রামকে নিয়ে আজকের দিনে ন্যারেটিভ আর কাউন্টার ন্যারেটিভের ভিড়ে ছোট্ট করে একটা মামুলি লোকের গল্প বলে যাই। চন্দ্রশেখর ঝা-এর গল্প। সে ছিল কোন্নগর লক্ষ্মী নারায়ণ জুটমিলের একজন শ্রমিক। উইভিং সেকশনে কাজ করতো। ওরা নিজেদের বলতো তাঁতি। আজকের গল্পটা তার মুখ থেকেই শোনা। আমি জন্মানোর আগে আমার ঠাকুরদা মারা গেছেন। আমি দেখতে পাইনি। চন্দ্রশেখর বেঁচে ছিল। সে ছিল আমার ঠাকুরদার এক নম্বর চেলা। চাকরি জীবনেতো বটেই অবসরের পরেও বহুদিন আমাদের নবগ্রামের বাড়িতেই থাকতো। ঠাকুরদা জিতেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সেই জুটমিলের উইভিং বিভাগের হেড তখন।
পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে কথা। ঠাকুরদার মা মারা গেছেন। ঠাকুরদা তখন খিদিরপুরে। জুটমিলের আশেপাশে দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জেনে উনি ছুটে আসেন মায়ের পারলৌকিক কাজ ফেলে। শ্রমিক লাইন থেকে মুসলমান তাঁতীদের জড়ো করে নিয়ে আসেন মিলের টেনিস কোর্টে। সেখানেই খাওয়া দাওয়া রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করেন। ব্রিটিশ ম্যানেজারের কাছ থেকে বন্দুক জোগাড় করে এনে সারারাত তাদের পাহারা দেন।
এই গোটা সময়টা জুড়ে তার প্রিয় সেনগুপ্ত সাহেবের সাথে আগাগোড়া ছিল আমাদের “ঠাকুরভাই”। বিহারের গ্রাম থেকে আসা তিলক কাটা রাম ভক্ত হনুমান ভক্ত চন্দ্রশেখরকে আমরা ঠাকুরভাই বলে ডাকতাম। তার সেই স্মৃতিচারণে ঠাকুরদা উজ্জ্বল ছিলেন অনেক দিন। আমার ঠাকুমা সহ বাড়ির লোকজন দুশ্চিন্তায় সেই রাত দু চোখের পাতা এক করতে পারে নি। । ঠাকুরদা রাত জেগে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সারা রাত জাগার পরে ঠাকুর ভাই কিন্তু তার রোজকার রুটিন অনুযায়ী সেদিন সকালেও পুজো পাঠ করছিল। সেই সময় যাদের জন্য ঠাকুরদা নিজের জীবন বিপন্ন করতে রাজি ছিলেন, দাঙ্গা কমলে সেই মুসলিম তাঁতীর দল বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে ঠাকুমার কাছে এসে কৃতজ্ঞতা দোয়া জানিয়ে গিয়েছিল।
সেক্যুলার ভারতের হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে সেনগুপ্তরা একা নয়, দাঙ্গা ঠেকাতে চাইলে এক আধ জন চন্দ্রশেখর ঝা ঠিক জুটে যাবে, রাম ভক্ত, হনুমান ভক্ত একজন শ্রমিক যে মনে করে রামের নামে, হনুমানের নামে, হিন্দু ধর্মের নামে মানুষের রক্ত ঝরানোর চেয়ে বড় পাপ আর কিছু হতে পারে না, যে মনে করে ধর্ম যতই আলাদা হোক, পাটের ফেসো মাখা ওই তাঁতীরাও তার ভাই বেরাদার, অমৃতের সন্তান, সত্যিকারের রাম রাজত্বে যাদের প্রাণের ভয় থাকার কথা নয়, যে মনে করে প্রাণ থাকতে কিছু ধান্দাবাজ, দাঙ্গাবাজদের হাতে রামের নাম বদনাম হতে দেয়া যায় না।
পড়া তো ।আগের।🥰🖤❤️
সহ তার বাঁধা সেই এক সেই পুর সোনার
শ্রী রামপুর।বাঁধা রাধিকে দীপের সীতে
সে জনমজনমের আলোকবর্তিকে।
চোখ অপারেশন। টাইপো হতে পারে প্লিজ। 😎🙏