নবীন পেশকারটি ফিসফিস করে, নিজেকেই বলছে,—- আর কবে? আর কবে?
সেই কেসটি আদালতের লিস্টে এসেছে আবারও। জয়েন করে অবধি পেশকার এই কেসটির সম্বন্ধে কিছু কিছু উড়োকথা শুনেছে।
দুহাজার চব্বিশে একজন খুন হয়েছিল তার কর্মস্থল কলকাতার এক হাসপাতালে।
আদালত সুয়োমোটো ডেকে নিয়েছিল। প্রথমে সাত দশদিন অন্তর ডেট পড়ত। তারপর মাসে দুমাসে। তারওপরে,
বাৎসরিক দ্বিবার্ষিক।… এখন পাঁচ দশ বছরে একবার।
দুহাজার একশ পেরিয়ে ক্যালেন্ডারে পরবর্তী শতক শুরু হয়ে গেছে।
মূল অভিযুক্তরা গতায়ু হয়েছে বহু আগেই। তারা কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু প্রমাণাভাবে আসল খুনিরা কেউই ধরা পড়েনি। খুনিরা পরে দেশে ও বিদেশে প্রথিতযশা ও প্রোথিতযশা চিকিৎসকও হয়েছিল।
বাদীপক্ষ ছিল নিহত চিকিৎসক কন্যার মা-বাবা। প্রতিবাদীপক্ষ যাদের সন্দেহবশত ধরা হয়েছিল তারা। যুক্তিবাদী মানুষজন বিশ্বাস করত, যাদের ধরা হয়নি বা ধরা যায়নি, তাদের মধ্যেই ছিল হত্যানাটকের মূল কুশীলবেরা।
রাজ্যসরকার সর্বোচ্চসংখ্যক দামী আর নামী উকিলদের নিয়ে এই মামলায় জড়িয়েছিল। তারা নিজেরা বাদী-বিবাদী, কোনপক্ষে, সেটা সঠিক ভাবে নির্ণীত হয়নি।
কেসের তদন্তভার ছিল এই ভূখণ্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী এজেন্সির ওপর।
কেসটি বহুবার ঐতিহাসিক ভাবে বাঁকবদল করেছে।
খুনের মামলা তামাদি হয় না।
প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দারা বলেছিল,– নিখুঁত প্রমাণলোপ। অপরাধবিজ্ঞান মতে প্রমাণ নিঃসংশয়ে মোছা যায় না। কিন্তু আহৃত প্রমাণ মুখবন্ধ খামে কী ও কতখানি দেওয়া হবে এই ব্যাপারে যথোপযুক্ত নির্দেশ ছিল।
কিন্তু পরবর্তী কালে রাজ্যসরকারের উকিলদের কেরামতিতে প্রমাণ হয়, আসলে কোনও খুনের ঘটনাই ঘটেনি। ওই সংক্রান্ত পুলিশ ও পোস্টমর্টেম-রিপোর্ট, সবই ভুয়া।
মূল বাদীপক্ষ তাদের সন্তান কোথায়, সেই জিজ্ঞাসাভরা কান্না নিয়েই মারা গেছে।
আজ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোর্টে সাক্ষী হিসেবে কিছু প্রতিবেশীকে পেশ করা হয়েছে।
এরা তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্মের সাক্ষী।
সাক্ষীরা হলফ করে জানিয়েছে,- – হুজুর, মামলাকারী দম্পতি আসলেই নিঃসন্তান ছিল। কাজেই তাদের সন্তানখুনের প্রশ্নই ওঠে না।
বিচারপতি শঙ্খচূড় ও অন্যান্যরা অতএব মামলাটি খারিজ ঘোষণা করলেন।
কিন্তু নবীন পেশকারের সমস্যাটি মিটল না। তার কাছে রয়েছে মামলার একজিবিট একখানি শতাব্দীপ্রাচীন থিসিস, যেটি দাখিল করা হয়েছিল তৎকালীন অধ্যক্ষের সইএর জন্য। সেই সই না হওয়া একজিবিটটির গায়ে কান পাতলে, হতাশাভরা কান্নার শব্দ শোনা যায়।
আজও।
★