★
– মিঃ প্রেসিডেন্ট
– আরে আবদুল, আবার এলে? এসো এসো…
– আমি আবদুল নই প্রেসিডেন্ট স্যার। ও অফফ লাইন হয়ে গেছে কিছু আগেই। আপনি টের পাননি। আমি নবেন্দু। ফ্রম ইন্ডিয়া।
– ওঃ নবেন্দু। ফ্রম?
– ফ্রম সাউথ ইস্ট এশিয়া। ইন্ডিয়া, টু বি প্রিসাইজ
– ফ্রম খ্যালকাটা?
– ক্যালকাটা বহুদিনই নেই স্যার
– নেই? সে কী হে, অতবড় সিটিটা নেই?
– না স্যার, নেই মানে আছে।
– তুমি কি ইনটক্সিকেটেড নবেন্দু? নেই মানে আছে… এ তো পুরোটাই প্রলাপ। ক্যানাবিস?
– আজ্ঞে, বোঝাতে পারিনি ঠিক। সিটিটা আছে। কিন্তু ক্যালকাটা নয়। ওটা এখন কলকাতা।
– ও, নাম বদলেছো? যেমন লেনিনগ্রাদ পাল্টে সেন্ট পিটার্সবার্গ সেই রকম কিছু?
– মিঃ প্রেসিডেন্ট, আমরা কিন্তু মূল আলোচনা থেকে সরে যাচ্ছি। আবদুলের সঙ্গে ডিসকাশন চলাকালীন আপনি শেষ দিকে একটু ঝিমিয়ে পড়েছিলেন। সেই বকেয়া কথাগুলো আমাকেই সেরে ফেলতে হবে। সময় বেশি বাকি নেই স্যার।
– বকেয়া কথা মানে তো আবার বকবক। সেই অ্যালগরিদমটা আমাকে গেলাবার চেষ্টা।
– গিলতে আপনাকে হবেই। যদিও গেলা কথাটার চাইতে বোঝা কথাটা অপেক্ষাকৃত নরম হবে আপনার জন্য। মানে প্যালেটেবল। এটা ঠিকই, কোটি কোটি হোমো স্যাপিয়েন্সকে অ্যানালিসিস করে আপনাকেই এই গ্রহের প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে অ্যাভারেজ কষে। ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে প্রায় অসীম, কিন্তু অ্যালগরিদম অমান্য করার ক্ষমতা আপনাকেও দেওয়া হয়নি।
– কী বোঝাবে আমাকে তোমার ওই অ্যালগরিদম? চলে যেতে হবে এই সামান্য কথাটা বোঝানোর জন্য অত যুক্তিজাল আর অঙ্ক কীসের হে নবেন্দু?
– এ সেই পুরোনো যুক্তি বয়েস হলেই যেতে হবে, সেই রকম কিছু নয় স্যার। অন্য কিছু অঙ্কও প্যারালেলি কষা হয়েছে। ফাজি লজিক অ্যানালিসিস। ডিফাজিফিকেশন। কোয়ান্টাম কম্পিউটার। সে ভারি ভজকট কনসেপ্ট প্রিয় প্রেসিডেন্ট।
– মানে?
– বয়স না হলেও যেতে হতে পারে। শুধু একটাই আনন্দের খবর, আপনার চলে যাওয়া উপলক্ষে আঠারো পয়েন্টের হেড লাইন বরাদ্দ করা হয়েছে সব কটা লিডিং কাগজে। আর প্রাইম টাইমে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টানা তিন দিন থাকবেন আপনি। অত জটিল আর ফাজি লজিকের গল্প এই রাত দুপুরে না হয় আর নাই শুনলেন
– রাত দুপুর কথাটায় একটু আপত্তি রয়েছে আমার নবেন্দু। ব্যাপারটা রিলেটিভ। ওই রিলেটিভিটির জটিল তত্ত্বের ভেতর না গিয়েও বলতে পারো, এখন মোটেই অ্যাবসোলুট রাত দুপুর নয়। কোথাও কোথাও সূর্য উঠছে এখন, অস্তও যাচ্ছে কোথাও কোথাও। কোনও বাগানে ফুল ফুটছে। কোনও শাল পিয়ালের বনে ঝড় উঠেছে। আমাজনের কোথাও সড়সড় করে সরে যাচ্ছে অ্যানাকোন্ডা। পোলার বিয়ারের কচি বাচ্চাটা মায়ের পিছু পিছু যেতে গিয়ে তুষারে পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে বারবার। টের পাচ্ছ, নবেন্দু?
– আবার আপনি মিঃ প্রেসিডেন্ট মূল কথা থেকে ডিভিয়েট করে সময় নষ্ট করতে চাইছেন।
– আঃ নবেন্দু, ফের ভুলভাল কথা বলছ। সময় নিজেই একটা গার্বেজ। একমুখী এক নষ্টচরিত্র কনসেপ্ট। যে নষ্ট হবে বলেই তৈরি তাকে আমি নতুন করে নষ্ট করব কী হে?
– স্যার… স্যার… আপনি সত্যিই ইনকরিজিবল! সময় সত্যিই কম। উৎপাদনশীলতা, রিসোর্স ইউটিলাইজেশন আর পৃথিবীর সামগ্রিক ধারণক্ষমতা এই সব কঠিন হিসেব কষে আপনাকে অতিরিক্ত গণ্য করা হয়েছে। সারপ্লাস এক্সিসটেন্স। কাজেই ইরেজ করা হবে। যেমন করা হয়েছে অতীতে, ডাইনোসর, স-টুথ বাঘ আর ম্যামথ সমেত আরও অনেককেই। শুধু এবারের বৈশিষ্ট্য হল অ্যাড করা হয়েছে ইন্ডিভিজুয়াল বায়াস ব্যাপারটা। পুরো স্পিসিস এলিমিনেট করা হচ্ছে না। কাঁটা বেছে মাছ খাওয়া যেমন। আপনি ফর দি টাইম বিয়িং প্রেসিডেন্ট হয়েছেন বটে, আপনাকেও স্পেয়ার করা হবে না, হিসেবের বেলা। কোয়ান্টাম কম্পিউটার যা বলবে তার অন্যথা করা যাবে না।
– নবেন্দু, তোমাদের হিসেবের সঙ্গে তর্ক করব এত জ্ঞান আমার নেই। তবু বলি, দ্যাখো দাঁত অনেককটাই নেই বটে, তবু আখ চিবিয়ে খেতে লোভ হয়। কাঁটা আছে জেনেও গোলাপ জড়াতে ইচ্ছে করে।
– সে তো স্যার, নিজের নিজের বেঁচে থাকাটা আমাদের এই গ্রহবাসীদের প্রত্যেকের কাছে জরুরি। কিন্তু নিয়মের হেরফের করাটাই কি ঠিক?
– নিয়ম? নিয়মটাই কি সব নবেন্দু?
– আজ্ঞে হ্যাঁ প্রেসিডেন্ট। আমি আপনার এত জুনিয়র। আমারও নিজেকে নিজেই এলিমিনেট করতে হবে আপনার কেসটা ফিক্স করার পরই। সেই রকমই নির্দেশ স্যার। আর তা অমান্য করব আমার প্রোগ্রামে তেমন কিচ্ছু লেখা নেই।
– ও কি হাতে অস্ত্র নিয়ে এগোচ্ছ যে! এলিমিনেট করার আর ভালো কোনও উপায় জানা নেই নাকি হে? স্ট্রোক হার্ট অ্যাটাক বা ওই রকম সহজ কিছু?
– দেওয়া যেত, কিন্তু সময় নেই। আমার নিজের এলিমিনেশনের কেসটাও সারতে হবে তো!
★
বিদ্যুৎ চমকের মত আওয়াজের সঙ্গে চেতনার পর্দাটা সাদা হয়ে গেল।
হয় তো স্বপ্ন। হয় তো স্বপ্ন নয়। সত্যিই প্রেসিডেন্টের রোল করছিল কেউ কোথাও।
★
হরিপদ সাহার বালিশ ভিজে গেছে ঘামে। দুঃস্বপ্নের শেষটা হুবহু মনে পড়ছে। ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই নবেন্দুকে ছোটো বেলায় শেখা কাঁচি প্যাঁচটা মারতেই, ওর হাতের অস্ত্রটা, সেফটি ক্যাচ খোলাই ছিল… দুম করে এক ঝলক আগুন ঢুকে গেল ছোকরার বুকে। ঠিকই বলেছিল, ওরও সময় এসে গেছিল।
হরিপদ কপালগুণে একবার বেঁচে গেছে বটে, কিন্তু জেনে গেছে সময় এসে গেছে। ফাজি লজিকের অ্যালগরিদম হাতে পরের এজেন্ট এলো বলে।