তখন ভোর হচ্ছে, দু হাজার বাইশের পনেরোই আগস্টের ভোর।
কিছুক্ষণ বাদেই তেরঙ্গা পতাকার ঢল নামবে রাস্তাঘাটে।
স্টেজে স্টেজে নির্ঘুম শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে জোর।
তবে আপাতত, কয়েকটি শ্রান্ত শ্রমিক ছাড়া কেউ নেই তল্লাটে।
প্রায়ান্ধকার পথ ধরে হেঁটে আসছিলেন তিনজন আবছা মানুষ
দুজন ধুতি আর শার্ট, আর একজন সাহেবী টুপিসহ স্যুট,
শুনশান পথ ধরে ইতিউতি চাইছেন তিনজন দৃপ্ত পুরুষ,
বড় বড় বাড়ি আর চওড়া রাস্তা দেখে কিছু যেন অপ্রস্তুত।
চায়ের দোকানে সবে প্রথম কেটলিজল টগবগে ধোঁয়া উগরায়,
এ দৃশ্য তাঁদের চেনা; অতীতের বহু প্ল্যান এমনই দোকানে হতো বটে।
তিনজন বসে যান ফাঁকা বেঞ্চিতে। অবাক দোকানী তার নজর ঘোরায়,
মান্ধাতা আমলের এমন পোশাকে লোক তার এখানে কদাচিতই জোটে।
টাকপড়া ধুতি শার্ট, দোকানীকে দিতে বলেন চা। তারপর প্রশ্ন করেন ধীরে ধীরে,’আজ কি এখানে কোনো উৎসব হবে নাকি, চারদিকে জমকের সাজ?’
দোকানী অবাক হয়, লোকগুলো মঙ্গল গ্রহ থেকে উড়ে এলো কি রে,
ঈষৎ বিরক্ত মুখে চা ছাঁকতে ছাঁকতে বলে, যাত্তেরি, স্বাধীনতা দিবস যে আজ!
‘স্বাধীনতা! কাঙ্খিত স্বাধীনতা!’, তিনটে আকুল স্বর সোচ্চারে বলে ওঠে,
‘শোনাও শোনাও বন্ধু, কবে হলো? কতদিন ধরে দেশে ইংরেজ নেই আর, শুনি, বলো, বলো!
দোকানী প্রমাদ গোনে। উন্মাদ নাকি এরা? নাকি সব ভুলে গেছে খোয়ারির চোটে?
তবুও ধৈর্য্য রেখে, কিঞ্চিৎ হেসে বলে, নয় নয় করে আজ পঁচাত্তর হলো।
‘তার মানে কলকাতা স্বাধীন? স্বাধীন তবে নদীয়া, কুষ্টিয়া, বালাসোর….’
বক্তা অন্য ধুতি শার্ট, কোঁকড়ানো চুল, পেশীবহুল চেহারা, বিহ্বল দৃশ্যত।
‘সে তো বটেই,’ দোকানী বলে। পুরো ভারতই স্বাধীন, কিন্তু কুষ্টিয়াকে আনলেন কেন এর ভেতর?
‘কুষ্টিয়া নয়?’ টাকমাথা বললেন, ‘চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, ঢাকা আজও তবে ব্রিটিশের পদানত?’
দোকানী বুঝতে পারে, অতীতেই আটকিয়ে থেকে গিয়েছেন কোনো ভাবে তিন খাপছাড়া।
‘ওরাও স্বাধীন, তবে ভারতবর্ষ নয়। ও জায়গাগুলো বাংলাদেশে অধুনা।’
কেমন অবাক হয়ে, নির্বাক চোখে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে থাকেন তাঁরা।
এতক্ষণ চুপ থাকা স্যুট টুপি বলেন, ‘লাহোর বা অমৃতসর নিয়ে আছে কিছু শোনা?’
বাকিদের না চিনলেও, দোকানি ফেলেছে চিনে স্যুটটুপিকে। বহুবার বহু ছবি দেখে।
নিজেকে চিমটি কাটে, এও কি সম্ভব, স্বয়ং ভগৎ সিং বলছেন এসে কথা চায়ের দোকানে?
বাঘাযতীন …সূর্য সেন…. ইতিহাস বই থেকে বাকি দুজনকেও চেনে একে একে,
অস্ফুট স্বরে বলে, ‘অমৃতসর ভারতে হলেও, লাহোর অন্য দেশ, ওটা পাকিস্তানে।’
চোখ চাওয়াচাওয়ি করেন তিন বিপ্লবী। যে স্বাধীনতার জন্য তাঁরা জীবন দিলেন,
সেটা কোন দেশের? কোথায় তাঁদের সেই সোনালী স্বপ্ন দেখা অখণ্ড ভারতবর্ষ?
‘এই তিনটুকরো স্বাধীনতা আমরা চাইনি!’ হাহাকার করে কাঁদেন বাঘাযতীন, ভগৎ সিং , সূর্য সেন,
দিগন্তে তখন প্রথম সূর্যকিরণ, অভাগিনী ভূমির মাথায় দিলো কোমল সান্ত্বনাস্পর্শ…
Two Anatomies and the Two Systems of Medical Knowledge: Dissection with or without Knife and Anatomist*
Introduction “The definition of life is to be sought for in abstraction; it will be found, I believe, in this general perception: life is the