প্রেগন্যান্সি র পূর্ব সময়কাল ও প্রেগন্যান্সি র প্রথম কয়েকটি মাস কেই একত্রে পেরিকনসেপশানাল পিরিয়ড (periconceptional period) বলা হয়।
এটি একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ সময় যাকে যথাযোগ্য গুরুত্ব দেওয়া হলে মা ও শিশুর অনেকগুলি জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
প্রত্যেক মহিলারই প্রেগন্যান্সি নেওয়ার অন্তত ৩-৪ মাস আগে ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ করা ও ভিটামিন ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করা আবশ্যক।
কয়েকটি রোগ যেমন -এনিমিয়া, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, থাইরয়েডের অসুখ, হার্ট ও কিডনির সমস্যা, নার্ভের রোগ, খিচুনি ও মানসিক রোগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সির আগে আগাম সতর্কতা নেওয়া অপরিহার্য।
এনিমিয়া বা রক্তাল্পতাঃ আয়রনের অভাবজনিত এনিমিয়া র ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সির আগে থেকেই আয়রন ও ফলেট ট্যাবলেট নিয়মিত ভাবে খেতে হবে যাতে প্রেগন্যান্সির সময় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকে। থ্যালাসেমিয়া আমাদের দেশে একটা জ্বলন্ত সমস্যা যার জন্য বিবাহের পূর্বেই প্রত্যেকের থ্যালাসেমিয়ার টেস্ট করানো প্রয়োজন এবং প্রেগন্যান্সি র আগে কাউন্সিলিং ও চিকিৎসা করানো হলে মা ও শিশুর জীবনহানির আশঙ্কা কমে।
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপঃ এই রোগীদের প্রেগন্যান্সির সময় অনেক জটিল সমস্যা তৈরি হয়। তাই প্রেগন্যান্সির বেশ কিছু মাস আগে থেকেই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ওষুধ পরিবর্তন করতে হয় ও বেশ কিছু পরীক্ষা করতে হয়।
ডায়াবেটিস বা মধুমেহঃ এই মারণ রোগের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায়, শিশুর জন্মের সময় ও জন্মের পর অনেক ধরণের বিপদের ভয় থাকে। তাই সঠিক ওষুধ ও ইনসুলিনের মাধ্যমে প্রেগন্যান্সির আগে থেকেই ব্লাড সুগার এর মাত্রা স্বাভাবিক করতে হয়। এছাড়াও হার্ট হ, কিডনি ও রেটিনার পরীক্ষা করানো দরকার।
ওবেসিটি বা স্থূলতাঃ প্রেগন্যান্সি নেওয়ার আগে অবশ্যই ডায়েট ও এক্সারসাইজ-এর দ্বারা অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে বডি ওয়েট নরমাল করতে হবে। তা না হলে প্রেগন্যান্সির সময় হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ইত্যাদিনানা রকমের সমস্যা হতে পারে ও গর্ভস্থ শিশুর ও নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়।
থাইরয়েড এর অসুখঃ আমাদের দেশে বহুসংখ্যক মহিলারা থাইরয়েডের সমস্যায় ভোগেন। তাই থাইরয়েড জনিত প্রেগন্যান্সির সমস্যাগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। প্রেগন্যান্সির আগে অন্তত একবার থাইরয়েডের টেস্ট করানো প্রয়োজন। সমস্যা থাকলে নিয়মিত ওষুধ ও আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হবে।
হার্ট ও কিডনির অসুখ– এই রোগীদের নিয়মিত চেক আপ করাতে হয় । প্রেগন্যান্সি নেওয়ার আগে বেশ কিছু পরীক্ষা ওষুধের পরিবর্তন করার দরকার হতে পারে।
মানসিক রোগ ও খিচুনির রোগ থাকলে প্রেগন্যান্সি নেওয়ার ডাক্তার বাবুর সঙ্গে পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি।
অবশেষে এটাই বলার যে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। প্রতিটি প্রেগন্যান্সির আগে রুটিন মাফিক কিছু চেকআপ করানো গেলে এবং ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মেনে চললে গর্ভস্থ অবস্থায় মা ও শিশুর ঝুঁকি বেশ খানিকটা কম করা যাবে ও উভয়েরই পরবর্তী জীবন সুন্দর হবে।