যখনি কোন আন্দোলন সমাজে ব্যপক সাড়া ফেলে, সেই আন্দোলন সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর অবস্থা তৈরী করার জন্য নানা ধরনের মিথ্যা প্রচার শুরু হয়। মিথ্যা প্রচারের অন্যতম একটি বিষয় হলো তহবিল তছরুপ। আমরা যে যে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি, আন্দোলনের যুক্তির সামনে দাঁড়াতে না পেরে এই প্রচার বারবার করা হয়েছে। কানোরিয়া জুট মিলের আন্দোলনের সময় যখন যৌথ রান্নাঘর চালু হলো, সেইসময় তৎকালীন শাসক দল ব্যপক প্রচার করেছিল, সারদা গোষ্ঠী এই আন্দোলনের তহবিল তৈরী করে দিচ্ছে। আমরা আন্দোলনের দু’মাস পর নাম উল্লেখ করে বলে দিয়েছিলাম কারা কারা টাকা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে যারা একটু বেশী টাকা দিয়েছিল, তাদের এমনকি পুলিশী হয়রানিরও সম্মুখীন হতে হয়।
২০২১ সালে ‘নো ভোট টু বিজেপি’র আন্দোলনের সময় ব্যপক প্রচার করা হলো, তৃণমূল এবং আই প্যাক নাকি আমাদের প্রচুর ফান্ডিং করেছে। যদিও এই আন্দোলনে ‘প্রচুর’ খরচ মোটেই হয়নি। যাই হোক, সেবারেও আমরা সমস্ত আয়ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ্যে পেশ করেছিলাম। আমরা বারবার বলেছি, সকলের সামনে একটু জানানো হোক কোন তৃণমূল নেতা-নেত্রী আমাদের ফান্ডে টাকা দিয়েছিলেন! কয়েকজন তো ধারাবাহিকভাবে লিখলেন আমরা নাকি ৭ কোটি টাকা তুলেছিলাম! যদিও প্রমান দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা হিরণ্ময় নীরবতাই কেবল পালন করে গেছেন।
এবার তার পুনরাবৃত্তি হলো জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনে। সাড়া জাগানো এই আন্দোলনের সামনে যুক্তিতে হেরে গিয়ে শাসক তৃণমূল প্রচার শুরু করেছে, জুনিয়র ডাক্তাররা প্রচুর টাকা তুলেছে। প্রথমে বর্তমান পত্রিকা লিখলো জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে ১কোটি ৮০ লাখ টাকা উঠেছে। তৃণমূলের একটা অংশ বাড়াতে বাড়াতে এখন বলছে ৪কোটি ৮০লাখ টাকা জুনিয়র ডাক্তারদের তহবিলে জমা পড়েছে। যে দলটির মূল ভাবনাই হলো ‘চুরি আমাদের ভিত্তি, জেল আমাদের ভবিষ্যৎ’,তারাই এই প্রচার করছে বেশী করে। বোকারা এটা বোঝে না, এই জুনিয়র ডাক্তারদের সামাজিক ভিত্তি অনেক গভীরে। এদের তহবিলে ৮০ কোটি টাকা জমা পড়লেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। খামোকা ঐ কিছু টাকা তারা আত্মসাৎ করবে কেন?
আসলে প্রশ্ন টা তহবিল তছরুপের নয়। তহবিল নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দুর্নীতি ব্যপক। এবং মানুষও বিভিন্ন ভাবে এই বিষয়ে ক্ষুব্ধ। সেইসময় ঐ বিষয়টিকে সামনে রেখে শাসক দল আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জনমতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। যুগে যুগে আমরা দেখেছি কোন জনস্বার্থমূলক আন্দোলন চললেই শাসকরা এই ধরনের প্রচার চালায়। এতে সাধারণ ভাবে আন্দোলনে প্রভাব কম পড়েছে। এই সময়েও চলমান আন্দোলনের দ্রোহের সামনে এই মিথ্যা প্রচার মুখ থুবড়ে পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।
রচনা: কুশল দেবনাথ