সামনেই হোলি বা দোল উৎসব। ছোট, বড় সবাই মেতে উঠবে প্রিয়জনকে নানা রঙে রাঙিয়ে তোলার আনন্দে। কিন্তু একটু অসাবধান হলেই আনন্দের উৎসব নিরানন্দে পরিণত হতে পারে।বিশেষ করে, শিশুদের রঙ খেলার জন্য কিছু বাড়তি সতর্কতা দরকার। কীভাবে আপনার শিশুকে দোলের দিন সুরক্ষিত রাখবেন?
রঙের উৎসব দোল। এই দিনের জন্য ছোটরা মনে মনে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দেয় বেশ কিছুদিন আগের থেকেই। তবে ভুলে গেলে চলবে না শিশুদের সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে ওইদিনেই। কাজেই শিশুকে রঙ খেলতে দেওয়ার আগে তার নিরাপত্তার কথা অভিভাবকদের মাথায় রাখা দরকার। দোলের সময় আবির ছাড়াও জলের সঙ্গে রঙ মিশিয়ে একে অন্যকে মাখায়। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে কোনও রাসায়নিক রঙ যেন শিশুর হাতে না পড়ে। কারণ এ ধরনের রঙ যাকে মাখাবে তার যেমন সমস্যা হতে পারে তেমনি ওই রঙ নিজের হাতে লেগে তার নিজেরও সমস্যা হতে পারে। বিশেষত, ফুসকুড়ি, অ্যালার্জি, এমনকী চুল উঠে যাওয়ারও ভয় থাকে। আসলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলেই এত কিছু হওয়ার আশঙ্কার কথা মনে রাখা দরকার। কিন্তু শিশুকে দোলের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করাও কোনও যুক্তির কথা নয়। তাই জেনে নিন কীভাবে শিশুরা দোল খেললেও নিরাপদে থাকবে।
শিশুদের রঙ খেলার সময় অভিভাবকরা খেয়াল রাখুন- শিশুরা যখন রঙ খেলায় মেতে থাকবে সে সময় মা, বাবার উচিত তাদের দিকে লক্ষ্য রাখা। অনেক সময় বড় গামলা বা বালতিতে রঙ গুলে রাখা হয়। ছোটরা সেখান থেকে পিচকারিতে ভরে অন্যদের গায়ে দেয়। একটু অন্যমনস্ক হলে শিশুরা ওই জলে পড়ে যেতে পারে। যার জন্য বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়।
ভেষজ আবির বা রঙ কিনে দিন– দোলের দিন শিশুকে ভাল রাখার প্রাথমিক দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। তাই রঙ কেনার সময় ভেষজ আবির অর্থাৎ হলুদ, পলাশ, হেনা বা চন্দন দিয়ে বানানো রঙ কিনে দিতে হবে। এই ধরনের রঙ শরীর থেকে সহজেই ধুয়ে ফেলা যায় আর ত্বকে তেমন কোনও সমস্যাও হয় না। এছাড়া মাটি, ডিম বা ঘরে ব্যবহারের রঙ যাতে শিশু কোনোভাবেই কারো গায়ে না লাগায় সেদিকে লক্ষ রাখুন।
পিচকারি ব্যবহার করতে শেখান- অভিভাবক- দের শেখানো দরকার শিশু কীভাবে পিচকারি দিয়ে অন্যদের রঙ মাখাবে। কারণ অনেক সময়েই পিচকারি দিয়ে ছোঁড়া রঙ অন্যের চোখ বা কানে গেলে ক্ষতি হতে পারে। কাজেই খেলার আগেই শিশুকে বুঝিয়ে দিন কখনোই যাতে পিচকারি দিয়ে অন্যের কানে, চোখে বা মুখে রং না দেয়।
শিশুদের জলভরা বেলুন কখনোই নয়– এ ধরনের বেলুন ছোড়ার সময় কার দিকে তা যাচ্ছে সেদিকে শিশুদের খেয়াল থাকে না। প্রাপ্তবয়স্করা সেই বেলুনের আঘাত সামলাতে পারলেও শিশু ও বৃদ্ধরা তা পারে না। শুধু তাই নয়, এই রঙ চোখে, কানে বা নাকে লাগলেও ক্ষতি হতে পারে।
বাচ্চারা রঙ মুখে দেয় কিনা খেয়াল রাখুন– শিশুরা রং খেলার সময় হাত ভাল করে না ধুয়ে কিছু খেলে সেই রঙ পেটে গিয়ে বিপত্তি বাঁধতে পারে। কারণ রঙে থাকে বিষাক্ত রাসায়নিক। যা পেটে গেলে বমি, পেটখারাপ সহ নানা সমস্যা হতে পারে।
পোশাকের ব্যাপারেও সতর্কতা দরকার-এ দিনের জন্য শিশুকে পরান সুতির ফুল হাতার জামা। চেষ্টা করবেন জামার নীচে একটা ফুল হাতার গেঞ্জি পরাতে। এতে ত্বকের সংস্পর্শে রঙ সহজে লাগবে না। মাথায় টুপি পরিয়ে দিন। মেয়েদের মাথায় নারকেল তেল মাখিয়ে চুল বেধে দিন।
হাতের কাছে কিছু আপতকালীন ফোন নম্বর রেখে দিন– সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও কখনও কখনও কিছু দুর্ঘটনা এড়ানো যায় না। তাই আপনার শিশুর বা ফ্যামিলি চিকিৎসকের, চোখের ও ত্বকের দাক্তার, নিকটবর্তী হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর হাতের কাছে রাখুন।
এছাড়াও কয়েকটা বিষয় মনে রাখা দরকার। তাহল, বাড়ির পোষ্য, গাছ বা অনিচ্ছুক ব্যক্তিকে যাতে শিশু কোনরকম রঙ না দেয় সেদিকে লক্ষ রাখা, শিশুর হাঁপানি বা রঙ থেকে অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে রঙ খেলা থেকে একেবারে দূরে রাখা, রঙ খেলার আগে শিশুর সারা গায়ে ভালো করে ক্রিম বা তেল অথবা সানস্ক্রিন লোশন লাগানো, রঙ তোলার জন্য তুলোর বল নারকেল তেলে ডুবিয়ে তা দিয়ে আলতো করে মুছে দেওয়া ও খেলার আগে বেশি করে জল খাওয়ানো।