অভয়া-কাণ্ডের বিচারের সঙ্গে জুনিয়র ও সিনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলোর কী সম্পর্ক? ডাক্তাররা হঠাৎ থ্রেট কালচার আর স্বাস্থ্য পরিষেবায় দুর্নীতি, এদুয়ের সঙ্গে অভয়ার বিচারকে একসূত্রে গাঁথতে চাইছেন কেন?
এটা বুঝতে গেলে আমাদের কয়েক বছর পিছিয়ে যেতে হবে। অভয়া-কাণ্ডের ভয়াবহতা আমাদের স্তব্ধ করে দিলেও আমরা বুঝতে পেরেছিলাম আর জি করের ভয়াবহ থ্রেট এবং দুর্নীতির সঙ্গে এই ঘটনার সরাসরি যোগ আছে। এটা আমরা বুঝেছিলাম অতীত ও বর্তমানের বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে। অভয়ার বাবা বলেছিলেন আরজি করে রাক্ষস আছে, আর আমরা ডাক্তাররা সেই রাক্ষসদের কিছুটা খোঁজ খবর রাখতাম।
আমরা আরজি করে ২০২১ এ আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ছিলাম। ২০২২ এর মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্বাচনে আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম এই “থ্রেট কালচারের” ভয়াবহ রূপ আর তার পেছনে সরকার, পুলিশ, প্রশাসনের নির্লজ্জ প্ররোচনা।
আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি ব্যক্তির শাস্তি চাই। তাই প্রথম দিন থেকেই আমরা মনে করেছিলাম, আরজি করের সন্দীপ ঘোষ এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গদের যে পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল তার সঙ্গে এই ঘটনার সরাসরি যোগ আছে, এবং সেই যোগাযোগ চাপা দিতেই তথ্যপ্রমাণ লোপাটের প্রচেষ্টা।
ডাক্তাররা প্রথম দিন থেকেই এই কথাই বলে এসেছেন কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিমকোর্টে । ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারক এই সন্দেহকে মান্যতা দিয়েছেন। এই দুর্নীতির সিবিআই তদন্ত হচ্ছে, সেটা সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস সহ মোট তিনজন বিচারকের বেঞ্চ মনিটরও করছে। ভারতীয় সংবিধানে কার্যত এর থেকে উচ্চ পর্যায়ে বিচার বোধহয় সম্ভব নয়।
ডাক্তাররা আরও মনে করেন, এইরকম ঘটনা, অর্থাৎ অভয়া-২, অভয়া-৩ কিংবা অভয়া-৪ যাতে না ঘটে, তার জন্য এই স্বাস্থ্য-দুর্নীতি এবং থ্রেট কালচার সমূলে উৎপাটন করা প্রয়োজন। আর মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতেও এটা দরকার।
কিন্তু দুর্নীতি ও থ্রেট, এগুলো চুপিচুপি হয়নি, হয়েছে সর্বোচ্চ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ নজরের আওতায়। বহুবার জানানো সত্বেও এই চক্রের পাণ্ডাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই প্রশাসন নেয়নি।
আজকের সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদে জানা যাচ্ছে যে এই স্বাস্থ্য-দুর্নীতির পরিমাণ হাজার কোটি কিংবা তারও অনেক বেশি। এবং তার জাল শুধু আরজি কর নয় অন্যান্য স্বাস্থ্য-প্রতিষ্ঠান, এমনকি এই রাজ্যের বাইরেও পৌঁছে গিয়ে থাকতে পারে। এভাবে আমাদের সবচাইতে ভয়াবহ আশঙ্কাগুলোই সত্য বলে প্রমাণিত হবার দিকে চলেছে।
যদিও অভয়ার ঘটনার মূল তদন্ত হবে ট্রায়াল কোর্টে, তবুও বিচারব্যবস্থা ও সিবিআই-এর ওপর সমাজের ডাক্তার তথা নাগরিক সমাজের আন্দোলনের মাধ্যমে এই চাপ বজায় রাখা খুব জরুরি।
এত মানুষ এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছেন, তার কারণ তাঁরা কোনোভাবে আন্দোলনের মধ্যে তাঁদের হারানো স্বর খুঁজে পেয়েছেন। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি আর থ্রেট আমাদের সবাইকে কোনো না কোনো ভাবে জড়িয়ে ফেলেছে।
ডাক্তাররা মূলতঃ স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার দুর্নীতি, তার সাথে জড়িত অভয়ার সাথে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনা এবং তথ্য প্রমাণ লোপাট নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাঁদের সঙ্গে বা আলাদাভাবে সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি আর থ্রেট নিয়ে নাগরিক সমাজ আর রাজনৈতিক দলগুলি গর্জে উঠবেন, এটাই এই মুহূর্তের ডাক।