যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা, ক্যানিং-এর নারায়ণ রাহা ফেসবুকে লিখেছেনঃ যে কথাগুলো কোনও দিন ভুলতে পারবো না, ভোলা সম্ভব ও নয়। “কাকু,,, আমি, বাঁচবো তো? আমি বাঁচতে চাই।”
এন আর এস হাসপাতালের বেডে শুয়ে এই করুণ আর্তি ১৫ বছরের দক্ষিণ বারাসতের এক গ্রাম্য বালিকার, নবম শ্রেণীতে পাঠরতা কোয়েল হালদারের।
ছুটি কাটাতে বেড়াতে এসেছিল, জয়নগরের গোচারনে মামার বাড়িতে। বন্ধুবান্ধবীদের সঙ্গে একটু সময় কাটিয়ে মামার বাড়িতে ফেরার পথে গ্রামের রাস্তা পার হতে গিয়ে পা তুলে দেয় সাপের উপর। পায়ের গোড়ালিতে কামড় দেয় সাপ। মামার বাড়িতে ফিরে সব ঘটনা জানায়। সময় তখন প্রায় সন্ধ্যা ৫ টা /সাড়ে ৫ টা। তারিখটা ১৭।১১।২০১৯।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে পৌছায় রাত ৯ টা থেকে ৯-৩০ টায়। চিকিৎসকরা প্রাথমিক পরীক্ষা করে অর্থাৎ WBCT test করে বুঝতে পারেন যে এটি viper অর্থাৎ এতদঞ্চলের চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়। চিকিৎসা শুরু হয় নীচের জরুরি বিভাগে। একদিন সমস্ত চেষ্টার পর চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন যে তার জরুরি ডায়ালিসিসের প্রয়োজন। যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা, ক্যানিং-এরএকজন দায়িত্ববান সদস্য হিসেবে সবসময়ই রোগীর পাশে থাকার চেষ্টা করেছিলাম। রোগীকে কলকাতার যে কোনও মেডিকেল কলেজে ডায়ালিসিসের জন্য রেফার করা হলে আমরা রোগীর আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করে এন আর এস হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে আমাদের সংগঠনের সদস্য এবং হাসপাতালের একজন দীর্ঘদিনের কর্মী সবরকম ভাবে সকল রকম প্রচেষ্টাও করেছিল বা করা হয়েছিল। মোট ৮ বোতল রক্ত দেওয়া ও সঙ্গে সঙ্গে ডায়ালিসিসেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ২ টি ডায়ালিসিসের পর ও আর নিতে পারেনি। প্রায় ৯ দিন ধরে আমাদের সংগঠনের সব রকম প্রয়াস ও চিকিৎসকদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। অকালে হারিয়ে যায় একটি তরতাজা তরুণী। বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনদের স্বপ্ন ভেঙে, আমাদেরও নিরাশ করে চিরদিনের মত চলে যায় সে।
পরিশেষে প্রশ্ন দায়ী কে?
পরবর্তীতে খবর নিয়ে জানা গেছে কামড়ের পরে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ওঝার কাছে সময় নষ্ট করে তারপরে রুগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। যদিও আত্মীয়স্বজনদের এমন কি ওর বাবাকে জিজ্ঞাসা করা হলে, সবার মতো তারা অস্বীকার করেছিল। চন্দ্রবোড়ার মতো সাপের কামড়ের পর এক অমূল্য সময় নষ্টের ফলেই অকালেই চলে যেতে হল কোয়েলকে।
এ মৃত্যু তার পরিবারকে যেমন অসহায় করে তোলে, ঠিক তেমনই আমরা যারা এই “সাপের কামড়ে আর মৃত্যু- মুখ নয়” এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিবেদিত, আমাদের কাজকেও অনেক অনেক পিছিয়ে দেয়।
শুধুই কি ওঝার বাড়ীতে চার ঘন্টা দেরীর জন্য মেয়েটি মারা গেল ? গ্রাম বাংলার ৯০% সাপেকাটা রুগীই চার ঘন্টার আগে হাসপাতালে আসে না। বর্তমান ASV -এর কার্যকারীতা নিয়ে যে গত আড়াই বছর ধরে কিছু মানুষ , পাগলের মত চিৎকার করে যাচ্ছে? আর কত মৃত্যু চাই সেটা প্রমান করতে ?
আমাদের এখানেও একই রকম ঘটনা ঘটেছিলো। কিন্তু ছেলেটি মরে নি।এই যা।এক ইমাম জলে ফুঁ দিয়ে জলটা খাইয়ে দেয়।আর বলে হাসপাতাল যেন না যায়।ওরাও আর ভয়ে হাসপাতাল যায় নি।তবে ছেলেটি বেঁচে আছে।