অপারেশন সিঁদুর
পাহেলগাঁও ঘটনার একমাস পূর্তি উপলক্ষে রাজস্থানের একটি সভায় প্রধানমন্ত্রী যখন পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করছেন তখন সংবাদ আসছে দক্ষিণ পূর্ব কাশ্মীরের কিস্তয়ারে জঙ্গিদের গুলিতে আবারও একজন সামরিক বাহিনীর জওয়ান মারা গেলেন। পাহেলগাঁও এর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের একমাস হয়ে গেল। অভিযোগ পাকিস্তান থেকে নাকি আততায়ীরা এসেছিল। তারা কিভাবে পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ১০০ – ১৫০ কিমি ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে, দিনের পর দিন রেকি করে, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নির্বিঘ্নে এরকম হত্যাকাণ্ড করে, হওয়ায় মিলিয়ে গেল আমাদের এখনও জানা নেই। কিন্তু তার জেরে ভারত, পাকিস্তানের ভূমিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সংঘটিত করল, প্রত্যাঘাতে পাকিস্তান শুরু করল ‘অপারেশন বুনিয়ান আল-মাসুস’। চারদিনের এই যুদ্ধে দুপক্ষই নিজেদের সীমান্তের মধ্যে থেকে অপরপক্ষকে মিসাইল, ড্রোন ও দূরপাল্লার কামানের গোলা বর্ষণ করে গেল। তারপর হঠাৎ করে দুপক্ষই সংঘর্ষ বিরতিতে চলে গেল।
এরপর দুই দেশের সরকারই দেশি বিদেশি নানারকম সাক্ষী, সাক্ষ্য, উপগ্রহ চিত্র ইত্যাদি দেখিয়ে ক্রমাগত নিজেদের সাফল্য ঘোষণা করে চলল। সঠিক কি ঘটেছে আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তবে কড়া নজরদারিতে থাকা ভারতীয় সংবাদপত্রে যেটুকু উঠে আসছে তাতে বোঝা যাচ্ছে কাশ্মীর, জম্বু এবং পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী গ্রাম ও শহরগুলির খেত-খামার, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাকিস্তানি গোলায় ও সম্ভবত ড্রোনে। বেশ কিছু সাধারণ মানুষ মারাও গেছেন। এরসঙ্গে কাশ্মীর জুড়ে আবার শোনা যাচ্ছে সামরিক বুটের পদধ্বনি। সাধারণ মানুষের কষ্ট নিরসনে কতটা কি হচ্ছে আমাদের জানা নেই তবে দুই দেশের সাংসদরা অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়েছেন। সেখানে পাঠাবেন না বলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তার সাংসদ ভ্রাতুষ্পুত্রকে পাঠিয়েছেন।
পাকিস্তানে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দীর্ণ শাহাবাজ শরিফ সরকার দেশের সব সমস্যা আপাতত চাপা দিতে পেরেছেন সিন্ধুর জল আর সিঁদুরের আক্রমণ দেখিয়ে। মাঝে কিছুদিন অপরিপক্ব গণতান্ত্রিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আবার পাকিস্তানের চালকের আসনে নিরঙ্কুশ মার্কিন, মিলিটারি ও মোল্লারা। পাকিস্তানের ক্ষমতার মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছেন জিন্না ও জেনারেল জিয়ার অন্ধ ভক্ত ফিল্ডমার্শাল আসিম মুনির।
ভারতের ক্ষেত্রেও ৫৬” ছাতির অধিকারী টানা তৃতীয় বারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত নির্বাচনে আশানুরূপ সাফল্য না পাওয়ায় কিছুটা ম্রিয়মাণ ছিলেন। অপারেশন সিঁদুরের শৌর্য বীর্যের দ্যুতি তাকে আবার স্বমহিমায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। পরিস্হিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে সারা দেশ জুড়ে এখন অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য ছাড়া আর কোন কথা নেই। তালে তাল মেলাতে না পারলে দেশদ্রোহী দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যে নিউ নর্মালের ফরমান জারি করেছেন তাতে পাকিস্তানের কোন রেহাই নেই। ভারতীয়রা জয়ের আনন্দে মশগুল। এর উপর পাকিস্তান ভেঙ্গে বালুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনওয়ালা নাকি স্বাধীন হয়েই গেছে এবং আজাদ কাশ্মীর ভারতের মধ্যে প্রায় এসেই পড়েছে। আবার পাকিস্তানেও সামরিক জয় উদযাপন চলেছে। আগে এরকমটি কখনও দেখিনি। অতীতের পাঁচ বারের যুদ্ধে পাকিস্তান আগে আক্রমণ করেছে। আমাদের সেনা বাহিনী তাদের প্রতিরোধ করে তাদের দেশের মধ্যে ঢুকে চূড়ান্তভাবে তাদের পর্যুদস্ত করেছে। শোচনীয়ভাবে হেরে তারা আত্মসমর্পণ করেছে। ভারতীয় সেনা বাহিনী ফিরে এসেছে। এবার যুদ্ধ থামানো নিয়ে ট্রাম্পও কৃতিত্ব নিয়েছেন। আগের যুদ্ধগুলিতে পাকিস্তান আধুনিক মার্কিন সমরাস্ত্রে এবং ভারত সস্তা কিন্তু পরীক্ষিত রুশ সমরাস্ত্রে যুদ্ধ করেছে। এবার ভারত মূলত মার্কিন, ফরাসি ও ইসরায়েলি অস্ত্রসম্ভার নিয়ে এবং পাকিস্তান মুলত চিনা ও তুর্কি অস্ত্রসম্ভার নিয়ে যুদ্ধ করেছে।
দেশাত্মবোধের জোয়ারের মধ্যেও কিছু প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছেঃ
১) জঙ্গিদের ঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য অতর্কিতে আক্রমণ না করে ১৫ দিন ধরে প্রচার মাধ্যমে যুদ্ধ প্রস্তুতি দেখিয়ে পাকিস্তান সেনা বাহিনীকে যুদ্ধ প্রস্তুতির এবং জঙ্গি নেতাদের ক্যাম্প খালি করার সুযোগ দেওয়া হল কেন?
২) যেখানে ইসলামি জঙ্গি – পাক সেনা বাহিনী – পাক সরকার সংশ্লিষ্ট, সেখানে তাদের আক্রমণের আগে জানানো হল কেন?
৩) পাহেলগাঁও ব্যর্থতার দায় কেন্দ্র সরকার নিলেন না কেন?
৪) সৌদি আরব গেলেন, বিহারে নির্বাচনী প্রচারে গেলেন, অথচ পাহেলগাঁওতে এত বড় ঘটনা ঘটল সেখানে প্রধানমন্ত্রী গেলেন না কেন (গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মণিপুরেও যাননি)?
৫) যেটুকু সামরিক জয় সেটুকু সেনা বাহিনীর প্রাপ্য, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী কৃতিত্ব নিচ্ছেন কেন?
অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে তাতে আর এস এসের শতবর্ষে সর সঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতই হয়ত প্রস্তাব দেবেন দেশের এই জটিল সময়ে ব্যতিক্রম হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৭৫ বছর বয়সের পরও দেশকে নেতৃত্ব দিন।
অপারেশন কাগার
অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রধান বিপদ হিসাবে নকশালবাদকে চিহ্নিত করে জাতীয় কংগ্রেসের ইউপিএ সরকার মাওবাদীদের বিরূদ্ধে অভিযানকে ২০০৯ সালে শক্তিশালী করে দেশের মধ্য ও পূর্ব ভাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’ শুরু করেছিল সেটি সাফল্য ও ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের মধ্যে বিশাল দণ্ডকারণ্য ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে এক ধারাবাহিক ভয়ঙ্কর সামরিক সংঘাত ও হিংসার জন্ম দেয় যাতে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানকার ভূমিপুত্র গোন্ড, মারিয়া, মুরিয়া, হালবা, ধুরিয়া, ভাতরা, কিরকু সহ জনজাতির দরিদ্র মানুষ।
কেন্দ্রে ও ছত্তিসগড় রাজ্যে কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি এই অভিযানকে আরও সংগঠিত ও তীক্ষ্ণ করে মাওবাদীদের উপর লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে পসচাদপসারন করতে বাধ্য করে এবং মাওবাদীদের সক্রিয়তার এলাকাকে সংকুচিত করে নিয়ে আসে ইন্দ্রাবতী নদী অববাহিকার অবুঝমারের দুর্ভেদ্য পাহাড় জঙ্গলে। এরপর ২০২৬ এর মার্চের মধ্যে মাওবাদীদের নির্মূল করে আদিবাসীদের উৎখাত করে এই খনি সমৃদ্ধ অঞ্চলকে বৃহৎ পুঁজির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য শুরু হয় ‘অপারেশন কাগার’। তারপর এর অঙ্গ হিসাবে পরিকল্পনা করে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এবং বিপুল সামরিক সমাবেশ ঘটিয়ে তিন সপ্তাহের যুদ্ধ ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’ চালিয়ে সেখানকার স্ট্র্যাটেজিক কারেগুটটা পাহাড় দখল করে নেয় মাওবাদীদের থেকে। তারপর মাড় অঞ্চলে তাদের সামরিক কেন্দ্রে আঘাত হেনে হত্যা করে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের কমান্ডার ইন চিফ গঙ্গনা এবং অন্যান্য পিএলজিএ এর আধিকারিকদের। মনিপুর থেকে কাশ্মীর সর্বত্র ব্যর্থ মোদি সহযোগী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ উচ্ছসিত হয়ে ওঠেন। সফল ‘অপারেশন সিঁদুরের’ পর সফল অপারেশন ‘ব্ল্যাক ফরেস্ট’ নরেন্দ্র মোদির মুকুটে আরেকটি পালক সংযোজিত হয়।
সত্তর দশকের প্রথমে নকশাল আন্দোলন ধাক্কা খাওয়ার পর বিভিন্ন পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় তেলেঙ্গানা সংগ্রামে যুক্ত প্রাক্তন শিক্ষক অন্ধ্রের গুরুত্বপূর্ণ নেতা কোন্ডারপল্লী সীতারামাইয়া, আপ্পাল্লাসুরি, সত্যমূর্তি প্রমুখের সঙ্গে সিওসি সিপিআইএমএল গঠনের পর ১৯৮০ তে গঠন করেন সিপিআইএমএল পিপলস ওয়ার। সশস্ত্র জনযুদ্ধ প্রাধান্য পেলেও বিভিন্ন গণ সংগঠন সক্রিয় ছিল এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ছাত্র, জনজাতি, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার কর্মী প্রভৃতিদের মধ্যে ভালো জনভিত্তি ছিল।
১৯৯১ তে তাকে অপসারিত করে মুপাল্লা লক্ষণ রাও বা গণপতি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর পিপলস ওয়ার গ্রুপ এর ক্রমশঃ সম্প্রসারণ এবং সামরিকভাবে প্রবল শক্তিশালী হয়ে ওঠা। একসময় পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, বিহার, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র রাজ্যগুলিতে তাদের সশস্ত্র দলম গুলোর দাপিয়ে বেড়ানো ছাড়াও অসম, হরিয়ানা, কর্ণাটক, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, মুম্বাই প্রভৃতি রাজ্যে ও অঞ্চলে বিস্তার। একদা ‘আর এ ডব্লিউ’ ও ‘মোসাদে’র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ তামিল গেরিলা বাহিনী ‘এলটিটিই’ এর কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পি ডব্লিউ জি দলমগুলি অজেয় হয়ে ওঠে পাহাড় জঙ্গলে গেরিলা যুদ্ধে এবং আই ই ডি বিস্ফোরণে। ছত্তিশগড় এ ৭৬ জন সিআরপি হত্যা, সালয়া জুরুম প্রধান মহেন্দ্র কর্মা সহ ছত্তিশগড় এর পুরো কংগ্রেস নেতৃত্বকে একটি অ্যামবুশে হত্যা, লাতেহার বিস্ফোরণে মৃত সিআরপিএফের দেহে আই ই ডি পুঁতে আরও বড় বিস্ফোরণ ঘটানো ইত্যাদি সাড়া জাগানো আর্মড অ্যাকশান তার নেতৃত্বে এবং গঙ্গনার পরিচালনায়। দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর কয়েক মুহূর্তের জন্য প্রাণে বাঁচা।
মাঝে অন্ধ্রের জনপ্রিয় কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির কুশলী চালে অন্ধ্রে সংগঠন, বহু নেতা ও ক্যাডার এবং নাল্লামালা জঙ্গলের প্রধান ঘাঁটিটি হারালেও তেলেঙ্গানা- ছত্তিশগড় সীমান্তে আবুঝমার কে কেন্দ্র করে ঘাঁটি গেড়ে সমগ্র দণ্ডকারণ্য ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলে মাওবাদীদের ছড়িয়ে পড়া। প্রথমে এম সি সি, তারপর সিপিআই এমএল পার্টি ইউনিটির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিপিআই (মাওইস্ট) গঠন করা এবং সম চরিত্রের নেপাল, ফিলিপিন্স ও পেরুর মাওবাদী পার্টিগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা। এগুলি ১৯৯১ থেকে ২০১৭ অবধি ২৭ বছর প্রথমে পিডব্লিউজি ও পরে ২০০৪ থেকে সিপিআই (মাওইস্ট) দলের সাধারণ সম্পাদক গণপতির অন্যতম কৃতিত্ব। এছাড়াও বেশকিছু বুদ্ধিজীবীদের তিনি যুক্ত করেন। তার মাথার দাম তিন কোটি টাকা হলেও ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনী আজও তার হদিশ পায়নি।
২০১৭ তে প্রাক্তন শিক্ষক গণপতির থেকে সিপিআই (মাওইস্ট) দলের সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব নেন তারই সহযোগী প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার দলের সামরিক বাহিনী এবং সামরিক উৎপাদন ও গবেষণা শাখার প্রধান, পলিটব্যুরো সদস্য নিম্বলা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু ওরফে গঙ্গনা ওরফে দারাপু নরসীমা রেড্ডি ওরফে কৃষ্ণ ওরফে প্রকাশ। বিভিন্ন অ্যাকশানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সবমিলিয়ে তার মাথার দাম হয়ে ওঠে ১০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে অন্ধ্রের গ্রে হাউন্ড, মহারাষ্ট্রের সি ৬০, কোবরা, ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপস গুলির লাগাতর অপারেশনে মৃত্যু হয়েছে প্যাটেল সুধাকর রেড্ডি, রামচন্দ্র রেড্ডি (চলপতি) প্রমুখ গুরুত্বপুর্ণ নেতা ও ক্যাডার দের। চেরুকুরি রাজকুমার (আজাদ), মল্লাজুলা কোটেশ্বর রাও(কিষান) প্রভৃতি নেতাদের আলোচনার জন্য ডেকে এনে হত্যা করা হয়। ম্যালেরিয়া, কোভিড প্রভৃতি রোগে মৃত্যু হয় অনুরাধা গান্দি প্রমুখের। কোবাড গান্দি প্রমুখ ধরা পড়ে কারাবরণ করেন। অনেকে আত্মসমর্পণ করেন। সবমিলিয়ে মাওবাদীদের রক্তক্ষরণ চলছিলই। আগেই জনযুদ্ধের নামে শক্তিশালী গণআন্দোলনকে জলাঞ্জলি দিয়ে এতবড় এক শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং তার বিশাল ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্গম কিছু পাহাড় জঙ্গলে গেরিলা যুদ্ধকে প্রধান কর্মসূচি করায় প্রবল উদ্যোগ সত্ত্বেও মাওবাদীরা কানাগলির মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন। এর উপর গণপতির সময়কার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক উদ্যোগের বিপরীতে গঙ্গনার সময়ে সামরিক কার্যকলাপে কেন্দ্রীভূত হওয়া তাদের আরও বিচ্ছিন্ন এবং রাষ্ট্রের সুবিধা করে দেয়।
এছাড়াও অবিরত সন্ত্রাস, হিংসা, খুন ও রক্তপাত; প্রভাবসম্পন্ন এলাকায় কোন বিরুদ্ধ স্বর রাখতে না দেওয়া; ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের থেকে তোলাবাজি; কোন কোন ক্ষেত্রে আদিবাসীদের উপর জুলুম; তাদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার; উন্নয়নমূলক কাজ করতে না দেওয়া; কিছু কিছু নেতার নৈতিক পদস্খলন; অন্ধ্রে কংগ্রেস, ঝাড়খণ্ডে ঝাড়খন্ডি দল এবং পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে সুবিধাবাদী আতাত প্রভৃতিও তাদের বিরুদ্ধে গেছে। ফলে তাদের নেতা ও কর্মীদের একের পর এক হত্যা এবং অপারেশন কাগার ও ব্ল্যাক ফরেস্ট এর রাষ্ট্রীয় নৃশংসতা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিবাদ নেই।
গঙ্গনার মৃত্যু এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলির অবুঝমার দখল মাওবাদীদের উপর বিরাট ধাক্কা। আগামীদিনে তারা নিজেদের কিভাবে পুনর্গঠিত করে আন্দোলন পরিচালিত করবেন সেদিকে নিপীড়িত ও সচেতন মানুষের দৃষ্টি থাকবে।
২২.০৫.২০২৫











