প্রশ্ন) কোভিড ভ্যাক্সিন কবে থেকে আমাদের দেশে তথা রাজ্যে চালু হবে ?
উত্তর) ঠিক কবে থেকে চালু হবে সেই দিনক্ষণ এখনো সরকারি ভাবে ঘোষিত হয়নি, তবে আশা করা যায় সেটা এই মাস, অর্থাৎ জানুয়ারির মধ্যেই কোনও একটা দিন থেকে শুরু হবে।
প্রশ্ন) প্রথম পর্যায়ে কারা এই ভ্যাক্সিন পাবেন ?
উত্তর) প্রথম পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের দেওয়া হবে। অর্থাৎ সোজা কথায় যাঁরা সরাসরি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে জড়িত আছেন এবং সেই সুবাদে প্রত্যক্ষভাবে রোগীর সংস্পর্শে আসেন তাঁরাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম পর্যায়ে এই টিকা পাবেন।
এই গ্রুপে কারা থাকবেন ?
সরকারি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী এবং ফ্রন্টলাইন কর্মীরা থাকবেন, অর্থাৎ ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে অন্যান্য সহায়ক কর্মী এবং সাফাইকর্মী সবাই থাকবেন।
থাকবেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মী, বিভিন্ন পদের clerical staff, office bearer, হাসপাতালের ল্যাবরেটরি এবং যাবতীয় diagnostic procedure-এর সাথে যুক্ত সকল প্রকার কর্মী, অ্যাম্বুল্যান্স চালক, ইত্যাদি। এক কথায়, যে কোনও সরকারি অথবা বেসরকারি হাসপাতালের ছাদের নিচে কর্মরত সকল প্রকার কর্মী এই গ্রুপে থাকছেন।
এছাড়া সরকারি হাসপাতালের বাইরে যাঁরা ফিল্ডে প্রত্যক্ষভাবে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত তাঁরা অবশ্যই এই গ্রুপে থাকছেন, যেমন আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, CHO (Community Health Officer), Health Assistant (Female/Male), 2nd ANM, GP Health Supervisor (Male/Female), ইত্যাদি।
আর কারা থাকবেন ?
যে সকল ব্যক্তি কোনও Registered Clinical Establishment (Diagnostic Centre, Pathology Centre, Polyclinic)-এ কাজ করছেন, যেমন ডাক্তার, Laboratory technician, Radiology technician, সেখানকার সহায়ক কর্মী, administrative and clerical staff ইত্যাদি সব ধরনের কর্মী এই গ্রুপে থাকছেন।
প্রশ্ন) যাঁরা প্রথম পর্যায়ে টিকা পাবেন তাঁদের নাম কিভাবে নথিভুক্ত হবে ? কে করবে ?
উত্তর)সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর করবে। তাঁরাই বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং অন্যান্য Clinical Establishment এর কর্মীদের নাম এবং আনুষঙ্গিক তথ্য আপলোড করার দায়িত্ব নেবেন। তথ্য সরবরাহ করার দায়িত্ব সেইসব প্রতিষ্ঠানের মালিক/ডিরেক্টর/দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্নধারের।
প্রশ্ন) কি কি তথ্য লাগবে নাম নথিভুক্ত করতে ?
উত্তর) নাম, ফোন নাম্বার, ঠিকানা, ইত্যাদি অত্যাবশ্যক তথ্য লাগবে। ঠিকানার জন্য ID proof আপলোড করতে হবে। এপিক কার্ড, প্যান কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাঙ্কের অথবা পোস্ট অফিসের পাসবইয়ের প্রথম পাতা, ইত্যাদি নানারকম অপশন আছে। এই লিস্টে আধার কার্ড নেই। যতদূর জানি আধার কার্ডটা দরকার হতে পারে ভ্যাক্সিন নিতে যাওয়ার সময়।
আপনি যখন ভ্যাক্সিন নেওয়ার জন্য নির্ধারিত vaccination centre-এ যাবেন তখন অবশ্যই যে ID proof-টা আপলোড করেছেন তার অরিজিনাল কপি নিয়ে যাবেন, কারণ ভ্যাক্সিন দেওয়ার আগে সেটা verify করা হবে। এছাড়া আধার কার্ডটাও সঙ্গে নেবেন, যদি কোনও কারণে দরকার হয়।
প্রশ্ন) আমি যে ID proof দিয়েছি আপলোড করার জন্য সেখানে আমার বাড়ির ঠিকানা দেওয়া আছে (ধরা যাক বারুইপুর), কিন্তু আমি যে হাসপাতালে কর্মরত সেটা অন্য জায়গায় (ধরা যাক বালুরঘাট)।
আমি কোন জায়গায় ভ্যাক্সিন পাবো ?
উত্তর) আপনি যে ID proof দিয়েছেন আপলোড করার জন্য সেখানে যে ঠিকানা এবং পিনকোড দেওয়া আছে আপনি সেখানকার কাছাকাছি কোনও vaccination centre এ টিকা পাবেন। সেক্ষেত্রে যদি দেখা যায় আপনাকে বালুরঘাট থেকে বারুইপুরে আসতে হচ্ছে ভ্যাক্সিন নেওয়ার জন্য তাতে কিছু করার নেই ! যে পোর্টালে (Co-Win portal) তথ্য আপলোড করার হবে সেই পোর্টাল তার নিজস্ব নিয়মে আপনার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী আপনার vaccination centre স্থির করে দেবে। অতএব চেষ্টা করবেন ID proof document এর ক্ষেত্রে এমন কোনও Photo ID দিতে যেটা কিনা আপনার পক্ষে সুবিধাজনক।
প্রশ্ন) দ্বিতীয় পর্যায়ে কারা ভ্যাক্সিন পাবেন ?
উত্তর) যাঁরা সরকারি বা বেসরককারি স্বাস্থ্যকর্মী নন কিন্তু প্রত্যক্ষ ভাবে কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলার সাথে যুক্ত সেইসব ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার এই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হবেন (যেমন পুলিশ কর্মী, হোমগার্ড, ইত্যাদি)।
প্রশ্ন) এরপর কাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাক্সিন দেওয়া হবে ?
উত্তর) পঞ্চাশ বছর বা তার বেশি বয়স্ক ব্যক্তি (তাঁর কোনো comorbidity থাক বা না থাক) এবং পঞ্চাশের কম বয়সী ব্যক্তিদের যাঁদের কিনা প্রমানিত এক বা একাধিক comorbidity আছে।
পঞ্চাশের অধিক ব্যক্তিদের আবার দুটো sub-group এ ভাগ করা হয়েছে, যথা পঞ্চাশ থেকে ষাট যাদের বয়স এবং ষাটোর্দ্ধ ব্যক্তি।
বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে এই দ্বিতীয় sub-group কে (অর্থাৎ 60+ age group), তবে যদি ভ্যাক্সিনের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকে তাহলে দুটি subgroup-কেই সমান্তরাল ভাবে টিকাকরণ করা হবে।
প্রশ্ন) কোভিড ভ্যাক্সিন নেওয়া কি বাধ্যতামূলক ?
উত্তর) না, এটা অপশনাল। আপনি নিজে ভ্যাক্সিন নিতে ইচ্ছুক হলে তবেই আপনার নাম নথিভুক্ত করা হবে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে এই টিকা নিতে বাধ্য করা হবে না। তবে কোনও specific contraindication না থাকলে ভ্যাক্সিন নিয়ে নেওয়াই শ্রেয়। তাতে শুধু আপনি নন, আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মীগণ এবং সর্বোপরি এই সমাজ অধিক সুরক্ষিত থাকবে।
প্রশ্ন) এই মুহূর্তে ভ্যাক্সিন নেওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে ? নাকি অন্যদের কিরকম কি হচ্ছে সেসব দেখেটেখে নিয়ে পরে ভ্যাক্সিন নেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবো ? আসলে চারদিকে শুনছি ভ্যাক্সিনটা নাকি খুব তড়িঘড়ি করে বার করা হয়েছে, এর কার্যকারীতা এবং সাইড-এফেক্ট সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যপ্রমান নেই, আগে কখনও এত তাড়াতাড়ি কোনো টিকা মার্কেটে আসে নি, তাই এসব শুনেটুনে একটু কনফিউজড হয়ে গেছি আর কি ! কি করি বলুন তো ?
উত্তর) হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ইতিপূর্বে এত কম সময়ে কোনও ভ্যাক্সিন বাজারে আসে নি বা ছাড়পত্র পায় নি, কিন্তু কার্যকারীতা এবং সাইড-এফেক্ট সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যপ্রমান ছাড়াই এই ভ্যাক্সিন বাজারে চলে এসেছে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
যে কোনও আন্তর্জাতিক ভ্যাক্সিনের সর্বোচ্চ নিয়ামক এবং নির্ধারক সংস্থা, অর্থাৎ Vaccine Regulatory Authority যখন ছাড়পত্র দিয়েছে তখন ধরেই নিতে হবে তারা নিয়ম অনুযায়ী সমস্ত দিক দেখে, বিচার করে এবং সমস্ত তথ্যপ্রমান সাপেক্ষে সন্তুষ্ট হয়ে তবেই ছাড়পত্র দিয়েছে। অতএব এখানে কনফিউজড হওয়ার কোনও কারণ নেই। যদি specific কোনও contraindication না থাকে তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব ভ্যাক্সিন নিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
প্রশ্ন) এই ভ্যাক্সিনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কি কি হতে পারে ?
উত্তর) আলাদা করে উল্লেখ করার মতো কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আর পাঁচটা ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে যা যা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে এখানেও সেগুলোই প্রযোজ্য, যেমন হাল্কা জ্বর, ইঞ্জেকশনের জায়গাতে (হাতে) সামান্য ব্যথা/ফোলা, একটু মাথা ধরা বা মাথা যন্ত্রনা…..এবং খুব অল্প শতাংশ জনগণের ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হলেও হতে পারে।
দু-চারজনের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে বাড়াবাড়ি রকমের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা গেছে (যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় Anaphylactic reaction বলা হয়), কিন্তু তার কোনটাই প্রানঘাতী হয়নি এখনও পর্যন্ত।
সত্যি কথা বলতে কি যে কোনও টিকাকরণের ক্ষেত্রেই এরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ঠিক সেই জন্যই প্রতিটি vaccination site-এ আমরা “AEFI Kit” (AEFI = Adverse Event Following Immunisation) নামক একটি জিনিস মজুত রাখি। জিনিসটা আর কিছুই নয়, ভ্যাক্সিন-জনিত allergic/anaphylactic reaction সামাল দেওয়ার জন্য কিছু এমার্জেন্সি ওষুধ-ইঞ্জেকশনের কিট। এটা শুধু কোভিড বলে নয়, যে কোনও টিকাকরণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অর্থাৎ আপনার বাচ্চাকে যখন কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা প্রাইভেট চেম্বারে ভ্যাক্সিন দেওয়ার জন্য নিয়ে যান তখন তার ক্ষেত্রে যা যা সাইড-এফেক্টের প্রশ্ন থাকে আপনার ক্ষেত্রেই সেগুলোই থাকবে …. তার বেশি কিছু নয় !
সুতরাং কোথায় কোডিড ভ্যাক্সিন নিয়ে কার চোয়াল বেঁকে গেছে, অথবা কোন ফরওয়ার্ড করা মেসেজে পড়েছেন কারো যৌনক্ষমতা চলে গেছে এগুলো একদম পাত্তা দেবেন না !
প্রশ্ন) আমার অ্যালার্জির ধাত আছে। কথায় কথায় অ্যালার্জি হয়, গা-হাত চুলকায়, নাক-চোখ দিয়ে জল ঝরে, অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায়, একটু ধুলো-ময়লার মধ্যে থাকলেই ক্রমাগত হাঁচি হয়, তক্ষুনি ওষুধ না খেলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়, ইত্যাদি। আমি কি ভ্যাক্সিন নিতে পারবো ?
উত্তর)হ্যাঁ, নিতে পারবেন। কোনরকম food allergy বা dust allergy অথবা cold allergy এই ভ্যাক্সিন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা নয়। আপনার যদি ভ্যাক্সিন-জনিত কোনও hypersensitivity reaction (allergy/anaphylaxis)-এর ইতিহাস থাকে তবেই সেটা contraindication হিসাবে বিবেচিত হবে, অন্য কোনও অ্যালার্জির ক্ষেত্রে সেটা বিবেচ্য হবে না।
প্রশ্ন) ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর আমার সেই মুহূর্তে কি কি করণীয়?
উত্তর) বিশেষ কিছুই না। ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর আধঘন্টা ওখানেই অপেক্ষা করে বাড়ি চলে আসবেন। এই আধঘন্টা সময়কালটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ anaphylactic reaction হলে এর মধ্যেই হবে। যে কোনও টিকাকরণের ক্ষেত্রেই আমরা টিকা দেওয়ার পর আধঘন্টা অবজার্ভেশনে রেখে তবে বাড়ি পাঠাই। আপনিও তার ব্যতিক্রম নন !
প্রশ্ন) কোভিড ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর আমাকে কি কিছুদিন আইসোলেশনে থাকতে হবে ?
উত্তর) না। আপনি যেমন চলছিলেন তেমনই চলবেন। মাস্ক , হ্যান্ডওয়াশিং, স্যানিটাইজার, সোশ্যাল ডিস্টান্সিং বজায় রেখে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পালন করবেন।
প্রশ্ন) ভ্যাক্সিনের মোট কতগুলো ডোজ নিতে হবে ?
উত্তর) আপাতত দুটি ডোজ নিতে হবে। প্রথম ডোজের আঠাশ দিন পর দ্বিতীয় ডোজের নেবেন।
প্রশ্ন) স্রেফ দুই ডোজ ভ্যাক্সিন নিলেই কি lifelong immunity চলে আসবে, নাকি বছর বছর অথবা নিয়মিত ব্যবধান অন্তর এই ভ্যাক্সিন নিতে হবে ?
উত্তর) এখনো এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আপাতত দুটো ডোজ দেওয়া হবে, তারপর দেখা যাবে ভবিষ্যতে কি হয় ! অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপর ভবিষ্যত কর্মপদ্ধতি নির্ভর করছে, যেগুলো নিয়ে এখনই কথা বলার মতো সময় আসে নি।
প্রশ্ন) আচ্ছা, এই যে আরো এক ধরনের করোনাভাইরাস প্রজাতির কথা শোনা যাচ্ছে তা কতটা ভয়ংকর ? ওই প্রজাতির বিরুদ্ধে এই ভ্যাক্সিন কি আদৌ কাজ করবে ?
উত্তর) দেখুন, যে কোনও ভাইরাসের ক্ষেত্রেই mutation খুব কমন ব্যাপার। এটাও সেই ‘struggle for existence, struggle for survival’ এর প্রাগৈতিহাসিক গল্প। যে কোনও প্রাণী যখন নিজের অস্তিত্ব বিপন্ন দেখে তখন সে বেঁচে থাকার জন্য এবং নিজের জাতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পথ খুঁজতে থাকে। অতএব SARS CoV-2 যখন দেখছে সে আর আগের মতো হু-হু করে বংশ বিস্তার করতে পারছে না, তার সংক্রমণ ক্ষমতা এবং মারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে, তখনই তার ভুরুতে ভাঁজ পড়েছে। সে ভাবছে নিজের শরীরে কি কি পরিবর্তন ঘটালে আবার সেই আগের ফর্মে ফিরতে পারবে। এরই ফলস্বরূপ হলো mutation এবং আরেক ধরনের strain বা প্রজাতির আবির্ভাব। তবে চিন্তার কোনও কারণ নেই ! নতুন strain-এর সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি হলেও মারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি, সুতরাং আমরা যদি standard precautions গুলো মেনে চলি তাহলেই যথেষ্ট !
বর্তমানে যে ভ্যাক্সিনটা দেওয়া হবে সেটা এই নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধেও কার্যকর বলে শুনছি, সুতরাং আমরা তীব্র ভাবে আশাবাদী যে যতই নতুন নতুন strain আসুক না কেন, কোভিডবাবাজী এবার আর বিশেষ ট্যাঁ-ফোঁ করতে পারবে না।
যেটা দরকার সেটা হলো কোনরকম আত্মতুষ্টিতে না ভুগে আগের মতোই সব নিয়মকানুন মেনে চলা এবং সুযোগ এলেই ভ্যাক্সিন নিয়ে নেওয়া।
প্রশ্ন) আমি কি করে জানবো আমাকে কোন তারিখে কোন জায়গায় ভ্যাক্সিন দেওয়া হবে ?
উত্তর) আপনার মোবাইলে SMS আসবে। মোট তিনবার SMS আসার কথা।
প্রথমবার, যখন Co-Win portal-এ আপনার registration successfully complete হবে তখন।
এরপর দ্বিতীয় SMS, যাতে আপনার date, time and venue of vaccination উল্লেখ করা থাকবে।
প্রথম ডোজ নেওয়ার পর তৃতীয় SMS টি আসবে, সেখানে আপনার দ্বিতীয় ডোজের নির্ধারিত তারিখটি বলে দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হলে আপনাকে একটি UHID, অর্থাৎ Unique Health ID প্রদান করা হবে এবং আপনি একটি বিশেষ শংসাপত্র পাবেন। মোবাইলে একটি লিঙ্ক আসবে, যেটা ক্লিক করার পর এই এই বিশেষ শংসাপত্র, অর্থাৎ QR based Authentication Certificate পাওয়ার কথা।
প্রশ্ন) এই Co-Win portal কি শুধুই স্বাস্থ্য দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন ব্যবহার করতে পারবেন ?
উত্তর) না। এটা সবাই access করতে পারবেন, তবে আপাতত যা যা করার সেটা স্বাস্থ্য দপ্তর করবে। এই মুহূর্তে self-registration করা যাবে না। প্রথম পর্যায়ের টিকাকরণের পর সম্ভবত individual registration বা self-registration করার প্রক্রিয়া চালু হয়ে যাবে, অথবা তার আগেও ‘ওপেন’ করা হতে পারে। ঠিক এখনই সেই দিনক্ষণটা বলা যাচ্ছে না। নিজ-নথিভুক্তকরণের জন্য google play store থেকে Co-Win app পাওয়া যাবে। সেটা এখনো প্রস্তুতির পর্যায়ে আছে। হয়তো এখনও সেই অ্যাপ আপনি পেলেও পেতে পারেন এবং ডাউনলোড করতে পারেন, কিন্তু আপাতত তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না।
প্রশ্ন) এই যে প্রথম পর্যায়ের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে অন্যান্য ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার এবং তার পর পঞ্চাশোর্দ্ধ জনগণের ভ্যাক্সিন দেওয়া হবে বলে শুনছি সেটা কিভাবে হবে ? কে তাঁদের database তৈরি করবেন ? তখন কি self-registration এর মাধ্যমে নিজেদেরই apply করতে হবে ?
উত্তর) না, ওটাও স্বাস্থ্য দপ্তর এবং অন্যান্য প্রশাসনিক দপ্তরের মাধ্যমে হবে। ভোটার লিস্ট দেখে বয়স অনুযায়ী database তৈরি হবে। এ ছাড়া বিগত দিনে স্বাস্থ্য দপ্তরের আশাকর্মীরা house-to-house survey করে ‘Comorbidity Screening’ করেছেন এবং সেই তথ্যগুলোও স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে মজুত আছে। সেই তথ্য তখন কাজে লাগবে তো বটেই, তাছাড়া আবার কোনও ‘mop-up screening’ হবে কিনা সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। এখনো পর্যন্ত এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা পাই নি।
প্রশ্ন) শুনছি আঠারো বছরের নিচে নাকি এই ভ্যাক্সিন দেওয়া হবে না। কথাটা কি সত্যি ?
উত্তর) হ্যাঁ, সত্যি। আঠারোর নিচের age group এ এখনো ট্রায়াল চলছে, ফলাফল হাতে আসে নি। যখন হাতে আসবে তখন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রশ্ন) একজন গর্ভবতী মহিলা অথবা জননী যিনি সন্তানকে স্তন্যপান করান তাঁর পক্ষে কি এই টিকা নেওয়া উচিত, নাকি আপাতত না নেওয়াই ভালো ?
উত্তর) আপাতত না নেওয়াই ভালো। যাঁরা pregnant woman or lactating mother তাঁদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাক্সিনের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া কিছু আছে কি না (অর্থাৎ গর্ভস্থ শিশুর অথবা স্তন্যপান করা শিশুর কোনো ক্ষতি হতে পারে কি না) তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট গবেষণা করা যায় নি এবং সেই সংক্রান্ত নির্নায়ক তথ্যপ্রমান আমাদের হাতে এই মুহূর্তে নেই। তবে যেহেতু এটা Inactivated Vaccine (অর্থাৎ Live Vaccine নয়) সেহেতু অসুবিধা হওয়ার কথা না। দেখা যাক ! আপাতত একটু ধরে খেলুন।
প্রশ্ন) কোভিড ভ্যাক্সিন নেওয়ার কতদিন পর আমার শরীরে antibody তৈরি হবে ?
উত্তর) শরীরে ভ্যাক্সিন প্রবেশ করার পর থেকেই antibody develop করা শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রথম ডোজের পর থেকেই শরীরে antibody তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা, কিন্তু সেটা আপনাকে immunity দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়। দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাক্সিন নেওয়ার দু-সপ্তাহ পর তবেই পর্যাপ্ত পরিমাণ antibody পাওয়া যাচ্ছে এমনটাই গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত। অতএব আপনি যেদিন দ্বিতীয় ডোজটা নেবেন, তার চৌদ্দ দিন পর থেকে আপনি নিজেকে safe ভাবতে পারেন —- তার আগে নয়।
প্রশ্ন) প্রথমবার যে কোম্পানির ভ্যাক্সিন নিয়েছি দ্বিতীয়বার কি সেই কোম্পানির ভ্যাক্সিনই নিতে হবে ?
উত্তর)একদম তাই। দুটো ডোজই একই কোম্পানির হতে হবে।
প্রশ্ন) আমি কি দ্বিতীয় ডোজের দু-সপ্তাহ পর থেকে মাস্ক পরা ছেড়ে দেবো ? বিন্দাস ঘুরে বেড়াবো? হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, দূরত্ববিধি মেনে চলা সব তখন অতীত ? কি মজা !
উত্তর) আজ্ঞে না। ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর দু-সপ্তাহ পার হয়ে গেলে আপনি হয়তো নিজে আর কোভিডে আক্রান্ত নাও হতে পারেন, কিন্তু করোনাভাইরাস যে আপনার শরীরে থাকবে না তার কোনও মানে নেই ! আপনি নিজে আক্রান্ত না হয়েও ক্যারিয়ার হয়ে অন্য কোনও non-immune ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারেন। অতএব নিজের পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন, সহকর্মী ইত্যাদিকে সুরক্ষিত রাখতে আপনার অবশ্যই উচিত আগের মতোই সমস্ত নিয়ম ও বিধিনিষেধ মেনে চলা। বোঝা গেল ?
প্রশ্ন) আচ্ছা, পরিবারের কথায় মনে পড়লো, আমি একজন স্বাস্থ্যকর্মী বা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার হিসাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাক্সিন পাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছি, কিন্তু আমার পরিবারের সদস্যরা তো তা নয় ! ওরাও কি আমার সাথে ভ্যাক্সিন পাবে না ?
উত্তর) না, এখন শুধু আপনিই ভ্যাক্সিন পাবেন। এখনো পর্যন্ত adequate vaccine supply অতটা সুনিশ্চিত করা যায় নি, সুতরাং একেবারে বাছাই করা লোক ছাড়া ভ্যাক্সিন দেওয়া সম্ভব নয়। যখন সরবরাহ পর্যাপ্ত হবে তখন এই বিষয়ে বিবেচনা করা গেলেও যেতে পারে।
প্রশ্ন) এই ভ্যাক্সিন কি স্রেফ সরকারি মাধ্যমে পাওয়া যাবে ? কিনে নেওয়া যাবে না ?
উত্তর) আপাতত শুধু সরকারি ভাবেই পাওয়া যাবে। হয়তো মাস দু-তিনেক পর বাজারে ছাড়া হতে পারে। এই মুহূর্তে সেই বিষয়ে সুনিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
প্রশ্ন) বাজারে এলে এই ভ্যাক্সিনের দাম কত হতে পারে ?
উত্তর) খুচরো ভাবে বিক্রয়যোগ্য হওয়ার পর ভ্যাক্সিনের দাম কত হবে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন এই রাজ্যের সবাই সরকারি ভাবে বিনামূল্যে এই টিকা পাবেন। যদিও এই সংক্রান্ত কোনও সরকারি নির্দেশিকা এখনও পাই নি, কিন্তু মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা-সম্বলিত শংসাপত্র পেয়েছি। আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্যের সমস্ত জনগণের কাছে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা পৌঁছে যাবে।
প্রশ্ন) আমি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলাম। তা আমাকেও কি ভ্যাক্সিন নিতে হবে ?
উত্তর)হ্যাঁ, হবে।
প্রশ্ন) কেন বাপু, আক্রান্ত হওয়ার পরেও আবার ভ্যাক্সিন নিতে যাবো কোন দুঃখে ? আমার শরীরে তো অলরেডি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে !
উত্তর) কোভিডে আক্রান্ত হলেই lifelong immunity পাবেন তার কোনও মানে নেই ! অনেকের ক্ষেত্রেই re-infection হয়েছে, সুতরাং একবার আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবডি কতদিন আপনাকে পূর্ণ সুরক্ষা দেবে তা আপনি জানেন না। ইন ফ্যাক্ট, এখনও পর্যন্ত কেউই এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলতে পারেন নি। অতএব আপনিও ভ্যাক্সিন নিয়ে নিন। সেটাই করা উচিত !
প্রশ্ন) আমি এই মুহূর্তে কোভিডে আক্রান্ত। পজিটিভ হওয়ার পর এখনও আইসোলেশন পিরিয়ড শেষ হয় নি। আমি কি ভ্যাক্সিন নেবো?
উত্তর)না, এখন নেবেন না। একজন active case হিসাবে vaccination centre-এ আপনি ইনফেকশন ছড়াতে পারেন, সেই জন্যই আপাতত ওটা মুলতুবি থাকুক। উপসর্গ-বিহীন হওয়ার পর কমপক্ষে চৌদ্দ দিন পার হোক, তারপর নিতে পারেন।
প্রশ্ন) কোভিড ভ্যাক্সিন নিলে কি আমার আর কোনদিন কোভিড ইনফেকশন হবে না ?
উত্তর) তার কোনও মানে নেই ! কোনও টিকার ক্ষেত্রেই এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না যে টিকা নিলে আর কখনও সেই অসুখটা হবে না। যেমন ধরুন BCG টিকা দিলেও ভবিষ্যতে কারো tuberculosis হতে পারে, বা measles vaccine (হামের টিকা) দিলেই যে সেই শিশুর কখনও হাম হবে না তেমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না।
তাহলে টিকা নিয়ে লাভ কি ?
লাভ এটাই, যে সেই রোগটা ভবিষ্যতে কখনো হলেও তার প্রকোপ অনেক কম হবে। সেই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ এবং উপসর্গ সৃষ্টি করলেও তাকে সহজেই কাবু করা যাবে। মারণক্ষমতা বহুগুনে কমে যাবে এবং serious কোনো complication হওয়ার সম্ভাবনাও কমবে, যেটা কিনা টিকা না নেওয়া থাকলে হতে পারতো।
কোভিড ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যিনি ভ্যাক্সিন নেবেন তাঁর যদি ভবিষ্যতে symptomatic Covid infection হয় তাহলেও তিনি সহজেই সুস্থ হয়ে উঠবেন। একজন non-immune, non-vaccinated ব্যক্তির তুলনায় তাঁর মর্টালিটি এবং মর্বিডিটি অনেক কম হবে। আশা করি বোঝাতে পারলাম।
প্রশ্ন) তা ইয়ে, বলছি কি, সবই তো বুঝলাম, কিন্তু এই মাস্কের হাত থেকে কবে পরিত্রাণ পাবো বলুন তো ? লাইফ তো টোটাল হেল হয়ে গেল ! মনের সুখে সাজগোজ করতে পারি না, রাস্তাঘাটে চেনা লোককেও চিনতে পারি না, এভাবে আর কতদিন চলবে, অ্যাঁ?
উত্তর) সেটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। এই বছর তো বটেই, সম্ভবত পরের বছরের প্রথমার্দ্ধেও এই সব বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। তবে একটা কথা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমরা কিন্তু হাসপাতালে সর্দিকাশি বা অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম পাচ্ছি। অ্যালার্জি-জনিত হাঁচিকাশি এবং হাঁপানির রোগীও বেশ কমে গেছে। আমি পরিসংখ্যান দিয়ে এই মুহূর্তে বলতে পারবো না, তবে এত বছর ধরে হাসপাতালে ডাক্তারি করে যা দেখছি তাতে এই সময়ে অন্যান্য বছর যে পরিমাণ রোগী এইসব উপসর্গ নিয়ে আউটডোরে বা ইমারজেন্সিতে হাজির হয় তার সিকিভাগও এবার নেই ! সুতরাং কোভিড সংক্রমণ আটকানো ছাড়াও মাস্কের সুফল যে অন্যান্য airborne and droplet infection এর ক্ষেত্রে পড়ছে সেই বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
তাছাড়া এই হাত ধোওয়া এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করার ফলে ডায়েরিয়ার রোগীও অনেক কমে গেছে (অন্তত আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় যেটুকু দেখছি)। অতএব কোভিডের ভয় দূর হওয়ার পরেও এই mask and handwashing culture টা বজায় থাকলে ভালো বই খারাপ কিছু হবে না এটুকু নির্দ্ধিদায় বলতে পারি।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আর হ্যাঁ …. যদি কেউ এই পোস্টটা শেয়ার করতে চান তাহলে সানন্দে করতে পারেন। আমার আগাম অনুমতি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।
আমার ব্যক্তিগত মতে এভাবে কোন ধরনের সংবাদ মাধ্যমেই এতটা সহজ সরল ভাষায় প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে কোভিড ভ্যাক্সিন নিয়ে আলোচনা হয় নি ইতিপূর্বে, আমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম।
Though I am rather late in seeing this important post, still I find it worthy of close reading and sharing, too. All FAQ’s have been answered in a lucid and comprehensive manner, earning our
thanks.
18/01/2021