“যারা ওস্কাচ্ছে, তারাই কিন্তু মামলাটা করেছে ওদের বিরুদ্ধে।
চাকরি কিন্তু আমাদের জন্য যায়নি, চাকরিগুলো যাদের যাবার পথে দাঁড়িয়েছে, সেটার জন্য দায়ী যারা, আমি তাদের বলবো এটা না করলেও পারতেন”। মাননীয়ার উক্তি চাকুরীহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রতি। অভিযোগের তীর খুব পরিষ্কার ভাবে বিকাশ ভট্টাচার্য ও তার রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যেই।
খুবই ভালো কথা, তবে আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে,
১) মামলাটা কি বিকাশবাবু PIL বা জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন
কিংবা কোনো বাম সংগঠনের হয়ে লড়েছিলেন?
২) মামলা করেছিলেন যারা তাদের কাছে কি বিকাশবাবু গিয়েছিলেন, না তারা বিকাশবাবুর কাছে গিয়েছিলেন?
বাস্তবিক ক্ষেত্রে, মামলা একজনের নয়, বিভিন্ন জন বিভিন্ন অভিযোগে করেছিলেন, তার মধ্যে একজন রেজাল্ট বার হওয়ার আগেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। হাইকোর্ট সব কটা মামলাকে একসাথে নিয়ে আসে।
বিকাশবাবু একজন পেশাদার আইনজীবী, তিনি কোন মামলা নেবেন তার জন্য কি কারুর অনুমতি দরকার?
তাহলে কি তিনি মামলাটা না নিলেই পারতেন?
৩) আচ্ছা, যদি এই মামলাটা বিকাশবাবু না করে অন্য কোনো আইনজীবী করতেন? কোলকাতা হাইকোর্টে বিকাশবাবু অন্যতম সফল আইনজীবী যিনি শাসকদের ভ্রুকুটি অগ্রাহ্য করে পেশাদারিত্বকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন। আবার বলছি, অন্যতম কিন্তু একমাত্র নন। কোলকাতা হাইকোর্টে এ রকম অনেকেই আছেন, যারা মামলা লড়লেও একই ফল হতো। কারণ, এখানে কেউ হারায়নি, সরকার ও SSC নিজেরাই নিজেদের হারিয়েছে জঘন্য ভাবে, আর ২৫৭৫২ জনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিয়েছে জেনেশুনেই।
৪) অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের রিপোর্টই প্রথম দুর্নীতির ভয়াবহতাকে সামনে আনেন, যার ভিত্তিতে CBI তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়। জাস্টিস বাগও কি এই রিপোর্টটা না দিলেই পারতেন?
অবশ্য তিনিই বা কী করবেন, যেভাবে লাগামছাড়া আর বেপরোয়া ভাবে কাজগুলো করা হয়েছে! এতটা বেহিসেবী চোরেরা না হলেও পারতো !!
৫) যারা মামলা করেছিলেন তারা কি প্যানেল বাতিলের জন্য গিয়েছিলেন, না সঠিকভাবে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হতে গিয়েছিলেন?
৬) তাহলে সরকার বা SSC কোর্টে নিজেদের পক্ষ অবলম্বন করতে গিয়ে কী কাণ্ড করলো যাতে সুপ্রীম কোর্ট বলতে বাধ্য হলো,”In our opinion, this is the case where the entire selection process is vitiated and tainted beyond resolution. Manipulations and frauds on a large scale, coupled with attempts to cover-up, have dented the selection process beyond repair.”
৭) হাইকোর্ট তো প্রথমে আংশিক প্যানেল বাতিল করেছিল, সরকার ও SSC তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এ রকম জায়গায় নিয়ে গেল কেন যাতে পুরো প্যানেল বাতিল হয়?
মাননীয়া, আপনার অনুমতি ছাড়া তো আপনার সরকার ও সংগঠন এক পাও এগোয় না। এতটা চুরি আপনি নাও করতে দিতে পারতেন! ঠিক কতো শতাংশ পদ চুরি হয়েছে? SSC যা হিসেব দিয়েছে তা প্রায় ২৫ শতাংশের কাছাকাছি, আর CBI এর তথ্য যোগ করলে এক-তৃতীয়াংশ পৌঁছে যাচ্ছে, এটাও শেষ কিনা আমরা কেন SSC ও জানে না। এটা যদি দশ পনেরো শতাংশে সীমাবদ্ধ হতো, হয়তো এতো নজরে নাও পড়তে পারতো। ম্যাডাম, এটা ঠিকই যে, এতটা রেকর্ড পরিমাণ চুরি বোধহয় নাও করতে দিতে পারতেন, তাহলে যারা চাকরি কিনেছে তাদের স্বার্থও সুরক্ষিত থাকতো। আর চুরি লোকচক্ষুর সামনে আনার জন্য কাউকে দোষারোপ করে বিলাপ করতেও হতো না !!!









