প্রশ্নঃ অনেকেই তো মাথা যন্ত্রণার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসেন।সব মাথা যন্ত্রণার পিছনেই কি খারাপ কোন কারণ থাকে?
উত্তরঃ মাথা যন্ত্রণা বা হেডেক মূলত দুই রকমের। প্রাইমারি হেডেক এবং সেকেন্ডারী হেডেক। প্রাইমারি হেডেকের উদাহরণ হল- টেনসন টাইপ হেডেক, মাইগ্রেন, ক্লাস্টার হেডেক ইত্যাদি।
অন্যদিকে সেকেন্ডারী হেডেকের ক্ষেত্রে মাথা যন্ত্রণার পিছনে অন্য কারণ দায়ী থাকে। যেমন নাক-কান-গলা-দাঁত ইত্যাদির সংক্রমণ, মাথার মধ্যে আঘাত, মাথার মধ্যে রক্তপাত- রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া, মাথার মধ্যে টিউমার, বিভিন্ন নেশা ও কিছু মানসিক রোগ ইত্যাদি থেকে মাথা যন্ত্রণা সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশ্নঃ কোন কোন ক্ষেত্রে মাথা যন্ত্রণা হলে দেরী না করে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে?
উত্তরঃ যে সমস্ত মাথা যন্ত্রণা হঠাৎ করে জীবনে প্রথম বার দেখা দিল, অসহ্য মাথা যন্ত্রণা, মাথা যন্ত্রণার সাথে সাথে সর্বক্ষণ বমি হয়ে চলেছে, মাথা যন্ত্রণার সাথে সাথে জ্বর ও শারীরিক অবস্থার অবনতি, রোগীর বয়স ৫৫ বছরের বেশী, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পরই মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়ে যাচ্ছে- এই সমস্ত লক্ষণ সাথে থাকলে সেই জাতীয় মাথা যন্ত্রণা বিপদজনক হতে পারে।তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
প্রশ্নঃ রোগীরা সবচাইতে বেশী কোন জাতীয় মাথা যন্ত্রণায় ভোগেন?
উত্তরঃ প্রাইমারী হেডেকের মধ্যে সবচাইতে বেশী দেখা যায় টেনশন টাইপ হেডেক (প্রায় ৬৯ শতাংশ)। এর পরে আসে মাইগ্রেন (প্রায় ১৬ শতাংশ)।সেকেন্ডারী হেডেকের মধ্যে সবচাইতে বেশী দেখা যায় সংক্রমণ সংক্রান্ত মাথা যন্ত্রণা।
প্রশ্নঃ “টেনশন টাইপ হেডেক” কী?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে রোগী মাথায় ব্যান্ডের মত কিছু চেপে আছে এরকম অনুভূতি হয়, মাথা ব্যথা মাথার দু দিকেই হয়। দীর্ঘক্ষণ মাথা যন্ত্রণা থাকে।তবে বমি ভাব, চোখে ও কানে দেখবার সমস্যা সাধারণত থাকে না।
প্রশ্নঃ ক্লাস্টার হেডেকের লক্ষণ কি কি?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে চোখের পিছন দিকে মারাত্মক যন্ত্রণা হতে থাকে। প্রত্যেক বছর টানা আট থেকে দশ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রত্যেকদিন যন্ত্রণা হয়। মাথা যন্ত্রণার সাথে সাথে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ ও নাক দিয়ে জল পড়া ইত্যাদি হয়। যন্ত্রণা এতটাই বেশি হয় যে রোগী এক জায়গায় স্থির থাকতে পারেন না, ছুটে বেড়ান এবং অনেক সময় আক্রমণাত্মক হয়ে পড়েন।
প্রশ্নঃ মাইগ্রেনের লক্ষণগুলি কি কি?
উত্তরঃ মাইগ্রেন মূলত দু রকমের। ক্লাসিক্যাল ও কমন মাইগ্রেন। ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেন ২০-২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় এবং এই জাতীয় মাইগ্রেনে মাথা যন্ত্রণা শুরুর আগে “অরা” দেখা যায়। “অরা”র সময় আক্রান্ত ব্যক্তি চোখের সামনে আলোর ঝলক, রেখা, কালো দাগ ইত্যাদি দেখতে পারেন। “অরা”র পরের ধাপে প্রকৃত মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়। এক্ষেত্রে মাথার এক দিকে দপ দপ করে যন্ত্রণা (থ্রবিং হেডেক) হয়, যন্ত্রণার তীব্রতা সাধারণত বেশীই থাকে এবং এই যন্ত্রণা নিয়ে দৈনন্দিন কোন কাজ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর সাথে সাথে বমি ভাব, বমি, চোখে ও কানে শোনায় সমস্যা দেখা যেতে পারে। এই জাতীয় মাথা যন্ত্রণা সাধারণত ৪ থেকে ৭২ ঘন্টা স্থায়ী হয়।
প্রশ্নঃ কোন কোন বিষয়গুলি মাইগ্রেনের ব্যথাকে বাড়িয়ে দেয়?
উত্তরঃ কিছু বিষয় বা পরিস্থিতি মাইগ্রেনের প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়। এদেরকে ট্রিগারিং ফ্যাক্টর বলে। যেমন দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকা, অতিরিক্ত কফি বা মদ্যপান, দুশ্চিন্তা, আবহাওয়ার পরিবর্তন, অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম, অনিদ্রা ইত্যাদি বিষয়গুলি মাইগ্রেনকে ত্বরান্বিত করে।
প্রশ্নঃ মাইগ্রেনের চিকিৎসা কী?
উত্তরঃ প্রথমেই আসি কিছু নিয়ম কানুনের ব্যাপারে যেগুলো মেনে চললে আমরা মাইগ্রেনকে প্রতিহত করতে পারি। খালি পেটে দীর্ঘক্ষণ না থাকা, প্রত্যেকদিন সময়মত ও পর্যাপ্ত ঘুম, রেগুলার ফিসিক্যাল এক্টিভিটি বজায় রাখা, নেশা এড়িয়ে চলা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা এই যন্ত্রণাকে প্রতিহত করতে পারি। দুশ্চিন্তা কাটানোর জন্য বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম, রিলাক্সাশন টেকনিক ব্যবহার করা যায়। মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা হল আর একটি দিক।তাৎক্ষণিক ভাবে যন্ত্রণা কমানোর জন্য NSAIDS, ত্রিপটান, অর্গটামিন গোত্রের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। আর ভবিষ্যতে ব্যথা প্রতিহত করার জন্য কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যেমন-বিটা ব্লকার, এন্টি ডিপ্রেসেন্ট, টপিরামেট, সোডিয়াম ভ্যালপ্রয়েট, ফ্লুনারিজিন ইত্যাদি ওষুধ।