আজকে, নভেম্বর মাসের ৮ তারিখ, International Day of Radiology (IDOR). ঠিক আজকের দিনে, ১২৮ বছর আগে ১৮৯৫ সালে Wilhelm Conrad Rontgen নামে একজন ফিজিসিস্ট এক্স-রে আবিষ্কার করেন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটা নতুন দিগন্ত খুলে যায়। তাই আসুন আজকের দিনে আমরা একটু দেখে নেই, এই রেডিওলজি বিষয়টি কি এবং রেডিওলজিস্টরা ঠিক কি করেন।
রেডিওলজিতে বিভিন্ন মোডালিটিজ্এ-র মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। এই বিভিন্ন মোডালিটিজ্গুলো হলো, এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান, এম আর আই, পেট স্ক্যান প্রভৃতি। রেডিওলজির ডাক্তারবাবুরা এই রোগ নির্ণয় করার পদ্ধতিগুলির উপর স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন। যেমন ভাবে এম ডি মেডিসিন-এর ডাক্তারবাবুরা বিভিন্ন রোগের ওষুধপত্রের ব্যাপারে পড়াশোনা করেন; অর্থোপেডিক-এর ডাক্তারবাবুরা পড়াশোনা করেন হাড়ভাঙ্গার চিকিৎসা এবং হাড়, পেশী প্রভৃতির বিভিন্ন রোগ নিয়ে; গাইনীর ডাক্তারবাবুরা পড়াশোনা করেন বিভিন্ন স্ত্রীরোগের চিকিৎসা এবং সেই সংক্রান্ত অপারেশনের উপর, তেমনি রেডিওলজির ডাক্তারবাবুরা পড়াশোনা করেন, একাধিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতির মাধ্যমে কি ভাবে রোগ নির্ণয় করা যায় তার উপর।
এই প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রাসঙ্গিক কথা সবার জানা উচিত যেগুলো সাধারণ মানুষের মনে কিছু ভ্রান্তি দূর করতে পারে-
১. রেডিওলজিস্টরা ক্যান্সারের ডাক্তারবাবু নন। রেডিয়েশনের মাধ্যমে যারা ক্যান্সারের চিকিৎসা করেন, তারা রেডিয়েশন অঙ্কোলজিস্ট, বা চলতি ভাষায় রেডিওথেরাপির ডাক্তার। রেডিয়েশন অঙ্কোলজি এবং রেডিওলজি স্নাতকোত্তর স্তরের সম্পূর্ণ দুটো আলাদা বিষয়। তবে ক্যান্সার এর রোগ নির্ণয় , বায়োপসি করা এবং বর্তমানে বিভিন্ন মিনিমালি ইনভেসিভ পদ্ধতির মাধ্যমে তার চিকিৎসায় রেডিওলজিস্টদের ভূমিকা অপরিহার্য।
২. স্নাতকোত্তর প্রবেশিকা পরীক্ষায় রেডিওলজির চাহিদা একদম প্রথমের দিকে থাকে। যারা মেরিট লিস্টে প্রথম দিকে থাকেন, তারাই মূলত সুযোগ পান রেডিওলজিতে এম ডি করার। তবে একটা বিষয় অনস্বীকার্য যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে মেডিক্যালের আসন প্রভূত পরিমাণে বৃদ্ধির ফলে অতি সাম্প্রতিক কালে মেডিক্যাল শিক্ষায় যোগ্যতার মাপকাঠির যে অবনমন ঘটেছে, খুব স্বাভাবিকভাবেই রেডিওলজিও তার বাইরে নয়।
৩. যারা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করেন, তারা কিন্তু রেডিওলজির ডাক্তারবাবু, টেকনিশিয়ান নন। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, যারা রেডিওলজি বিভাগে কাজ করেন, তারা প্যারামেডিকেল কোর্সে পড়াশোনা করেছেন। তারা এক্স- রে, সিটি স্ক্যান, এম আর আই এগুলোর স্ক্যান করেন বা আরো সোজা করে বলতে গেলে ছবি নেন। তার ভিত্তিতে স্ক্রিন বা প্লেট দেখে রেডিওলজিস্ট রোগ নির্ণয় করেন। কিন্তু আল্ট্রাসাউন্ড-এ হয় রিয়েল – টাইম ইমেজিং অর্থাৎ পেশেন্ট-এর স্ক্যানিং চলাকালীন তার রোগ নির্ণয় করতে হয়। তাই রেডিওলজিস্ট ডাক্তারবাবুকে নিজের হাতে স্ক্যান করতে হয়।
৪. দুজন মেডিসিনের ডাক্তারবাবু যেমন একই রোগীকে আলাদাভাবে চিকিৎসা করতে পারেন, দুজন সার্জারীর ডাক্তারবাবুর অপারেশনের ফলাফল যেমন সমান নাও হতে পারে, ঠিক তেমনি দুজন রেডিওলজিস্ট ডাক্তারবাবুর আল্ট্রাসাউন্ড, সি টি স্ক্যান বা এম আর আই প্রভৃতি রিপোর্ট-এর গুণমানে তারতম্য থাকতে পারে। সেইজন্য একজন মেডিসিন বা গাইনী-র ডাক্তারবাবুকে দেখাতে যাওয়ার আগে যেমন জেনে যান, যে সেই ডাক্তারবাবুটি কে; আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান বা এম আর আই করতে যাওয়ার আগে যদি জেনে জান, কোন ডাক্তারবাবু স্ক্যান করবেন বা রিপোর্ট করবেন, তাহলে সেটা বিচক্ষণতার পরিচয়।
৫. পরিশেষে বলি, সঠিক রোগ নির্ণয় ছাড়া সঠিক চিকিৎসা সম্ভব নয়। তাই আপনার বিভিন্ন পরীক্ষাগুলি যেসব রেডিওলজিস্ট ডাক্তারবাবুরা করছেন, তাদের সম্পর্কে জানুন, এবং সচেতন ভাবে সিদ্ধান্ত নিন, কোনও ডায়াগনস্টিক ল্যাব বা হাসপাতালে সেই পরীক্ষাগুলি করাবার আগে। কারণ রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষাগুলিতে রিপোর্ট-এর গুণমান কিন্তু প্রধানত নির্ভর করে রেডিওলজিস্ট-এর দক্ষতার উপর। আর সেই রিপোর্টের উপরেই নির্ভর করে আপনার পুরো চিকিৎসার কাঠামোটা।
তাই সচেতন থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সবাইকে আন্তর্জাতিক রেডিওলজি দিবসের শুভেচ্ছা।