হোম কোয়ারান্টিন নিয়ে দুয়েকটা কথা বলা দরকার।
হোম কোয়ারান্টিন ও উপসর্গহীন করোনা পজিটিভদের বাড়ীতে চিকিৎসা কি সম্ভব?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে যারা বিশ্বব্যাপী লড়াই করছেন ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হোম কোয়ারান্টিন ও করোনা পজিটিভ উপসর্গহীনদের জন্য বাড়ীতে চিকিৎসার ব্যাপারে মত প্রকাশ করেছেন।
তাহলে, এটা নিয়ে এত প্রতিবাদ কেন হচ্ছে?
বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত ও তার বাস্তব প্রতিফলনের কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে। সুবিধা হল যে যারা খারাপ উপসর্গ নিয়ে আসবেন তাদের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ও বেড খালি রাখা। অতিমারির সময় যেহেতু প্রচুর কেস হাসপাতালে আসবে এবং তাদের শতকরা প্রায় পাঁচ ভাগের শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে তাই এই ব্যবস্থা।
অসুবিধা হল– আমাদের দেশে গড় পরিবার সাইজ প্রায় সাড়ে চার। এদের এক বা একাধিক উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ হলে বাড়ীতে তাদের আলাদা রাখার জন্য যে জায়গা দরকার তা দেশের ৭০ শতাংশ বাড়ীতে নেই।
দ্বিতীয় অসুবিধা হল- খারাপ উপসর্গ চিনতে পারার দক্ষতা বেশিরভাগ লোকের নেই।
তৃতীয় অসুবিধা হল- জনস্বাস্থ্য ও সঠিক স্বাস্থ্যাভাস নিয়ে সচেতনতা নেই।
করোনায় ভারতে উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি। এর কি কারণ তা জানার জন্য উপযুক্ত গবেষণা দরকার। ক্রস ইমিউনিটি, বিসিজির প্রভাব, নাকি অন্য কিছু সেটা জানতে হবে। এর জন্য সময় লাগবে।
কিন্তু উপসর্গহীন রোগীর যদি উপসর্গ শুরু হয় তাহলে বিপদ সংকেতগুলি জানতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে উপদেশ দিয়েছে তা তাই শর্তসাপেক্ষ।
বাড়ীতে তাহলে কাদের চিকিৎসা হবে?
যারা বিপদ সংকেত চিনতে সক্ষম, মাথা গোঁজার মত একটা আস্তানা আছে ও সেখানে আলাদা থাকার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে তারা এই ব্যবস্থার সুযোগ নিতে সক্ষম। তবে, সরকারী ব্যবস্থায় এদের সাথে যোগাযোগ (২৪×৭) রাখার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
একটা মোবাইল application দিয়ে এটা সম্ভব।
করোনা রোগী থেকে বাঁচার জন্য কি করতে হবে?
রোগী, উপসর্গহীন কনটাক্ট ও তাদের সংস্পর্শে যারা আছেন তাদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, ঘন ঘন হাত ধুতে হবে।
ভবিষ্যতে কি করা দরকার?
- জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।
- রাজনৈতিক দলগুলিকে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়াতে বাধ্য করতে হবে, স্বাস্থ্য যেন নির্বাচনী ইস্যু হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
- যে সমাজে যত বেশি বৈষম্য সেই সমাজে সংক্রমণ ও তত বেশি।
- সংগঠিত ধর্ম সমাজে বৈষম্য আরো বাড়ায়।
- অপুষ্টি ও মহামারির মধ্যেও সম্পর্ক আছে। তাই, অপুষ্টির বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।
- সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে, সেখানেই ধনী দরিদ্র সবার সমমানের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও বৈষম্য মুক্ত নয়। সেই বৈষম্য আরো মারাত্মক।
এই সব গড়ে তোলার ব্যয় কতো?
জিডিপির মাত্র ৩ শতাংশ খরচ করতে পারলে ন্যূনতম কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।