বিষয়টা এ্যামন জটিল যে একমুখী, গম্ভীর আলোচনা সম্ভবই নয়। মানে শাখাপ্রশাখা, শিকড়, উপশিকড় বহুদূর ছড়িয়ে আছে।গ ত পর্বে বহু মানুষ প্রশ্ন করেছেন– তা মশয়, ডাক্তাররা এসব লেখে ক্যানো?
অবশ্যই সরাসরি উত্তর দেওয়ার হিকমত (আরবি; প্রজ্ঞা, যুক্তি) আমার নেই, জনগণ বুঝে নেবেন।
ধরা যাক, আপনার একটা জং ধরা পেরেকে মধ্যমায় একটি ছ্যাঁদা হয়েছে। আপনি ডাক্তারের নির্দেশে অথবা সজ্ঞানে টিটেনাস ইঞ্জেকশন নিতে ছুটলেন। টিটেনাস ভ্যাক্সিন কিন্তু কাটার আগেই নিতে হয়। যদি আপনার শরীরে টিটেনাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকে, টিটেনাস ভ্যাক্সিনের কাজ করতে অন্ততঃ চার সপ্তাহ সময় লাগবে, টিটেনাস জীবাণুর ইনকুবেশন পিরিয়ড আঠেরো দিনের মতো। তাহলে? এস ওয়াজেদ আলীর মতো বলি? সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জেকশন নেওয়ার প্রথাটা এটিএসের আমলে ছিলো। ও সব প্রাগৈতিহাসিক গল্প। এ্যাখন এটিএস তৈরিই হয় না। আর রসায়নের ছাত্ররা (মাধ্যমিক পাস হলেই চলবে) জং বা rust কাকে বলে সেটা জানেন (আয়রনের একটা অক্সাইড), তাতে নিজের থেকে টিটেনাসের জীবাণু জন্মাতে পারে না। বরং টিটেনাস ভ্যাক্সিন সময় করে নিয়ে রাখুন। (এটা বিজ্ঞাপনী ক্রোড়পত্র: কিছু অসুখ, কিছু কথা, বৈটিতে বিভিন্ন ব্যাধি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা আছে; প্রণতি প্রকাশনী)
এরকম বহু ওষুধ আছে। কিছু প্রেশারের ওষুধ সঙ্গে পায়ের ফোলা কমানোর ওষুধ- উভয়ে মিলিয়া শরীরে পটাশিয়াম, সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট করে। এগুলো বহুল প্রচলিত। কিন্তু ডাক্তাররা ক্যানো লিখছে? The answer my friend is blowing in the wind.
বেশীরভাগ ভিটামিন ও পুষ্টিদায়ী পদার্থ (এগুলো ওষুধ নয়),যে ক্যানো লেখা হয়, কে বা কারা লেখেন জানি না।
আসা যাক আন্টিবায়োটিকে।
প্রথমেই বলে রাখি, সমস্ত জীবাণুই নিজে বাঁচার জন্য নিজের শরীরে আন্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। এভাবে সেই জীবাণু যদি সব আন্টিবায়োটিকেই প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে তাহলে সে অজর, অমর।তখন তার নাম সুপার বাগ। ওটা আপনাকে ধরলে- বোধহয় আপনি খৎম। সুতরাং বুঝে আন্টিবায়োটিক খান। রোগ জেনে আন্টিবায়োটিক খান। যতদিন খাওয়ার কথা ততদিন ঠিকঠাক খান। মনে রাখবেন, গত প্রায় কুড়ি বছরে নতুন কোনও আন্টিবায়োটিক তৈরি হয়নি (যত খরচ কোম্পানির তত লাভ নেই; ভুলভাল ব্যবহারে তিনচার বছরের মধ্যে ওষুধটা অনির্ভরযোগ্য, অকার্যকরী হয়ে যাচ্ছে)।
আপনার ডেঙ্গু হয়েছে বা ম্যালেরিয়া হয়েছে (কলকাত্তাইয়া মশারি টাঙায় না-কার্যকারণ জানি না) কিম্বা টিবি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা অথবা করোনা, ডাক্তারের পরামর্শে অথবা অপরামর্শে আপনি ঢেলে আন্টিবায়োটিক গিললেন।এগুলো তো ভাইরাল অসুখ, ব্যাক্টেরিয়া মারার কোনও ওষুধ কাজ করবে না। এই সব অকারণে নিজের মরণের পানে ধেয়ে যাওয়া।
না না ভুল বললাম-শুধু ভাইরাসের ক্ষেত্রে নয়- একেক ধরণের জীবাণুর জন্যেও একেক রকম ওষুধ আছে, টাইফয়েড হলে টিবির ওষুধ কাজ করবে না, টিবি হলে টাইফয়েডের ওষুধ অকেজো। লিভার অ্যাবসেস (ফোড়া) যে ওষুধ দ্যায় তাতে নিউমোনিয়া সারে না।
ছত্রাক জাতীয় সংক্রমণে এসব কিৎছু কাজ করবে না। এর আবার আলাদা ওষুধ, আলাদা লক্ষন। পরীক্ষা নিরীক্ষাও আলাদা আলাদা।
ধৈর্য করুন। পেশেন্ট মানে যে ধৈর্য ধরে। রোগ জানুন। প্রয়োজনে পরীক্ষা করুন।
এরপর আমি নিজেই বিভ্রান্ত। লেখার কতো কি আছে। সব মিলে শেষে লাবড়া হয়ে উঠবে। (তবে করোনায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন, আইভারমেক্টিন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভূমিকা নেই, হয়তো ব্যবসাসম্মত ভূমিকা আছে। না ডাক্তার বিক্রি হয়নি- এই অসভ্য অশ্লীল ওষুধগুলো সরকারি নিয়ামক সংস্থা থেকে লেখার নির্দেশিকা এসেছিলো।)
এইখানে দিই দাঁড়ি
হাটের মাঝে ভাঙবো ক্যানো বিদ্যে বোঝাই হাঁড়ি।
যে বিষয়টা অশেষ, অসীম সেটাকে শেষ করলাম।