এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত লকডাউন চলবে সেটা আমরা, অর্থাৎ যারা পাব্লিক হেল্থ নিয়ে সামান্য ঘাঁটাঘাঁটি করি তারা আন্দাজ করেছিলাম …. তাই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা শুনে বিস্মিত হইনি। এরপর কি কি হতে পারে সেটাও আন্দাজ করতে পারছি, কিন্তু স্রেফ আন্দাজের বশে আলোচনা করা উচিত হবে না বলেই করবো না। শুধু এটুকু জেনে রাখুন লড়াইটা বড় সহজ নয়! লম্বা, কঠিন লড়াই।
লড়াইটা জিততে গেলে আপনাদের সাহায্য দরকার। আপনাদের সহযোগিতা দরকার, ভরসা দরকার। দয়া করে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলুন। লকডাউন মানে লকডাউন! নিজেকে লক করুন ঘরের মধ্যে। হাত ধোওয়ার নিয়মকানুন মেনে চলুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। যদি বাজার-হাট করতে বেরোন মাস্ক পরে বেরোবেন। হাত ধোওয়ার নিয়ম, মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম ইত্যাদি সম্বন্ধে সঠিকভাবে জানুন এবং মানুন।
গুজবে কান দেবেন না, গুজব ছড়াবেন না। করোনাভাইরাস নিয়ে মজার পোস্ট, মিম অনেক ঘুরছে। ওগুলো এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন, করোনা নিয়ে খিল্লী করলে করোনার একটা চুলও এদিক থেকে ওদিক হবে না, কিন্তু এই ধরনের পোস্ট/ছবি দেখতে দেখতে আপনার মনে একটা হালকা ভাব চলে আসবে। করোনাভাইরাস নিয়ে কোনরকম হালকা ভাব চলবে না! শত্রু ভয়ংকর ক্ষমতাশালী ! তাকে যথাযথ গুরুত্ব দিন, তার ক্ষমতাকে সমীহ করুন, তবেই সচেতনতা বাড়বে।
আমরা, অর্থাৎ সরকারি ডাক্তার এবং বিভিন্ন পদের স্বাস্থ্যকর্মীরা আছি! লড়ছি। লড়ে যাবো। এক ইঞ্চি জমি ছাড়বো না! আপনারা শুধু একটু সহযোগিতা করুন।
অনেকেই মনে করেন আমরা বোধহয় নিজেদের জীবন বিপন্ন করে শুধু সমাজের জন্য লড়ছি। ধারণাটা পুরোপুরি ঠিক নয়! এই লড়াইয়ের পিছনে শুধু সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই, শুধু কর্তব্যবোধ নেই, আছে আমাদের স্বার্থ! স্বার্থ, কারণ আপনি বাঁচলে আমিও বাঁচবো। আমারও সংসার আছে। আমিও বাঁচতে চাই!
এক একসময়ে বড় ক্লান্তি গ্রাস করে, জানেন তো? মনে হয় এইভাবে আর কত টানবো? কতদিন পারবো টানতে? ঠিক সেই মুহূর্তে হাতটা কেমন যেন দুর্বল লাগে, মুঠি শিথিল হয়ে যায়! জানি এই লড়াইটা যারা সামনে দাঁড়িয়ে লড়ছি তারা সবাই হয়তো ফিরবো না। কেউ ঘরে ফিরবে, কেউ রয়ে যাবে স্মৃতি হয়ে। দুর্বল মুহূর্তগুলোয় বুকটা হঠাৎ ছ্যাঁৎ করে ওঠে! চোয়ালের কাঠিন্য ভেদ করে এক অদ্ভুত শিরশিরানি ঢুকে পড়ে শরীরে, ছড়িয়ে যায় শিরদাঁড়া বরাবর, তারপর নামতে নামতে পায়ের পাতা অবশ করে দেয় ক্ষণিকের জন্য। তখন বড্ড বাড়ির কথা মনে পড়ে। ঘরে মা আছে, মেয়ে আছে, আর বলতে নেই আস্ত একখানা বৌও আছে, যে রোজ দরজা ফাঁক করে অপেক্ষা করে কতক্ষণে আমি ফিরবো।
ঠিক এই সময়ে আপনাদের হাতটা দরকার ! বেশি কিছু না, আপনারা ঘরে বসেই আমাদের হাতটা একটু ধরুন। শক্তি দিন আমাদের। ঘরে থাকুন, সচেতন হোন, কোনো হিরোগিরি করতে যাবেন না! ব্যস, এটুকুই যথেষ্ট ! আর কিছু চাই না।
ভরসা রাখুন। আমরা আছি তো!
আমরা সব বিধি নিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করছি ডাক্তার বাবু। এই ভাবে সবাই মিলে সহযোগিতা না করলে যে আপনাদের এতো প্রয়াস সার্থক হবে না। এই টা আমাদের সবাইকেই যে বুঝতে হবে।
আমরা তো আপনার কথা শুনে চলছি আর চলব, কিন্তু আপনারাও একটু নিজেদের কথা ভাববেন please ? ?
আপনাদের এত নিজেকে নিঃশেষ করে দেওয়া সংগ্রাম বিফল হবে না, হতে পারে না।
খুব আন্তরইক রচনা। ভীষণ ভালো লাগলো।