প্রাক্ মৌসুমী বৃষ্টিপাতের পর্ব শুরু হতে না হতেই উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে বন্যার দাপট শুরু হয়ে গেছে। অসম, মণিপুর, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা – সর্বত্রই থৈ থৈ জল আর বিপন্নতার হাহাকার। এরই মধ্যে সিকিমের নানান প্রান্তে ধস নামায় জনজীবন বিপন্ন। আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। উত্তর সিকিমের ছাতেনে সেনা ছাউনি ধসের কবলে পড়ায় মারা গেছেন ৩ কর্তব্যরত জওয়ান , এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ হয়েছেন আরও ৬ জন। তালিকা বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া এই পর্বতসঙ্কুল রাজ্যটিতে এখন পর্যটনের ভরা মরশুম। সমতলের আর্দ্রতা আর গুমোট গরমের হাত থেকে সাময়িক রেহাই পেতে বহু মানুষ এসে হাজির হয়েছে সিকিমে। বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটনকে আঁকড়ে ধরেই উন্নয়নের ধারা ধরে রাখার প্রচেষ্টা। ইদানিং বাইরে বেড়াতে গিয়ে আমরা বিলাসবহুল ব্যবস্থা দাবি করি– সর্বসুবিধা যুক্ত একদম টিপটপ হোটেল, বালিগঞ্জের বিরিয়ানি থেকে শুরু করে ডেকার্স লেনের ব্রেকফাস্ট। ঘোরাঘুরির পর চিনে পাড়ার চাইনিজ খেয়ে দুগ্ধফেননিভ শয্যায় শয়ন ও নিদ্রা। পরের দিন সকালেই দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি। তাতে চেপে সারাদিন ঘোরাঘুরি। এনজয়মেন্ট।
পর্যটকদের স্বল্পকালীন যাপনকে আরামদায়ক, স্বস্তিদায়ক করে তুলতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পর্যটন বিভাগ চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখেন না– আলিসান হোটেল, ঝাঁ চকচকে সড়কপথ, সর্বাধুনিক গাড়ি – পর্যটকদের জন্য আয়োজন করে রাখতে হয়, যাতে সামান্য ঘাড় ঘুরিয়েই দিব্যদৃষ্টি দিতে পারেন সব নৈবেদ্যর ওপর। ইদানিং হোম স্টে বা গৃহ আবাস যোজনা চালু হয়েছে যেখানে সামান্য খরচেই বাড়ির মতো অনুভূতি হয়। এভাবে স্থানীয় মানুষজনের একেবারে অন্দরমহলে সেঁধিয়ে যাবার ফায়দা অনেক। এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে সবাই তৎপর – বাড়ির লাগোয়া আরও কয়েকটি ঘর বানিয়ে নিতে পারলেই কেল্লা ফতে। তিস্তার বন্যার মতো টুরিস্টদের ঢল নামবে ঐ দুরন্ত মেয়ে তিসাইয়ের মতো।
এসবের জন্য উঁচুনিচু পাহাড়ি জমি কেটে সমান করে নিতে হয়, প্রয়োজনে গোটা কয়েক গাছ উপড়ে ফেলার দরকার পড়ে; রাস্তাঘাট নির্মাণ করতে গেলেও একই পদ্ধতি মানতে হয়। এই সব কর্মকাণ্ডের ফলে প্রকৃতি পরিবেশের ওপর চাপ পড়ে। আমাকে আপনাকে কেউ চিমটি কাটলে মুখ দিয়ে উহ , উহ, আহ আওয়াজ করবো, সর্বংসহা প্রকৃতির তো সে বালাই নেই। ফলে অবিবেকী মানুষের চাপ বাড়ে, এক অর্থে অত্যাচার বাড়ে , এর মাত্রা লাগামছাড়া হয়ে প্রকৃতির সহন সীমা ছাপিয়ে গেলেই নেমে আসে বিপর্যয়। ছোটোবেলায় লুডো খেলায় হেরে যাচ্ছি দেখে যেমন বোর্ড উল্টে সব লণ্ডভণ্ড করে দিই, প্রকৃতি সে ভাবেই মানুষের সাজানো গোছানো জীবনকে ভেঙেচুরে ছারখার করে দেয়। এ খেলা চলছে নিরন্তর।

৩ জুন,২০২৫












গতকালই লেখক আভাস দিয়েছিলেন ব্লাতেনের পর লাচেন,ছাতেন আসবে। সাতসকালেই তেনারা হাজির। বিপর্যয়ের খবর মনকে বিষণ্ণ করে। পরবর্তী লেখায় আশাবাদের কথা থাকলে খুব খুশি হবো।
আশার কথা শোনাবার চেষ্টা করবো।
প্রকৃতির উপর এরকম অন্যায় অত্যাচারের শোধ তো প্রকৃতি নেবেই..কোন দিকে এগোচ্ছি আমরা সত্যি জানিনা…
চিমটিটা এবার বোধহয় একটু জোরেই কাটা হয়েছে! এমন প্রত্যাঘাত আরও নেমে আসবে। সতর্কবার্তা এড়িয়ে গিয়ে লাভ নেই ।
আজকাল হেঁটে হেঁটে পাহাড়ি গ্রাম বেড়াতে গিয়েও প্রায় সবাই রাতে থাকার জায়গায় বেশ আয়েশ করে, গদিতে ঘুমোতে চায়। কি আর করা যাবে। সেই কারণেই তো এই পরিণতি। আমার তো মনেহয় এইসব দুর্যোগের ঘটনা দিনে দিনে বাড়বে বই কমবে না।
কমার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর অনেক দেশই বাধ্য হয়ে পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ভাবছে। সিকিমের মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল ভূ পরিসরে প্রশাসনের আরও সতর্ক হওয়া দরকার। মতামতের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
যথাযথ বিশ্লেষণ, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের নীতি সবারই জানা। কিন্তু আজ বাঁাচি কাল দেখা যাবে নীতিই এখন অগ্রাধিকারে।
ধন্যবাদ জানাই মতামতের জন্য। দীর্ঘস্থায়ী টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রশাসনিক স্তরে আরও গভীর ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রশাসনিক ভাবনার কারণেই দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করেন প্রশাসনের কর্তারা। হিমালয়ের বুকে যথেচ্ছ দাপাদাপি এমন মর্মান্তিক পরিণতিকে অনিবার্য করে তুলছে বারংবার।
অর্থনীতিকে নাকি ক্রমাগত ফুলিয়ে যাওয়াই অগ্রগতি।তাই সবাই মিলে সংযত হবে এ আশা খুব কম।
প্রকৃতির এই ঝাপট এমন বাড়াবাড়িকে খানিকটা নিয়ন্ত্রণে হয়তো আনবে, তারপর যে কে সেই। হিমালয়ের ওপর এমন অনিয়ন্ত্রিত দাপাদাপি অসহনীয়।
Prokriti ke bachano chhada ar kono raasta nei ! Oshadharon lekha !
একদম সত্যি কথা। এই সত্য কথাটা আমরা আর কবে বুঝাবো?