বাঙালি বেড়াতে ভালবাসে। সেটা মুকুটমণিপুর বা মণিপুর, সাংলা বা লে লাদাখ, দার্জিলিং বা দীঘা অথবা তাজপুর। হেমকুন্ড সাহিব বা নন্দাদেবীর শিখরে। না না না, পুরীর কথা বলবো না-ওটা তো প্রায় নিত্যযাত্রার অঙ্গ হয়ে গেছে। পুরীর সমুদ্রতট যেন নিখিলবঙ্গমহাসম্মিলন। অসুখ বিসুখ সব জায়গাতেই হানা দিতে পারে। আন্দামানে বা ম্যাদাগাস্কারে। সুতরাং সাধু সাবধান।
বিপদে না পড়তে গেলে কী কী করতে হবে, অথবা যদি বিপদে পড়েন, তাইলে কি করে’ বেঁচে ফিরবেন, সেটা আজ এই হাতুড়ের আঙ্গুলের ডগায়-অগত্যা পড়ুন।
মাউন্টেন সিকনেস বা অল্টিচিউড সিকনেস নিয়ে একটা লেখা ইতিমধ্যেই বর্তমান। সুতরাং ওটা বাদ থাক। প্রয়োজনে লিঙ্কটা খুলে অল্টিচিউড সিকনেস পড়ে নেবেন।
এবারে আসুন আপনার কর্তব্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করি। আপনি একটা ফর্ম (যদি কেউ না দ্যায়, তাহলে নিজে নিজে বানিয়ে নেবেন)
(১) আপনার কি কি অসুখ আছে।
(২) কি কি ওষুধ নিয়মিত খেতে হয়।
(৩) যদি আপনি ডায়াবেটিক হ’ন তাহলে অবশ্যই একটা গ্লুকোমিটার সঙ্গে নিয়ে যাবেন। হার্টের রোগী হ’লে আপনার ডাক্তারের মতামত অনুযায়ী ওষুধ নেবেন, এবং সঙ্গে ক্লোপিডোগ্রেল, অ্যাস্পিরিন এবং অ্যাটোর্ভাস্ট্যাটিন রাখবেন। এটা আপনার কাজে না লাগলেও অন্যদের হার্ট অ্যাটাকেও জীবনদায়ী। যদি হাঁফানি থাকে সঙ্গে ব্রঙ্কোডায়ালেটর, স্টেরয়েড এবং ইনহেলার রাখবেন। মৃগী বা এপিলেপ্সি থাকলে তার সমস্ত ওষুধ এবং একটা ফিট সার্টিফিকেট অবশ্যই রাখবেন। এবং সবাইকার টিটেনাসের কোর্স সম্পূর্ণ করে’ বেড়াতে যাওয়া উচিত।কাটার পরে টিটেনাসের ভ্যাক্সিন কোনও কাজ করে না।সাধারণতঃ ইনফেকশনের (পড়ুন, কামড়ের পরে) পরে একমাত্র জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়। ব্যতিক্রম সেই সব ডাক্তাররা যারা জলাতঙ্ক রোগী নিয়ে সারাদিন কাজ করছে।এদের হাসপাতালে কাজ আরম্ভ করার আগেই ভ্যাক্সিন দেওয়ার নিয়ম। তারপর বাৎসরিক হিসেবে।
(৪) আপনার কি কি ওষুধে এবং খাবারে অ্যালার্জি আছে।
(৫) আপনার গৃহচিকিৎসকের নাম ও ফোন নম্বর।
(৬) সম্ভব হলে গোটা দলের একজন একটা পাল্স অক্সিমিটার রাখবেন।
সাধারণ ভাবে দুর্গম জায়গায় হাতের কাছে চিকিৎসা ব্যবস্থা কিছুই থাকে না। এবং অনেক ক্ষেত্রেই আমরা ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যাই। এক্ষেত্রে সেই ট্যুর অপারেটরের প্রাথমিক চিকিৎসা সম্বন্ধে একটু আধটু জানা দরকার। কেননা আপনি যাঁকে নিয়ে যাচ্ছেন, তিনি সম্পূর্ণতঃই আপনার ওপর নির্ভর করে আছেন।অবশ্যই তাঁর পক্ষে ইসিজি করা এবং তার ফলাফল বলা অসম্ভব প্রায়,বলা যায় না মুমকিন।
সুতরাং তাঁর এক্তিয়ার কতোটুকু সেটা আপনার এবং সেই মানুষটির জানা উচিত।
যিনি নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর কি কি জানা উচিত?
(ক) প্রাথমিক চিকিৎসা র কিছু পাঠ। অর্থাৎ হঠাৎ করে’ কেউ আঘাত পেলে’ আঘাত কতোটা গুরুতর সেটার আন্দাজ করা, এবং ছোটোখাটো আঘাতের চিকিৎসা করা।
আঘাতের গুরুত্ব:- যদি মাথায় লাগে এবং আহত ঘন ঘন বমি করে, আচ্ছন্ন ভাব থাকে তাহলে তাকে হাসপাতালে পাঠানো।
যদি কোথাও আঘাত লেগে বা পড়ে গিয়ে,সেই অঙ্গটা ফুলে ওঠে ও আহত ব্যক্তি সেটা নাড়াতে না পারে, তাহলে জায়গাটা যাতে আর না নড়ে, সেটার ব্যবস্থা করা। এটার জন্য কাঠের টুকরো বা গাছের ডাল আর গজ ব্যান্ডেজ দিয়ে অঙ্গটাকে একটা অবস্থায় স্থিতিশীল রাখা যায় (স্প্লিন্ট)।
(খ) যদি কোনো জায়গা থেকে রক্তপাত হতেই থাকে তাহলে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য ক্ষতস্থান চেপে ধরে রাখা। যদি ধমনী কেটে যায় তাহলে ফিনকি দিয়ে দিয়ে রক্ত বেরোবে। সেক্ষেত্রে হাসপাতাল। শিরা কাটলে চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত আসবে। যদি কাটাটা এ্যাতোটা গভীর হয় যে আহত কাটার পরবর্তী অংশটা নাড়তে পারছে না, তাহলে মাশল বা নার্ভ কেটেছে। এক্ষেত্রে ও হাসপাতাল।
(গ) যদি পাৎলা পায়খানা হয়, অল্প হ’লে ও আরএস দেওয়া যায়, বেশী হ’লে বিদেশ বিভুঁয়ে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা যায়।যদি কারও তড়কা/মৃগী থাকে, তাহলে নরফ্লক্সাসিন জাতীয় ওষুধ চলবেনা।
খুব বেশী পায়খানা হলে খুব সংযতভাবে লোপামাইড দেওয়া যায় (বৃদ্ধ ও শিশুদের ছাড়া)। এবং সব ক্ষেত্রেই বমির ওষুধ দিতে হবে।এবং প্রচুর ওআরএস খাওয়াতে হবে।
(ঘ) মোশন সিকনেস:- এটা ঠেকানোর জন্য প্রোক্লোপেরাজিন (স্টেমেটিল) সব থেকে কাজের। কিন্তু বেশী মাত্রায় খেলে ইপিএস নামক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
(ঙ) হঠাৎ মাথা ঘোরা (গোটা পৃথিবী বনবন করে ঘোরা, সঙ্গে বমি- বিটাহিস্টিন (ভার্টিন);১৬মিগ্রা তিনবার, সঙ্গে প্রোক্লোপেরাজিন দেওয়া যায়।
(চ) পেটে ব্যথা:- সাধারণতঃ সার্জিক্যাল ব্যাপার হয়। কারও স্ত্রী রোগের জন্য হ’লে সে নিজেই চিকিৎসা করবে।
(ছ) জ্বর:- সাধারণতঃ কোনও রোগের কারণে হয়। রোগটা (ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু বা টাইফয়েড) না জেনে চিকিৎসা অবৈজ্ঞানিক। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যায়।
এই হলো সারাৎসার। প্রত্যেক মানুষের শরীরের চাহিদা আলাদা।সুতরাং দূরে বা দুর্গম দেশে যাওয়ার আগে নিজের নিজের ডাক্তারের কাছ থেকে কিছু ওষুধ বিষুধ নিয়ে যাবেন।