শুক-সারী, ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী এরা এখন আর একসাথে থাকে না। ওদের যৌথ পরিবার সেতো কবেই একক হয়ে গেছে। আর সেই বিরাট বড়ো ফোকলা বুড়োর গাছটাও তো আর নেই, শুধু ওটা কেন, বড়ো কোনো গাছই তেমন একটা নেই। বড়ো বাড়িও হ্যাপা,তাই সেটা বদলে ছোটো ছোটো অনেক ঘর-একা। এটাই এখনকার ট্রেন্ড। শৈশব এখন পক্ষীরাজে চড়ে, ইন্দ্রপুরী বেড়ানোর স্বপ্ন দেখে না। তারা এখন স্বপ্ন-ই দেখে না। সবার অজান্তে, যন্ত্রপুতুলের মতো বড়োদের চাপ নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে দিন কাটায়। খুব মন খারাপ হলে, একা ঘরে দামী খেলনার সাথে, ভালু, লালুদের ওপর নিজের রাগ দেখায়। হ্যাঁ, দুঃখ পেলে তারা কাঁদে না, রাগ দেখায়-চেঁচায়।
শৈশব পেরোয়। এখন শুধু বয়সে না, কর্মেও বড়ো হওয়ার পালা। আগের মতো কৈশোর এখন ক্ষীরসাগরে,ময়ূরপঙ্খীতে পাল তুলে বাণিজ্যে যাওয়ার কথা ভাবে না। তারা এক ক্লিকে জাল দুনিয়ার সবটুকু আহরণ করতে চায়।এবার কোনো কারণেই তাদের মন খারাপ হয় না, যা চায় তা না পেলে মনে ক্ষোভ-বিদ্বেষ-হিংসা জায়গা করে নেয়। রাগ গিয়ে পড়ে জলজ্যান্ত ভালু, লালুদের ওপর, তারা আগে নিশ্চুপে সব সইত-এখন এরা কাতরায়, আর্তনাদ করে। উন্মত্ত মন আজ, অন্ধ, বধির। না, একটু ভুল ভাবলাম। তাদের অন্যের দুঃখ শোনার সেই কান, অপরের কষ্ট দেখার সেই চোখ তৈরীই হয়নি। জল আর চোখের জলের পার্থক্য তারা বোঝে না। ক্ষমা করতে তারা শেখে না, ভিডিওগেম তাদের শুধুই তাড়া করে খতম করে বদলা নিতে শেখায়-যে কোনো মূল্যেই শুধু জিততে হবে তার পাঠ দেয়। আজ আর রাজপুত্র ঘুমন্তপুরীর রাজকন্যার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে সোনারকাঠি-রূপারকাঠি ছুঁইয়ে জাগায় না, তার যৌবনের আগুন রাজকন্যার রূপ জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেয়।
।।রূপকথাটি ফুরাল।।