্ত্রীর গর্ভে সেই সঙ্গম-মৃত পুরুষের সন্তান উৎপাদিত হয়।
পুরুষ মান্টিস মৃত্যুর ভয়ে সঙ্গমে পিছপা হয় না। বা বলা ভাল, যে সব পুরুষ মৃত্যুর ভয়ে স্ত্রীর কাছে ঘেঁষে না, তাদের জীবন হয়তো লম্বা হয়, কিন্তু পরের প্রজন্মে তাদের কোনও প্রতিনিধি থাকে না। সঙ্গম-মৃত পুরুষের উত্তরপুরুষ থাকে।
সঙ্গম-আচরণ একটি জিন-প্রভাবিত আচরণ। যে জিন পুরুষ মান্টিসকে মৃত্যুভয় জয় করে সঙ্গমে এগিয়ে দেয়, সেই জিন পুরুষের আয়ু কমায়। কিন্তু সেই জিনই পরের প্রজন্মে যেতে পারে। যে জিন মৃত্যুর ভয়ে পুরুষকে স্ত্রীর কাছে যেতে দেয় না, সেই জিন পুরুষের আয়ু বাড়ায়, কিন্তু তার সন্তান উৎপাদন আটকে দেয়। ফলে পরের প্রজন্মে সেই জিন যেতে পারে না।
সার্ভাইভ্যাল অফ দ্য ফিটেস্ট নয়, রিপ্রোডাকশন অফ দ্য ফিটেস্ট। টিকে থাকার সাফল্য নয়, প্রজনন সাফল্য হল ফিটনেস-এর একমাত্র পরিমাপ। স্ত্রীর কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া মান্টিস টিকে থাকায় সফল। কিন্তু সে হারিয়ে যায়। তার জিন হারিয়ে যায়। প্রজনন সফল সঙ্গম-মৃত মান্টিসই কেবল পরের প্রজন্মে নিজের জিনের ছাপ রাখতে পারে।
মান্টিসের যৌনমিলনের কথা শুনে আমাদের অস্বস্তি হয়। আর ময়ূরের পেখম দেখে পুলক হয়। কিন্তু এদের মধ্যে মৌলিক মিল আছে। পুরুষ মান্টিস চেষ্টা করে যাতে তার শুক্রাণু স্ত্রী মান্টিসের ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে পরের প্রজন্মে যেতে পারে। তার জন্য সে প্রাণের ঝুঁকি নেয়। পুরুষ ময়ূর চেষ্টা করে যাতে তার শুক্রাণু স্ত্রী ময়ূরের ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে পরের প্রজন্মে যেতে পারে। তার জন্য সে প্রাণের ঝুঁকি নেয়। মান্টিস মরে স্ত্রীর হাতে। ময়ূর মরে বাঘের হাতে, পেখম সহজে দেখা যায় বলে, পেখমের ভার নিয়ে পালানো দুষ্কর বলে।
কেবল প্রাকৃতিক নির্বাচন নয়, সঙ্গে ‘যৌন নির্বাচন’। দুটো মিলিয়েই বিবর্তন। দ্বিতীয় নির্বাচনের কথা বলা হয় কম। তাই অন্য নির্বাচন নিয়ে আমার দু-কথা।