বান্টিঙ এখন ভালো করেই বুঝতে পারছেন যে প্যানক্রিয়াস নির্যাসে মিশে যাওয়া অবাঞ্ছিত এনজাইমের কারণেই কার্যকরী ফল পাচ্ছেন না তিনি। তাই এখন প্রয়োজন হলো ইনসুলিন পরিশোধন করা। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে রাসায়নিক পদার্থ পরিশোধনের ব্যাপারে কোনো ধারণাই নেই তাঁর। তুলনায় ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রির ছাত্র হওয়ার সুবাদে রাসায়নিক পদার্থ পরিশোধনে অনেকটাই ধারণা আছে বেস্টের। কিন্তু ইনসুলিন পরিশোধনের প্রশ্নে বেস্টের উপর পুরোপুরি ভরসা করাটা কি ঠিক হবে বান্টিঙের? সদ্য স্নাতক স্তরের পরীক্ষা দিয়ে বান্টিঙের গবেষণায় যোগ দিয়েছেন বেস্ট। বয়সে এখনও নবীন তিনি, অনভিজ্ঞও। এহেন বেস্টের উপর ভরসা করা ঠিক হবে কিনা, মনে মনে তা ভেবে চলেছেন বান্টিঙ। না, না, পরিশোধনের জন্য বেস্টের উপর পুরোপুরি ভরসা করা ঠিক হবে না বলেই মনে করেন বান্টিঙ। এ ব্যাপারে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির সাহায্যের কথা ভাবলেন তিনি। কিন্তু কে হতে পারেন সেই তৃতীয় ব্যক্তি? কার সাহায্য নেবেন তিনি? এ ব্যাপারে ম্যাক্লাউডের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন বলেই মনস্থির করলেন বান্টিঙ। কিন্তু ম্যাক্লাউড তো তখন স্কটল্যান্ডে। অগত্যাই, ম্যাক্লাউড না ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায়ও নেই বান্টিঙের। ম্যাক্লাউড ফিরলেই এই বিষয়ে আলোচনা করতে হবে তাঁর সঙ্গে, মনে মনে স্থির করে ফেললেন বান্টিঙ।
২১শে সেপ্টেম্বর ১৯২১, অবকাশ অন্তে স্কটল্যান্ড থেকে টরন্টো ফিরলেন ম্যাক্লাউড। বান্টিঙ ও বেস্টের সাফল্যের কথা আগেই জেনেছিলেন তিনি। তাঁদের সাফল্যে খুশিই হলেন ম্যাক্লাউড। এবার তাঁদের কাজের তদারকি করতে গিয়ে, বান্টিঙ ও বেস্টের লিখে রাখা নোট দেখে খুবই বিরক্ত হলেন তিনি। এটা কোনো গবেষণার নোট! কোনো নিয়ম মানা হয় নি, কোনো পদ্ধতি মানা হয় নি! দেখে মনে হচ্ছে নিজের ব্যক্তিগত ডায়েরি! হিসাব করে ম্যাক্লাউড দেখলেন, সাফল্যের তুলনায় অনেক বেশি কুকুর ব্যবহার করেছেন বান্টিঙ। এতে বেশ অসন্তুষ্টই হলেন তিনি। বিরক্ত ম্যাক্লাউড বললেন, এই পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত কুকুর, সময় ও অর্থ ব্যয় হয়েছে। দু’মাসের জায়গায় আজ চার মাস অতিক্রান্ত। কী ফল হয়েছে গবেষণায়?! অশ্বডিম্ব। এই রকম প্যানক্রিয়াস নির্যাস নিয়ে সারা পৃথিবীতে অনেক কাজ হয়েছে, হচ্ছেও। কোথাও সাফল্য আসে নি এখনও পর্যন্ত। তাই এই গবেষণা চালু রাখা আর সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে। যা হয়েছে যথেষ্ট হয়েছে। যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে গবেষণার জন্য। ইতিপূর্বে তাঁর অধীনে চালু থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গবেষণাগুলোই আর্থিক সংকটে ভুগচ্ছে। ফলে বান্টিঙের পরীক্ষার জন্য আর অর্থ বরাদ্দ করা আর সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে। পরীক্ষার ফল যা পাওয়া গেছে তা যথেষ্ট এবং সন্তোষজনক। নতুন করে পরীক্ষা চালু রাখার বা ‘আইলেটিন’ পরিস্রুত করার প্রয়োজন নেই আর। এবার ইতি টানতে হবে এই গবেষণায়।
কি?! এসব কি বলছেন ম্যাক্লাউড? শুনেই মাথা গরম হয়ে গেল বান্টিঙের। লন্ডনের প্র্যাকটিস ছেড়ে, গাড়ি বিক্রি করে, নিজের জীবন বাজি রেখে লড়ছেন তিনি। সাফল্য প্রায় হাতের মুঠোয় তাঁর। আর এখন ম্যাক্লাউড বলেন কিনা পরীক্ষা বন্ধ! এখনও তো আইলেটিন পরিশোধনই করা হয় নি। এখন কী করে গবেষণা বন্ধ করা সম্ভব? তাছাড়া, গবেষণা বন্ধ করার ম্যাক্লাউড কে? ম্যাক্লাউড কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ? ক্ষুব্ধ বান্টিঙ বললেন, ‘আমি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কথা বলতে চাই’।
‘বিশ্ববিদ্যালয়?! আমিই এখানে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়’ উষ্মা প্রকাশ করে বললেন ম্যাক্লাউড, ‘কারও সাথে কথা বলে লাভ হবে না। আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এখানে’। স্পষ্ট ও রূক্ষ স্বরে বলে উঠলেন ম্যাক্লাউড।
বান্টিঙ, বেস্ট, নোবেলকে ভাতা দেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নরের কাছে লেখা ম্যাক্লাউডের আবেদন পত্র। |
গবেষণা বন্ধের কথা শুনে এমনিতেই মাথাটা ঝাঁঝাঁ করছিল বান্টিঙের। এবার ম্যাক্লাউডের এই চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শুনে মাথায় যেন আগুন ধরে গেল তাঁর। মেজাজ হারিয়ে ম্যাক্লাউডের মুখের উপর সটান বলে দিলেন, ‘ল্যাবে জায়গা দিলে দেবেন, না দেবেন তো চললাম। মেয়ো ক্লিনিক, রকিফেলার ইন্সটিটিউটে চলে যাবো। ওখানে ল্যাব পেয়ে যাবো আমি। আর ল্যাবের কথা কী বলছেন আপনি? এই তো আপনার ল্যাবের দশা। ভাঙ্গা মেঝে, নোংরা দেয়াল, আদ্দি কালের যন্ত্রপাতি। কোনো নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব বলে তো মনে হয় না এটা। আর অর্থ বরবাদের কথা বলছেন? ক’পয়সা দিয়েছেন আপনি আমাকে? যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত ছাত্রদের ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে। দিয়েছেন সে প্রাপ্য আমাকে? উল্টে নিজের গ্যাঁটের কড়ি খরচা করে গবেষণা চালু রেখেছি আমি। কোনো ভাতার ব্যবস্থা না করলে আমিও আর কাজ করবো না এখানে।’
ইতিপূর্বে বেস্টের সাথে যে ভাবে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন, ঠিক সেইভাবেই ম্যাক্লাউডের সাথেও উত্তপ্ত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লেন বান্টিঙ। সাক্ষাতের সেই প্রথম দিন থেকেই ম্যাক্লাউডের উপর মনে মনে অসন্তুষ্টই ছিলেন বান্টিঙ। ম্যাক্লাউড সেদিন খুব একটা ভরসা যোগাতে পারেন নি বলে ম্যাক্লাউডের উপর একটা চাপা অসন্তোষ জমাই ছিল বান্টিঙের মনে। আর এই দিনের উত্তপ্ত বাদানুবাদের পর, বান্টিঙ-ম্যাক্লাউড সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে ঠেকল যেন। পাকাপাকি ভাবে একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়ে যায় তাঁদের মধ্যে। পরবর্তী কালে, পেশাগত কারণে নিজেদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় থাকলেও, দু’জনের মধ্যেই একটা তিক্ত সম্পর্কের রেশ থেকে গিয়েছিল আজীবনই।
বান্টিঙের সাথে বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লেও, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে, বান্টিঙের প্রায় সব দাবি মেনে নিয়েছিলেন ম্যাক্লাউড। বান্টিঙের ২২১ নম্বর ল্যাবে পড়ল রঙের পোঁচ। মেঝেতে বসল নতুন টালি। বান্টিঙ ও বেস্টের ভাতা বরাদ্দের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মহলে সুপারিশ করলেন ম্যাক্লাউড। ম্যাক্লাউডের সেই সুপারিশ গৃহীত হলো। মাস প্রতি ৭৫ কানাডিয়ন ডলার হিসেবে, জুলাই এবং সেপ্টেম্বর মাসের জন্য বান্টিঙ পাবেন মোট ১৫০ কানাডিয়ন ডলার এবং মাস প্রতি ৮৫ কানাডিয়ন ডলার হিসেবে, জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসের জন্য বেস্ট পাবেন মাসে ১৭০ কানাডিয়ন ডলার। সে ভাবে গবেষণা চালু না থাকায় অগস্ট মাসে কোনো ভাতা বরাদ্দ করা হয় নি।
গত কয়েক মাস ধরেই আর্থিক অনটনে ভুগছিলেন বান্টিঙ। বর্তমানে প্রায় কপর্দকশূন্য অবস্থা তাঁর। অবস্থা সামাল দিতে, তাঁর লন্ডনের বাড়িটা বিক্রি করে দিলেন বান্টিঙ। বেস্টের অবস্থাও তথৈবচ। যাহোক, ম্যাক্লাউডের সুপারিশে তবু তো কিছু জুটলো তাঁদের। কিন্তু এই সামান্য অর্থ দিয়ে কি মাস চলে? ঘোর আর্থিক সংকটে ভুগছেন তখন বান্টিঙ। ঘটনাক্রমে, ঠিক এই সময়েই টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগে একটা ডেমনস্ট্রেটরের পদ খালি হয়। ফার্মাকোলজির বিভাগীয় প্রধান ভেলেইয়ান হেন্ডারসন বান্টিঙকে চিনতেন, বান্টিঙের গবেষণার খোঁজখবরও রাখতেন তিনি। শুধু তাই নয়, বান্টিঙের প্রতি বিশেষ নরম মনোভাবাপন্নও ছিলেন তিনি। বান্টিঙের সাম্প্রতিক আর্থিক সংকটের কথাও অজানা ছিল না তাঁর। সেই সুবাদে বান্টিঙকে সেই শূন্য পদে যোগ দেবার আমন্ত্রণ জানান হেন্ডারসন। সাগ্রহে সেই পদ গ্রহণ করলেন বান্টিঙ। এই পদের মাসিক বেতন ২৫০ কানাডিয়ন ডলার। ১লা অক্টোবর থেকে এই পদে যোগ দেন বান্টিঙ। কিছুটা হলেও আর্থিক ধাক্কা সামালাতে পারবেন এখন তিনি। এই চাকরি প্রসঙ্গে পরবর্তীতে বান্টিঙ লিখেছেন, “হেন্ডারসনের জন্যই আমি রয়ে গেলাম। … তাঁর জন্য এবং একক ভাবে তাঁর জন্যই আমি টরন্টোয় এবং কানাডায় রয়ে গেলাম। আমি মনে করি হেন্ডারসন না থাকলে ইনসুলিন হয়তো ইউনাইটেড স্টেটসের পণ্য হতো। ইনসুলিন আবিষ্কারে ম্যাক্লাউডের থেকে হাজারগুণ বেশি ভূমিকা হেন্ডারসনের”।
এই অংশে ম্যাক্লাউডের উপর তাঁর ক্ষোভ স্পষ্ট ভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে। লক্ষ্যণীয়, হেন্ডারসন কিন্তু তাঁকে ইনসুলিন নিয়ে গবেষণার সুযোগ করে দেন নি, সে সুযোগ দিয়েছিলেন ম্যাক্লাউডই। কিন্তু ম্যাক্লাউডের সাথে তিক্ত সম্পর্কের জেরে, বান্টিঙ মনে করতেন, ইনসুলিন আবিষ্কারে ম্যাক্লাউডের কোনো ভূমিকাই নেই। পরবর্তী কালেও একাধিক বার এই কথা বলেছেন বান্টিঙ।
অক্টোবর মাসের শেষের দিকে, সদ্য মেরামতি হওয়া ২২১ নম্বর ঘরেই আবার চালু হলো বান্টিঙের পরীক্ষা। বান্টিঙ মনে করেন, সংগৃহীত প্যানক্রিয়াস নির্যাস পরিশোধন করার সময় এসেছে এখন। ম্যাক্লাউডও মনে করেন নির্যাস পরিশোধন করা প্রয়োজন। তবে এই নির্যাস পরিশোধনের ব্যাপারে বান্টিঙের উপর বিশেষ ভরসা করেন না ম্যাক্লাউড। নির্যাস পরিশোধনের জন্য অন্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেবেন তিনি। তাছাড়া, ইতিপূর্বে পাওয়া বান্টিঙ-বেস্টের পরীক্ষার ফলাফলের উপরও যথেষ্ট আস্থাশীল নন ম্যাক্লাউড। ম্যাক্লাউড মনে করেন, অপারেশন করে কুকুরের সম্পূর্ণ প্যানক্রিয়াসটা কেটে বার করে আনতে মোটেও সফল হন নি বান্টিঙ। ইতিপূর্বে পাওয়া বান্টিঙের পরীক্ষার ফলাফলের উপর খুব একটা ভরসা করতে পারছেন না তিনি। পূর্বের ফলাফলকে নিশ্চিত করার জন্য তিনি চান, আবার করা হোক পরীক্ষাগুলো। আর চান, এপর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলগুলোকে যত্ন করে গুছিয়ে লিখুন বান্টিঙ। কয়েকদিন পরেই ‘ফিজিওলজিক্যাল জার্নাল ক্লাব অব দ্য ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো’র এক অধিবেশন আছে। এপর্যন্ত পাওয়া বান্টিঙ-বেস্টের ফলাফলগুলোর ভিত্তিতে প্রাথমিক পর্যায়ের একটা রিপোর্ট পেশ করতে চান তিনি সেখানে।
ম্যাক্লাউডের তাই সাফ নির্দেশ, পরিশোধন নিয়ে ভাবতে হবে না তোমাদের। তোমরা বরং তোমাদের পরীক্ষাগুলো আবার করো। ফলাফলগুলো সুনির্দিষ্ট ভাবে লিপিবদ্ধ করে রিপোর্ট তৈরি করো। জার্নাল ক্লাবের অধিবেশনে আমি তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেবো। সেখানে তোমরা তোমাদের পরীক্ষার ফলাফল আলোচনা করবে। আর হ্যাঁ, ওই আইলেটিন নাম চলবে না। প্রচলিত ইনসুলিন নামই ব্যবহার করবে তোমরা।
বেশ, তাই সহি, একই পরীক্ষা আবার শুরু করলেন বান্টিঙ আর বেস্ট। কিন্তু কুকুর কই? কুকুর তো হাতে আছে সাকুল্যে একটা, কুকুর নম্বর ৩৩। আরো কয়েকটা কুকুর প্রয়োজন তাঁদের এখন। ইতিমধ্যেই কুকুর নিয়ে যা কান্ড হয়ে গেছে ম্যাক্লাউডের সাথে, তাতে কুকুর চাইলেই এখন আর কুকুর পাওয়া যাবে না। এদিকে গ্যাঁটের কড়ি খরচা করে কুকুর কেনাও আর সম্ভব নয় তাঁদের পক্ষে। পয়সাকড়ির খুব টানাটানি চলছে এখন। অগত্যাই, এক পরিকল্পনা ফাঁদলেন বান্টিঙ আর বেস্ট। রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর ক’টাকে ধরে নিয়ে এলে কেমন হয়! দুজনেই ভেবে দেখলেন এছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ খোলা নেই তাঁদের কাছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, কাউকে কিছু না জানিয়ে, গভীর রাতে বান্টিঙ আর বেস্ট বেড়োলেন পথকুকুরের সন্ধানে। রাস্তায় একবার একটা কুকুর দেখতে পেলেই হলো। তাকে খাইয়ে দাইয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে, বাবা বাছা বলে, গবেষণাগারে ধরে আনতেন তাঁরা। এটা একদিনের গল্প নয়। কুকুর কম পড়লেই, মাঝ রাতে কুকুর ধরার অভিযান শুরু করতেন বান্টিঙ আর বেস্ট, চুপিচুপি। কেউ জানতেন না সেই কথা। পরে অবশ্য একথা গোপন থাকে নি আর, অনেকেই জেনে গিয়েছিলেন তাঁদের এই কুকুর ধরার কাহিনী। বছর দুয়েক পর, ২০শে নভেম্বর ১৯২৩ সালে, টরন্টো স্টার পত্রিকায় এই বিষয়ে লেখা হয়েছিল, “তিনি ও মিঃ বেস্ট কখনও কখনও গভীর রাতে রাস্তা থেকে তাদের [কুকুরদের] ধরতে বেরোতেন। কুকুর ধরার এই ছ’সপ্তাহ ছিল আর্থিক সংকটের সময়। ইনসুলিনের দুই পথিকৃৎ মাঝরাতে গোপনে গৃহহীন কুকুর খুঁজতে বেড়িয়েছেন, নিশ্চিতভাবে বিজ্ঞান বা অন্য কোনো কিছুর ইতিহাসে এর থেকে দুঃখজনক চিত্র কিছু হয় না”।
ব্যঙ্গচিত্র সহ ‘কুকুর চোর বান্টিঙ’, ১লা ফেব্রুয়ারি ১৯২৪। |
বান্টিঙ-বেস্টের এই কুকুর ধরার বিষয়টা সামনে এলে, টরন্টো স্টার বা বান্টিঙের কিছু গুণগ্রাহীরা যথেষ্ট সহানুভূতির সাথেই বিবেচনা করতে থাকেন বিষয়টা। আবার বেশ কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন বান্টিঙের এহেন আচরণের তীব্র নিন্দা করেন। ‘নির্মম এবং অবশ্যই পৈশাচিক’ বললেন প্রাণী-ব্যবচ্ছেদ বিরোধী সংগঠনের সদস্যরা। ‘কুকুর চোর’, ‘কসাই’, ইত্যাদি ইত্যাদি বিশেষণও ব্যবহার করেছেন কেউ কেউ। ‘কুকুরদের অত্যাচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়’, ‘যন্ত্রণা দিয়ে তিলে তিলে হত্যা করা হয়’ ইত্যাদি ভাবে তাঁদের কাজকে বিশ্লেষণও করেছেন অনেকেই। এমনকি নোবেল সম্মানে ভূষিত হবার পরও বন্ধ হয় নি এই সমালোচনা। নীরবে সব সমালোচনা সহ্য করে নিজের কাজে একাগ্র ছিলেন বান্টিঙ। ‘কসাই’ বান্টিঙ পরে এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, “রোগীকে মরতে দেখেছি আমি তবুও এক ফোঁটা চোখের জল ফেলিনি। কিন্তু সেই কুকুরটা যখন মারা গেল আমি একা থাকতে চেয়েছিলাম কারণ চোখ থেকে জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না আমার”। (চলবে)