২৯ এ এপ্রিল ২০২৪ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন অভিজয় কার্লেকার। ডক্টরস’ ডায়লগের লোগো, স্বাস্থ্যের বৃত্তের অতীত সংখ্যাগুলোর প্রচ্ছদে তিনি থেকে গেলেন। থেকে গেলেন তাঁর তৈরি তথ্যচিত্রগুলোর মধ্যে।
প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক অভিজয় বাংলার এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সদস্য, কল্যাণী কার্লেকারের কনিষ্ঠপুত্র। হিন্দুস্থান থমসন সংস্থায় কপিরাইটার হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের শুরু। ১৯৭৭ সালে শেপ নামে একটি সংস্থার সহ প্রতিষ্ঠাতা। বিভিন্ন ভারতীয় ও বহুজাতিক সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে মুদ্রণে, চলচ্চিত্রে এবং পরে ওয়েবে বিজ্ঞাপন তৈরীর কাজ করে এই সংস্থা।
প্রথম থেকেই শেপের পলিসি ছিল মুনাফার এক অংশ তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজে লাগানো। শেপের ছয়টি তথ্যচিত্রের মধ্যে চারটি অভিজয়বাবুর নির্দেশনায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘Future of Our Cities’ এবং ‘ধরমতল্লা কা মেলা’ দূরদর্শনে প্রচারিত হয়। ‘ধরমতল্লা কা মেলা’ মার্গারেট মিড ফেস্টিভাল ও বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জন্য নির্বাচিত হয়।
আমাদের সঙ্গে অভিজয়দার পরিচয় ২০১২ র সেপ্টেম্বর মাসে স্বাস্থ্যের বৃত্তে পত্রিকার প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে ডা আশীষ কুমার কুন্ডুর ভাষণ এর সময়। তখন ওঁরা ‘লিটল ম্যাগাজিনের কথা’ নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করছিলেন।
সেই তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজেই চেঙ্গাইলের শ্রমিক কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা, আমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা।
স্বাস্থ্যের বৃত্তে পত্রিকার প্রচ্ছদ আগে তৈরি করতাম আমরাই। অভিজয়দা প্রস্তাব দিলেন ওঁরা প্রচ্ছদ ডিজাইন করে দেবেন। সেইমতো চলছে এখনো। আজ স্বাস্থ্যের বৃত্তের যে সংখ্যা বেরোবে তার প্রচ্ছদও শেপের তৈরি করা।
২০১৫-র ২১শে মার্চ শ্রমিক কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্র কুড়ি বছর হল। সেই উপলক্ষে একটা ছোট্ট ভিডিও শেপের তৈরি করা। ২০১৬-র ২৪ শে জানুয়ারি ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে ডা কে শ্রীনাথ রেড্ডি, অরুণ সিংহ, বিনায়ক সেনের উপস্থিতিতে সবার জন্য স্বাস্থ্যের দাবিতে গণ কনভেনশন, ২০১৭-র ৭ই এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অনুষ্ঠান, নভেম্বর বিপ্লব ও জনস্বাস্থ্য নিয়ে ডা অরুণ সিংহের ভাষণ–এই সবকিছুর চলচ্চিত্র গ্রহণ করে চলেছিল শেপ।
ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ারের পক্ষে একটা তথ্যচিত্র তৈরি করার পরিকল্পনা করছিলেন অভিজয়দা। ২০১৯-এ সেই উদ্দেশ্যেই আমার সঙ্গে তাঁর দিল্লিতে জনস্বাস্থ্য অভিযানের সম্মেলনে যাওয়া।
মাঝখানে কোভিড ১৯-এর জন্য কয়েক বছর নষ্ট হল। ঠিক এক বছর আগে পত্নী বিয়োগে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন অভিজয়দা। আস্তে আস্তে সেরে উঠছিলেন। মে মাসেই বাকি চিত্রগ্রহণ শুরু করার কথা ছিল। অপূর্ণ রয়ে গেল তাঁর পরিকল্পনা।