“ঠেঙিয়ে তোরে করব ঢিট।
মারব রেগে পটাপট –
কিম্বা আবার করবি রোখ,
মিথ্যেমিথ্যি চ্যাঁচাস জোরে –
জানিস আমি স্যান্ডো করি?
কামেন ফাইট! কামেন ফাইট!
টেরটা পাবি আজ এখনি!
…
দাঁড়া একটা পুলিশ ডাকি!
করতে চাও কি তাই বল না!
আমি তো চটিনি মোটেই!
ভেরি-ভেরি সরি, মশলা খাবি?”
সব শোধ বোধ ঘরে চল!
হাউ ডুয়ুডু গুড্ নাইট্!”
সুকুমার রায় কি ১০০ বছর আগে এ কথাগুলো আমাদের তথা জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য লিখেছিলেন? ধুস! কি যে বলেন – তখন তো জুনিয়র ডাক্তারদের অস্তিত্বই ছিলনা। কল্পনার গরু গাছে ওঠে আর কী!
এখনকার কথা
“পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস” নামক একটি স্নেহধন্য সংস্থার তৈরি “বিষাক্ত” স্যালাইন (পোষাকি নাম রিঙ্গার্স ল্যাক্টেট বা সংক্ষেপে আরএল) ব্যবহার করার পরে একজন প্রসূতির মৃত্যু হয়, আরও তিনজন সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ফলশ্রুতিতে ১২ জন চিকিৎসককে (জুনিয়র ডাক্তার, সুপার এবং সিনিয়র ডাক্তার) সাসপেন্ড করা হয়েছে। সিআইডি তদন্ত শুরু হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের অন্যতম মুখ আসফাকুল্লা নাইয়া-কে মেডিক্যাল কাঊন্সিলের তরফে যথেষ্ট অস্পষ্ট কারণে “শো কজ”-এর চিঠি পাঠানো হয়েছে। এমনকি কলকাতা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের গ্রামের বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে। কোন “জঙ্গি” নথিপত্রের খোঁজে? আমাদের জানা নেই।
এগুলো সবার এখন জানা। এটাও জানা যে কর্ণাটক সরকার প্রায় ১০ বছর আগে এই কোম্পানির তৈরি স্যালাইনের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এবং এ তথ্য আমাদের রাজ্য সরকারের গোচরেও ছিল। তারপরেও রমরমিয়ে এখানে এর ব্যবহার চলেছে – বহুবার ডাক্তারদের তরফে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও।
যে খবরটি হয়তো সবার গোচরে নেই তা হল, ১৪ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে জারি করা একটি নির্দেশিকা। নিচে তার ছবি দিলাম – ভালো করে দেখার জন্য।
নির্দেশিকাটি মন দিয়ে দেখলে বোঝা যায়, হয়তো একটু তাড়াহুড়ো করে এ কাজটি ১৪ জানুয়ারি করা হয়েছে সম্ভবত ১৬ জানুয়ারি থেকে ক্রমাগত ডাক্তারদের ওপরে আক্রমণ হানার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে। এ আক্রমণ আরও বাড়বে, অনুমান করা যায়। হয়তো পুলিশি আক্রমণও হবে। আরও “শো কজ”, আরও সাসপেনসন, আরও চোরাগোপ্তা আক্রমণ চলতে থাকবে – এটাও অনুমান করা যায়। তবে এখনো বাংলায় সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্র এবং সংবাদমাধ্যম জুনিয়র ডাক্তারদের প্রসঙ্গে সমস্যার গভীরে গিয়ে এদের পাশে সমবেদনার সাথে দাঁড়াচ্ছে।
আন্দোলন যেমন মানুষের অনেক সংকীর্ণতা, কলুষ, মালিন্যকে দ্রব করে দেয়, তেমনি আবার আন্দোলন থিতিয়ে গেলে এই রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাভজনক, সুরক্ষিত অবস্থান পাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে আন্দোলনকারীদের একাংশ। ১৯৬৮ সালের প্যারিসের দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬০-৭০-এর দশকের পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী আন্দোলন অন্তত এ শিক্ষাই দেয়।
পেশাজীবী আন্দোলনের সঙ্গে জনরোল মিশে গেলে যে পরস্থিতি জন্ম নেয় তা আমাদের তথা ডাক্তারদের জন্য আত্মশুদ্ধির সময়ও বটে। মানুষের সাথে শীতল ও নিস্পৃহ ব্যবহার বা দুর্ব্যবহার না করা আমাদের তথা ডাক্তারদের মানবিক দায়িত্বের মধে পড়ে। তেমনি অহেতুক বেশি ওষুধ না লেখা, অযথা সার্জারি বা “সিজারিয়ান সেকশন” না করাও আমাদের ন্যূনতম কাজের মধ্যেই পড়ে। রোগীকে অর্থ উপার্জনের উপাদান হিসেবে না দেখে “মানুষ” হিসেবে দেখা, এটাও আমাদেরই করতে হবে। অগণিত মানুষের এটাই তো প্রত্যাশা।
ভিন্ন প্রসঙ্গ
১৮৭৪ সালে প্রকাশিত বসুর সেকাল আর একাল গ্রন্থে রাজনারায়ণ ভারতীয়দের তরফে ইংরেজদের “হনুকরণ”-কে তীব্র শ্লেষে বিদ্ধ করে লিখেছিলেন, “হিন্দু”দের প্রাতঃস্মরণীয়া নারীদের নিয়ে যে শ্লোক চালু ছিল, সে শ্লোক পরিবর্তিত হয়ে সেকালে নকল শ্লোক তৈরি হয়েছিল –
হেয়ার কল্বিন্ পামরশ্চৈব কেরি মার্শমেনস্থতা।
পঞ্চ গোরা স্মরেন্নিত্যং মহাপাতক নাশনং।।
আজকের এই জাল ওষুধ থেকে টাকা নিয়ে রোগী ভর্তি, মেধাবী ছেলেদের পাশ করিয়ে দেওয়া থেকে ইউনিভার্সিটি রেজিস্ট্রেশন… ইত্যাদি প্রতি পদে “অদৃশ্য, সন্ত্রাস ও হুমকি সংস্কৃতি-নির্ভর” যে মেডিক্যাল সাম্রাজ্য চলছে (রাজধানী – আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ), প্রতিটি আনাচে-কানাচে নকলের যে সাম্রাজ্য চলছে সেখানে হেয়ার, কেরি, মার্শম্যান প্রভৃতিদের সরিয়ে “প্রাতঃস্মরণীয়” অভীক, বিরুপাক্ষ, সন্দীপ এবং সুদীপ্তদ্বয়দের নাম স্বচ্ছন্দে বসিয়ে দেওয়া যায়! এ বলে আমায় দ্যাখো, ও বলে আমায় দ্যাখো। মজার ব্যাপার, এদের অনেকেই আবার স্ব স্ব জায়গায় সস্মমানে ফিরে এসেছে, সরকারের আনুকূল্যে।
সেপ্টেম্বর মাসের ১৪ তারিখ, ২০২৪। বৃষ্টিস্নাত কলকাতার সে রাতের কথা মনে পড়ে? সে রাতের ছবি ওপরে। “দিদি” হিসেবে আমাদের মাননীয়া চলে গিয়েছিলেন ১০ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানরত জুনিয়র ডাক্তারদের মাঝে। “ভাই”দেরকে অবস্থান তুলে নিয়ে কাজে যোগ দিতে বলেছিলেন। সে সন্ধেতেই জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁর ডাকে কালীঘাটের বাসভবনে যায় আলোচনার জন্য। আমাদের ভাইদের দাবী ছিল, সমগ্র আলোচনা লাইভ স্ট্রিমিং করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের অজুহাতে পরিষ্কার না করে দেওয়া হয়। “দিদি”র “ভাইয়েরা” দিদির বাড়িতে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যখ্যান করে আবার অবস্থান মঞ্চে ফিরে আসে – কেউ কেউ চোখের জল নিয়ে।
যৌক্তিকভাবেই, এসমস্ত দুর্নীতির নিয়ামক সরকারের তরফে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য দপ্তরের সেক্রেটারির পদত্যাগের দাবীতে “ওরা বীর, ওরা আকাশে জাগাতো ঝড়”-এর বাহিনী স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে বসেছিল, যেমনটা তার আগে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সাথে দেখা করে তাঁর পদত্যাগের দাবীপত্র এবং একটি সবল, ঋজু শিরদাঁড়া উপহার দিয়ে এসেছিল খোদ লালবাজারে।
একদল মেধাবী, মানুষের চিকিৎসা করার স্বপ্ন-মাখা চোখ নিয়ে তাদেরই সাথী আরেক স্বপ্ন দেখা সাথী “অভয়া”র নৃশংস খুন এবং নৃশংসতম হত্যার (বিশেষণদুটোর স্থান বদলও হতে পারে) বিচার (সুবিচার অনেক দূর গ্রহের কোন ছায়াময় অস্তিত্ব!) এবং সরকার ও রাষ্ট্রের তরফে সযত্নে তৈরি করা “আইনসিদ্ধ আইনহীনতা” (legalized lawlessness)-এর বিরুদ্ধে তখন দীর্ঘ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে, একটি সিস্টেমের মধ্যেকার নীরব “সন্ত্রাস সিন্ডিকেট”, সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে টাকার বিনিময়ে ছাত্রছাত্রীদের পাস-ফেল করানো বা নম্বর বাড়ানো, মর্গের মৃতদেহ বিক্রী থেকে নিম্ন মানের ওষুধ (কোন কোন ক্ষেত্রে ওষুধই নয়, গায়ে দেবার পাউডার) সরবরাহের ঠিকাদারি থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকা কামানো, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং মেডিক্যাল শিক্ষাবিভাগের অভ্যন্তরের অবর্ণনীয় দুর্নীতি – সমস্ত কিছুর ক্লেদাক্ত আবরণকে একটানে খুলে ফেলে দিচ্ছে আমজনতার সামনে।
অনুসন্ধান চলছে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ডিভিশন বেঞ্চ. ৪ দিনে কেটে যাবার পরে তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে দিয়েছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে – কলকাতা পুলিসের তরফে তদন্ত চলাকালীন – কী কী প্রমাণ মুছে গেছে তার হদিশ পাওয়া মুশকিল। এরপরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে ৩ জন বিচারপতির বেঞ্চ সুও মোটো মামলা নিজেদের হাতে তুলে নেয়। পরবর্তী অগ্রগতি শ্লথ – অনেকটা হিমঘরে প্রবেশের মতো। আসলে আমাদের মতো ভীরু মানুষ সিঁদূ্রে মেঘে ডরায়।
এ আন্দোলনের ফলে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে শাসকদল এবং সরকারকে এর প্রতিক্রিয়ায় নিত্যনতুন কৌশল ভাবতে হচ্ছে। জুনিয়র ডাক্তারদের proactive movement সরকারকে reactive position-এ ঠেলে দিয়েছে। এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এরা বিভিন্ন স্তরে গণ অংশগ্রহণের flood gate খুলে দিল।
শুধু এটুকুই নয়, এ আন্দোলনের অভিঘাতে নারীরা সামাজিক সুরক্ষা এবং ব্যক্তি নারীর স্বাতন্ত্র্যচিহ্ন খুঁজে পেয়েছে। সমস্ত নাগরিক সমাজ – সবরকমের দলীয় প্রভাবকে দূরে সরিয়ে রেখে – একটি নতুন পরিসর তৈরি করেছে। এরকম তৃতীয় পরিসর বা নাগরিক পরিসর স্মরণীয় কালের মধ্যে উন্মোচিত হয়নি।
রাজনৈতিক দল এবং ঝান্ডা ছাড়া মানুষের বিশুদ্ধ আবেগ এবং পবিত্র ক্রোধকে রাষ্ট্র সবসময় ভয় পায়। চায়, একে বারংবার সহিংস হবার পথে ঠেলে দিতে। সফল না হলে একে প্রশমিত করার জন্য গণতন্ত্রের তথাকথিত চারটি স্তম্ভই কাজ করে – বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন মাত্রায়। সে কাজ করা শুরু হয়েছে, এবং করবেও। আমাদের রাস্তা ধর্ণায় বসে থাকা, পথে নেমে বন্ধু এবং সাথীকে চিনে নেওয়া। নাগরিক সমাজের বিপুল অংশগ্রহণ আমাদের নতুন ‘Human Bondage’ তৈরি করেছে। অজানা অচেনা প্রত্যন্ত গ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ এ আন্দোলনের সাথে জুড়ে যাচ্ছে। আড়ে-বহরে “অভয়া”-র জন্য বিচার চাওয়ার অবয়ব ক্রমাগত বড়ো হচ্ছে।, দীর্ঘ হচ্ছে। আরও গভীরতায় প্রবেশ করছে।
আমাদের কাছে অজানা শিশু-কিশোর-কিশোরী-যুবক-যুবতী-মাস্টার মশাই-দিদিমণি-দাদা-বৌদি-ভাইদের আমরা জড়িয়ে ধরছি – যেন আরও বেঁধে বেঁধে থাকতে পারি আমরা।
কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হল – (১) আমাদের সন্তানসম জুনিয়র ডাক্তারেরা একটি অতি শীলিত, দৃঢ় এবং প্রত্যয়ী সামজিক যুক্তিবোধের জন্ম দিয়েছে, যুক্তি এবং শিষ্ট বিতর্কের সীমানা কোন সময়েই অতিক্রম করেনি, (২) এর পরিণতিতে অগণন মানুষের অংশগ্রহণের মাঝেও নিঃসারে এই শিষ্ট যুক্তির প্রয়োগ ও পরিণতিতে অনুশীলনের সূচনা করেছে। আজকের অশিষ্ট, কদর্য, ক্লেদাক্ত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিবেশে এ এক জীবন্ত সামাজিক যুক্তির প্রতিরোধ।
এটুকু প্রাপ্তি আমাদের ইতিহাসের মহাফেজখানায় চিরকালীন স্থান করে নেবে – এ আমাদের বিশ্বাস। তবে একটি প্ররোচনার ব্যাপারে সয়াবিকে সতর্ক থাকতে হবে। রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের অপ্রাপ্তি পূরণের ক্ষেত্র হিসেবে যেন আমরা এদের আন্দোলনকে বেছে না নিই। তেমনি এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোন রাজনৈতিক দল তৈরি করার স্বপ্নবিলাসকে আমরা যেন আমল না দিই। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন অব্দি ওদের ওপরে আরও জানা-অজানা নানা পথে বিভিন্ন আক্রমণ নেমে আসবে। নাগরিক সমাজের কি দায়িত্ব নেবে ওদেরকে আগলে রাখার? ওদের পাশে দাঁড়ানোর? এর উত্তর তো নাগরিক সমাজই দিতে পারে।
রাষ্ট্রের প্রত্যাঘাত
একটি প্রশ্ন তো করাই যায় – দিদি এবং দিদিগিরির মাঝে দূরত্ব কতটুকু? অর্বাচীন, অর্ধশিক্ষিত, অশিষ্ট বিধায়ক এবং “সফরি ফরফরায়তে” নেতাদের দিয়ে ডাক্তারদের ওপরে ভাষগত, দৈহিক (কিছুক্ষেত্রে) এবং সন্ত্রাসের আক্রমণ প্রায় মাস দুয়েক ধরে শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনের ভাটার সময় এটা কখনো প্রত্যক্ষ, কখনো নিঃসাড়ে চলতে থাকবে।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর সাথে মিটিং চলবার সময়ে মিটিং চলাকালীন আমরা দেখেছি, ঘটনার সত্যতা জানানোর জন্য কিভাবে কলেজের অধ্যক্ষকে এক ধমকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। একটি সংবাদপত্রের খবরের শিরোনামও হয়েছে “‘না জানিয়ে ৪৭ জনকে সাসপেন্ড, এটা থ্রেট কালচার নয়?’ আর জি করের অধ্যক্ষের কাছে জবাব চাইলেন মমতা”। ছাত্রদের সামনে অধ্যক্ষের এরকম অপমান কোথায় বাজতে পারে, ভেবে দেখুন? প্রকৃতপক্ষে “হুমকি সংস্কৃতি”র গর্ভগৃহে বসেই আমরা ঠাণ্ডা গলায় হুমকি শুনলাম।
চেষ্টা থাকবে আমাদের যুক্তির এবং চলনের ধরনের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ আসতে থাকবে এবং আমাদের সাথে বিপুল জনতার যে গাঢ় সংযোগ তৈরি হয়েছিল, সেটাকে ছিঁড়ে দেবার। কারণ সামাজিক আন্দোলনের অনিবার্য dynamics-এই আন্দোলনে এখন আপাত ভাটার সময় চলছে। রাষ্ট্রের আক্রমণের এটাই মোক্ষম সময়।
আপাতত এরই চূড়ান্ত পরিণতি হল “প্রাতঃস্মরণীয়” অভীক ও বিরুপাক্ষের পুনঃস্থাপন। জীবন্ত বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হল মেডিক্যাল কাউন্সিলে। সামনে আরও অনেক আক্রমণ একে একে আসবে। ডাক্তাররা বুঝতে পারছেন। এবং মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন।
কিন্তু রাষ্ট্র হৃদয়হীন, হিংস্র, প্রতিশোধস্পৃহ, মুখ এবং মুখোশ একাকার হয়ে যাওয়া একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা। এর সঙ্গে আমাদের লড়াই এককথায় অসম লড়াই। এ লড়াইয়ে মাটি, জল, ভূমি, বাতাস, পুষ্টি দিতে পারে নাগরিক ও প্রান্তিক সমাজের অস্নগখ্য মানুষের অপরিমেয় শক্তি। এজন্য আমাদের অন্তহীন সামাজিক সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। মাটি কামড়ে পড়ে থাকতেই হবে। আর কী কোন পন্থা খোলা আছে আমাদের সামনে?
এই প্রত্যাঘাতেরই ক্রমবর্ধমান চেহারা দেখছি এখন। আরও বাড়বে। বিচক্ষণতা, ঠান্ডা মাথা, যৌক্তিক পদক্ষেপ – এগুলো এখন সময়ের একান্ত দাবী।
মানুষেরর দরবারে আমরা আবার ফিরে আসছি – “জনস্রোতের নানান মতে পথেই হবে এ পথ চেনা।” এ বিশ্বাসটুকুই আমাদের পুঁজি।
এ দুর্নীতি মিলে মিশে দুর্নীতি। সরকারের সাথে চিকিৎসকরা ও দপ্তর যুক্ত। সংঘবদ্ধ আন্দোলন সাময়িক করে কোন লাভ নেই। আন্দোলন নিজেদের প্রয়োজনে নয় রোগীদের পরিষেবার জন্যেও হওয়া উচিৎ। রোগীরা এখনো পরিষেবা কোন পক্ষ থেকেই পাচ্ছেন না উল্টো বেনালে প্রাণ দিচ্ছেন।
অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে ….. রোষানলে পড়তেই হবে, এ যেন এক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেন্দ্রিক অরাজকতা, বাদ- প্রতিবাদ-চাপানুতর ভালোভাবে ব্যক্ত হয়েছে এই লেখায়। সত্যিই, শক্তিশালী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই আর…
তথ্য সমৃদ্ধ। দারুণ উপস্থাপন।
সরকার বিরোধী আন্দোলনে অরাজনৈতিক ভাবে সংঘবদ্ধ হওয়ার ধারনা আমার কাছে নতুন। আমাদের কাছে প্রশ্ন ১)বর্তমান সৃষ্ট অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ডাক্তারবাবুদের কি করলে ভাল হতে পারে,এবং ২)কেবল মতামত দিলে চলবে না নিজেরাও দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এক জন মহিলা সরকারি কর্মচারী ধর্ষন ও খুনের শিকার হয়েছেন তাহলে গরীব ঘরের এক জন মহিলা কি অবস্থায় কাটাচ্ছেন সেটা সহজেই বুঝতে পারা যায়।
এই ধরণের ঘটনার বিরুদ্ধে একটি মাত্র ইস্যুতে দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করা দরকার।ফলাফল ভবিষ্যতে বুঝতে পারা যাবে।এই কাজে সরকার বিরোধী দলকেই মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।আজ কাল আইনের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে,এতে সমস্যার সমাধান করা যায় না। প্রশাসনের উপরের স্তর থেকে দুর্নীতি নীচের স্তরে নামিয়ে আনা হচ্ছে।এর জন্য কোন ব্যক্তি বিশেষের দোষ নেই।এটা সর্ব স্তরে প্রযোজ্য।
প্রত্যেককে দায়িত্ববান হতে হবে।
শাসক যখন “দিদি” হন, আমরা তখন বেশ আহ্লাদিত হ’য়ে আত্মীয়তার নৈকট্য অনুভব করি, আবার হ্যামলেট নাটকের হ্যামলেটের সেই বিখ্যাত সংলাপটিও কোথাই যেন খোঁচা মারতে থাকে, ” আত্মীয়দের চেয়ে একটু বেশী, এবং দয়ার চেয়ে কম। ”
আসোলে, আত্মীয় যখন একটু নিকটের তখন একটু- আধটু শাসন তো করবেনই। এ আর নতুন কী।
প্রসূতি মৃত্যুব ব্যাপারটিকেও মাথায় রাখতে হবে। আন্দোলনকারীদের জব্দ করার জন্য জানা সত্ত্বেও যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ঐ ব্যাচের বা কোম্পানীর রিঙ্গারস ল্যাকটেট ক্ষতিকর জেনেও যদি মানুষের মৃত্যুর অপেক্ষায় থেকে সুযোগ নেওয়া হয়, যেটা এই লেখাটা পড়ে অন্তত মনে হচ্ছে, তাহলে রাজ্যের প্রতিশোধ নেবার তালিকায় এবং রাজ্য প্রশাসনের চিহ্নিত প্রতিপক্ষের তালিকায় প্রসূতি মা এবং গর্ভের শিশুও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, এটাই ধরে নিতে হবে। মানুষের ইতিহাসে এবং লোককথায় জনবিচ্ছিন্ন অত্যাচারী রাজশক্তি এ কাজ আগেও করেছে, প্রতিশোধস্পৃহু রাজশক্তির এইটাই আচরণগত বহিপ্রকাশ, যে কারণে কংসের কারাগারে কৃষ্ণ এবং হেরোডের আস্তাকুঁড়ে যীশুদের জন্মাতে হয়। এবং আমরা, অগণিত অনামী “হাঁদা পাবলিক”, এরও সাক্ষী যে রাজছত্র ভেঙে পড়ে, রক্তমাখা অস্ত্র হাতে রক্ত আখি শেষ পর্যন্ত শিশুপাঠ্য বইতে মুখ ঢাকে, গুরুবাক্য সদাসত্য। এও তাই হবে, তবে সেইদিন যেন আজকের রণ রক্ত সফলতাকে ভুলে না যাই।
আমি সিস্টেমস থিওরির চোখ দিয়ে বিচার করলে দেখি যে সরকারের বা ক্ষমতাসীনদের সাময়িক ভাবে যারা প্রবল তাদের বাঁচানোর একটা তাগিদ রয়েছে। যে কারণে প্রতিশোধ নেবার প্রয়োজন হয়। ওরা ভয় পেয়েছে। ওদের পতন অবশ্যম্ভাবী, আমাদের সহযোদ্ধাদের আপাতত শান্ত থেকে দূর থেকে এদের ভেঙে পড়তে দিতে হবে, শুধু দেখার যে এই লড়াইয়ের জেরে আর যেন কোন অসহায় প্রাণ collateral damage এর বলি না হয়। সেইটা বড় মর্মান্তিক।
Excellent one sir
কাজের চাপে সাধারন মানুষ ক্রমশ সবকিছ ভুলে যাচ্ছে। তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে হবে।লেখাটি খুবই প্রাসঙ্গিক