জায়গার নাম শুলকুনি গ্রাম, হাসনাবাদ থেকে আরও ঘণ্টা খানেক, তার পরে নদী পেরিয়ে এক বাঁধ ভাঙ্গা গ্রাম, যে গ্রাম এ ঝড়ের পরবর্তী সময়ে চারদিকে ছড়িয়ে আছে ভাঙ্গা ঘর আর গোটা গ্রাম জুড়ে শুধুই জল আর জল। অথচ দুদিন ধরে মানুষ খাবার জল পাচ্ছে না .. গাড়ি আসছে না তাই। বড্ড কষ্ট হচ্ছিল যখন দেখলাম স্কুল বাড়ি থেকে গোয়াল ঘর সবটাই জলের তলায়, তাঁবু খাটিয়ে লোক এ রাস্তায় থাকছে, এখন ও ১১০০০ ভোল্ট এর লাইন জলের নীচে, তিন বার বাঁধ সারানোর পরেও বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের জলে ভাসছে সাধের কুঁড়েঘর গুলো।
আমরা ছয় জন মত গেছিলাম, সাথে ছিল ৫০০ লিটার জল, বিস্কুট কেক হরলিক্স চিঁড়ে মুড়ি আর সাধ্যমত ত্রিপল… চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে আর কৌশিক স্যার আর পুণ্য স্যারের সহায়তায় কিছু ঔষধও নিয়ে গেছিলাম, প্রায় ৮০ জন রুগী দেখা যখন শেষ হল তখন বাজে বেলা আড়াইটে… medicine distribution করছিল ঐন্দ্রিলা, খাবার বিতরণের দায়িত্বে রানামামা, রেশ্মি, রাজামামা, আর সুরন্তা।
বলে রাখা ভালো আমার বান্ধবী সুরন্তা ওই গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুল এর শিক্ষিকা, ওর কাছ থেকেই খবর পাই আমরা যে ওখানে মানুষ কত কষ্টে আছে। আর তারপরে আমাদের ন্যূনতম সামর্থ্য আর আপনাদের সাহায্য নিয়ে পৌঁছে যাই শুলকুনি গ্রাম।
বিশ্বাস করুন বা না করুন ওরা শুধু কষ্টে নেই ওরা বড্ড খারাপ আছে। তবু ওদের মুখে হাসি আছে, ওদের মত করে ওরা ভালো থাকার চেষ্টায় আছে…
মোটর ভ্যানে কিছু গোলযোগ হওয়ায় হেঁটে যখন নদীর ঘাটে আসছিলাম….তখন আমার হাত এ প্রায় খালি হয়ে যাওয়া এক ওষুধের বাক্স, বাকি খাদ্যসামগ্রী আর ওষুধ ততক্ষণে দিয়ে এসেছি শুলকুনি গ্রামে…. পথ ফিরতি গ্রামের মানুষ আমার হাতের ওই বাক্স দেখে ছুটে আসছিল বারবার আর জিজ্ঞাসা করুছিল কোনো খাবার আছে? কোনো ওষুধ আছে? ওদের কে না বলতে যে কেমন অপরাধ বোধে ভুগছিলাম, তা বর্ণনা করা যায় না…
নৌকায় উঠলাম, এপাড়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল, গাড়িতে ওঠার আগে ওপাড়ে তাকালাম একবার, ছোট ছোট হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর বিপদ হতাশা আশা আর্তি ভরা চোখ গুলো তখনও জ্বল জ্বল করছে আমাদের চোখের সামনে….
যেখানে ওরাও অসহায়, আর আরও বেশী অসহায় আমরা, তোমরা সকলে…