পশ্চিমবঙ্গের বুকে স্বাস্থ্য বিভাগে, বিগত কয়েকদিন যা চলছে তাতে স্বাস্থ্য দপ্তরের নাম পরিবর্তিত হয়ে সার্কাস দপ্তর হওয়া উচিত।
বছরের পর বছর কলকাতায় থাকা একজন চিকিৎসকের বদলির আদেশনামা বেরোনোর পরদিনই বাতিল হয়ে গেছে। আবার একজন প্রিন্সিপাল,পুরোনো কাজের জায়গা থেকে রিলিজ হয়ে ,নতুন মেডিক্যাল কলেজে যোগদান করতে এসে, ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়াতে হয়েছে, কারণ ওই মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালের অফিস, এমএসভিপির অফিস ছিল তালাবন্ধ। অবশেষে তিনি জানতে পারেন যে প্রশাসনিক চেয়ারে বসার জন্য তিনি এসেছেন, সেই চেয়ারে যিনি ছিলেন, তাঁর বদলির আদেশনামা ক্যানসেল হয়ে গেছে। ফলে চেয়ার ফাঁকা নেই। তাই তাঁকে পুরোনো জায়গাতেই ফিরে যেতে হবে। এরকম নজিরবিহীন ঘটনা, জঘন্যতম প্রশাসনিক অপরাধ পশ্চিমবঙ্গের বুকে কোনোদিন ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই।
যে স্বাস্থ্য প্রশাসন ডাঃ অবন্তিকাকে তাঁর অটিজমে আক্রান্ত সন্তানের সঙ্গে থাকতে দেয়না, যে স্বাস্থ্য দপ্তর বদলির বেড়াজালে আটকে রেখে পরোক্ষে তাঁকে বাধ্য করে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে, যে স্বাস্থ্য প্রশাসন কোমায়, ভেন্টিলেশনে থাকা চিকিৎসকের জন্যে মেডিক্যাল টিম পাঠিয়ে জানতে চায় তিনি কাজ করার উপযুক্ত অবস্থায় আছে কিনা, যে স্বাস্থ্য দপ্তর শুধু মাত্র মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার শাস্তি স্বরূপ, রুটিন বদলির মোড়কে, একসাথে সমস্ত প্রার্থীকে, এমনকি প্রার্থীর চিকিৎসক স্ত্রীকেও বদলির আদেশনামা ধরিয়ে দেয় এবং বাড়ি থেকে, ছুটি থেকে ডেকে নিয়ে এসে সবাইকে রিলিজ অর্ডার ধরায়, যে স্বাস্থ্য প্রশাসকরা চিকিৎসকদের এক প্রান্তিক জেলা থেকে আরেক প্রান্তিক জেলায় বদলি করেন, ব্যক্তিগত অসুস্থতা,পারিবারিক সমস্যার কারণে অসংখ্য বদলির আবেদন, বছরের পর বছর ঠান্ডা ঘরে ফেলে রাখেন, তারা যে শিরদাঁড়াহীন, সরীসৃপ হবেন তাতে আমাদের কোনো সন্দেহ ছিল না। কিন্তু সরকারি দলের দু আনা চার আনা নেতা, যাদের বিরুদ্ধে আবার ভুরিভুরি অভিযোগ সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, তাঁদের জন্যেও এরকম ন্যক্কারজনক কাজ করতে পারেন সেটা আমাদের কল্পনাও করতে পারিনি। স্বাস্থ্য প্রশাসনের যারা এই অন্যায়, অনৈতিক কাজে যুক্ত, যারা স্বাস্থ্য প্রশাসনের চেয়ার গুলোকে অসম্মান করছেন, অমর্যাদা করছেন, তারা ওই চেয়ারে বসার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আমরা চাই ওই উচ্চ প্রশাসনিক চেয়ার গুলোর মর্যাদা যাতে আর নষ্ট না নয়।
অন্যদিকে নানা সূত্রে আমরা জানতে পারছি এই সমস্ত অন্যায়, অনৈতিক কাজের মাথা, মদদদাতা রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনের অতি ঘনিষ্ট।
সাম্প্রতিক অতীতে নিয়োগ, প্রমোশন, বদলিতে নানা অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগ সহ স্বাস্থ্য দপ্তরের নানা অন্যায়, অনৈতিক পদক্ষেপে, জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের বহু ডেপুটেশন দিয়েছে। সেই সব ডেপুটেশনে, স্বাস্থ্য প্রশাসকরা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও, এখনো পর্যন্ত কার্যত কোনো প্রতিশ্রুতিই রূপায়িত হয়নি। বলাই যায় ওই প্রশাসকদের উপর আমরা আস্থা হারিয়েছি। এই রকম নজিরবিহীন ঘটনা, জঘন্যতম প্রশাসনিক অপরাধের প্রেক্ষিতে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, সুবিচারের আসায় তাই মাননীয় রাজ্যাপালকে চিঠি দিয়েছে, তাঁর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছে এবং দেখা করার জন্যে সময় চেয়েছে। আজকে চিকিৎসকদের ক্ষোভ, হতাশা জানাতে আমরা রাস্তাকেই বেছে নিয়েছি। আমাদের ক্ষোভ ক্রোধে পরিণত হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতের প্ৰধান বিচারপতি সমেত দেশের সংশ্লিষ্ট সমস্ত প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ চাইবো।
ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ
ডাঃ হীরালাল কোঙার
যুগ্ম আহ্বায়ক,
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ
সহমত।