কোলেস্টেরল বেশি হলে ডিম খাওয়া উচিৎ না:
একটি সেদ্ধ পোলট্রির ডিমে ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। এবং এর পুরোটাই থাকে ডিমের কুসুমে। সেকারণে ডিম খেলে আমাদের রক্তে এল ডি এল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড সামান্য বাড়তে পারে। তবে বর্তমান বিভিন্ন ট্রায়ালে দেখা গেছে সপ্তাহে চারদিন একটি করে সেদ্ধ ডিম খেলে খারাপ কোলেস্টেরল মোটেও বাড়ে না। বরঞ্চ ডিমের কুসুমে নানারকম ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে তার থেকে ক্ষতির বদলে লাভ হয় বেশি।
কোলেস্টেরল বেশি হলে যে খাদ্য গুলি খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিৎ সেগুলো হলো
রেড মিট- খাসি, গরু, শুয়োর, ভেড়া ইত্যদির মাংস।
দুধ থেকে প্রস্তুত ক্রিম, ঘি, মাখন এবং ফ্যাট যুক্ত সম্পূর্ণ দুধ।
নানা রকম ভাজা ও অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবার- বিরিয়ানি, ফ্রাইড রাইস।
নানা রকম মিস্টি ও উচ্চ শর্করা যুক্ত খাবার – যেমন কোলড ড্রিংক্স, আইস্ক্রিম।
খাবার তেল, বিশেষত পাল তেল, নারকেল তেল ইত্যাদি।
ডিম উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার। তাই ডায়েটিং করলে ডিম খাওয়া যাবে নাঃ
একেবারে ভুল ধারণা। একটি সেদ্ধ ডিমে মাত্র ৭৮ কিলোক্যালোরি থাকে। তাই যারা ডায়েট করছেন তারা ডিম থেকে খুব কম ক্যালোরির বিনিময়ে নানারকম মিনারেল , ভিটামিন ও এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড পেতে পারেন। ওজন কমানোর জন্য এবং পেট ভরানোর জন্য ডিম একটি আদর্শ খাবার। তবে সেদ্ধ ডিম খেতে হবে। অমলেট বা পোচ খাওয়া যাবে না। তেল দিয়ে ভেজে খেলে তেলের জন্য এর ক্যালোরি ভ্যালু অনেক বেড়ে যাবে।
ডিমের সাদা অংশ ডিমের কুসুমের চেয়ে বেশি পুষ্টিকরঃ
ভুল ধারণা। ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রোটিন ও জল। কুসুমে থাকে নানা রকম ভিটামিন ও মিনারেল। দুটি একে অপরের পরিপূরক।
প্রেশার ও হার্টের অসুখে ডিম খাওয়া বারণঃ
এটাও ভূল ধারণা। বর্তমানে নানা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে জানা গেছে সপ্তাহে তিন থেকে চারটি সেদ্ধ ডিম খেলে প্রেশার ও হার্টের অসুখে কোনো ক্ষতি হয় না। বরঞ্চ লাভ হয়। তাই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা আজকাল ডিম খেতে উৎসাহ দেন।
যেহেতু ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল বেশি থাকে তাই আগে ধারণা ছিল, হার্টের রোগীদের ডিম না খাওয়াই ভালো। কিন্তু পরে দেখা গেছে আমাদের রক্তে যে কোলেস্টেরল থাকে তা বেশিরভাগটাই খাদ্য থেকে আসে না। আমাদের যকৃতে তৈরী হয়ে রক্তে মেশে। যকৃতে এই কোলেস্টেরল তৈরি হয় মূলত কার্বোহাইড্রেট , স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট থেকে। ডিমের কুসুমে স্যাচুরেটেড ফ্যাট খুব বেশি পরিমানে থাকে না।
এছাড়াও ডিমের কুসুমে লিউটিন ও জিয়াজ্যান্থিন থাকে, যেটা আমাদের চোখের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। ডিমের কুসুমে কোলিন থাকে যেটা মস্তিষ্কের জন্য ও স্নায়ুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। যার ফলে ডিম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডিমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, বি ও ভিটামিন ডি থাকে। এছাড়াও ডিমে আটটি এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। যেগুলো দেহে তৈরি হয়না এবং কোনো উদ্ভিজ খাবার থেকে পাওয়া যায় না।
তাই একজন সুস্থ ব্যক্তি রোজ নির্ভয়ে দুটি করে সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন। হার্টের সমস্যা বা কোলেস্টেরল বেশি থাকলে সপ্তাহে তিন থেকে চারটি ডিম খেলে কোনো ক্ষতি হয় না। বরঞ্চ লাভ হয়। ডিমের মতো এত সস্তায় এত পুষ্টিকর খাবার আর নেই।