বন্ধুদের সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা…..
গত কদিন ধরে সমাজমাধ্যমে ‘বঙ্গাব্দ’ কবে থেকে চালু হল এই নিয়ে বেশ কিছু লেখালেখি দেখছি।
‘বাংলা সন’ কবে থেকে চালু হল এ বিতর্ক বহু পুরনো। স্বাধীনতার পর ডঃ মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে যে National Calender Committee তৈরী হয়েছিল তাঁরা বিস্তর তথ্যানুসন্ধানের পর যে যুক্তিপূর্ণ রিপোর্ট পেশ করেন তাই এতদিন গ্রাহ্য ছিল। ইদানীং বিষয়টা নিয়ে আবার টানাপোড়েন হচ্ছে। কারণটা সহজবোধ্য। যাই হোক ‘বাংলা সন’ নিয়ে যে কটা মত আছে যতটা সম্ভব সহজ করে বলার চেষ্টা করছি।
প্রথম মত: তিব্বতের রাজা স্রং সন একসময় বাংলাদেশের উত্তরাংশ দখল করেন এবং তাঁর পদবী থেকেই বাংলা ‘সন’ এর উৎপত্তি। এই মতের প্রবক্তা বিখ্যাত সিলভাঁ লেভি। নেপালে দীর্ঘ দিন গবেষণার পর তাঁর Le Nepal গ্রন্থে এমন অনুমান করেন। কিন্তু স্রং সনের বাংলা দখলের তেমন পাথুরে প্রমাণ বিশেষ নেই।
দ্বিতীয় মত: রাজা শশাঙ্ক ৫৯৩ খ্রীষ্টাব্দে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন এবং তখন থেকে ‘বাংলা সন’ চালু করেন। এখন প্রশ্ন:
১৷ শশাঙ্কের রাজ্যকাল মোটামুটি ৫৯০-৯২ থেকে ৬১২-১৪ খ্রীষ্টাব্দ বা কারও কারও মতে ৬২০ খ্রীষ্টাব্দ অবধি কিন্তু রাজ্যাভিষেকের কোনও নির্দিষ্ট সময়ের কথা জানা যায় না।
২৷ সন শব্দটা আরবী এবং সাল শব্দটা ফার্সী। কী করে শশাঙ্কের সময় এই ‘সন’ এর হদিশ পাই?
৩৷ শশাঙ্কের অধীনস্থ মাধবাচার্যের শিলালিপিতে ‘গুপ্তাব্দ’ এর উল্লেখ রয়েছে। কেন?
তৃতীয় মত: বাংলার সুলতান হোসেন শাহ বাংলা সন চালু করেন। তাঁর রাজত্বকাল ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ খ্রীষ্টাব্দ। তাহলে এখন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ হয় কেমন করে?
চতুর্থ মত: সম্রাট আকবর তাঁর রাজ্যাভিষেকের বছর ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দকে ভিত্তিবর্ষ ধরে ‘বাংলা সন’ চালু করেন প্রজাদের খাজনা দেওয়ার সুবিধার্থে। মোগল সাম্রাজ্যে তার আগে হিজরি বর্ষপঞ্জী চালু ছিল। হিজরি হিসাব চান্দ্রমাস অনুযায়ী। তাতে ৩৫৪ দিনে বছর। হিন্দু প্রজারা আগে খাজনা দিতেন সৌরবছর মোতাবেক। এদিকে ৩০ সৌরবছর = ৩১ চান্দ্রবছর। অর্থাৎ প্রজাকে বেশি খাজনা দিতে হচ্ছে।
এই সমস্যার সমাধানের জন্য আকবর জ্যোতির্বিদ ফতেহ সিরাজীকে দায়িত্ব দেন ১৫৮৪ খ্রীষ্টাব্দে। তিনি আকবরের রাজ্যাভিষেকের বছরের নিকটতম ১লা মহরমের দিনটিকে (তখন ৯৬৩ হিজরি) ‘বাংলা সন’ শুরুর বছর হিসেবে ঘোষণা করলেন। এইখানেই আসল রহস্য। ৯৬৩ হিজরির ১লা মহরমকে ৯৬৩ বাংলা সনের ১লা বৈশাখ ধরে বর্ষপঞ্জী শুরু হল। তার মানে ‘বাংলা সন’ শুরুই হল ৯৬৩ বঙ্গাব্দ থেকে। এখন ২০২৪ – ১৫৫৬ = ৪৬৮। আবার ৯৬৩ + ৪৬৮ = ১৪৩১। তাহলে হিসাব মিলল? এখানে একটা বিষয় ছোট করে বলার আছে। আকবর ১৫৭৫ খ্রীষ্টাব্দে বাংলা জয় করলেও ‘বারো ভুঁইয়া’ দের দাপটে সারা বাংলা থেকে এই হিসেবে খাজনা আদায় করতে পারতেন না। এইসব জমিদাররা প্রজাদের থেকে খাজনা নিতেন সৌরবর্ষ অনুযায়ী। অনেক পরে মুর্শদকুলী খাঁ যখন সুবে বাংলার দেওয়ান হলেন তখন আবার নতুন করে আকবর প্রবর্তিত এই ‘বাংলা সন’ চালু করেন ওই Lunar Calender আর Solar Calender এর বিরোধ মেটানোর জন্য। ডঃ মেঘনাদ সাহার কমিটি এইমতই গ্রহণ করেছিলেন।
সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন…..