শুদ্ধ রক্তের খোঁজ – ভারতবর্ষে এখনো সেরকম বেগবান হয়ে উঠতে না পারলেও – নির্দিষ্টভাবে শুরু হয়েছে। এখানে বিভিন্ন ঐতিহাসিক কারণে এর চরিত্র জাতের প্রশ্নে প্রকট হয়।[1] বিভিন্ন ছলাকলা এবং কৃৎকৌশলের সাহায্যে একদিকে উচ্চবর্ণ তথা ব্রাহ্মণ্যবাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা, অন্যদিকে দলিতদের সামাজিকভাবে চ্যুত করা বা হত্যার মধ্য দিয়ে – এরকম একটা প্রোজেক্ট চলছে। এরকম এক প্রেক্ষিতে একটি ছোট ঐতিহাসিক পরিক্রমা করা যেতে পারে ইউজেনিক্স তথা সুপ্রজননবিদ্যার স্তরায়িত ইতিহাস নিয়ে। এ লক্ষ্যেই বৃহত্তর প্রেক্ষিতে বোঝার জন্য এ প্রবন্ধের অবতারণা।
ইউজেনিক্স নিয়ে প্রাথমিক কথা
ইউজেনিক্স তথা সুপ্রজননবিদ্যার গোড়ার কথা হচ্ছে, ডারউইনের কালজয়ী বিবর্তনবাদের একটি অপব্যাখ্যা – বিজ্ঞানীদের একাংশ এবং রাষ্ট্রের তরফে – যার অভিমুখ হচ্ছে একটি সবল, কর্তৃত্বকারী ‘শুদ্ধ’ জাতের জন্ম দেওয়া।[2] এই ‘মহান ব্রত’-তে বলিদান দেবার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল যারা জন্মগতভাবে দুর্বল, যাদের জিনগত ডিফেক্ট (সমস্যা) আছে, সমকামী বা উভলিঙ্গ এবং এমনকি সাদা জাতের সঙ্গে খাপ খায়না এমন সমস্ত সংখ্যালঘু মানুষদের। এদের মধ্যে ইহুদি, বোহেমিয়ান এবং কমিউনিস্টরাও ছিল।
ঊনবিংশ শতকের শেষভাগ থেকে ইউজেনিক্স বা সুপ্রজননবিদ্যার শাখাটি বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পেতে এবং বিকশিত হতে শুরু করে। আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ইউরোপের নানা দেশে এ বিদ্যার চর্চা ছড়িয়ে পড়ে। অন্তত ব্রিটেন এবং আমেরিকাতে তো বটেই এরা অনেকসময়েই প্রাতিষ্ঠানিক চেহারাও পায়। ব্রিটেন তথা ইংল্যান্ডে ইউজেনিক্সের প্রবল শক্তিশালী প্রবক্তা ফ্রান্সিস গ্যালটনের তৈরি “ল্যাবরেটরি অফ ইউজেনিক্স” (ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডন) থেকে প্রকাশিত হয়েছিল Annals of Eugenics: A Journal for the Scientific Study of Racial Problems।[3]
আজ একথা জানলে আশ্চর্য হতে হয় যে, ইংল্যান্ডে “Fabian Socialism”-এর প্রবক্তারাও, যারা সমাজতান্ত্রিক আদর্শে প্রভাবিত ছিলেন বলে ধরে নেওয়া হয় (সদস্যদের মধ্যে বিখ্যাত হলেন সিডনি ও বিয়াট্রিস ওয়েব এবং বার্নার্ড শ), ইউজেনিক্সের দিকে ঝুঁকেছিলেন।[4] প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ১৯০৯ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত The Eugenics Review জার্নালে ১৯৩২ সালের এপ্রিল সংখ্যায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।[5]
(ব্রিটিশ সংস্কৃতি সম্পর্কে গ্যালটনের ধারণা ইউজেনিক্স আন্দোলনের গতিবেগ দেয় – উইকিপিডিয়া)
এ প্রবন্ধে বলা হয়, “The success of eugenics necessarily depends upon the degree to which it is able to influence, directly or indirectly, the mass of the population … Moreover, the socialist is bound to admit that the organized society he proposes would require a higher level of intellectual and moral capacity than does the existing order. Measures tending to raise the innate bases of such capacity must therefore tend to improve the chances of a socialist community working successfully.”[6]
১৯০৮ সালে স্বয়ং গ্যালটন জানান, “the study of agencies under social control that may improve or impair the racial qualities of future generations either physically or mentally”।[7]
সেসময়ে বিজ্ঞানীমহলে, চিকিৎসকসমাজে এবং সাধারণ শিক্ষিত মানুষের মাঝে ইউজেনিক্সকে ধরে নেওয়া হয়েছিল, “the leading, cutting-edge science of the time, as it was developed and practiced in several countries. This included the United States, where scientists and politicians worked together to research and implement ways of decreasing the number of people considered to be hereditarily weak (negative eugenics) and increasing the number of people thought to be hereditarily strong (positive eugenics).”[8]
পূর্বোক্ত প্রবন্ধ দেখিয়েছে, ইউজেনিক্স-এর দর্শন মেনে নাৎসিবাহিনীর একজন হয়ে ওঠার ঝোঁক সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছিল ডাক্তারদের মধ্যে। জার্মানিতে ৩৮,০০০ জন ডাক্তার নাৎসিবাহিনীতে যোগদান করেছিল। ডাক্তারেরা ইউজেনিক্সের মতো একটি ধরে-নেওয়া সত্যকে “বৈজ্ঞানিক” চেহারা দেবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।[9]
সাম্প্রতিক সময়ে গবেষণায় দেখা গেছে, “Although intellectual and practical connections existed between the ideas discussed in both United States of America and Germany, differences in cultural circumstances, including political, journalistic, and education-related opportunities, impacted eugenic progress. Ultimately, while there is not sufficient justification to fault one nation alone, the extent to which American eugenics was successfully implemented heavily influenced the German interest and experimentation in their emerging theory of eugenics.”[10]
ইউজেনিক্সের সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক পরিক্রমা
১৯০৭ সালে সর্বপ্রথম আমেরিকার ইন্ডিয়ানা রাজ্য একটি সরকারি নিয়ম চালু করে যে, যারা “social misfits” তাদের ক্ষেত্রে নির্বীর্যকরণ কর্মসূচি নেওয়া হবে। ১৯২৬ সালের মধ্যে আমেরিকার ২৩টি রাজ্যে এ নিয়ম চালু হয়ে যায়।[11]
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এর মতো প্রভাবশালী মেডিক্যাল জার্নালে ১৯১৩ সালের ৫ জানুয়ারি “Practical Eugenics” শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশিত হল। সে রিপোর্টে বলা হল – “For many years past there has been an ever-increasing interest taken in the subject of racial betterment through the practice of eugenics. So far the chief practical results born as a result of the eugenic campaign have been educational in character. Taken by and large, the thoughtful people of today are decidedly less prone to rush blindly into matrimony than were the same class some ten or fifteen years ago.”[12] এ রিপোর্টেই বলা হল যে, নতুন কোন আইন প্রবর্তন না করে এবং সার্বিকভাবে বৃহত্তর সমাজের ক্ষতি না করে রাজ্যটিতে চালু আইনের মধ্যেই তথাকথিত ইউজেনিক্সের প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে এবং “at the same time could be put in operation without any revolutionary changes in already existing political and social conditions.”[13]
এরপরে একই মেডিক্যাল জার্নাল-এ নিউ জার্সি রাজ্যে নতুন করে পাস হওয়া আইনের ক্ষেত্রে বলা হল – “Every applicant for marriage in the state must have a license secured from an official register. As an essential to that, each person must endure rigid questioning, false answers involving a penalty of from one to three years’ imprisonment. No license can be issued to a person under the influence of liquor, or narcotics, to an imbecile, an epileptic, or to one who has been an inmate of an asylum, except as full discharge is in evidence.”[14]
এতে লাভ কী হবে? “The passage of the law itself, however, is an indication that the public is at last taking the stand that freedom for the individual, no matter what the cost, is not the liberty for which our forefathers fought.” অর্থাৎ ব্যাপারটা যেন এমন যে, আমেরিকা দেশ গঠনের জন্য পূর্বপুরুষেরা যে লড়াই করেছিলেন সেরকম একটি প্রত্যাশিত “রাম রাজত্ব” গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ আইন কার্যকরী হবে।
ইউজেনিক্সের ২য় আন্তর্জাতিক কংগ্রেস বসেছিল নিউ ইয়র্কের আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টরি-র সম্মেনল কক্ষে। এতে সাম্মানিক সভাপতি ছিলেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল।
(2nd Int Conf Eugenics A group picture of 151 of the attendees at the Second International Eugenics Conference at the American Museum of Natural History, September 22-28, 1921)
এর আগে ১৯১২ সালে ইউনিভের্সিটি অফ লন্ডন-এ ইউজেনিক্সের ১ম আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয় জুলাই ২৪ থেকে ৩০ পর্যন্ত। উল্লেখযোগ্য হল, প্রথম কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করেছিলেন চার্লস ডারউইনের পুত্র লিওনার্ড ডারউইন এবং ফ্রান্সিস গ্যালটন। এ বিষয়ের ওপরে ফ্রান্সিস গ্যালটনের সবচেয়ে সাড়া জাগানো এবং প্রভাবশালী বই Hereditary Genius: An Inquiry into Its Laws and Consequences প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৬৭ সালে।
প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় গ্যালটন লিখেছিলেন – “I could not refuse to consider them, because the bearings of the theory I advocate are too important to be passed over in silence.”[15] মূল বক্তব্য, প্রতিভা লুকিয়ে থাকে বংশগতির মধ্যে। প্রতিভা অর্জিত হয়না। “নেচার” এবং “nurture”-এর মধ্যেকার বিভাজন এখানে মুছে গেল।
যাহোক, ১৯২১-এর ২য় কংগ্রেসের কথায় আসি। এ কংগ্রেসের উদ্বোধনী বক্তৃতায় ডাক্তার হেনরি ফেয়ারফিল্ড অসবোর্ন তাঁর বক্তব্যের শুরুতে এ কথাগুলো বলেছিলেন – “I doubt if there has ever been a moment in the world’s history when an international conference on race character and betterment has been more important than the present.”[16] পরবর্তীতে বললেন – “The closing decades of nineteenth century and the opening decades of the twentieth century have witnessed what may be called a rampant individualism – not only in art and literature, but in all our social institutions – an individualism which threatens the very existence of the family…”[17]
শব্দগুলো সামান্য অনুধাবন করলেই বোঝা যাবে, আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক বিবর্তনের ফলে ঐতিহাসিকভাবে ইতিপূর্বে অলক্ষিত রেনেসাঁ-উত্তর ব্যক্তিমানুষের যে উদ্ভব তাকেই নস্যাৎ করা হচ্ছে। দোহাই দেওয়া হচ্ছে যে, এর ফলে পরিবারের ভিত্তি নষ্ট হচ্ছে। পরিবার কী করবে? শুদ্ধ রক্তের মানুষের জন্ম দেবে – যে শুধু পৃথিবীকে “জিনিবারে চায়”।
(We are not alone – Neues-Volk-1-March-1936-p.-37.-Wiener-Holocaust-Library-Collections.-1000×1024)
মেডিক্যাল জার্নাল ও ইউজেনিক্স
(“শুদ্ধ রক্ত” খোঁজা তথা ইউজেনিক্সের মেডিক্যাল পরীক্ষা চলছে – সূত্রঃ New England Journal of Medicine)
শিক্ষিত মানুষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আমেরিকার বিখ্যাত মেয়ো ক্লিনিকের নাম জানে। মিনেসোটায় ডঃ উইলিয়াম মেয়ো এর প্রতিষ্ঠা করেন এবং কাজের সাফল্যের জন্য অচিরেই বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। ১৯২৩ সালে Boston Medical and Surgical Journal-এ তাঁর চিন্তাভাবনা লেখার আকারে প্রকাশিত হয়। তাঁর অভিমত অনুযায়ী, দারিদ্র্যের কারণ – “constitutional inferiority and mental instability,” declaring both “to a large extent hereditary.”[18] সহজ কথায়, একজন মানুষের শরীরে রয়েছে বংশানুক্রমিকভাবে “বাজে জিন” এবং এর ফলশ্রুতিতে দৈহিক গঠন, মানসিক সাম্যের অভাব, কাজের অক্ষমতা ইত্যাদি সবকিছুই একে একে দেখা দেয়।
১৯২৩ সাল তো ১০০ বছর আগের কথা। এরও অনেকদিন আগে শুরু হয়েছে ইউজেনিক্সের গোড়া পত্তনের ইতিহাস। ফ্রান্সিস গ্যালটন ১৮৮৩ সালে “eugenics” শব্দটির ব্যবহার চালু করেন। ১৯০৬ সালে পূর্বোক্ত জার্নালে প্রথম ব্যবহার ঘটে – “in a brief discussion of new research related to heredity.”[19] এর আগের ইতিহাস হল, জুলাই এবং আগস্ট, ১৮৬৫-তে MacMillan’s Magazine-এ ফ্রান্সিস গালটনের দু-কিস্তির লেখা “Hereditary Character and Talent” প্রকাশিত হয়। (https://www.eugenicsarchive.ca/timeline) গ্যালটনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে এ লেখাকে ধরা হয়। তাঁর প্রতিপাদ্য ছিল প্রতিভা এবং চরিত্র বংশানুক্রমিক। দু-কিস্তির এ প্রবন্ধ, গবেষকদের মতে – “are also noted for suggesting that embryos of the next generation come from those of the previous one – a theory which was proven by August Weismann almost 20 years later.” ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয় গ্যালটনের সুবিখ্যাত পুস্তক Hereditary Genius: An Inquiry into Its Laws and Consequences।
(ঋণ – উইকিপিডিয়া)
যাহোক, আমরা জার্নাল-এর ক্রমানুসারী ইতিহাসে ফিরে আসি। ১৯০৯ সালের একটি লেখায় স্মরণ করিয়ে দেওয়া হল যে গালটন হচ্ছেন “ইউজেনিক্স বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা।[20] সেসময় জার্নাল-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত লেখাগুলোর ৩টি উপপাদ্য ছিল (সবই ইউজেনিকস সংক্রান্ত) যেগুলোকে অভিহিত করা হয়েছিল “the proper mission of medicine.” উপপাদ্যগুলো হল – (১) “মানসিকভাবে যারা ত্রুটিযুক্ত” তারা সামাজিক খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে, (২) বিদেশ থেকে আসা “ত্রুটিযুক্তদের” আগমন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও কমাতে হবে, এবং (৩) ইউজেনিক্সের প্রয়োজনে নির্বীজকরণ করতে হবে যাতে দেশে সক্ষম মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
১৯১০ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হল – “The transmission to their children of moral, mental and physical defectiveness by people unfit for parenthood is familiar to no one more than to the physician.”[21] আরও বলা হল – “It will be interesting, however to see whether preventing marriage between these persons will indeed prevent their having children.”
রাষ্ট্র-নির্ধারিত এবং জায়মান মেডিসিনের ধারণা দিয়ে পুষ্ট একটি সমাজ তৈরির প্রকল্প গৃহীত হল যেখানে প্রথমত, মানসিকভাবে দুর্বল, এবং দ্বিতীয়ত, জিনগত “শুদ্ধতা” না-থাকা ব্যক্তিদের কোন স্থান নেই। পরবর্তীতে ইতিহাসে ঘৃণিত হিটলারের নরমেধ যজ্ঞের সূচনা হয়েছিল আমেরিকার দেখানো পথে ফ্রান্সিস গ্যালটনদের হাত ধরে। এবং আজকের NEJM ছিল এ ধারণার নির্ভরশীল বাহক।
এসময় চার্লস ড্যাভেনপোর্টের নেতৃত্বে Eugenics Record Office (ERO) তৈরি হল। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ এ সময় দিয়ে শয়ে শয়ে প্রবন্ধ, মিটিংযের রিপোর্ট, পুস্তক আলোচনা এবং সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। “The Journal printed accounts of each International Eugenics Congress, from the 1912 meeting in London to the 1921 and 1932 meetings in New York.”[22]
(১৯২১ সালে নিউ ইয়র্কের আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টরি-তে অনুষ্ঠিত ২য় ইউজেনিকস কংগ্রেসের লোগো – উইকিপিডিয়া)
এ কংগ্রেসে অংশগ্রহণকারী একজনের হিসেবে জেনারেল কমিটির ২০% ছিল ডাক্তার। এর আগে জার্নাল-এ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল – “Insanity is widespread … The cost of caring for them was nearly $33,000,000 a year. The economic loss due to their being unable to work was estimated at more than $130,000,000 annually—the total cost of insanity being equal to the value of the combined annual exports of wheat, corn, tobacco and dairy and beef products, nearly $163,000,000.”[23]
জিনগতভাবে “অশুদ্ধ” মানুষদের জন্য “শুদ্ধ” রক্তের সিদ্ধিস্থান এত টাকা খরচ করবে কেন? সাধারণ মানুষও এতে সায় দেবে। এখন যেমন ভারতবর্ষের এই বিশেষ ক্রান্তিকালে ধর্মের সামাজিক নিধনে সংখ্যাগরিষ্ঠের সম্মতি নির্মাণ করা গেছে তেমনি অতীতের আমেরিকা বা জার্মানিতেও এরকম মানসিকতার নির্মাণ হয়েছে। সাধারণভাবে social psyche তরল, অগভীর এবং মৌহূর্তিক কাজে যুক্ত হবার বিপুল তাগিদে ভেসে যায়। একেই হাতিয়ার করে রাষ্ট্র এর কর্তৃত্ব কায়েম করে – কখনো গণতন্ত্রের পরতে, কখনো ফ্যাসিজমের চেহারায়। মূলগতভাবে দুটিই কার্যত এক।
১৯০৯ সালে নেচার-এর মতো জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল The Problem of the Feeble-minded. An Abstract of the Report of the Royal Commission on the Care and Control of the Feeble-minded পুস্তকের বুক রিভিউ। এতে বলা হল – “The book also contains some special articles, of which that upon segregation, by Mr. Galton, we can especially recommend to our readers.”[24]
১৯১৩ সালে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এর সম্পাদকেরা “issued an early and full-throated endorsement of eugenic surgery, concluding that “if the lay mind is ripe for such drastic measures we see no reason for the scientists to object.”[25] পরিণতি? ১.৫ কোটি “socially inadequate” মানুষের নির্বীজকরণ করা হল। ডাক্তারদের মধ্যে ইউজেনিক্সের জন্য বিপুল সমর্থন ছিল “ranging from immigration restriction to sterilization. The role of physicians in the eugenics movement more generally has been well established, and it is clear that from the earliest days of the 20th century they wielded an oversized influence on public attitudes and policies.”[26] এমনকি সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত ইউজেনিক্সের ধারণা এখনও আমেরিকার সমাজজীবনের একটি বিশেষ উপাদান।
(জার্মানিতে ইউজেনিক্সের প্রতিরূপ – যখন pseudoscience আইনে পরিণত হয় – Holocaust Encyclopedia)
নাৎসী মেডিসিন ও (বি/কু)খ্যাত অ্যানাটমিকাল অ্যাটলাস
বিংশ শতাব্দীতে পাবলিক হেলথের ব্যাপারে নাৎসী দৃষ্টিভঙ্গী বিকশিত হয়েছিল জার্মানির নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের পটভূমিতে। পাবলিক হেলথের ক্ষেত্রে যেসমস্ত বিষয়গুলোকে প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, যেমন ইউজেনিক্স, সংঘবদ্ধ ব্যায়াম এবং তামাক ও অ্যালকোহলের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা। এগুলো চালু হয়েছিল Weimer Republic-এর দিনগুলোতে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সেসময়ের একটি ফিল্ম “Born out of Necessity”-তে জার্মান যুবকেরা যাতে আধুনিক নাগরিক জীবনের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে যেসব “কুঅভ্যাস”, যেমন ধূমপান এবং মদ্যপান, পরিত্যাগ করে একসাথে ব্যায়াম এবং ইতিবাচক সামাজিক কাজের ক্ষেত্রে জোর দেবার কথা বলা হয়েছিল। এ বিষয়গুলোই ১৯৩৩ সালে যখন নাৎসীরা ক্ষমতা দখল করল সেসময়ের জনস্বাসাস্থ্যের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছিল। অতিরিক্ত হল ইউথ্যানাসিয়াকে রাষ্ট্রিক নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা – ইহুদি সহ সমস্ত ধরনের অবাঞ্ছিত মানুষকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার প্রোগ্রাম।
(ইউথ্যানাসিয়াকে জনপ্রিয় করার পোষ্টার)
একই সঙ্গে জোর দেওয়া হয়েছিল সুস্থ সবল নারী গড়ে তোলার দিকে, যে সুস্থ বিশুদ্ধ আর্যরক্তবাহী শিশু এবং ভবিষ্যৎ সক্ষম জার্মান নাগরিকের (পড়ুন যোদ্ধার) জন্ম দেবে। এনিয়ে ফিল্ম তৈরি হয়েছে, লিফলেট ও পোস্টার বিলি হয়েছে, স্কুলের শিক্ষাক্রম নতুন করে লেখা হয়েছে। কমিউনিস্ট, ইহুদি, যাযাবর, শারীরিকভাবে অক্ষম শিশু বা প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের মেরে ফেলা হবে – এই কার্যক্রমকে সামনে রেখে। এদেরকে হত্যা করে দেশের অর্থনীতির বোঝা কমিয়ে সঠিক স্বাস্থ্যনীতি রচিত হবে। এবং এসমস্ত ভয়ঙ্কর কার্যক্রম পাবলিক হেলথ প্রোগ্রাম বলেই পরিচিত ছিল। সেসময়ের কিছু প্রোপাগান্ডামূলক ছবি দেখা যাক।
(ছবির নীচে ক্যাপশন ছিল – “স্বাস্থ্যবতী নারী, স্বাস্থ্যবান দেশ”)
(নাৎসীদের তথা জার্মানির ওপরে অর্থনৈতিক বোঝা দেখানোর পোস্টার)
(প্রতিবন্ধী শিশুদের হত্যা)
এবার আমরা আলোচনা করবো এখনও অবধি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বা অন্যতম শ্রেষ্ঠ অ্যানাটমিকাল অ্যাটলাসের আলোচনায়। এডুয়ার্ড পার্নকফ ২ খণ্ডে এই অ্যাটলাস লিখেছিলেন – গ্যাস চেম্বারে মেরে ফেলা হতভাগ্যদের দেহ নিখুঁতভাবে কেটে।
অ্যানাটমির দিক থেকে এর গুরুত্ব বোঝা যাবে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিউরোসার্জন এবং peripheral nerve surgeon সুজান ম্যাককিননের লেখা থেকে (“Before and After I Knew: Disclosure, Respect, Gratitude, and Solemnity”)। সুজান ম্যাককিনন নার্ভের ক্ষেত্রে প্রথম সফল অ্যালোট্র্যান্সপ্লান্টেশন করেন। তাঁর এক রোগীর হাতে অসহ্য ব্যথা হচ্ছিল। সেসময় পার্নকফের আলোচিত অ্যাটলাসের ডায়াগ্রাম তাঁকে নিখুঁত সার্জারি করতে সাহায্য করে। রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
(বাঁদিকে অ্যাটলাস থেকে ব্যবহৃত হাতের ডায়াগ্রাম, যা সুজান ব্যবহার করেছিলেন। ডানদিকে brachial plexus-এর ডায়াগ্রাম)
পার্নকফের অ্যাটলাস সাধারণভাবে পরিচিত Atlas of Topographical and Applied Human Anatomy হিসেবে। অ্যাটলাসের প্রধান আর্টিস্ট ছিলেন ৪ জন – Erich Lepier, Ludwig Schrott, Karl Endtresser এবং Franz Batke। ১৯৩৩ সালে ভিয়েনার মেডিক্যাল স্কুলে পার্নকফ এই অ্যাটলাস তৈরির কাজে হাত দেন। একের পর এক মৃতদেহ কেটে, সেগুলোকে অ্যাটলাসের উপযুক্ত করে তুলতে দিনে ১৮ ঘন্টা অব্দি কাজ করতেন। এই মৃতদেহগুলো ছিল কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে হত্যা করা বন্দীদের দেহ।
(এই ছবিটি থেকে বোঝা যাবে হতভাগ্য বন্দীর মাথার চুল, গোঁফ অক্ষত রেখে ডিসেকশন করা হয়েছে। এই ডায়াগ্রামের শিল্পী এরিখ লাপিয়ের।)
যে ৪ জন শিল্পীর কথা বলা হয়েছে তারা ডায়াগ্রামের নীচে তাদের স্বাক্ষরের সাথে স্বস্তিকা বা SS চিহ্ন ব্যবহার করতেন।
অস্ট্রিয়াকে জার্মানি দখল করার পরে পার্নকফ ভিয়েনা মেডিক্যাল স্কুলের ডিন হন। পর্যবেক্ষদের মতে – “In his first official speech as dean of the faculty and students, entitled “National Socialism and Science, delivered on 6 April 1938, after paying homage to Hitler he fully endorsed the regime’s racist policies of “racial hygiene” and eugenics that would dictate the teaching of medicine in the Third Reich.”[27] উপরওয়ালার নির্দেশে “বিশুদ্ধিকরণ”-এর জন্য ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৭ জন স্টাফের মধ্যে ৩ জন নোবেলবিজয়ী সহ ১৫৩ জন ইহুদি সদস্যকে বহিষ্কার করেছিলেন।
আমার লেখার শেষ চিত্র ১৯৩৮ সালের ৬ এপ্রিল তাঁর ছাত্রদের সামনে যে লেকচার দিয়েছিলেন সেটি। দেখা যাচ্ছে সমস্ত ছাত্র হিটলারকে অভিবাদনের কায়দায় হাত তুলে পার্নকফকে অভিবাদন জানাচ্ছে।
আমরা জনস্বাস্থ্য নিয়ে ভিন্ন একটি পরিক্রমা শেষ করলাম – যেখানে লক্ষ্যণীয়ভাবে রয়েছে জনস্বাস্থ্যের স্তরে স্তরে নরমেধ যজ্ঞের তথা উচ্চবর্ণের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উল্লাস। জনস্বাস্থ্যের বর্ণালীর মাঝে মানুষের জন্য প্রকৃত স্বাস্থ্যচিন্তার সাথে এগুলোও আছে।
এজন্য ২০২৪ সালের একেবারে শেষভাগে এসে জনস্বাস্থ্যকে আরেকটু পরিশ্রুত করে করে বোঝা দরকার।
জুন ৮, ২০২২-এ নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতো সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে “The Long Shadow of Eugencis in America” শীর্ষক প্রতিবেদন।[28] প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, “In North Carolina, the first state to compensate survivors, the process began in late 2002, when The Winston-Salem Journal (https://www.winstonwatchman.com/will-winston-salem-journal-greensboro-news-record-layoffs/) ran “Against Their Will,” a five-part series on North Carolina’s eugenics program.” (নজরটান লেখকের)
প্রতিবেদক প্রশ্ন করছেন, “Eugenics plays out in current medical debates and practices. Where do we as a society stand on who is considered abled or disabled? What worth do we give to people and certain kinds of bodies? Knowledge of this history, especially how science may be used and abused, is crucial to inform how we can combat eugenicist thinking and its legacies today.”[29] (নজরটান লেখকের)
মেডিসিনের মান্য জার্নাল ল্যান্সেট-এ প্রকাশিত একটি বুক রিভিউ-এর শেষে পাঠকদের কাছে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, এই ২০২৩ সালেও ইউজেনিক্সের প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে আসে বিভিন্ন চেহারায় – কখনো বাধ্যতামূলক নির্বীজকরণে, কখনো “বেআইনি” অভিবাসনকে দাগিয়ে দিয়ে, কখনো উদ্বাস্তুদের জন্য সুকঠোর আইন এবং বর্ণবিদ্বেষমূলক আইনের প্রয়োগে, কখনো কখনো তথাকথিত “প্রকৃতিগতভাবে” জন্ম নেওয়া বুদ্ধিবৃত্তির আলোকে দক্ষতা ও শ্রেণিভিত্তিক বিভাজনকে সামনে রেখে।
কবি গোরার মুখে আমাদের অনেক আগে জানিয়েছিলেন –
“ক্ষুধায় তৃষ্ণায় গোরাকে অভিভূত করিয়াছিল, কিন্তু দুর্বৃত্ত অন্যায়কারী মাধব চাটুজ্জের অন্ন খাইয়া তবে জাত বাঁচাইতে হইবে, এ কথা যতই চিন্তা করিতে লাগিল ততই তাহার অসহ্য বোধ হইল। তাহার মুখ-চোখ লাল ও মাথা গরম হইয়া মনের মধ্যে বিষম একটা বিদ্রোহ উপস্থিত হইল। সে ভাবিল, ‘পবিত্রতাকে বাহিরের জিনিস করিয়া তুলিয়া ভারতবর্ষে আমরা এ কী ভয়ংকর অধর্ম করিতেছি! উৎপাত ডাকিয়া আনিয়া মুসলমানকে যে লোক পীড়ন করিতেছে তাহারই ঘরে আমার জাত থাকিবে আর উৎপাত স্বীকার করিয়া মুসলমানের ছেলেকে যে রক্ষা করিতেছে এবং সমাজের নিন্দাও বহন করিতে প্রস্তুত হইয়াছে তাহারই ঘরে আমার জাত নষ্ট হইবে! যাই হোক, এই আচারবিচারের ভালোমন্দের কথা পরে ভাবিব, কিন্তু এখন তো পারিলাম না।’
[1] এ বিষয়ে একটি ভালো আলোচনার জন্য দ্রষ্টব্য – Dolly Kikon, “Dirty food: racism and casteism in India,” Ethnic and Racial Studies 2022, 45 (2): 278-297.
[2] বাংলায় সংক্ষিপ্ত এবং সংহত আলোচনার জন্য দ্রষ্টব্য – জয়ন্ত দাস, বিবর্তনঃ আদি প্রেম, আদি যুদ্ধ (কলকাতাঃ গাঙচিল, ২০২২) এবং জয়ন্ত ভট্টাচার্য, “ইতিহাসের আয়নায় মেডিক্যাল জার্নাল – দাসব্যবসা ও ইউজেনিক্সের স্তরায়িত ইতিহাস”, ডক্টরস ডায়ালগ, এপ্রিল ১, ২০২৪ – https://thedoctorsdialogue.com/history-of-medical-journals-slave-trade-and-eugenics/
[3] Martin Robbins, “The Annals of Eugenics”, Guardian, 23 February 2011 – https://www.theguardian.com/science/the-lay-scientist/2011/feb/23/.
[4] Jonathan Freedland, “Eugenics and the master race of the left – archive, 1997”, Guardian, 1 May 2019 – https://www.theguardian.com/science/the-lay-scientist/2011/feb/23/2.
[5] Herbert Brewer, “Eugenics and Socialism: Their common ground and how It should be sought”, Eugenics Review, April 1932, 24 (1): 19-21.
[6] Ibid, 19. নজরটান লেখকের।
[7] Danae M. McGregor, “German and American Eugenics in pre-World War 1 Era”, Answers Research Journal, 2013 (6): ৭২।
[8] Michael E. Gordin, Erin E. Miller and Jonathan I. Kelly, “The Nazi Physicians as Leaders in Eugenics and ‘Euthanesia’: Lesson for Today”, American Journal of Public Health, 2018 (January), 108 (1): 53-57.
[9] Ibid, 53.
[10] Danae M. McGregor, “German and American Eugenics in pre-World War 1 Era”, Answers Research Journal, 2013 (6): 71-77.
[11] Michael E. Gordin, Erin E. Miller and Jonathan I. Kelly, “The Nazi Physicians as Leaders in Eugenics and ‘Euthanesia’: Lesson for Today”, American Journal of Public Health, 2018 (January), 108 (1): 54.
[12] “Practical Eu7genics”, New England Journal of Medicine, 1905, CLXVII (4): 136.
[13] Ibid, 137.
[14] “Eugenics Again,” New England Journal of Medicine, July 7 1910, CLXIII (1): 28.
[15] Francis Galton, Hereditary Genius: An Inquiry into Its Laws and Consequences (London: MacMillan & Co., Ltd., 1974).
[16] Henry Fairfield Osborn, “The Second International Congress of Eugenics: Address of Welcome,” Science, New Series, Oct. 7 1921, 54 (1): 311-313.
[17] Ibid, 313.
[18] Paul A. Lombardo, “Riding the Race of His Defective Blood” – Eugenics in the Journal, 1906-1948,” NEJM 2024, 390 (10): 869-873.
[19] Ibid, 870.
[20] “A Peppys of Modern Science,” Boston Med Surg J, June 10, 1909 (160): 756-759.
[21] “Eugenics Again,” Boston Med Surg J, July 7, 1910, 163 (1): 27-32.
[22] Paul A. Lombardo, “Riding the Race of His Defective Blood” – Eugenics in the Journal, 1906-1948”, New England Journal of Medicine, March 7, 2024, 390 (10): 869-873.
[23] Stanley E. Abbott, “Preventable Forms of Mental Disease and How to Prevent Them,” Boston Med Surg J 1916, 174 (16): 555-563.
[24] A. K. Illusion, “The Problem of the Feeble-minded. An Abstract of the Report of the Royal Commission on the Care and Control of the Feeble-minded”, Nature, August 5, 1909, 81 (2075): 158.
[25] “Riding the Race of His Defective Blood” – Eugenics in the Journal, 1906-1948,” 871.
[26] Ibid, 872.
[27] Pieter Carstens, “Revisiting the Infamous Pernkopf Anatomical Atlas”, Fundamina, 2012, 18 (2): 28.
[28] Linda Villarosa, “The Long Shadow of Eugenics in America”, New York Times Magazine, June 8, 2022 – https://www.nytimes.com/2022/06/08/magazine/eugenics-movement-america.html.
[29] “Exhibition: Legacies of Eugenics”, Lancet, March 4, 2023 (401): 725.
অনেক অজানা জানা গেলো
দারুণ লেখা আপনার 🙏
অনেক অজানা তথ্য জানলাম,খুব ভালো লাগলো।আপনার লেখা রায়গঞ্জ তথা উত্তর দিনাজপুরের এক ও অনন্য।
গবেষণাধর্মী এই লেখাটি সময়োপযোগী, এবং প্রয়োজনীয় পাঠ্য। এই প্রসঙ্গে আরো দু একটা কথা লেখা যেতে পারে, যদিও অনেকেই জানেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমসাময়িক কালে পাশ্চাত্য দেশগুলোতে বহু সদ্যোজাত শিশুর নাম রাখা হত ইউজিন (যেমন ডাকতারী ছাত্র ছাত্রীরা ইউজিন ব্রুনওয়াল্ডের নাম জানবেন, ইনি হ্যারিসন টেক্সটবুকের সম্পাদক ছিলেন)। এ থেকে একটা ব্যাপার মনে হয় যে এই জাতীয় ধ্যানধারণার একটা সামাজিক গ্রহণীয়তা অবশ্যই ছিল। নাৎ্সীদের পতনের পর আরো অনেক কিছুর সঙ্গে এই নামটির জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়।
তো সে যাই হোক, এই ধারণাগুলো ঘুরে ফিরে ফেরত আসে। পঞ্চাশ ষাটের দশকে আই কিউ টেস্টের খুব রমরমা ঘটে, এবং বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষায়, বিশেষ করে মিলিটারী আর সরকারী আমলা হবার প্রবেশিকা পরীক্ষাগুলোতে বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে আমেরিকায় (পরে ভারতেও) এই ধরণের পরীক্ষাগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়। এবং এই জাতীয় পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মানুষ এবং মানুষের জাত পরিচয় নির্ণিত হত একসময়ে। আমেরিকায় যেমন, কালো এবং বাদামী রঙের মানুষের বুদ্ধি এবং যোগ্যতা নিতে প্রশ্ন উঠত। এবং এই জাতীয় পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্ন থাকত যার উত্তর দিতে গেলে পরীক্ষার্থীকে রীতিমতন অবস্থাপন্ন সমাজে বড় হলে যে ধরণের বিষয়ে ব্যুৎপত্তি থাকার কথা, থাকতে হত। যে কারণে গরীব ঘরের বহু অন্য বিষয়ে মেধাবী ছেলেমেয়েদের পক্ষে এই জাতীয় পরীক্ষা পাস করে সরকারী উঁচু চাকরী বা মিলিটারীতে যোগ দেওয়া সহজ ছিল না। তো বিনেট-টারমানের আবিষ্কৃত এই পরীক্ষার “বৈজ্ঞানিক” গাম্ভীর্য কিছু কম ছিল না। আসলে এই পরীক্ষার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বুদ্ধি মাপার কোন সম্পর্ক ছিল না, আদৌ মাপবার মত যদি কিছু থেকে থাকে তো সামাজিক অবস্থার পরিমাপ। এই বিষয়ে স্টিফেন গৌডের মিসমেজার অফ ম্যান বইটি পঠিতব্য। তবে এই যে বেল কার্ভ নির্ণিত করে মানুষকে দাগিয়ে দেওয়া, একে সমর্থন করার মতন বৈজ্ঞানিকদের অভাব কোন কালে হয়নি, এদের মধ্যে অন্যতম মারি আর হর্নস্টাইনের বেল কার্ভ নামে ১৯৯৭ সালে প্রণীত বইটি।
এত কথা লিখলাম এই কারণে যে, জয়ন্তদা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আনুমানিক সময়ের কথা লিখেছেন, তখনকার মত ইউজেনিকসের সূর্য অস্ত যেতে পারে, তবে সে আবার অন্য রূপে ফিরে আসছে, এবার সে সোস্যাল জেনোমিকস নাম নিয়েছে। আবার সেই “ভালমানুষ” সেজে বদমাইশি, “এবার তবে দেখতে হবে কোত্থেকে আর কি করে”, কোন জিনের প্রকোপে মানুষের চরিত্র বিধৃত হয়। এও সেই একই ব্যাপার, বিহেভিওরাল জেনেটিকস থেকে এর উৎস, ইদানীং gwas আর পলিজেনিক রিস্ক স্কোর এবং গোদের ওপর বিষফোঁড়াসম আরটিফিশিয়াল ইনটেলিজেনস জুটেছে। সে আলো ক্রমে আসিতেছে, সাধু সাবধান!