নানা ধরণের কৃমি আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে এবং নানান বিদঘুটে ভয়ঙ্কর সব অসুখের লক্ষণ তৈরি করে । এই বিষয়ে একটি লেখা ।
এক বেচারা রোগা ডিগডিগে – খড়গনাসা – একমাথা সাঁইবাবামার্কা চুল , ভীতু গরুর মতো চোখ – ঝুপো গোঁফ এবং ভয়ানক নার্ভাস একটা তরুণ ডাক্তারের স্মৃতিকথা। সে হাসপাতালের সামনের কালভার্টে বসে বসে একটার পর একটা সিগারেট খুব আয়েশ করে টানছিলো। এবং পুরোনো কথা মনে করছিলো।
১) একটা অবোধ ছ বছরের বাচ্চা। রাতে মা বাবার মাঝখানে শুয়ে ঘুমোচ্ছিলো। হঠাৎ ভয়ানক শ্বাসকষ্টে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে পড়ে। চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। মুখে গ্যাঁজলা উঠছে। হাত নাক সব নীল হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার ডাকা তো দূরস্থান উঠে পাশের বাড়ির লোকজনকে ডাকার আগেই শিশুটির ভবলীলা শেষ। বিষক্রিয়া ভেবে পুলিশ এলো পরে পরীক্ষায় জানা গেলো একটি সাধারণ রাউন্ড ওয়র্ম বা কেঁচো মার্কা কৃমি পেট থেকে উঠে রাতে নৈশভ্রমণে বেরিয়ে ভুল করে শ্বাস নালীর ভেতর ঢুকে পড়ে ফলে শিশুটি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।
এছাড়া অপারেশনের সময় অজ্ঞান করা হলে এরা অবাধে শ্বাসনালীর ভেতরে ঢুকে রোগীকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। এই কৃমিটার নাম অ্যাস্কারিস লুম্ব্রিকয়ডিস। অবশ্য নামে কিবা আসে যায় ? এই কৃমির ডিম বাতাসে ভেসে নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকতে পারে বা খাবারের সঙ্গেও ঢুকতে পারে। আর হ্যাঁ মিষ্টি খাওয়া বা ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করার সঙ্গে এসবের কোনও যোগাযোগ নেই।
২) এক মধ্যরাতে এক মধ্যবয়স্কা ভদ্রমহিলাকে চাদরে বেঁধে ঝুলিয়ে হাসপাতালে আনা হলো। ছোক্রা ডাক্তার লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে গিয়ে দেখে ভদ্রমহিলার নাড়ি নেই – জ্ঞান নেই – রক্তচাপ মাপা যাচ্ছে না – রক্তে অক্সিজেনও প্রায় নেই। কোনও ক্রমে প্রচুর স্যালাইন ওষুধ পত্র দিয়ে ওনাকে বাঁচানো হলো। পরে জানা গেল প্রথমে গা চুলকে ওনার ভয়ানক রকমের অ্যালার্জি হয় তারপর ক্রমশঃ উনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কিসে অ্যালার্জি? জানা গেল পচা পোকা ধরা আম খেয়েছিলেন। যাই হোক ওসব খেতে বারণ টারণ করে ওনাকে বাড়ি পাঠানো হলো। কিন্তু আবার মাসখানেক পরে একই অবস্থায় ফেরত এলেন। আবার হৈহৈ কান্ড – এবার চোখ খুলেই ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করলেন
“ও ডাক্তারবাবু এবার তো আমি পোকা – আম কিস্যু খাইনি – কেবল রুটি আর আলুর ছোঁকা খেয়েছি – তাহলে?” ডাক্তার মাথা টাথা চুলকে দুটো উকুন মেরে ফেললো। তারপর অ্যালার্জি আর শক নিয়ে পড়তে পড়তে দেখলো ইকাইনোকক্কাস গ্র্যানিউলোসা বলে খুবই পরিচিত একটি কৃমিকীট এই ঘটনা ঘটাতে পারে। সুতরাং পরীক্ষা করে প্রমাণ করার পালা। ঠিক তাই। ভদ্রমহিলা ভালো হয়ে গেছেন।
৩) একবার ভোররাতে একটি সাত আট বছরের ছেলেকে নিয়ে তার মা বাবা হাজির। বাচ্চার তড়কা (না খাওয়ার তড়কা নয় কনভালশন বা খিঁচুনি ) হচ্ছে। এটিও ভীষণ পরিচিত রোগ শূকরের মাংস থেকে আসা একটা কৃমিকীট মাথার ঘিলুতে ঢুকে এই কান্ড করতে পারে। { গো মাংসের কৃমিকীট কিন্তু তুলনায় নিরীহ } – সুতরাং চিকিৎসা এবং সুস্থ হওয়া তো কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা !
৪ ) এক বৃদ্ধা ভর্তি হলেন ভয়ঙ্কর রক্তহীনতা নিয়ে । কতো পরীক্ষা – কতো নিরীক্ষা – কিন্তু সব বিফলে গেল। পরে ছোকরা ডাক্তারের শুভ্র কেশ বৃদ্ধ মাস্টারমশাই এসে বললেন “দ্যাখেন তো পেটে কৃমি আছে কিনা?” বুড়োর অগাধ পান্ডিত্য। দেখা গেল সত্যিই তাই অ্যাঙ্কাইলোস্টোমা ডিওডিন্যালি নামের কৃমি হলো সেই অপরাধী যে বৃদ্ধাকে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলো।
সবাইকার কিন্তু এ্যাতো ভালো কপাল হয় না। কেউ কেউ মরেও যায়। সুতরাং ডাক্তারবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। নিয়মিত কৃমির ওষুধ খান। এটা কেবলমাত্র মানুষের সচেতনতার পাতা – চিকিৎসা আপনার ডাক্তারবাবুই করবেন।
“Ascaris Lumbricoides এর ডিম বাতাসে ভেসে নিশ্বাস এর মাধ্যমে শরীরে ঢুকতে পারে”।এটা কি সঠিক তথ্য?
Ascaris lumb . ডিম inhalation দ্বারা ছড়ায় কোন দিন পড়িনি।
ঘটনাচক্রে ডাক্তারি পড়ার সময় আমি পড়েছি
“”নিয়মিত কৃমির ওষুধ খান।””
কি ভাবে বুঝব কৃমি আছে কিনা?
বোঝার দরকার নেই । ওষুধগুলো সাধারণতঃ রক্তে মেশেনা । নিয়ম করে খাবেন । নাহলে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে খেতে হবে ।
Khub joruri
ঠিক
বেশ ভয়ঙ্কর।
হ্যাঁ । কৃমি থেকে প্রতি বছর বহু মানুষ ভোগেন ।